বর্ণালি (Spectrum)
তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের বিভিন্ন অঞ্চল(Different regions of electromagnetic radiation:
তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণে তড়িৎক্ষেত্র আর চৌম্বক ক্ষেত্র পরস্পরের সমকোণে থাকে। বিকিরণ সমূহকে কম্পাঙ্ক এবং তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেহেতু \nu \propto \frac{1}{\lambda} তাই যে সমস্ত আলোর বা বিকিরণের তীব্রতা বেশি তাদের তরঙ্গ দৈর্ঘের মান কম হবে। বিকিরণগুলো হলো :
১। \gamma রশ্মি: এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 0.0005-0.01nm পর্যন্ত বিস্তৃত।
২। X-ray: এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বিস্তৃতি হল 0.01nm-10nm
৩। অতিবেগুনী রশ্মি/ UV রশ্মি (Ultra Violet Ray): এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 10 থেকে 375nm, 380nm ও হতে পারে।
৪। দৃশ্যমান অঞ্চল (Visible Light): এটি 380nm-780nm পর্যন্ত বিস্তৃত।
বেগুনী রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 380-424nm
নীল রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 425-450nm
আসমানি রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 451-500nm
সবুজ রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 501-575nm
হলুদ রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 576-590nm
কমলা রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 591-647nm
লাল রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 648-780nm
৫। অবলোহিত রশ্মি (Infrared Ray): এই রশ্মিকে 3টি অঞ্চলে ভাগ করা যায়।
(ক) NIR (Near-IR) নিকট অবলোহিত রশ্মি : এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 0.78-2.5μm
(খ) MIR(Middle-IR) অবলোহিত রশ্মি : 2.5μm-25μm
গ) FIR(Far-IR) অবলোহিত রশ্মি : 25μm-1000μm
৬। মাইক্রোওয়েভ (Microwave) : এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল 1000μm থেকে 100cm
৭। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অঞ্চল (Radio Wave): এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল 100cm থেকে 100km
বর্ণালি (Spectrum)
আলোক বিচ্ছুরণের ফলে সৃষ্ট উপাদান বর্ণগুলোর সমাবেশকে বর্ণালি (Spectrum) বলে। তাছাড়া ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মির সমাবেশকে বর্ণালি (Spectrum) বলে।
পারমাণবিক বর্ণালি ও আলোক বর্ণালি(Atomic Spectrum and Light Spectrum)
পারমাণবিক বর্ণালির (Atomic Spectrum) উদ্ভব হয় মৌলের ইলেক্ট্রনীয় অবস্থান্তরের কারণে। কোনো মৌলিক পদার্থকে উত্তপ্ত করে বাষ্পে পরিণত করার পর এর উপর তড়িৎ চুম্বকীয় রশ্মি আপতিত করলে বাষ্পীয় পরমাণুর বহিঃস্তরের ইলেকট্রন নিম্ন শক্তিস্তর হতে উচ্চ শক্তিস্তরে ধাপান্তরিত হয়। দুটি শক্তিস্তরের পার্থক্য অনুযায়ী শক্তি শোষণ করে এটি উচ্চ শক্তিস্তরে ধাপান্তরিত হয়। আলোক উৎস সরিয়ে নিলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরমাণুর ইলেকট্রন ঐ শক্তি বিকিরণ করে নিম্ন শক্তিস্তরে ফিরে আসে। শােষণ প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত বর্ণালিকে শোষণ বর্ণালি এবং বিকিরণের ফলে সৃষ্ট বর্ণালিকে বিকিরণ বর্ণালি বলা হয়। এ উভয় প্রকার বর্ণালি পারমাণবিক বর্ণালির দুটি শ্রেণিবিভাগ। মৌল সনাক্তকরণে এ বর্ণালি ব্যবহৃত হয়।
