ঘাসফড়িং-এর শ্বসনতন্ত্র, শ্বসন পদ্ধতি, সংবেদী অঙ্গ
ঘাসফড়িং-এর শ্বসনতন্ত্র (Respiratory system of Grasshopper)
অন্যান্য স্থলচর পতঙ্গের মতো ঘাসফড়িংও শ্বসনের জন্য বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে। এদের শ্বসনতন্ত্র বেশ উন্নত হওয়ায় রক্তের অক্সিজেন বহনে অক্ষমতার ঘাটতি অনেকখানি পূরণ হয়েছে। ট্রাকিয়া নামক এক ধরনের সুক্ষ্ণ শ্বাসনালির শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে পরিবেশ গৃহীত অক্সিজেন সরাসরি দেহকোষে প্রবেশ করে এবং দেহকোষে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড একই পথে দেহনির্গত হয়। শ্বসন সম্পাদনের জন্য ট্রাকিয়া ও এর শাখা-প্রশাখাগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে ঘাসফড়িং-এ যে বিশেষ ধরনের শ্বসনতন্ত্র সৃষ্টি করেছে, তার নাম ট্রাকিয়ালতন্ত্র (trachaeal system)। ঘাসফড়িং-এর ট্রাকিয়ালতন্ত্র (শ্বসনতন্ত্র) নিচে বর্ণিত অঙ্গগুলো নিয়ে গঠিত।
১. শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাকল (Spiracle) : এগুলো ট্রাকিয়ালতন্ত্রের উন্মুক্ত ছিদ্রপথ। ঘাসফড়িং-এর দেহের উভয় পাশে মোট দশজোড়া শ্বাসরন্ধ্র রয়েছে। এর মধ্যে দুজোড়া বক্ষীয় অঞ্চলে এবং আটজোড়া উদরীয় অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিটি শ্বাসরন্ধ্র ডিম্বাকার ছিদ্রবিশেষ এবং পেরিট্রিম (peritreme) নামক কাইটিননির্মিত প্রাচীরে পরিবেষ্টিত থাকে। রন্ধ্রগুলোর মুখে সূক্ষ্ন রোমযুক্ত ছাঁকনি যন্ত্র (filtering apparatus) থাকায় ধূলাবালি, জীবাণু, পানি ইত্যাদি ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। পেশি নিয়ন্ত্রিত কপাটিকার সাহায্যে রন্ধ্রগুলো খোলে বা বন্ধ হয়। শ্বাসরন্ধ্র বন্ধ থাকলে দেহ থেকে জলীয় বাষ্প বেরোতে পারে না।
চিত্র : ঘাসফড়িং-এর শ্বসনতন্ত্র (পার্শ্ব দৃশ্য)
২. শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া (Tracheae) : প্রতিটি শ্বাসরন্ধ্র অ্যাট্রিয়াম (atrium) নামক একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে উন্মুক্ত। এখান থেকেই উৎপন্ন হয় সূক্ষ্ণ শাখা-প্রশাখাযুক্ত, স্থিতিস্থাপক, বহিঃত্বকীয় (ectodermal) ট্রাকিয়া যা ঘাসফড়িং-এর প্রধান শ্বসন অঙ্গ এবং সারাদেহে জালিকাকারে বিস্তৃত। ট্রাকিয়া ত্বকের অস্তঃপ্রবর্ধক হিসেবে গঠিত হয়। এদের প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট। বাইরের এপিডার্মিস গঠিত ভিত্তিঝিল্লি (basement membeine), মাঝখানে চাপা বহুভূজাকার কোযে গঠিত এপিথেলিয়াম (epithelium) এবং ভিতরের কিউটিকল নির্মিত ইন্টির্মা (intima)।
ট্রাকিয়ার অন্তঃস্থ গহ্বর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হয়। এ গহ্বরে কিছুটা পরপর ইন্টিমা পুরু হয়ে আংটির মতো বলয় গঠন করে। এগুলোর নাম টিনিডিয়া (ctenidia)। টিনিডিয়া থাকায় ট্রাকিয়া কখনও চুপসে যায় না। দেহে ট্রাকিয়া জালিকাকারে বিন্যস্ত থাকলেও প্রধান কয়েকটি নালি অনুদৈর্ঘ্য ও অনুপ্রস্থ বিন্যস্ত থাকে। এগুলোকে ট্রাকিয়াল কাণ্ড (tractical trunk) বলে। মোট তিনজোড়া অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড দেহের দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত থাকে। যেমন-
