10 Minute School
Log in

জাতিসংঘ ও এর সংস্থাসমূহ | The United Nations and its Agencies

জাতিপুঞ্জ

  • জাতিপুঞ্জ বা ‘লীগ অফ নেশনস’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২০ সালে ১০ জানুয়ারি। ১৯১৯ সালের প্যারিস শান্তি আলোচনার ফলস্বরূপ জাতিপুঞ্জের জন্ম।
  • জাতিপুঞ্জের প্রস্তাবক ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন।
  • উড্রো উইলসন ১৪ দফা পেশ করেছিলেন যার মধ্যে ১৪ নং প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছিল বিশ্ব শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
  • জাতিপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্র ছিল ৫৮টি রাষ্ট্র। জাতিপুঞ্জের উদ্যোক্তা হয়েও সদস্য ছিল না যুক্তরাষ্ট্র।
  • জাতিপুঞ্জের সদর দপ্তর ছিল জেনেভাতে। পূর্বে ছিল লন্ডনে।
  • জাতিপুঞ্জের ৩টি অঙ্গসংস্থা ছিল- পরিষদ, কাউন্সিল এবং সচিবালয়।
  • জাতিপুঞ্জ আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয় ২০ এপ্রিল, ১৯৪৬ সালে।

জাতিসংঘ ঘোষণা

  • ১লা জানুয়ারি ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রুজভেল্ট, ব্রিটেনের চার্চিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের ম্যাক্সিম লিটভিনভ, চীনের টি ভি সুং একটি সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেন যা জাতিসংঘ ঘোষণা হিসেবে পরিচিত হয়। 
  • জাতিসংঘ নামের প্রস্তাবক ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট।
  • ইয়াল্টা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৫ সালে, ইউক্রেনের ইয়াল্টায়। 
  • সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন (১৯৪৫) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল- ২৬ জুন।
  • সম্মেলনে প্রতিনিধিদের আলাপ-আলোচনা শেষে গৃহীত হয় জাতিসংঘ সনদ। সনদের ধারা ১১১টি।
  • ৫০টি দেশ সনদে স্বাক্ষর করেন।
  • ৫১তম রাষ্ট্র হিসেবে পরবর্তীতে স্বাক্ষর করে পোল্যান্ড। 
  • ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর সনদ কার্যকর হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

জাতিসংঘ সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য

  • জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ৫১টি ।
  • বর্তমান সদস্য ১৯৩টি (সর্বশেষ সদস্য দক্ষিণ সুদান)।
  • জাতিসংঘের নামকরণ করেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ।
  • জাতিসংঘের উদ্যোক্তা রাষ্ট্র – যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ।
  • জাতিসংঘের মূল অঙ্গসংস্থা ৬টি। এগুলো হলো- সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, সচিবালয়, অছি পরিষদ ও আন্তর্জাতিক আদালত।
  • অছি পরিষদের কার্যক্রম ১৯৯৪ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে। 
  • জাতিসংঘ হতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী একমাত্র দেশ- ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘ ত্যাগ করেছিল ১৯৬৫ সালে। পুনরায় ফিরে আসে ১৯৬৬ সালে। 
  • বসনিয়ায় হত্যাকান্ড পরিচালনার জন্য যুগোস্লাভিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করা হয় ১৯৯৭ সালে। 
  • পূর্বে তাইওয়ান জাতিসংঘের সদস্য ছিল, বর্তমানে নেই। তাইওয়ান চীনের নিকট জাতিসংঘের সদস্যপদ হারায় – ১৯৭১ সালে। 
  • জাতিসংঘ ভবন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত। ১৯৫২ সালে নির্মাণের পর থেকে এটি জাতিসংঘের দাপ্তরিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • জাতিসংঘের তিনটি– অতিরিক্ত, সহায়ক ও আঞ্চলিক সদর দপ্তর রয়েছে। এগুলো জেনেভা, ভিয়েনা ও নাইরোবিতে অবস্থিত। 
মহাসচিব মেয়াদকাল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ট্রিগভেলি (নরওয়ে) ১৯৪৬-১৯৫২ একমাত্র স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী মহাসচিব।
দ্যাগ হ্যামারশোল্ড (সুইডেন) ১৯৫৩-১৯৬১
  • দায়িত্বরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬১ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায়।
  • ১৯৬১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
উথান্ট (মিয়ানমার) ১৯৬১-১৯৭২
  • এশিয়া থেকে নির্বাচিত প্রথম মহাসচিব।
  • বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন মহাসচিব।
কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইম (অস্ট্রিয়া) ১৯৭২-১৯৮২
  • পরবর্তীতে অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
  • বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম মহাসচিব।
প্যারেজ দ্য কুয়েলার (পেরু) ১৯৮২ – ১৯৯২
  • দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নির্বাচিত প্রথম মহাসচিব।
  • পরবর্তীতে পেরুর প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
ডঃ বুট্রোস ঘালি (মিশর) ১৯৯২ – ১৯৯৭ আফ্রিকা মহাদেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম মহাসচিব।
কফি আনান (ঘানা) ১৯৯৭ – ২০০৭ ২০০১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন।
বান কি মুন (দক্ষিণ কোরিয়া) ২০০৭ – ২০১৬
  • এশিয়া থেকে নির্বাচিত দ্বিতীয় মহাসচিব।
  • বাংলাদেশে দুই বার সফর করেন।
এন্তোনিও গুতেরেস (পর্তুগাল) ২০১৭ – বর্তমান বর্তমান মহাসচিব।