যৌগের অণুর সাথে তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের পারস্পরিক মিথস্ত্রিয়ার ফলে যে বর্ণালীর উদ্ভব ঘটে তাকে আণবিক বর্ণালি বলে। এ বিশ্লেষণ করে অণুর গঠন আকৃতি, বন্ধন কোণ, আণবিক ভর ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেমন: মাইক্রোওয়েভ রশ্মি শােষিত হলে অণুসমূহের আবর্তন শক্তির পরিবর্তন ঘটে। অবলোহিত রশ্মি শােষিত হলে অণুর অভ্যন্তরে পরমাণুসমূহের কম্পনীয় শক্তির পরিবর্তন ঘটে। কোনো গ্যাস বা বাষ্পকে উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে বা এর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ চালনা করা হলে যে শক্তি তরঙ্গাকারে নির্গত হয় তাকে প্রিজম বা অনুরূপ যন্ত্রের মধ্য দিয়ে চালনা করলে সৃষ্ট বর্ণালিতে বেশি কিছু একক বা যৌথ লাইন পাওয়া যায় যাদের অবস্থান নির্দিষ্ট অর্থাৎ যাদের স্পন্দন সংখ্যা নির্দিষ্ট ।
বর্ণালির একক লাইনগুলো পরমাণু থেকে উৎপন্ন তাই এদেরকে পারমাণবিক রেখা বর্ণালি(Line Spectrum) বা পারমাণবিক বর্ণালি বলা হয়। অপরদিকে বর্ণালিতে যে সমস্ত যৌথ লাইন পাওয়া যায় প্রকৃতপক্ষে পরস্পরের অতি নিকট অনেকগুলো একক লাইনের সমষ্টি এবং তা অণু হতে সৃষ্ট হয় বলে তাকে আণবিক বর্ণালি(Molecular Spectrum) বলা হয় ।
হাইড্রোজেনের পারমাণবিক বর্ণালি(Atomic Spectrum of Hydrogen)
একটি কাচনলে বা বিদ্যুৎক্ষরণনলে বা ডিসচার্জ টিউবে নিম্নচাপে রাখা হাইড্রোজেন গ্যাসের ভিতর উচ্চ শক্তির বিদ্যুৎ চালনা করা হলে ঐ গ্যাসের ভেতর থেকে আলোর বিকিরণ ঘটে। এই বিকিরিত আলোকে স্পেক্ট্রোস্কোপের প্রিজমের মধ্য দিয়ে এর পর্দার ফটোগ্রাফিক প্লেটে ফেললে কতগুলো সুস্পষ্ট রঙিন রেখা দেখা যায়। এ উজ্জ্বল আলোক রেখার সমাহারকে হাইড্রোজনের পারমাণবিক বর্ণালি বলে।
বর্ণালি (Spectrum) সৃষ্টির কারণ :
উচ্চ বিদ্যুৎ শক্তির প্রভাবে H_2 অণু প্রথমে পরমাণুতে পরিণত হয়। পরে H_2এর অসংখ্য পরমাণুতে ইলেকট্রন বিভিন্ন পরিমাণে শক্তি শােষণ করে উদ্দীপিত বা উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন শক্তিস্তরে লাফিয়ে চলে। শক্তির উৎস সরিয়ে নিলে ইলেকট্রনগুলো শক্তি বিকিরণ করে বিভিন্ন নিম্ন শক্তিস্তরে ফিরে আসে। তখন অসংখ্য H পরমাণুর উচ্চ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন একই নিম্নশক্তিস্তরে বা ভিন্ন শক্তিস্তরে ফিরে আসে। ফলে সৃষ্ট রেখা বর্ণালির পাশাপাশি রেখাগুলো বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের হয়। তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের বর্ণালি (Spectrum) পাওয়া যায়। আলোর বিভিন্ন অঞ্চলে H পরমাণু দ্বারা সৃষ্ট বর্ণালির বিভিন্ন সিরিজের লাইন বা রেখা সমূহের তরঙ্গদৈর্ঘ্য রিডবার্গের সমীকরণের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়। যখন ১টি ইলেকট্রন উচ্চশক্তিস্তর n_2 হতে নিম্নশক্তিস্তর n_1এ স্থানান্তর হয় তখন বোরের সমীকরণ মতে,