- একজোড়া পার্শ্বীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড (lateral longitudinal tracheal trunk),
- একজোড়া পৃষ্ঠীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড (dorsal longitudinal tracheal trunk) এবং
- একজোড়া অক্ষীয় অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড (ventral longitudinal tracheal trunk)
দেহের প্রতিপাশে অবস্থিত পার্শ্বীয় ট্রাকিয়াল কাণ্ড থেকে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয়দিকে কতগুলো অনুগ্রন্থ ট্রাকিয়াল কাণ্ড (transeverse tracheal trunk) সৃষ্টি হয়ে যথাক্রমে পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় ট্রাকিয়াল কান্ডকে যুক্ত করে। ট্রাকিয়া সমগ্র দেহে শ্বসনিক গ্যাস পরিবহন করে।
৩. ট্রাকিওল (Tracheole) : ট্রাকিয়া থেকে ট্রাকিওল নামে সুক্ষ্ণ শাখা সৃষ্টি হয়। এগুলো এককোষী নালিকা, মাত্র ১μm ব্যাসবিশিষ্ট, প্রাচীর ইন্টিমা ও টিনিডিয়াবিহীন কিন্তু এগুলোর অভ্যন্তর টিস্যুরসে পূর্ণ থাকে। এ টিস্যুরসই অন্যান্য প্রাণীর রক্তের মতো শ্বসনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। এ রসের মাধ্যমে দেহকোষে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে।
চিত্র : ট্রাকিয়ার অংশবিশেষ বিবর্ধিত
৪. বায়ুথলি (Air sac) : ট্রাকিয়ার কিছু শাখা প্রসারিত হয়ে বড় ইন্টিমাবিহীন ও পাতলা প্রাচীরযুক্ত বায়ুথলি গঠন করে। এসব থলিতে বাতাস জমা থাকে এবং শ্বসনের সময় বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
চিত্র : একটি বায়ুথলি
ট্রাকিয়া ও ট্রাকিওলের মধ্যে পার্থক্য | |
ট্রাকিয়া | ট্রাকিওল |
১. পতঙ্গ শ্রেণির প্রাণিদের শ্বাসনালির নাম ট্রাকিয়া। | ১. ট্রাকিয়ার অতিসুক্ষ্ম শাখার নাম ট্রাকিওল। |
২. শাখান্বিত, প্রশস্ত গহবরযুক্ত। | ২. শাখাহীন সরু গহ্বরযুক্ত |
৩. অ্যাট্রিয়াম থেকে সৃষ্টি হয়। | ৩. ট্রাকিওল কোষ হতে উৎপন্ন হয়। |
৪. প্রাচীর কিউটিকল ও ইন্টিমাযুক্ত, ইন্টিমা থাকায় প্রাচীর কখনোই চুপসে যায় না। | ৪. প্রাচীর কিউটিকল নির্মিত, তবে ইন্টিমাবিহীন, ফলে গহ্বর শূন্য থাকলে প্রাচীর চুপসে যায়। |
৫. লুমেন বা গহ্বর বায়ুপূর্ণ থাকে। | ৫. লুমেন বা গহ্বর তরলে পূর্ণ থাকে। |
৬. দেহটিস্যুর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে না। | ৬. দেহটিস্যুর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে। |
শ্বসন পদ্ধতি (Process of Respiration)
শ্বাসরঞ্জক না থাকায় ঘাসফড়িং-এর রক্ত শ্বসনে তেমন ভূমিকা পালন করতে পারে না। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জালিকার মতো ছড়িয়ে থাকা ট্রাকিয়া ও ট্রাকিওলের মাধ্যমে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে। শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ উভয় প্রক্রিয়া প্রধানত শ্বাসরন্ত্র দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। পেশির কার্যকারিতায় উদরের ছন্দময় সংকোচন-প্রসারণের ফলে বায়ু (\mathrm{O}_{2}) দেহে প্রবেশ করে এবং ট্রাকিয়ালতন্ত্র থেকে বায়ু (\mathrm{C}_{2}) বেরিয়ে আসে।
