মায়োসিস | Meiosis
মায়োসিসের ধাপ (Steps of meiosis)
মায়োসিস -১ (Meiosis-1)
মায়োসিস (Meiosis) কোষ বিভাজনে মায়োসিস -১ (meiosis-1) ই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ পর্যায়েই ক্রোমোসোম সংখ্যা অর্ধেকে হ্রাস পায় এবং সমসংস্থ ক্রোমোসোমের মধ্যে অংশের পারস্পরিক বিনিময় (ক্রসিং ওভার) ঘটে।
প্রোফেজ -১ (Pro-phase-1)
এ পর্যায়টি অত্যন্ত জটিল ও তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ী বিধায় একে পাঁচটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রোফেজ-১ (pro-phase-1) এর উপ-পর্যায়গুলো নিম্নরূপ :
(ক) লেপ্টোটিন (Leptotine)
- নিউক্লিয়াসের জলবিয়োজনের মাধ্যমেই শুরু হয় লেপ্টোটিন উপ-পর্যায়।
- ক্রমাগত জলবিয়োজনের ফলে চিকন সুতার ন্যায় ক্রোমোসোমগুলোও ক্রমান্বয়ে সংকুচিত ও পুরু হতে থাকে এবং অধিকতর রঞ্জক ধারণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়।
- ক্রোমোসোমগুলো আলোক অণুবীক্ষণে দৃষ্টিগোচর হয় এবং ক্রোমোসোমে বহু ক্রোমোমিয়ার দেখা যায়।
- প্রাণিকোষে ক্রোমোসোমের পোলারাইজড বিন্যাস ঘটে।
(খ) জাইগোটিন (Zygotin)
- এ উপ-পর্যায়ে হোমোলোগাস ক্রোমোসোম (একটি ‘মাতা’ হতে আগত এবং অন্যটি ‘পিতা’ হতে আগত) একটি জোড়ার সৃষ্টি করে।
- দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোসোমের মধ্যে জোড় সৃষ্টি হওয়াকে সিন্যাপসিস (synapsis) বলে। প্রতিটি জোড়বাঁধা ক্রোমোসোম জোড়াকে (যুগলকে) বাইভেলেন্ট (bivalent) বলে।
(গ) প্যাকাইটিন (Pacitin)
- নিউক্লিয়াসের জলবিয়োজনের মাধ্যমেই শুরু হয় লেপ্টোটিন উপ-পর্যায়।
- এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম বাইভেলেন্টের প্রতিটি ক্রোমোসোমকে সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত অনুদৈর্ঘ্যে দুটি ক্রোমাটিডে বিভক্ত দেখা যায়, অর্থাৎ প্রতি বাইভেলেন্টে দুটি সেন্ট্রোমিয়ার এবং চারটি ক্রোমাটিড থাকে। এ অবস্থাকে টেট্রাড বলে।
- একই ক্রোমোসোমের দুটি ক্রোমাটিডকে সিস্টার ক্রোমাটিড বলে এবং একই জোড়ার দুটি ভিন্ন ক্রোমোসোমের ক্রোমাটিডকে নন-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে।
- দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড সম্ভবত একই স্থানে ভেঙে গিয়ে পুনরায় একটির সাথে অন্যটির জোড়া লাগে। ফলে ঐ জোড়া স্থানে একটি ইংরেজি ‘X’ আকৃতির বা ক্রস চিহ্নের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়।দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের ‘X’ আকৃতির বা ক্রস চিহ্নের মতো জোড়াস্থলকে একবচনে কায়াজমা এবং বহুবচনে কায়াজমাটা বলে। নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে পরম্পর অংশের বিনিময়কে ক্রসিং ওভার বা ক্রস ওভার বলে।
(ঘ) ডিপ্লোটিন (Diplotin)
- বাইভেলেন্টের ক্রোমোসোমদ্বয়ের মধ্যে পারস্পরিক বিকর্ষণ শুরু হয়।
- বিকর্ষণের ফলে দুটি কায়াজমাটার মধ্যবর্তী অংশে লুপের (loop) সৃষ্টি হয়।
- কায়াজমাটাগুলো স্পষ্ট হয় এবং ক্রমান্বয়ে প্রান্তের দিকে সরে যেতে থাকে। কায়াজমার প্রান্তের দিকে সরে যাওয়াকে প্রান্তীয়করণ (terminalization) বলে।
(ঙ) ডায়াকাইনেসিস (Dykinesis)
- এক সময় বাইভেলেন্টগুলো নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রস্থল হতে পরিধির দিকে চলে আসে।
- এ উপ-পর্যায়ের শেষ দিকে নিউক্লিয়োলাস অদৃশ্য হয়ে যায় এবং নিউক্লিয়ার এনভেলপ-এর অবলুপ্তি ঘটে এবং প্রাণিকোষে সেন্ট্রিয়োল মেরুতে পৌছে যায়।
- একই ক্রোমোসোমের দুটি ক্রোমাটিডকে সিস্টার ক্রোমাটিড বলে এবং একই জোড়ার দুটি ভিন্ন ক্রোমোসোমের ক্রোমাটিডকে নন-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে।
মেটাফেজ (metaphase)-১
- বাইভেলেন্টের প্রতিটি সেন্ট্রোমিয়ার স্ব-স্ব মেরুর দিকে এবং বিষুবীয় রেখা হতে সমদূরে অবস্থান করে।
- মাইটোটিক মেটাফেজের মতো এ পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয় না।
- ক্রোমোসোমের মধ্যে লুপ সৃষ্টি হয়।
অ্যানাফেজ (Anaphase)-১
- এ পর্যায়ে এসে হোমোলোগাস ক্রোমোসোম পৃথক হয়ে যায় এবং বাইভেলের দুটি ক্রোমোসোম (দুটি ক্রোমাটিড নয়) বিপরীতমুখী দুটি মেরুর দিকে ধাবিত হয়।
- ক্রোমোসোমগুলোকে ইংরেজি V (মেটাসেন্ট্রিক), L (সাবমেটাসেন্ট্রিক), J (এক্রোসেন্টিক এবং I (টেলোসেন্ট্রিক) অক্ষরের মতো দেখায়।
- উভয় মেরুতে প্রতিটি বাইভেলেন্টের একটি অবিভক্ত পূর্ণাঙ্গ ক্রোমোসোম পৌছে বলে প্রতি মেরুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রতি মেরুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা দাঁড়ায় 2n এর পরিবর্তে n।
টেলোফেজ (Telophase) -১
- এ পর্যায়ে মেরুতে অবস্থিত n সংখ্যক ক্রোমোসোমের চারদিকে আবার নিউক্লিয়ার এনভেলপ এবং অভ্যন্তরে নিউক্লিয়োলাসের আবিভাব ঘটে।
- নিউক্লিয়াসে জলযোজন ঘটে, ফলে ক্রোমোসোমগুলো ক্রমান্বয়ে সরু হতে থাকে।
- মায়োসিসের টেলোফেজ-১ শেষে যে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয় তার প্রতিটিতে n সংখ্যক ক্রোমেসোম (2n সংখ্যক ক্রোমোসোমের পরিবর্তে) থাকে।