গ্যাসের আণবিক গতিতত্ত্ব, আদর্শ গ্যাস, বাস্তব গ্যাস ও অ্যামাগার পরীক্ষা
গ্যাসের আণবিক গতিতত্ত্ব, আদর্শ গ্যাস, বাস্তব গ্যাস (Molecular Dynamics of Gas, Standard Gas, Real Gas)
প্রশ্ন : গ্যাসের গতিতত্ত্ব বলতে কি বুঝ? এ তত্ত্বের স্বীকার্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর : বিভিন্ন গ্যাসের রাসায়নিক ধর্ম ও আণবিক সংকেত ভিন্ন হলেও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা যায়, কিছু কিছু ভৌতধর্মে সকল গ্যাসই একই রূপ আচরণ করে। যেমন- সকল গ্যাসই বয়েল -এর, চার্লস -এর, অ্যাভোগাড্রো সূত্র প্রভৃতি মেনে চলে। গ্যাস সমূহের সাধারণ ভৌত ধর্মসমূহ ব্যাখ্যার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানী যেমন- ক্লসিয়াস, ম্যাক্সওয়েল, বোল্টজম্যান প্রমুখ বিভিন্ন সময়ে কতিপয় যুক্তিসঙ্গত মতবাদ ব্যক্ত করে। তন্মধ্যে যে ধারণাসমূহ গৃহীত হয়েছে, তাদের সমষ্টিগত রূপকে গ্যাসের গতিতত্ত্ব বলে।গ্যাসের গতিতত্ত্বের মূল স্বীকার্যসমূহ হলো :
১। গ্যাসের গঠন : গ্যাস মাত্রই অগণিত সুক্ষাতি-সুক্ষ্ম কণার সমন্বয়ে গঠিত। এদের গ্যাসীয় অণু বলা হয়। একই
গ্যাসের সবঅণুগুলোর ভর এবং আকার সমান।
২। আয়তন : গ্যাসগুলো জ্যামিতিক বিন্দুর মত এতই ক্ষুদ্রাকৃতির যে তাদের নিজস্ব মোট আয়তন গ্যাসাধারের আয়তনের তুলনায় অতিশয় নগন্য।
৩। অণুসমূহের গতি প্রকৃতি : গ্যাসের অনুগুলো সব সময় খুব দ্রুতগতিতে সোজা পথে ইতঃস্তত সম্ভবপর সকল দিকে ছুটাছুটি করে। ফলে অণুসমূহের পরস্পরের সাথে এবং গ্যাসাধারের দেয়ালের সাথে অবিরাম সংঘর্ষ ঘটে। এই সংঘর্ষের ফলে অণুসমূহের গতির দিক পরিবর্তিত হয়।“
৪। আকর্ষণ বিকর্ষণ : অনুসমূহের নিজেদের মধ্যে বা অনু ও গ্যাসাধারের দেয়ালের মধ্যে কোন আকর্ষণ বা বিকষর্ণ নেই।
৫। অণু সমূহের মধ্যকার সংঘর্ষের প্রকৃতি : গ্যাসাণু সমূহ গোলাকার, কঠিন ও সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক। তাই অণু সমূহের মধ্যে সংঘর্ষেরফলে মোট গতি শক্তির কোন পরিবর্তন ঘটে না।
৬। গ্যাসের চাপ : গ্যাসাধারের দেয়ালের উপর গ্যাসের অনুগুলোর অবিরাম সংঘর্ষের ফলেই গ্যাসের চাপের সৃষ্টি
হয়।
৭। গতি শক্তি : অণুসমূহের মোট গতিশক্তি তথা প্রতিটি অণুর গড় গতিশক্তি গ্যাসের পরম তাপমাত্রা সমানুপাতিক।
৮। গড় মুক্ত পথ : গ্যাস-অণুগুলোর দুটি ধারাবাহিক সংঘর্ষের মধ্যবর্তী দূরত্বের গড় মানকে গড়মুক্ত পথ বলা
৯। সংঘর্ষ সময় : অণুগুলোর পরস্পরের মধ্যে শুধু সংঘর্ষের জন্য যে সময় ব্যয় হয় তা দুটি সংঘর্ষের মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় খুবই সামান্য।
প্রশ্ন : কিভাবে গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হয়, তা গতিতত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : গ্যাসীয় চাপের উৎপত্তি : যে কোন গ্যাস অসংখ্য ক্ষুদ্র অণুর সমন্বয়ে গঠিত। পাত্রের অভ্যন্তরে অণুগুলো বিভিন্ন দিকে অতি দ্রুত গতিতে ইতঃস্তুত ধাবমান। ফলে পরস্পরের সাথে এবং গ্যাসাধাৱেৱ ভিতরের দেওয়ালের সাথে অনুসমূহের অবিরাম স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সংঘর্ষের মাধ্যমে অণুসমূহ গ্যাসাধারের দেওয়ালের উপর বা প্রয়োগ করে। এভাবে গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন : আর্দশ ও বাস্তব গ্যাস বলতে কি বুঝ?