ক. শ্বাসগ্রহণ বা প্রশ্বাস (Inspiration) : পেশির প্রসারণে উদরীয় খণ্ডকগুলো প্রসারিত হলে ট্রাকিয়ার অন্তঃস্থ গহ্বরও আয়তনে বৃদ্ধি পায়। এ সময় প্রথম চারজোড়া শ্বাসরন্ধ্র অর্থাৎ প্রশ্বাসী শ্বাসরন্ধ্রগুলো (inhalatory spiracle) খুলে যায় ফলে \mathrm{O}_{2}-যুক্ত বায়ু প্রথমে শ্বাসরন্ধ্রের মাধ্যমে ট্রাকিয়ায় পৌঁছে, পরে সেখান থেকে ট্রাকিওল (টিস্যুরসে দ্রবীভূত হয়) ও বায়ুথলির মাধ্যমে অন্তঃকোষীয় স্থানে পৌঁছায়।
খ. শ্বাসত্যাগ বা নিঃশ্বাস (Expiration) : শ্বাসত্যাগ একটি নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়া। কোষীয় শ্বসনে সৃষ্ট \mathrm{C}_{2} ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ট্রাকিওল রসে আসে এবং সেখান থেকে ট্রাকিয়ায় প্রবেশ করে। বক্ষীয় ও উদরীয় পেশির সংকোচনের ফলে দেহকগুকগুলোর সংকোচন ঘটে এবং সাথে সাথে ট্রাকিয়ার অভ্যন্তরের আয়তন হ্রাস পায়। এসময় বাকি ছয় জোড়া শ্বাসরন্ধ্র খুলে যায় যার মধ্য দিয়ে ট্রাকিয়া থেকে \mathrm{C}_{2} সমৃদ্ধ বায়ু দ্রুত বের হয়ে যায়। মূলত নিঃশ্বাসের সময় খুব অল্প পরিমাণ \mathrm{C}_{2} দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়। কোষে উৎপন্ন অধিকাংশ \mathrm{C}_{2} ই রক্তের প্লাজমা দ্বারা পরিবাহিত হয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দেহতল দ্বারা নিষ্ক্রান্ত হয়।
চিত্র : শ্বসনের গতিপথের রেখাচিত্র
ঘাসফড়িং-এর রেচন তন্ত্র (Excretory System)
আমিষজাতীয় খাদ্য বিপাকে সৃষ্ট নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াকে রেচন (excretion) বলে। অন্যসব পতঙ্গের মতো ঘাসফড়িং-এর প্রধান রেচন অঙ্গ ম্যালপিজিয়ান নালিকা (malpighian tubule)। তবে মেদপুঞ্জের কিছু কোষ অর্থাৎ ইউরেট কোষ, ইউরিকোজ গ্রন্থি, নেফ্রোসাইট এবং কিউটিকল অতিরিক্ত রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
ম্যালপিজিয়ান নালিকা (Malpighian tubule)
নামকরণ : Marcello Malpighi (1628-1694) নামক এক ইতালীয় চিকিৎসক ও জীববিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ১৬৬৯ সালে এ নালিকা আবিষ্কার করলে তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়।
অবস্থান : মধ্য ও পশ্চাৎ-পৌষ্টিকনালির সংযোগস্থলে অসংখ্য সুতার মতো ম্যালপিজিয়ান নালিকা হিমোসিলে বিস্তৃত থাকে। এগুলোর মুক্ত প্রান্ত বদ্ধ এবং হিমোসিল গহ্বরে হিমোলিম্ফের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। অন্যপ্রান্ত পৌষ্টিকনালির গহবরে উন্মুক্ত।
