দূষক, এসিড বৃষ্টি
দূষক, এসিড বৃষ্টি (Pollutants, Acid Rain)
প্রশ্ন-৮ : দূষক কী ? এর শ্রেণিবিভাগ লিখ।
উত্তর : দূষক : কোনো পদার্থ পরিবেশে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রাচুর্য অপেক্ষা অধিক পরিমাণে উপস্থিত থেকে মনুষ্যজাতি অথবা অন্যান্য জীবের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করলে ঐ পদার্থটিকে দূষক বলা হয়। বায়ুতে স্বল্পমাত্রায় (0.1 ppm) CO থাকে। কিন্তু এর পরিমাণ বেড়ে 40 ppm বা তার বেশি হলে এটি দূষক হিসেবে বিবেচিত হয়। দূষক দুই প্রকার – প্রাথমিক (প্রাইমারী) ও গৌণ (সেকেন্ডারী) দূষক।
প্রাইমারী দূষক (Primary Pollutants) : যেসব দূষক কোনো উৎস হতে নির্গত হয়ে সরাসরি অপরিবর্তিত অবস্থায় পরিবেশে আসে তাদের প্রাইমারী দূষক বলা হয়। যেমন – হাইড্রোকার্বনসমূহ, ছাই, ধূলিকণা ইত্যাদি।
সেকেন্ডারী দূষক (Secondery Pollutants) : এই প্রকারের দূষক কোনো উৎস হতে নির্গত হয়ে সরাসরি অপরিবর্তিত অবস্থায় পরিবেশে আসে না। পরিবেশেস্থিত দূষকগুলি পারস্পরিক বিক্রিয়ায় বা প্রাথমিক দূষকের সঙ্গে পরিবেশের কোনো একটি উপাদানের বিক্রিয়ায় যেসব ক্ষতিকারক পদার্থ সৃষ্টি হয় তাদের গৌণ দূষক বলে। যেমন – পারঅক্সিঅ্যাসাইল নাইট্রেট (PAN), ডাই মিথাইল মার্কারি ইত্যাদি।
এসিড বৃষ্টি ও এর প্রতিকার (Acid Rain and its Prevention)
স্বাভাবিক বৃষ্টির জলে বায়ুর দ্রবীভূত অবস্থায় কার্বনিক এসিড রূপে থাকে। কার্বনিক এসিড দুর্বল এসিড হওয়ায় এটি কম পরিমাণে আয়নিত হয়ে থাকে এবং বৃষ্টির জলে pH এর সবচেয়ে কম মান হতে পারে 5.61;
এসিড বৃষ্টি : বায়ুমণ্ডলে অধঃক্ষেপণ বৃষ্টিতে pH এর মান 5.6 এর কম হলেই ঐ অধঃক্ষেপণকে এসিড বৃষ্টি বলে।
প্রশ্ন-৯ : এসিড বৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : এসিড বৃষ্টির মূল কারণ হলো বায়ুমণ্ডলে অম্লধর্মী গ্যাসীয় Oxide এর নিঃসরণ, যা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম যেকোনো উৎস থেকেই নিঃসৃত হতে পারে। এসিড বৃষ্টিতে এর উপস্থিতি দুই-তৃতীয়াংশ, প্রায় 30% এবং সহ অন্যান্য এসিড খুবই কম।
(i) প্রাকৃতিক কারণ : আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত, দাবানল ও উদ্ভিদের পচনের ফলে নিঃসৃত বায়ুমণ্ডলের আর্দ্র পরিবেশের সংস্পর্শে এসিড তৈরি করে যা আর্দ্র ও শুষ্ক আবহাওয়া অঞ্চলে এসিড বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে।
(ক)
(খ)
(গ)
(ঘ)
(ii) কৃত্রিম কারণ : মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণ যেমন – মাত্রাতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির দহন এর উৎস), শিল্পকারখানা নিঃসৃত ধোঁয়া এসিড বাষ্প এর উৎস), যানবাহনে নিঃসৃত ধোঁয়া ইত্যাদি) ইত্যাদির মাধ্যমে উল্লেখিত অম্লধর্মী Oxide সমূহ সরাসরি বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হয়ে বায়ুতে বিদ্যমান জলীয় বাষ্পের সাথে যুক্ত হয়ে জাতীয় এসিড তৈরি হয়। পরবর্তীতে এ এসিডসমূহ বৃষ্টি, কুয়াশা, ধোঁয়াশা, তুষারপাতের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এসিড বৃষ্টি শুধুমাত্র ধোঁয়া নির্গমনকারী অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে না। ভূপৃষ্ঠে নির্গত ধোঁয়া উৎপন্ন স্থানের চারপাশে 100km এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতএব, শহর ও শিল্প এলাকার পারিপার্শ্বিক 100km অঞ্চলের মধ্যে এসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
বিক্রিয়া :
Dry deposition Wet deposition
(ক) (ক)
(খ)
(গ)
(খ)
(iii) যানবাহন ও বিভিন্ন ধরণের উপাদানের পৃষ্ঠে প্রদত্ত আবরণের উপর প্রভাব : এসিড বৃষ্টি সরাসরি যানবাহন ও
বিভিন্ন আবরণকারী (Coating) উপাদানের সংস্পর্শে আসলে সে অঞ্চলের আবরণ নষ্ট করে।
(iv) রাসায়নিক উপাদানের উপর প্রভাব : বিভিন্ন ধাতব উপাদান (ব্রোঞ্জ, লোহা) এসিড বৃষ্টির সংস্পর্শে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
(v) স্বাস্থ্যের উপর এসিড বৃষ্টির প্রভাব : উপাদান শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন-১০ : এসিড বৃষ্টির প্রতিকার (Remedy for Acid rain)
উত্তর : (i) প্রাকৃতিক উৎস থেকে নিঃসরণ কমানো :
(ii) মানবসৃষ্ট নিঃসরণের পরিমাণ কমানো :
প্রশ্ন-১১ : এসিড বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব (Hazardous impact of Acid rain) :