উত্তর : আর্দশ গ্যাস : যে সব গ্যাস সকল তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাসের সমূহ যথা : বয়েল এর সূত্র, চার্লস এর সূত্র ও অ্যাভোগাড্রো সূত্র পুরোপুরি মেনে চলে তাদেরকে আর্দশ গ্যাস বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, যে সব গ্যাস সকল তাপমাত্রা ও চাপে PV = nRT সমীকরণটি যথাযথভাবে মেনে চলে তাদের আদর্শ গ্যাস বলা হয় । বাস্তব অর্থে কোনো গ্যাসই আদর্শ আচরণ করে না। সুতরাং আদর্শ গ্যাসের ধারণা কল্পনাপ্রসূত মাত্র। আদর্শ গ্যাসের বৈশিষ্টসূচক মানদন্ড :
১। আদর্শ গ্যাস সকল তাপমাত্রা ও চাপে PV = nRT সমীকরণ মেনে চলে।
২। স্থির তাপমাত্রায় আদর্শ গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি এর আয়তনের উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ,
\left(\frac{\partial E}{\partial V}\right)_{T}=0এখানে E → গ্যাসের অভ্যন্তরীন শক্তি, V → গ্যাসের আয়তন এবং T → কেলভিন তাপমাত্রা।
বাস্তব গ্যাস : যে সব গ্যাস সকল তাপমাত্র ও চাপে গ্যাসের সূত্ৰসমূহ বিশেষ করে বয়েল এ চার্লস এর সূত্রদ্বয়কে মেনে চলে না, তাদেরকে বাস্তব গ্যাস বলে । বস্তুতঃ সকল গ্যাসই সকল তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাস সূত্রসমূহ হুবহু মেনে চলে না। আমাদের পরিচিত \mathrm{O}_{2}, \mathrm{~N}_{2}, \mathrm{H}_{2}, \mathrm{CO}_{2} সবই বাস্তব গ্যাস। এই গ্যাস সমূহ শুধুমাত্র অতি নিম্নচাপ ও উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যাসের সূত্রসমূহকে মোটামুটি মেনে চলে।
প্রশ্ন : গ্যাসের বিভিন্ন ধরণের আনবিক গতিবেগ – এর সংজ্ঞা দাও।
উত্তর : যে কোন গ্যাসের নমুনায় অসংখ্য অণু বিদ্যমান । অণুসমূহের মধ্যে অবিরাম সংঘর্ষের কারণে তাদের মোট গতিশক্তির কোন পরিবর্তন না হলেও অণুসমূহের মধ্যে, গতিশক্তির পুনঃবন্টন ঘটে। ফলে অনবরত তাদের গতিবেগের পরিবর্তন ঘটে। এ কারণে কোন অণুর গতিবেগ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে তাদের গড় গতিবেগ হিসাব করা যায়। তিন ধরণের আণবিক গতিবেগ হিসাব করা যায়। যেমন :
- গড় গতিবেগ : কোন গ্যাসের অণুসমূহের বিভিন্ন গতিবেগের পাটীগণিতীয় গড়কে সে গ্যাসের অণুসমূহের গড় গতিবেগ বলা হয়। ধরি, কোন নমুনায় N সংখ্যক অণু বিদ্যমান, তাদের গতিবেগ যথাক্রমে \mathrm{c}_{1}, \mathrm{c}_{2}, \mathrm{c}_{3}, \mathrm{c}_{4}, \ldots \ldots \ldots \mathrm{c}_{n} এক্ষেত্রে- গড় গতিবেগ, c=\frac{c_{1}+c_{2}+c_{3}+c_{4}+\ldots \ldots \ldots+c_{n}}{N}
- বর্গমূল গড় বর্গবেগ : কোন গ্যাসের অণুসমূহের গতিবেগের বর্গের গড় মানের বর্গমূলকে গ্যাসটির অণুসমূহের বর্গমূল-গড়-বৰ্গবেগ বেগ বলা হয় বা rms বেগ বলে ।ধরি, কোনো নমুনায় N সংখ্যক অণু বিদ্যমান, তাদের গতিবেগ যথাক্রমে \mathrm{c}_{1}, \mathrm{c}_{2}, \mathrm{c}_{3}, \mathrm{c}_{4}, \ldots \ldots \ldots \mathrm{c}_{n} এক্ষেত্রে,
