10 Minute School
Log in

আলোকের সমবর্তন (Polarisation of light)

আলোকের সমবর্তন (Polarisation of light)

আলোকের সমবর্তন ( Polarisation of light) আড় তরঙ্গের একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ। টুর্ম্যালিন হচ্ছে কয়েকটি ধাতুর অক্সাইডের রাসায়নিক সংমিশ্রণে তৈরি ষড়ভুজ আকৃতির স্বচ্ছ এবং হালকা সবুজ বর্ণের কেলাস। ছয় বাহুবিশিষ্ট হালকা সবুজ রঙের এই কেলাস PQRS-কে দেখান হলো (চিত্র)। এর সর্বাপেক্ষা বড় (MN) কর্ণটির নাম সরলাক্ষ (Optic axis)। নিম্নের টুর্ম্যালিন কেলাস পরীক্ষার দ্বারা আলোর সমবর্তন ব্যাখ্যা করা হলো।  

টুর্মালিন, নিকল প্রিজম এবং পোলারয়েড ইতাদি সমবর্তক ও বিশ্লেষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Polarisation-of-light

টুর্মালিন কেলাস পরীক্ষা এবং আলাোকের সমবর্তন
(Tourmaline crystal experiment and polarisation of light)

মনে করি, S একটি আলোক উৎস। S হতে নির্গত আলোক তরঙ্গসমূহ এদের গতিপথের অভিলম্ব তলে চারদিকে সমান বিস্তারে কম্পিত হবে। A একটি টুর্মালিন কেলাস যা আলোক তরঙ্গের গতিপথে স্থাপন করা হয়েছে। S হতে আলোক তরঙ্গ কেলাসের যে কোনো একটি সমতল পৃষ্ঠে আপতিত হবে [চিত্র ]।

কেলাসের অপর দিকে নজর করলে একই প্রাবল্যের বা তীক্ষ্ণতার আলোক দেখা যাবে। কেলাস হতে নির্গত আলোক কেলাসের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে এবং যৎসামান্য রঙিন দেখাবে। এ অবস্থায় A কেলাসটিকে O বিন্দুর সাপেক্ষে ঘুরাতে থাকলে একই প্রাবল্যের আলোক দেখা যাবে। এখন A কেলাসের সমান্তরাল আলোকের গতিপথে আর একটি টুর্মালিন কেলাস B এমনভাবে স্থাপন করি যাতে এর সরলাক্ষ আলোকের গতিপথের সাথে লম্বভাবে অবস্থান করে (চিত্র )। এমতাবস্থায় B কেলাসের অপর পার্শ্ব হতে তাকালে একই প্রাবল্যের আলোক দেখা যাবে।

Polarisation-of-light

এখন A কেলাসটিকে স্থির রেখে B কেলাসটিকে O বিন্দু বরাবর ধীরে ধীরে ঘুরাতে থাকলে দেখা যাবে যে, B কেলাস হতে নির্গত আলোকের প্রাবল্য ধীরে ধীরে কমছে [চিত্র ]। যখন B কেলাসটি A কেলাসের সাথে সমকোণে স্থাপন করা হবে তখন B কেলাস হতে কোনো আলোক নির্গত হবে না [চিত্র ]। B কেলাসটিকে 90^{\circ} -এর বেশি কোণে ঘুরাতে থাকলে পুনরায় B হতে আলোক নির্গত হবে এবং এর প্রাবল্য ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। B কেলাস-এর সরলাক্ষ পুনরায় A কেলাসের সরলাক্ষের সমান্তরাল হলে B হতে নির্গত আলোকের প্রাবল্য সর্বাপেক্ষা বেশি হবে অর্থাৎ প্রাবল্য পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসবে।

এই পরীক্ষা হতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হলো যে, আলোক তরঙ্গ লম্বিক বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ নয়, আলোক তরঙ্গ আড় তরঙ্গ বা তির্যক তরঙ্গ। কেননা, A কেলাস হতে নির্গত হবার পর আলোক তরঙ্গ কেবল একটি নির্দিষ্ট তলে কম্পিত হচ্ছে। সেজন্য A হতে নির্গত আলোককে সমবর্তিত আলোক (polarised light) বলে।

সংজ্ঞা : যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন তলে কম্পমান আলোক তরঙ্গকে একটি নির্দিষ্ট তল বরাবর কম্পনক্ষম করা যায় তাকে আলোকের সমবর্তন বা পোলারায়ন (Polarisation of light) বলে।