\Delta E=E_{n_2}-E_{n_1} \Big[E=-\frac{2\pi^2mZ^2e^4}{n^2h^2}\Big] \\বা, \Delta E=-\frac{2\pi^2Z^2me^4}{n_2^2h^2}-\Big(-\frac{2\pi^2Z^2me^4}{n_1^2h^2}\Big) \\বা, \Delta E= \frac{2\pi^2Z^2me^4}{h^2}\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)[H এর ক্ষেত্রে Z=1] \\বা, \Delta E=R_y\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)\Big[R_y = \frac{2\pi^2Z^2me^4}{h^2}\Big][R_y = রিডবার্গ ধ্রুবক এর সমান তরঙ্গ সংখ্যা বিশিষ্ট ফোটনের শক্তির একক ]\pi, m, h ও e এর মান বসালে R_y এর মান হয় 2.17\times 10^{-11} erg = 13.55016 eV
বিকিরিত শক্তির মান বের করার জন্য R_y ব্যবহার করা হয়।
আবার,
\Delta E=h\nu=\frac{2\pi^2me^4}{h^2}\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)\\বা, h\frac{c}{\lambda}=\frac{2\pi^2me^4}{h^2}\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)\\বা, \frac{1}{\lambda}=\frac{2\pi^2me^4}{h^2c}\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)\\বা, \frac{1}{\lambda}=\bar{\nu}=R_H\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)......(i)\\ \therefore R_H=\frac{2\pi^2me^4z^2}{h^2c}c.g.s. এককে R_H এর মান 109678 cm^{-1} হয়।
এখন,
H ব্যতিত অন্য পরমাণুর ক্ষেত্রে,
\frac{1}{\lambda}=\bar{\nu}=R_H \times Z^2\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)লাইমেন সিরিজ(Lyman Series):
H -পরমাণুর উচ্চতর শক্তিস্তর (2, 3, 4, 5, 6) হতে প্রথম শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ফিরে আসলে যে বর্ণালি পাওয়া যায় তাই লাইমেন সিরিজ (Lyman Series) । এই সিরিজে প্রদত্ত বর্ণালির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য UV রশ্মির দলভূক্ত। এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সীমা <400 । (1906-1914) সময়কালে Theodore Lyman এ সিরিজ আবিষ্কার করেন।
আমরা জানি, \bar{\nu}=\frac{1}{\lambda}=R_H\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)
১ম রেখার জন্য : \bar{\nu_1}=R_H\Big(\frac{1}{1^2}-\frac{1}{2^2}\Big)=\frac{3}{4}R_H
২য় রেখার জন্য : \bar{\nu_2}=R_H\Big(\frac{1}{1^2}-\frac{1}{3^2}\Big)=\frac{8}{9}R_H
বামার সিরিজ (Balmer Series):
H -পরমাণুর উচ্চতর শক্তিস্তর (n=3, 4, 5, 6) হতে ইলেকট্রন দ্বিতীয় শক্তিস্তরে (n=2) প্রত্যাবর্তন করলে প্রাপ্ত বর্ণালিই বামার সিরিজ (Balmer Series) । এই সিরিজ দৃশ্যমান অঞ্চলে দেখা যায়। 1885 সালে Johann Balmer এ সিরিজ আবিষ্কার করেন।
আমরা জানি, \bar{\nu}=\frac{1}{\lambda}=R_H\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)
এক্ষেত্রে, n_1=2 এবং n_2=2,3,4,5,......