বর্গমূল-গড়-বৰ্গবেগ, c=\sqrt{\frac{c_{1}^{2}+c_{2}^{2}+c_{3}^{2}+\ldots \ldots \ldots+c_{n}^{2}}{N}}
- সম্ভাব্যতম বেগ : কোনো নমুনায় অণুসমূহের বিভিন্ন গতিবেগের মধ্যে যে গতিবেগটি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অণুর মধ্যে বিদ্যমান তাকে সম্ভাব্য বা সবচেয়ে সম্ভাব্যতম বেগ বলা হয়। ধরি, কোন গ্যাসীয় নমুনায় ১ লক্ষ অণুর গতিবেগ ১০০ cm/s; ৫ লক্ষ অণুর গতিবেগ 300 cm/s; ৪ লক্ষ অণুর গতিবেগ 350 cm/s;
৩ লক্ষ অণুর গতিবেগ 400 cm/s; এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (৫ লক্ষ) অণুর গতিবেগ 300 cm/s, সুতরাং, এক্ষেত্রে সম্ভাব্যতম গতিবেগ 300 cm/s.
গড়মুক্তপথ : পরপর দুটি সংঘর্ষকালে একটি গ্যাস অণু যতটা সরল রৈখিক পথ অতিক্রম করে ঐ দূরত্বকে ঐ গাস অণুর মুক্ত পথ বলে। সব মুক্ত পথের মোট দূরত্বকে মোট সংঘর্ষ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে গড় দূরত্ব পাওয়া যায় তাকে গড় মুক্ত পথ বলে ।
প্রশ্ন : বিভিন্ন ধরণের গতিবেগের মধ্যে বর্গমূল গড় বর্গ গতিবেগ বা RMS গতিবেগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন – তা বাখ্যা কর।
উত্তর : বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগের প্রয়োজনীয়তা : বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ হচ্ছে এমন একটি বেগ, যা প্রতিটি অণুর সাধারণ গতিবেগ ধরে অণুসমূহের গতিশক্তি হিসেব করলে তাদের প্রকৃত মোট গতিশক্তি পাওয়া যায়; কিন্তু গড় গতিবেগ না সবচেয়ে সম্ভাব্য গতিবেগ হতে সরাসরি গতিশক্তি পাওয়া যায় না। তাই, বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিম্নরূপে গাণিতিকভাবে দেখানে যায় যে, বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ ব্যবহার করে কোন গ্যাসীয় নমুনায় অণুসমূহের প্রকৃত মোট গতিশক্তিপাওয়া যায় :
ধরি, কোনো গ্যাসীয় নমুনায় n সংখ্যক অণু বর্তমান, যাদের গতিবেগ যথাক্রমে \mathrm{c}_{1}, \mathrm{c}_{2}, \mathrm{c}_{3}, \ldots \ldots \ldots \mathrm{c}_{\mathrm{n}}এবং প্রতিটি অণুর ভর m ।
অণুসমূহের মোট গতিশক্তি =\frac{1}{2} m c_{1}^{2}+\frac{1}{2} m c_{2}^{2}+\frac{1}{2} m c_{3}^{2}+\ldots \ldots \ldots+\frac{1}{2} m c_{n}^{2}
=\frac{1}{2} m\left(c_{1}^{2}+c_{2}^{2}+c_{3}^{2}+\cdots+c_{n}^{2}\right)…………………………………(i)
আবার, প্রতিটি অণুর সাধারন গতিবেগ C (বর্গমূল গড় বর্ণ গতিবেগ) ধরা হলে প্রতিটি অণুর গতিশক্তি =\frac{1}{2} m c^{2}
সুতরাং N টি অণুর সর্বমোট গতিশক্তি =N \frac{1}{2} m c^{2}
=\frac{1}{2} m \cdot N\left\{\sqrt{\frac{c_{1}^{2}+c_{2}^{2}+c_{3}^{2}+\cdots+c_{n}^{2}}{N}}\right\}^{2}
=\frac{1}{2} m N \times \frac{c_{1}^{2}+c_{2}^{2}+c_{3}^{2}+\cdots+c_{n}^{2}}{N}
=\frac{1}{2} m\left(c_{1}^{2}+c_{2}^{2}+c_{3}^{2}+\cdots+c_{n}^{2}\right)……………(ii)
