10 Minute School
Log in

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ

বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগে শব্দের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ সম্পর্কে জানা অপরিহার্য।

প্রয়োগ

শব্দ প্রকরণে শব্দের শুদ্ধ এবং সঠিক ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রয়োগ।

অপপ্রয়োগ

অন্যদিকে কোনো শব্দের ভুল প্রয়োগকে বলা হয় অপপ্রয়োগ।

উদাহরণ:

“অশ্রুজল”-ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অপপ্রয়োগ ঘটেছে।

এর শুদ্ধ প্রয়োগ হবে অশ্রু/চোখের জল।

মূলত তিনটি কারণে ভাষার অপপ্রয়োগ ঘটে:

  • শব্দের অর্থগত ভুল ধারণার কারণে
  • শব্দ গঠনে ভুল হওয়ার কারণে
  • উচ্চারণগত ত্রুটির কারণে

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর কিছু নিয়ম কানুন

  • যে সকল প্রশ্নের জবাবে শুধুমাত্র হ্যাঁ অথবা না বলা যায়, সেসব শব্দে “কি” ব্যবহৃত হয়।
  • যে সকল প্রশ্নের জবাবে শুধুমাত্র হ্যাঁ অথবা না বলা যায় না, সেসব শব্দে “কী” ব্যবহৃত হয়।
  • দুটি বহুবচন অথবা একই অর্থ বহন করে এমন দুইটি শব্দ থাকলে একটি শব্দ বাদ দিতে হবে।
অপপ্রয়োগপ্রয়োগ
কেবলমাত্রকেবল/মাত্র
নিশীরাত্রিনিশি/রাত্রি
সুস্বাগতস্বাগত
সমকালীন সময়সমকালীন
  • কেবল পরিধান করা অর্থে “পরা” ব্যবহৃত হয়। বাকিসব ক্ষেত্রে “পড়া” ব্যবহৃত হয়।
  • সব “ভূত” বানান ঊ-কার দিয়ে হয়। কেবল অদ্ভুত বানানে উ-কার হয়ে থাকে।
  • বিশেষণ পদের শেষে তা/ য ফলা কিংবা য যুক্ত হলে সেই শব্দটি বিশেষ্যে পরিণত হয়। কিন্তু বিশেষ্য অথবা য-ফলার পরে “তা” যুক্ত হলে সেটি প্রত্যয়জনিত অপপ্রয়োগ হয়।
অপপ্রয়োগপ্রয়োগ
দারিদ্র্যতাদারিদ্র্য / দরিদ্রতা
সৌজন্যতাসৌজন্য
বৈচিত্র্যতাবিচিত্রতা / বৈচিত্র্য
দৈন্যতাদীনতা / দৈন্য
  • শব্দের শুরুতে নি/নী/নির থাকলে শব্দের শেষে “ঈ” হবে না।
  • কালী, দাসী কিংবা ষষ্ঠী শব্দগুলোর শেষে “দাস” যুক্ত হলে, পূর্ববর্তী ঈ-কার ই-কার হবে।
অপপ্রয়োগপ্রয়োগ
নিরহঙ্কারীনিরহংকার
নিষ্পাপীনিষ্পাপ
কালীদাসকালিদাস
দেবীদাসদেবিদাস
  • অর্ধ, মধ্য, অহো এবং দিবা – এই শব্দগুলোর শেষে রাত্রি যুক্ত হলে রাত্রি পরিবর্তিত হয়ে রাত্র হবে।
  • পিতা, মাতা এবং ভ্রাতা- শব্দগুলোর শেষে অন্য শব্দ যুক্ত হলে এগুলো হবে পিতৃ, মাতৃ এবং ভ্রাতৃ।
অপপ্রয়োগপ্রয়োগ
অহোরাত্রিঅহোরাত্র
দিবারাত্রিদিবারাত্র
অর্ধরাত্রিঅর্ধরাত্র
মধ্যরাত্রিমধ্যরাত্র
মাতাহারামাতৃহারা
পিতাহারাপিতৃহারা
ভ্রাতাবৃন্দভ্রাতৃবৃন্দ
  • বিসর্গ-এর পরে ক, খ, প, ফ, স থাকলে বিসর্গের কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এই পাঁচটি বর্ণ ব্যতীত অন্য কোন বর্ণ থাকলে বিসর্গ-এর স্থানে ও হবে।
অপপ্রয়োগশুদ্ধ প্রয়োগ
শিরোপীড়াশিরঃপীড়া
মনকষ্টমনঃকষ্ট
স্বতোস্ফূর্তস্বতঃস্ফূর্ত
তপঃবনতপোবন
  • নেতিবাচক কিংবা খারাপ অর্থে বুঝালে দ এর সাথে উ-কার হয়।
  • ব্যবধান অর্থে বুঝালে দ এর সাথে ঊ-কার হয়।
  • কোনো শব্দে র, র ফলা, রেফ থাকলে ঐ শব্দে হ্ণ হবে (হ+ণ)।
  • র, র ফলা কিংবা রেফ না থাকলে হ্ন হবে (হ+ন)।
  • সকল আয়ত্ত বানানে ত্ত হবে। ত্ব কিংবা ত্ত্ব হবে না।
  • স্বত্ব শব্দটির অর্থ মালিকানা। সত্তা শব্দের অর্থ অস্তিত্ব এবং সত্ত্ব শব্দের অর্থ গুণ কিংবা ফলের রস বিশেষ।
  • শব্দের শেষে জিৎ, সাৎ, কৃৎ, চিৎ থাকলে খণ্ড-ত (ৎ) হবে। এবং এরপরে কোন শব্দ বা বর্ণ যুক্ত হলে সেটি ত হয়ে যাবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ

বিভ্রান্তি

বাংলা ভাষার ব্যাবহারে কিছু সর্বাধিক লক্ষণীয় শব্দের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী শব্দ নিম্নে দেখানো হলো।

উদ্দেশ্যে নাকি উদ্দেশে ?

উদ্দেশ্যে শব্দের অর্থ কোন লক্ষ্য নিয়ে আগানো ।

অন্যদিকে উদ্দেশে শব্দের অর্থ কোন একটি দিকে।

লক্ষ নাকি লক্ষ্য

লক্ষ শব্দটি সংখ্যা কিংবা ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে লক্ষ্য শব্দটি উদ্দেশ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়।

উল্লেখিত নাকি উল্লিখিত?

উল্লেখিত শব্দটি সন্ধির নিয়মে ভুল। সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে উল্লিখিত (উৎ+লিখিত)

কার্যকরী নাকি কার্যকর ?

কার্যকরী শব্দটি বহুল প্রচলিত হলেও ভুল। এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কার্যকর।

উপরোক্ত নাকি উপর্যুক্ত ?

উপরোক্ত শব্দটির কোনো অর্থ নেই। সন্ধির নিয়ম অনুযায়ী সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে উপর্যুক্ত। (উপরি + যুক্ত)

জন্মবার্ষিকী নাকি জন্মবার্ষিক?

বার্ষিক শব্দটি একটি প্রত্যয়সাধিত শব্দ। (বর্ষ + ইক)। এর সাথে পুনরায় ঈ প্রত্যয় যুক্ত হলে সেটি অপপ্রয়োগ হয়। এর শুদ্ধ রূপ হলো জন্মবার্ষিক।

পুনর্মিলনী নাকি পুনর্মিলন ?

এখানেও প্রত্যয়জনিত অপপ্রয়োগ ঘটে। সঠিক প্রয়োগ হলো পুনর্মিলন।

লজ্জাস্কর নাকি লজ্জাজনক?

দুটো শব্দেরই ভুল প্রয়োগ হয়েছে। সঠিক প্রয়োগ হবে লজ্জাকর।

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদাহরণ

অপপ্রয়োগ শুদ্ধ প্রয়োগ
আবশ্যকীয় আবশ্যক
মহিমাময় মহিমময়
চলাকালীন সময় চলাকালীন
স্বপরিবারে সপরিবারে/ পরিবারসহ
শ্রেষ্ঠতম/ শ্রেষ্ঠতর শ্রেষ্ঠ
বন্দোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায়
অপপ্রয়োগ শুদ্ধ প্রয়োগ
তরুছায়া তরুচ্ছায়া
আয়ত্তাধীন আয়ত্ত / অধীন
সুস্বাস্থ্য স্বাস্থ্য
মড়াদাহ / শবপোড়া মড়াপোড়া / শবদাহ
স্বচ্ছলতা সচ্ছলতা