S হতে নির্গত আলোক তরঙ্গ চারদিকে কম্পিত হচ্ছে। S হতে A পর্যন্ত আলোক তরঙ্গের এই অবস্থাই চলবে।
অতএব S ও A-এর মধ্যবর্তী স্থানে আলোক অসমবর্তিত বা অপোলারায়িত (unpolarised)। কিন্তু A হতে B পর্যন্ত স্থানে আলোক তরঙ্গকে একটি নির্দিষ্ট তল বরাবর আনয়ন করা হয়েছে। সুতরাং এই স্থানের আলোক সমবর্তিত বা পোলারায়িত (polarised)। যখন A ও B কেলাস-এর সরলাক্ষ পরস্পরের সমান্তরালে থাকে তখন B-এর পরের অংশের আলোক সমবর্তিত হয়। এখানে A-কে সমবর্তক (polariser) ও B-কে বিশ্লেষক (analyser) বলে। 1690 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী হাইগেনস আলোকের সমবর্তন আবিষ্কার করেন।

উপরে বর্ণিত সমবর্তনে আলোক তরঙ্গের কমন একটি নির্দিষ্ট সমতলে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য একে সমতল (plane) বা রৈখিক (linear) সমবর্তন বলা হয়।

কোনো আলো সমবর্তিত না অসমবর্তিত কীভাবে তুমি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করবে ? ব্যাখ্যা কর।

আলোক রশ্মির গতিপথে একটি টুর্মালিন কেলাস স্থাপন করে কেলাসের পিছন থেকে তাকালে কেলাস থেকে নির্গত আলো দেখা যাবে। এবার কেলাসটি ধীরে ধীরে ঘুরানো হলে যদি কেলাস থেকে নির্গত আলোর উজ্জ্বলতার কোনো পরিবর্তন না হয় বুঝতে হবে যে আলোক রশ্মিটি অসমবর্তিত। কিন্তু নির্গত আলোর উজ্জ্বলতা যদি পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয় এবং কেলাসটির একটি পূর্ণ আবর্তনে যদি উজ্জ্বলতা দুবার কমে শূন্য হয় তবে বোঝা যাবে যে আলোক রশ্মিটি সমবর্তিত।

প্রতিফলনের দ্বারা সমবর্তন
(Polarisation by reflection)

1808 খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত বিজ্ঞানী ম্যালাস (Malus) প্রতিফলনের দ্বারা সমতল সমবর্তিত আলো উৎপন্ন করেন। তিনি পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে দেখান যে সাধারণ আলো অর্থাৎ অসমবর্তিত আলো কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমে (যেমন পানি, কাচ ইত্যাদি) দ্বারা প্রতিফলিত হলে প্রতিফলিত রশ্মি আংশিক সমবর্তিত হয়। রশ্মির সমবর্তনের পরিমাণ আপতন কোণের ওপর নির্ভর করে। যে বিশেষ আপতন কোণের জন্য প্রতিফলনের দ্বারা সমবর্তনের পরিমাণ সর্বাধিক হয়, ওই কোণকে সমবর্তন কোণ বলে। একে ip দ্বারা সূচিত করা হয়। কাচের ক্ষেত্রে এই সমবর্তন কোণের মান 53^{\circ} এবং বিশুদ্ধ পানির ক্ষেত্রে সমবর্তন কোণ 53^{\circ} । এই কোণের মান প্রতিফলক তল এবং আপতিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে।

ব্রুস্টারের সূত্র (Brewster’s law) :

বিজ্ঞানী স্যার ডেভিড ব্রুস্টার বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে দেখান যে, সমবর্তন কোণের ট্যানজেন্টের মান প্রতিসারক মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্কের সমান। একেই ব্রুস্টারের সূত্র বলে।

ব্যাখ্যা : ধরা যাক, অসমবর্তিত আলোক রশ্মি PO তির্যকভাবে প্রতিসরাঙ্কবিশিষ্ট কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমের
MN তলে আপতিত হলো [চিত্র ]।
চিত্রানুযায়ী \angle POA= \angle i_p , সমবর্তিত কোণ 

এবং i_p = \angle QOB , প্রতিসারক কোণ।

এখন, i_p + i_r = 90^{\circ}

বা, i_r = 90^{\circ} - i_p

এখন স্নেলের সূত্রানুযায়ী আমরা পাই,

\frac{\sin i_{p}}{\sin i_{r}}=\mu = মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক

বা, \frac{\sin i_{p}}{\sin \left(90^{\circ}-i_{p}\right)}=\mu

বা, \frac{\sin i_{p}}{\cos \left(i_{p}\right)}=\mu

বা, \mu=\tan i_{p}\left[\therefore \sin \left(90^{\circ}-i_{p}\right)=\cos i_{p}\right]

Picture

অর্থাৎ সমবর্তন কোণের ট্যানজেন্টের মান প্রতিসারক মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্কের সমান।

বি. দ্র. যেহেতু মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে, তাই সমবর্তন কোণও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে।
            আবার, \angle R O Q=180^{\circ} -\left(i_{p}+i_{p}\right)=180^{\circ}-90^{\circ}=90^{\circ}


            সুতরাং, প্রতিফলিত রশ্মি (OR) এবং প্রতিসৃত রশ্মি (OQ) পরস্পরের সমকোণে অবস্থিত।

সমবর্তন কোণ ও সংকট কোণের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা কর।

ব্রুস্টারের সূত্রানুসারে,

\mu = \tan i_p

আবার, স্নেলের সূত্রানুসারে, 

\mu = \frac{1}{\sin\theta_r}

বা, \tan i_p = \frac{1}{\sin\theta_r} = \cosec\theta_r

বা, i_p = \tan^{-1} (\cosec\theta_r)

এহাই নির্ণেয় সম্পর্ক।

সমবর্তন বিষয়ক কতকগুলো রাশি
(Some terms relating polarisation)

(ক) অসমবর্তিত আলোক (Unpolarised light) : সাধারণ আলোক যার কম্পন গতিপথের লম্ব অভিমুখে চারদিকে সমান বিস্তারে কম্পিত হয় তাকে অসমবর্তিত আলোক বলে [চিত্র ]।

(খ) সমবর্তিত আলোক (Polarised light) : একটি তলে বা এর সমান্তরাল তলে কম্পমান আড় তরঙ্গবিশিষ্ট আলোককে সমবর্তিত আলোক বলে।

(গ) সমতল সমবর্তিত আলোক (Plane polarised light) : কোনো আলোক তরঙ্গের কণাগুলোর কম্পন কেবলমাত্র একটি তলে সীমাবদ্ধ থাকলে একে সমতল সমবর্তিত আলোক বলে।

(ঘ) কম্পন তল (Plane of vibration) : আলোক তরঙ্গের কণাসমূহ যে সমতলে কম্পিত হয় তাকে কম্পন তল বলে। চিত্র -এ ABCD কম্পন তল।

(ঙ) সমবর্তিত কোণ (Polarising angle) : কোনো প্রতিফলক মাধ্যমে আপতন কোণ ধীরে ধীরে পরিবর্তন করলে এমন একটি কোণ পাওয়া যাবে যার জন্য সমবর্তন সর্বাধিক হবে, সেই কোণটিকে সমবর্তন কোণ বলে।

(চ) সমবর্তন তল (Plane of polarisation) : কম্পন তলের সাথে যে তলটি লম্বভাবে অবস্থান করে তাকে সমবর্তন তল বলে। চিত্র -এ EFGH সমবর্তন তল ।

(ছ) দ্বৈত প্রতিসরণ (Double refraction) : এমন কতকগুলো কেলাস আছে যাদের মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মি গমন করলে তা দুটি প্রতিসৃত রশ্মিতে বিভক্ত হয়। এই পদ্ধতিকে দ্বৈত প্রতিসরণ বলে এবং এসব কেলাসকে দ্বৈত প্রতিসারক কেলাস বলে। কোয়ার্টজ ও ক্যালসাইট দ্বৈত প্রতিসারক কেলাস।

(জ) ব্রুস্টারের সূত্র (Brewster’s law) : সমবর্তন কোণের ট্যানজেন্ট প্রতিফলক মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্কের সমান।

(ঝ) ম্যালাসের সূত্র (Malus’s law) : সমবর্তিত আলোক বিশ্লেষকের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে এর তীব্রতা সমবর্তক ও বিশ্লেষকের সমবর্তন অক্ষয়ের মধ্যবর্তী কোণের কোসাইনের বর্গের সমানুপাতিক হয়। নিঃসৃত আলোর তীব্রতা I এবং সমবর্তন অক্ষয়ের মধ্যবর্তী কোণ হলে, I \infty(\cos \theta)^{2}