সমীকরণ (i) ও (ii) তুলনা করলে দেখা যায় যে, বর্গমূল গড় বর্গ গতিবেগকে প্রতিটি অণুর গতিবেগ ধরে অণুসমূহের মোট গতিশক্তি হিসাব করা হলে তা প্রকৃত মোট গতিশক্তির সমান হয়।
প্রশ্ন : আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণ হতে নিণেক সূত্রগুলো উপপাদন কর :
(i) বয়েল এর সূত্র; (ii) চার্লস এর সূত্র; (ii) অ্যাভোগাড্রো সূত্র; (iv) গ্রাহাম – এর সূত্র।
উত্তর : বয়েল এর সূত্র প্রতিপাদন : বয়েল এর সূত্রানুযায়ী স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের আয়তন এর উপর প্রযুক্ত চাপের ব্যাস্তনুপাতিক। অর্থাৎ,
V \propto \frac{1}{P}PV=K
উক্ত সমীকরণ আদর্শ গ্যাসের তাপীয় সমীকরণ হতে নিম্নরূপে প্রতিপাদন করা যায়। গতীয় সমীকরণ হতে পাওয়া যায় :
P V=\frac{1}{3} m N c^{2}=\frac{2}{3} \times N \frac{1}{2} m c^{2}……………………(i)
গতি তত্ত্বের স্বীকার্য অনুযায়ী, গ্যাস অণুসমূহের গড় গতিশক্তি 12 mc2 পরম তাপমাত্রায় সমানুপাতিক। অর্থাৎ,
\frac{1}{2} m c^{2} \propto\text { বা, } \frac{1}{2} m c^{2}=K T ………………(ii)
সমীকরণ (i) ও (ii) হতে পাই,
P V=\frac{2}{3} N K T ………………(iii)
স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের জন্য \frac{2}{3} N K T ধ্রুবক । সুতরাং সমীকরণ (iii) হতে পাই,
PV= ধ্রুবক
V \propto \frac{1}{p}এটাই বয়েল -এর সূত্র।
(ii) চার্লস এর সূত্র প্রতিপাদন : চার্লস এর সুত্রানুযায়ী স্থির চাপে নিদিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের আয়তন পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক। অর্থাৎ,
V∝T
আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণ হতে নিম্নরূপ উক্ত সূত্রটিতে উপনীত হওয়া যায় ; গতীয় সমীকরণ হতে পাওয়া যায়,
P V=\frac{1}{3} m N c^{2}বা, P V=\frac{2}{3} \times \frac{1}{2} m N c^{2} ……………(i)
গতি তত্ত্বের স্বীকার্য অনুযায়ী, গ্যাসা অণুসমূহের মোট গতিশক্তি N \cdot \frac{1}{2} m c^{2} পরম তাপমাত্রায় সমানুপাতিক। অথাৎ,
N \cdot \frac{1}{2} m c^{2} \propto \mathrm{T}বা, N \cdot \frac{1}{2} m c^{2}=K T ………………(ii)
সমীকরণ (i) ও (ii) হতে পাই,
সুতরাং স্থির চাপে, V=KT ( এখানে K=\frac{2 K}{3 P}= স্থির সংখ্যা )
∴V∝T
এটাই, চার্লস – এর সূত্র।
(iii) অ্যাভোগাড্রো সূত্র প্রতিপাদন : অ্যাভোগাড্রো সূত্রানুসারে, একই তাপমাত্রা ও চাপে সম-আয়নের সকল গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে। আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণ হতে নিম্নরূপে অ্যাভোগাড্রো সূত্রটি প্রতিপাদন করা যায় :
ধরা যাক, নির্দিষ্ট T তাপমাত্রা এবং P চাপে পৃথক পৃথক দুটি গ্যাস A ও B একই নির্দিষ্ট V আয়তনে এদের যথাক্রমে N_1 ওN_2 সংখ্যক অণু বিদ্যমান। A গ্যাসের প্রতিটি অণুর ভর m_1 এবং বর্গমূল গড় বর্গ বেগ c_1 হলে গতীয় সমীকরণ হতে পাই,