১ম রেখার জন্য : \bar{\nu_1}=R_H\Big(\frac{1}{2^2}-\frac{1}{3^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{4}-\frac{1}{9}\Big)=\frac{5}{36}R_H
২য় রেখার জন্য : \bar{\nu_2}=R_H\Big(\frac{1}{2^2}-\frac{1}{4^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{4}-\frac{1}{16}\Big)=\frac{3}{16}R_H
প্যাশ্চেন সিরিজ (Paschen Series):
1908 সালে জার্মান পদার্থবিদ বিজ্ঞানী প্যাশ্চেন এই সিরিজ আবিষ্কার করেন। এখানে electron H- পরমাণুর উত্তেজিত অবস্থায় ৮ম, ৭ম, ৬ষ্ঠ, ৫ম ও ৪র্থ শক্তিস্তরে হতে ৩য় শক্তিস্তরে প্রবেশ করলে প্যাশ্চেন সিরিজ (Paschen Series): বর্ণালি পাওয়া যায়। এটি IR অঞ্চলে পাওয়া যায়।
প্যাশ্চেন সিরিজের বর্ণালি রেখাসমূহের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে
n_1=3 এবং n_2=4, 5, 6,………
আমরা জানি, \bar{\nu}=\frac{1}{\lambda}=R_H\Big(\frac{1}{n_1^2}-\frac{1}{n_2^2}\Big)
১ম রেখার জন্য : \bar{\nu_1}=R_H\Big(\frac{1}{3^2}-\frac{1}{4^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{9}-\frac{1}{16}\Big)=\frac{7}{144}R_H
২য় রেখার জন্য : \bar{\nu_2}=R_H\Big(\frac{1}{3^2}-\frac{1}{5^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{9}-\frac{1}{25}\Big)=\frac{16}{225}R_H
ব্রাকেট সিরিজ (Brackett Series):
H- পরমাণুর ইলেকট্রনটি উচ্চতর শক্তিস্তর (n=4, 5, 6) হতে ৪র্থ শক্তিস্তরে প্রত্যাবর্তন করলে প্রাপ্ত বর্ণালিই ব্রাকেট সিরিজ। ব্রাকেট সিরিজ দূরবর্তী অবলোহিত অঞ্চলে(FIR) দেখা যায়। 1922 সালে আমেরিকান পদার্থবিদ Frederick Summer Brackett এ সিরিজটি আবিষ্কার করেন।
এক্ষেত্রে, n_1=4 এবং n_2=5, 6, 7,……
∴ ব্রাকেট সিরিজের ১ম রেখার তরঙ্গ সংখ্যা,
\bar{\nu_1}=\frac{1}{\lambda_1}=R_H\Big(\frac{1}{4^2}-\frac{1}{5^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{16}-\frac{1}{25}\Big)=\frac{9}{400}R_H∴ ২য় রেখার তরঙ্গ সংখ্যা,
\bar{\nu_2}=\frac{1}{\lambda_2}=R_H\Big(\frac{1}{4^2}-\frac{1}{6^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{16}-\frac{1}{36}\Big)=\frac{5}{144}R_Hফান্ড সিরিজ (Pfund Series):
1924 সালে August Herman Pfund এ সিরিজ আবিষ্কার করেন। H -পরমাণুর উচ্চতর শক্তিস্তরে (n=6,7) হতে ৫ম শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের যদি প্রত্যাবর্তন ঘটে তবেই ফান্ড সিরিজের বর্ণালি দৃশ্যমান হবে। এই সিরিজ প্রধান বর্ণালি অঞ্চল হবে দূর অবলোহিত (FIR) ।
ফান্ড সিরিজের ক্ষেত্রে, n_1=5 এবং n_2=6, 7, 8,……
এ সিরিজের ১ম রেখার তরঙ্গ সংখ্যা \bar{\nu_1}=R_H\Big(\frac{1}{5^2}-\frac{1}{6^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{25}-\frac{1}{36}\Big)=\frac{11}{900}R_H
এ সিরিজের ২য় রেখার তরঙ্গ সংখ্যা \bar{\nu_2}=R_H\Big(\frac{1}{5^2}-\frac{1}{7^2}\Big)=R_H\Big(\frac{1}{25}-\frac{1}{49}\Big)=\frac{24}{1225}R_H