উত্তর : মাটি ও উদ্ভিদের উপর প্রভাব : এসিড বৃষ্টির কারণে মাটির pH কমে যায়। এতে মাটির বসবাসরত অণুজীব গুলো মরে যায়, ফলে মাটির উর্বরতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এসিড বৃষ্টির প্রভাবে মাটির বিভিন্ন ধাতু এবং ধাতব লবণগুলোর দ্রবণীয়তার পরিবর্তন ঘটে; এতে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মাটি থেকে সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। যে কারণে গাছের পাতা ঝলসে ও কুঁকড়ে যায়, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় এবং গাছের বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। উল্লেক্ষ, মাটির pH 3 অপেক্ষা কম হলে সেখানে আর ফসল উৎপাদন সম্ভব হয় না।
জলজ জীবের উপর প্রভাব : এসিড বৃষ্টির কারণে পানির pH হ্রাস পাওয়ায় মাছের খাবার ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জিয়োপ্ল্যাঙ্কটন উৎপাদন হ্রাস পায়, মাছের প্রজনন ও ডিম উৎপাদন কমে যায়। জলাধারের পানির অম্লত্ব খুব বেশি হলে পানিতে সৃষ্টি হয়,। কারণ, জলাধারের মাটির অদ্রবণীয় ক্ষারকীয় উপাদান এর সাথে বিক্রিয়া করে সৃষ্টি করে। জলাশয়ের মাছের শ্বাসতন্ত্র আক্রমন করে; ফলে মাছ অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মারা যায়। এক কথায় এসিড বৃষ্টির কারণে জলমণ্ডলের ইকোসিস্টেম চরমভাবে ব্যাহত হয়।
স্থাপত্য ও ইমারতের উপর প্রভাব : এসিড বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা, মারবেল পাথর নির্মিত বিল্ডিং, স্মৃতিসৌধ , ভাস্কর্য, ধাতব সেতু প্রভৃতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ পাথর ও ধাতব পদার্থের সাথে এসিড বিক্রিয়া করে এদের ক্ষয় সাধন করে থাকে।
মানুষের উপর প্রভাব : এসিড বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন ধাতব সেতু পদার্থ পানিতে মিশে যায় এবং এগুলো পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। এসিড বৃষ্টি মানুষের চুল ও ত্বকের ক্ষতি করে। তাছাড়া মিশ্রিত পানি গ্রহণ করলে মানুষের শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাক ক্রিয়া দারুনভাবে ব্যাহত হয়।
এসিড বৃষ্টি হ্রাসের উপায় : মানুষ তার প্রয়োজনে সালফার যুক্ত জ্বালানি দহন করে চলেছে এবং বাতাসে প্রচুর পরিমাণে প্রতিনিয়ত যুক্ত হয়ে এসিড বৃষ্টির প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের পদক্ষেপ নিম্নরূপ :
১. সালফার যুক্ত জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে কম সালফার যুক্ত জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে।
২. জ্বালানি দহনের ফলে সৃষ্ট কে ফিলটার করে আলাদা করতে হবে। চিমনির মুখে ক্ষারকীয়
উপাদানের প্রজেক্ট স্থাপন করে অপসরণ করা সম্ভব।
৩. বিকল্প জ্বালানি যেমন – সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, ফুয়েল সেল প্রভৃতির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৪. এমন মোটরযান আবিষ্কার করতে হবে যা বায়ুতে এবং সৃষ্টি করবে না। এক্ষেত্রে ফুয়েল সেল প্রযুক্তি
ভালো ফলাফল দিবে। কারণ ফুয়েল সেলে কোনো ফসিল জ্বালানি করা হয় না।
প্রশ্ন-১২ : PAN এবং ফটোকেমিক্যাল স্মোগ কী ?
উত্তর : বিভিন্ন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ও অন্যতম বায়ুদূষক ডিজেল ইঞ্জিনে দহনমুক্ত হাইড্রোকার্বন এবং বিভিন্ন ফ্রি-রেডিকেল মিলে পারক্সি অ্যাসাইল নাইট্রেট, নামে মিশ্র বায়ু দূষক সৃষ্টি হয়।
হাইড্রোকার্বন বাষ্প hv
এ মিশ্র বায়ু দূষক বিভিন্ন শহর এলাকায় ভোরবেলা নিচু আকাশে বাদামি কুয়াশাস্তর সৃষ্টি করে। এটিকে ফটোকেমিকাল স্মোগ (Photo Chemical Smog) বলে। এ কুয়াশার সংস্পর্শে নাক ও চোখ ভীষণ জ্বালা করে। (Smog = smoke + fog)
প্রশ্ন-১৩ : ইউট্রিফিকেশন কী ?
উত্তর : পানিতে বিভিন্ন পুস্তিকারক পদার্থের (N, P) প্রভাবে শৈবাল, কচুরিপানা ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধির ঘটনাকে ইউট্রিফিকেশন বলে।
প্রশ্ন-১৪ : প্রলম্বিত কণা কী ?
উত্তর : বিভিন্ন কলকারখান থেকে নির্গত ধোঁয়া বা কণা এবং তেলের অসম্পূর্ণ দহনে সৃষ্ট ক্ষুদ্র কণা বাতাসে মিশে যায়। বায়ুতে প্রলম্বিত এসকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কঠিন ও তরল কণাকে প্রলম্বিত কণা বলা হয়। এ সমস্ত কণাকে Particulates বলা হয়।