P V=\frac{1}{3} m_{1} N_{1} c_{1}^{2} ……………(i)
আবার B গ্যাসের প্রতিটি অণুর ভর m_2এবং বর্গমূল গড় বর্গ বেগ c_2 হলে গতীয় সমীকরণ হতে পাই,
P V=\frac{1}{3} m_{2} N_{2} c_{2}^{2} …………………(ii)
কিন্তু গ্যাসদ্বয়ের চাপ P এবং আয়তন V একই, তাই সমীকরণ (i) ও (ii) হতে পাই,
\frac{1}{3} m_{1} N_{1} c_{1}^{2}=\frac{1}{3} m_{2} N_{2} c_{2}^{2}বা, m_{1} N_{1} c_{1}^{2}=m_{2} N_{2} c_{2}^{2}………………(iii)
কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের প্রমাণ অনুযায়ী একই তাপমাত্রায় উভয় গ্যাসের অণুসমূহের গড় গতিশক্তি সমান। অর্থাৎ,
\frac{1}{2} m_{1} c_{1}^{2}=\frac{1}{2} m_{2} c_{2}^{2}বা, m_{1} c_{1}^{2}=m_{2} c_{2}^{2} …………………(iv)
সমীকরণ (iii) কে সমীকরণ (iv) দ্বারা ভাগ করে পাই,
\mathbf{N}_{1}=\mathbf{N}_{2}অর্থাৎ, একই তাপমাত্রা ও চাপ সমান আয়তনের গ্যাসদ্বয়ের অণুর সংখ্যা সমান। এটিই অ্যাভোগাড্রো সূত্র।
(iv) গ্রাহাম এর ব্যাপন সূত্র প্রতিপাদন : গ্রাহাম -এর গ্যাস ব্যাপন সুত্রানুসারে, নির্দিষ্ট চাপ ও তাপমাত্রায় কোন গ্যাসের ব্যাপন হার এর ঘনত্বের বর্গমূলের ব্যাস্তানুপাতিক। অর্থাৎ,
r \propto \frac{1}{\sqrt{d}}…………………(i)
উক্ত সমীকরণটি আদর্শ গ্যাসের গতীয় সমীকরণ হতে নিম্নরূপে প্ৰতিপাদন করা যায় :
গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে প্রাপ্ত গতীয় সমীকরণ হলো :
P V=\frac{1}{3} m N c^{2} ………………(ii)
এই সমীকরণ হতে পাই,
\frac{m N}{V} c^{2}=3 P …………………(iii)
এখানে mN কোন গ্যাসের নমুনায় অণুসমূহের মোট ভর হওয়ায় –
\frac{m N}{V}= ঘনত্ব =d
সুতরাং, (iii) নং হতে পাওয়া যায়,
d c^{2}=3 Pবা, c^{2}=\frac{3 P}{d}
বা, =\frac{\sqrt{3 P}}{d}
বা, c=\sqrt{3 P} \times \frac{1}{\sqrt{d}} ………………(iv)
চাপ স্থির থাকলে,\sqrt{3 P} = ধ্রুবক = K
সুতরাং সমীকরণ (iv) হতে পাই,
c=K \times \frac{1}{\sqrt{d}} ………………(v)
অর্থাৎ, C \propto \frac{1}{\sqrt{d}} ……………………(vi)
সাধারণত গ্যাসের ব্যাপন হার (r) এর অণুর বেগের উপর নির্ভর করে। অণুর বেগ বৃদ্ধির সাথে ব্যাপনের
হারও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ,
r∝C
সুতরাং সমীকরণ (vi) কে লেখা যায়
r \propto \frac{1}{\sqrt{d}}এটিই গ্রাহামের সূত্রে গাণিতিক রূপ। অতএব, গতিতত্ত্ব হতে গ্রাহামের সূত্রটি প্রতিপাদিত হলো ।
প্রশ্ন : গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে দেখাও যে, কোন গ্যাসের মোট গতিশক্তি কেবলমাত্র তাপমাত্রা উপর নির্ভরশীল।
উত্তর : গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে প্রাপ্ত গতীয় সমীকরণ হচ্ছে,
P V=\frac{1}{3} m N c^{2}বা, P V=\frac{2}{3} N \times \frac{1}{2} m c^{2} ……………………(i)
আবার, 1 মোল গ্যাসের জন্য গ্যাসের মোট অণুর সংখ্যা N = আভোগাড্রো সংখ্যা = N_{A}, \text { এবং } \mathrm{PV}=\mathrm{RT}