গঠন : প্রতিটি ম্যালপিজিয়ান নালিকা প্রায় ২৫ মিলিমিটার লম্বা, এক মিলিমিটার ব্যাসযুক্ত, সরু, নলাকার, ইলাস্টিক ও ফাঁপা। নালিকার ভিতরের ফাঁপা গহবরকে লুমেন (lumen) বলে। প্রতিটি নালিকার প্রাচীর একস্তরবিশিষ্ট এপিথেলিয়াম কোষে গঠিত। কোষস্তরের বাইরের দিক একটি ভিত্তি পর্দা (basement membrane)-য় এবং ভিতরের দিক অসংখ্য মাইক্রোভিলাই (microvilli) দিয়ে আবৃত। মাইক্রোভিলাই সম্মিলিতভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্রাশ বর্ডার (brush border) গঠন করে। নালিকাগুলো নিজে ততটা নড়নক্ষম নয় বরং হিমোসিলে হিমোলিম্ফের আন্দোলনে এগুলো রেচন সম্পন্ন করে।
চিত্র : ম্যালপিজিয়িান নালিকার গঠন A প্রস্থচ্ছেদ; B লম্বচ্ছেদ
রেচন প্রক্রিয়া : ম্যালপিজিয়ান নালিকার বদ্ধ প্রান্ত হিমোলিম্ফে ভাসমান অবস্থায় থেকে রক্ত থেকে পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। পরে পটাসিয়াম ইউরেট নালিকার কোষের মধ্যে পানি কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে, পটাসিয়াম বাই-কার্বনেট ও ইউরিক এসিড উৎপন্ন করে। পটাসিয়াম বাইকার্বনেট ও পানি পুনঃশোষিত হয়ে হিমোলিম্ফে ফিরে আসে। কিন্তু ইউরিক এসিড নালিকা গহ্বর বা লুমেন (lumen)–এ রয়ে যায়। ইউরিক এসিড সিলিয়ার আন্দোলনের ফলে ম্যালপিজিয়ান নালিকার গোড়ার অংশ হয়ে পৌষ্টিকনালিতে প্রবেশ করে এবং পশ্চাৎঅন্ত্রে গমন করে। মলাশয়ে অবস্থানকালে ইউরিক এসিড থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণের ফলে শুষ্ক ইউরিক এসিড দানা হিসেবে মলের সাথে বেরিয়ে যায়।
চিত্র : ম্যালপিজিয়ান নালিকার লম্বচ্ছেদ কার্যপদ্ধতি দেখানো হয়েছে
অতিরিক্ত বা আনুষঙ্গিক রেচন অঙ্গ (Accessory Excretory Organ)
- ইউরেট কোষ (Urate cell) : ঘাসফড়িং-এর দেহে অসংখ্য ফ্যাট বডি বা চর্বিকোষ থাকে। এগুলো প্রধানত শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যকে পরিবর্তিতরূপে জমা রাখে। তাছাড়া এগুলো হিমোলিম্ফে বিদ্যমান কিছু ইউরিক এসিড ও ইউরেট কোষের মধ্যেই আজীবন জমা করে রাখে। এসব পদার্থ সঞ্চয়ের কারণে কোষগুলো ইউরেট কোষ নামে পরিচিত।
- ইউরিকোজ গ্রন্থি (Uricose glands) : পুরুষ ঘাসফড়িংয়ের মাশরুম গ্রন্থিতে ইউরিকোজ গ্রন্থি অবস্থান করায়। হিমোসিল থেকে রেচন দ্রব্য শোষণ করে ইউরিক এসিডরূপে জমা করে। সংগমের সময় এসব বর্জ্য শুক্রাণুর সাথে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।
- নেফ্রোসাইট (Nephrocyte) : পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে হৃৎযন্ত্রের পার্শ্বদেশে অবস্থিত নেফ্রোসাইট রেচন দ্রব্য সংগ্রহ করে রক্তের মাধ্যমে নিষ্কাশন করে।
- কিউটিকল (Cuticle) : নিম্ফ দশায় হিমোসিলে ভাসমান অ্যামিবা সদৃশ কিছু অ্যামিবোসাইট (amoebocyte) কোষ রক্ত থেকে রেচন দ্রব্য সংগ্রহ করে কিউটিকলের নিচে সঞ্চয় করে। খোলস মোচনের সময় পুরাতন কিউটিকলসহ সঞ্চিত রেচন দ্রব্য পরিত্যক্ত হয়।
ম্যালপিজিয়ান নালিকা ও ম্যালপিজিয়ান বডির মধ্যে পার্থক্য | ||
পার্থক্যের বিষয় | ম্যালপিজিয়ান নালিকা | ম্যালপিজিয়ান বডি |
১. প্রকৃতি | ঘাসফড়িংসহ সকল পতঙ্গের প্রধান রেচন অঙ্গ। | মানুষসহ সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীর রেচন অঙ্গের অংশ। |
২. অবস্থান | প্রাণীর অন্ত্রের প্রাচীরে গুচ্ছাকারে অবস্থান করে। | প্রাণীর বৃক্কের নেফ্রনে এককভাবে অবস্থান করে। |