সুতরাং, 1 মোল গ্যাসের জন্য সমীকরণ (i) কে নিম্নরূপে লেখা যায়,
R T=\frac{2}{3} \times N_{A} \times \frac{1}{2} m c^{2}আবার, , \frac{1}{2} m c^{2} হলো প্রতিটি অণুর গড় গতিশক্তি
\therefore R T=\frac{2}{3} \times N_{A} \times প্রতিটি অণুর গড় গতিশক্তি
বা, RT=\frac{2}{3} \times 1 মোল গ্যাসের অণুসমূহের মোট গতিশক্তি।
অর্থাৎ, 1 মোল গ্যাসের অণুসমূহের মোট গতিশক্তি =\frac{3}{2} R T…………………(iii)
এবং n মোল গ্যাসের অণুসমূহের মোট গতিশক্তি r \propto \frac{1}{\sqrt{d}} ………………(iv)
যেহেতু, R একটি ধ্রুবক, তাই সমীকরণ (iii) এবং (iv) হতে স্পষ্ট যে, গ্যাসীয় অণুর গতিশক্তি গ্যাসের প্রকৃতি আয়তন বা চাপের উপর নির্ভর করে না। শুধুমাত্র তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল এবং তা পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক।
প্রশ্ন : গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে দেখাও যে, গ্যাস অণুসমূহের বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ পরম তাপমাত্রার বর্গমূলের সমানুপাতিক এবংগ্যাসের অণবিক ভরের বর্গমূলের ব্যাস্তানুপাতিক।
অথবা, গ্যাসের গতিতত্ব হতে দেখাও যে, c=\sqrt{\frac{3 R T}{M}}
উত্তর : গ্যাসের গতিতত্ত্ব হতে প্রাপ্ত গতীয় সমীকরণটি হলো ,
P V=\frac{1}{3} m N c^{2}………………………(v)
বা, c^{2}=\frac{3 P V}{m N} ………………………(vi)
1 মোল গ্যাসের ক্ষেত্রে গ্যাসের মোট অণুর সংখ্যা N = অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা =N_A এবং PV = RT
সুতরাং, 1 মোল গ্যাসের ক্ষেত্রে সমীকরণ (ii) কে নিম্নরূপে লেখা যায়,
c^{2}=\frac{3 R T}{m N_{A}}বা, c^{2}=\frac{3 R T}{M}\left(\text { এখানে, } m N_{A}=M\right. =গ্যাসের আণবিক ভর )
বা, c=\frac{\sqrt{3 R T}}{M}……………………(iii)
সমীকরণ (iii) হতে স্পষ্ট যে, কোন গ্যাসের অণুসমূহের বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ গ্যাসের আয়তন বা চাপের উপর নির্ভরশীল নয়, তা শুধুমাত্র তাপমাত্রা ও গ্যাসের আণবিক ভরের উপর নির্ভরশীল।অর্থাৎ সমীকরণ (iii) হতে বলা যায়; গ্যাস অণুসমূহের বর্গমূল-গড়-বর্গ গতিবেগ পরম তাপমাত্রার বর্গমূলের সমানুপাতিক এবং গ্যাসের আণবিক ভরের বর্গমূলের ব্যাস্তানুপাতিক।
প্রশ্ন : আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাসের পার্থক্য লিখ।
উত্তর :
আদর্শ গ্যাস | বাস্তব গ্যাস |
১. যে সব গ্যাস সব তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাসসূত্র সমূহ মেনে চলে তাকে আদর্শ গ্যাস বলে। এটি একটি কাল্পনিক ধারণা। | ১. বাস্তবে যে সব গ্যাস পাওয়া যায় তাদেরকে বস্তব গ্যাস বলে। যেমন – O_{2}, N_{2}, H_{2} ইত্যাদি |
২. এদের অণুসমূহের মধ্যে কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল নেই। | ২. এদের অনূসমূহের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আছে। |
৩. গ্যাস অণুসমূহের আয়তন পাত্রের আয়তনের তুলনায় নগণ্য | ৩. গ্যাসাণুসমূহের আয়তন পাত্রের আয়তনের তুলনায় নগণ্য নয় । |
৪. এরা PV = nRT সমীকরণ মেনে চলে। | ৪. এরা ভ্যানডার ওয়াল্স সমীকরণ মেনে চলে \left(P+\frac{n^{2} a}{v^{2}}\right)(v-n b)=n R T |
৫. স্থির তাপমাত্রায় এদের অভ্যন্তরীণ শক্তি এর আয়তনের উপর নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ,(δU/δV)_T=0 |
৫. এক্ষেত্রে, \left(\frac{\delta U}{\delta V}\right)_{T} \neq 0 |
৬. বাস্তবে কোন গ্যাস আদর্শ আচরণ করে না। | ৬. উচ্চ তাপমাত্রায় এবং নিম্নচাপে বাস্তব গ্যাস আদর্শ আচরণ করে। |
প্রশ্ন : বাস্তব গ্যাসসমূহ আদর্শ গ্যাস হতে বিচ্যুতির কারণসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : গ্যাসের গতিতত্ত্বের যে সকল স্বীকার্যের উপর ভিত্তি করে PV=nRT সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাতে দুটি ত্রুটি রয়েছে। যে কারণে বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের সমীকরণ মেনে চলে না। তাই বিজ্ঞানী ভ্যানডার ওয়ালস বাস্তব গ্যাসের জন্য আদর্শ গ্যাসের স্বীকার্য দুটি নিম্নরূপে সংশোধন করেন:
(i) আয়তনজনিত ত্রুটি সংশোধন : গ্যাসের গতিতত্ত্বের স্বীকার্য মতে, আদর্শ গ্যাসের অণুসমূহের আয়তন,
পাত্রের আয়তনের তুলনায় নগণ্য ধরা যায়। কিন্তু বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে তা সঠিক নয়। যে কোন বাস্তব গ্যাসকে নিম্ন তাপমাত্রায় ও উচ্চ চাপে তরল ও কঠিন পদার্থে পরিণত করা যায়। তরল ও কঠিন পদার্থের একটি ন্যূনতম আয়তন আছে যা একেবারে নগণ্য নয় । হিসাব করে দেখা যায় যে, STP তে এক মোল গ্যাসের অণুসমূহের আয়তন পাত্রের আয়তনের 0.05% হয়। যা নগণ্য ধরা যায় । কিন্তু 500 atm এবং 0°C তাপমাত্রায় গ্যাস অণুগুলোর আয়তন পাত্রের আয়তনের 20%; যা নগণ্য নয়। আদর্শ গ্যাস সমীকরণে গ্যাস অণুসমূহের মুক্ত চলাচলের জন্য আয়তন V ধরা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তব গ্যাসের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। 1 mol বাস্তব গ্যাসের অণুসমূহের কার্যকর নিজস্ব আয়তন b হলে, n মোল গ্যাসের জন্য মোট কার্যকর আয়তন nb হবে, যা V থেকে বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ, বাস্তব গ্যাসের অণুসমূহে মুক্ত চলাচলের স্থান = V – nb । ‘b’ এর মান গ্যাসের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