৩. সংখ্যা | অল্প, প্রতি ঘাসফড়িংয়ে প্রায় ১০০টি। | অসংখ্য মানুষের দুই বৃক্কে প্রায় ২০ লক্ষ। |
৪. গঠন | সূক্ষ্ম সুতার মতো, নলাকার; এপিথেলিয়াম আবরণ ও ভিত্তি পর্দা নিয়ে গঠিত। | গোলাকার; কাপের মতো বোম্যানস ক্যাপস্যুল এবং কৈশিকজালিকার পিন্ড গ্লোমেরুলাস নিয়ে গঠিত। |
৫. সংযুক্তি | একপ্রান্ত হিমোসিলে মুক্ত থাকে, অন্যপ্রান্ত অন্ত্রের সাথে যুক্ত থাকে। | একপ্রান্ত নেফ্রনের প্রক্সিমাল প্যাঁচানো নালিকার সাথে এবং অন্যপ্রান্ত রক্তনালিকার সাথে যুক্ত থাকে। |
৬. কার্যপদ্ধতি | হিমোসিলে বিদ্যমান হিমোলিম্ফ থেকে রেচনবর্জ্য সংগ্রহ করে পৌষ্টিকনালিতে প্রেরণ করে। | রক্ত থেকে সূক্ষ্ম ছাঁকনের মাধ্যমে রেচনবর্জ্যসহ অনেক প্রয়োজনীয় বস্তু সংগ্রহ করে নেফ্রন নালিকায় প্রেরণ করে। |
ঘাসফড়িং-এর সংবেদী অঙ্গ (Sensory organs of Grasshopper)
যেসব গ্রাহক অঙ্গের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে প্রাণিদেহে আগত বিশেষ উদ্দীপনা (স্পর্শ, ঘ্রাণ, স্বাদ, শব্দ, চাপ, তাপ ও আলোর তীব্রতা ইত্যাদি) গৃহীত হয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরিত হয় এবং উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করে তাকে সংবেদী অঙ্গ বা জ্ঞানেন্দ্রিয় বলে। ঘাসফড়িংয়ে নিচে বর্ণিত সংবেদী অঙ্গ দেখা যায়–
১. স্পর্শেন্দ্রিয় (Tactile organs) : ঘাসফড়িং-এর দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অবস্থিত ছোট ছোট রোম ও ব্রিসল (bristle) স্পর্শেন্দ্রিয় হিসেবে কাজ করে। রোমগুলো শুঙ্গ, পাল্প, সারকি এবং পায়ের দূরবর্তী খণ্ডাংশে (distal segments) বিদ্যমান থাকে। এরা স্পর্শের মাধ্যমে অনুভূতি সংগ্রহ করে।
২. ঘ্রাণেন্দ্রিয় (Olfactory organs) : ঘাসফড়িং-এর মাথার সামনে দুটি শুঙ্গ বা অ্যান্টেনা অবস্থিত। শুঙ্গদুটিতে বিদ্যমান রোম বস্তুর গন্ধ বা সৌরভ সংগ্রহকারী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। শুঙ্গ এদিক ওদিক নাড়াচাড়া করে খাদ্য নির্বাচন ও সংগ্রহের প্রয়োজন অনুভব করে।
৩. স্বাদেন্দ্রিয় (Gustatory organs) : ঘাসফড়িং খুব সহজেই খাদ্যবস্তুর স্বাদ নিতে পারে। এদের স্বাদগ্রহণ ক্ষমতা বেশ প্রখর। স্বাদেন্দ্রিয় অঙ্গ প্রধানত মুখোপাঙ্গে থাকে। ম্যাক্সিলারি পাল্প ও ল্যাবিয়ামে অবস্থিত রোমের মাধ্যমে এরা খাদ্যবস্তুর স্বাদ গ্রহণ করে।
৪. দর্শনেন্দ্রিয় (Visual organs) : ঘাসফড়িং-এ দর্শনাঙ্গ হিসেবে ওসেলি ও পুঞ্জাক্ষি উভয়ই উপস্থিত থাকে। ওসেলির সাহায্যে ঘাসফড়িং আলোর তীব্রতার পরিবর্তন অনুধাবন করে। পুঞ্জাক্ষিতে দর্শনীয় বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।
৫. শ্রবণেন্দ্রিয় (Auditory organs) : ঘাসফড়িং-এর ১ম উদরীয় খণ্ডকের প্রতিপাশে একটি করে ডিম্বাকারে টিমপেনিক পর্দা (tympanic membrane) রয়েছে যা শ্রবণের জন্য ব্যবহৃত শ্রবণ থলি বা টিমপেনাম (tympanum) কে ঢেকে রাখে। এছাড়া পায়ু সারকিতে অবস্থিত রোমও শ্রবণ অনুভূতি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে।
চিত্র : ঘাসফড়িং-এর শ্রবণাঙ্গ (টিমপেনাম)