(ii) গ্যাসের চাপজনিত ত্রুটি সংশোধন : গতিতত্ত্বের স্বীকার্য মতে, আদর্শ গ্যাসের অণুসমূহের মধ্যে কোন আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল নেই । কিন্তু বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে তা সঠিক নয়। বাস্তব গ্যাসের অণুসমূহের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল না থাকলে গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে বা কঠিনে পরিণত করা যেত না। তাছাড়া জুল-থমসন পরীক্ষা হতেও আন্তঃআণবিক আকর্ষণের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই আকর্ষণ বলের কারণে বাস্তব গ্যাস যে চাপ প্রয়োগ করে তা একই অবস্থায় গ্যাসটি আদর্শ হলে যে চাপ প্রয়োগ করত তার চেয়ে কম। ( অর্থাৎ বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাস অপেক্ষা কম চাপ প্রয়োগ করে )
তাই বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রকৃত চাপ = P+ আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল। ভ্যান-ডার ওয়ালস দেখান যে, n মোল বাস্তব গ্যাসের জন্য আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের মান =\frac{n^{2} a}{v^{2}}
আন্তঃআণবিক আকর্ষণজনিত ধ্রুবক হলো ‘a’, a এর মান বৃদ্ধি পেলে ঐ গ্যাস তরলীকরণ সহজ হবে।
n মোল বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রকৃত চাপ = \left(P+\frac{n^{2} a}{v^{2}}\right)
আদর্শ গ্যাসের ২টি ত্রুটি সংশোধন করে বাস্তব গ্যাসের জন্য যে সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে ভ্যান-ডার-ওয়ালস সমীকরণ বলে।
সমীকরণটি নিমরূপ :
\left(P+\frac{n^{2} a}{v^{2}}\right)(v-n b)=n R Tএক মোল বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে, n=1 হলে, (যেমন 44g CO_2 , 32g O_2 ইত্যাদি)।
\left(P+\frac{a}{v^{2}}\right)(v-n b)=R Tপ্রশ্ন : কোন শর্তে বাস্তব গ্যাসসমূহ আদর্শ আচরণ করে তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : n মোল বাস্তব গ্যাসের জন্য প্রযোজ্য ভ্যানডার ওয়ালস সমীকরণটি নিম্নরূপ,
\left(P+\frac{n^{2} a}{v^{2}}\right)(v-n b)=n R T ……………………(i)
উচ্চ তাপমাত্রা ও নিম্নচাপে বাস্তব গাসসমূহ আদর্শ গ্যাসের মত আচরণ করে। কারণ,
i. গ্যাসের তাপমাত্রা যত বেশী হয় এবং চাপ যত কম হয়, গ্যাসের আয়তন তত বেশী হয়। গ্যাসের আয়তন বেশী হলে এর তুলনায় গ্যাস অণুসমূহের মোট আয়তন নগণ্য হয়। এ অবস্থায় গ্যাস অণুসমূহের কার্যকর আয়তন উপেক্ষা করা যায়।
∴ এক্ষেত্রে গ্যাসের গতিতত্ত্বের ১ম টি দূরীভূত হয়। তাই (i) নং এর ক্ষেত্রে, V-nb ≈ V ধরা যায়।
ii. আবার গ্যাসের আয়তন যত বেশি হয়, অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব তত বেশি হয়। উচ্চ তাপমাত্রা ও নিম্নচাপে এদের মধ্যে পারস্পরিকআকর্ষণ বল এতই হ্রাস পায় যে, আন্তঃআনবিক আকর্ষণ জনিত রাশি \frac{n^{2} a}{v^{2}</span><span style="font-weight: 400;"> – কে উপেক্ষা করা যায়। অর্থং (i) এর ক্ষেত্র ধরা P+\frac{n^{2} a}{v^{2}≈P যায়।
এভাবে গতিতত্ত্বের ২য় ক্রটিও দূর হয়।
উচ্চ তাপমাত্রা ও নিম্ন চাপে ভ্যান-ভার-ওয়ালস সমীকণটিকে নিম্নরূপে দেখা যায়,
PV=nRT যা আদর্শ গ্যাসের সমীকরণ নির্দেশ করে।
অতএব বলা যায়, উক্ত তাপমাত্রা ও নিম্নচাপে বাস্তব গ্যাসে আদর্শ মত আচরণ করে।