জাতিসংঘের বিভিন্ন বিশেষায়িত সংস্থাসমূহ

ITU – International Telecommunication Union জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো সংস্থা। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং কমিনিকেশন নেটওয়ার্ক সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে এই সংস্থাটি।
UPU – Universal Postal Union দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা। প্রাথমিকভাবে এই সংস্থাটি বিশ্বের ডাক ব্যবস্থার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও তদারকি করে থাকে। 
ILO – International Labor Organization আইএলও-কে জাতিসংঘের একমাত্র ত্রিপক্ষীয় সংস্থা বলা হয়। কেননা এটি সরকার, কর্মচারী, শ্রমিক এই তিন পক্ষ নিয়ে কাজ করে। 
FAO – Food and Agriculture Organization জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা যা ক্ষুধাকে জয় করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা‍য় নেতৃত্ব দেয়। 
UNESCO- United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization বিশ্বে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার এবং উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো এই সংস্থার কার্যক্রম। 
IMO- International Maritime Organization আন্তর্জাতিকভাবে শিপিং-এর নিয়ন্ত্রণ ও নীতি নির্ধারণ করে থাকে। সমুদ্র সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন- সমুদ্রে নিরাপত্তা, সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা, সমুদ্র আইন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। 
WHO – World Health Organization এই সংস্থা আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্যের জন্য কাজ করে থাকে।
UNDP – United Nations Development Programme উন্নয়নশীল দেশসমূহে সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহার এবং সম্পদ আহরণে সাহায্য করা এই সংস্থার উদ্দেশ্য। 
UNFPA – United Nations Population Fund  বিশ্বজুড়ে নিরাপদ প্রজনন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি নিয়ে কাজ করে এই সংস্থা। 

জাতিসংঘের অন্যান্য কিছু সংস্থা

UNHCR – United Nations High Commissioner for Refugees বিশ্বব্যাপী শরণার্থী/ উদ্বাস্তুদের আশ্রয় ও নিজ ভূমিতে পুনর্বাসন করতে এই সংস্থা কাজ করে থাকে। শরণার্থী, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায় এবং রাষ্ট্রহীন মানুষকে রক্ষার ম্যান্ডেট নিয়ে গঠিত। ১৯৫৪ এবং ১৯৮১ সালে দুই বার নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।
WTO – World Trade Organization এটি বিশ্বের বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতি প্রবর্তন এবং সদস্য রাষ্ট্র বা পক্ষ সমূহের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে। WTO এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিশ্ব বাণিজ্যের প্রসার, মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার, বাণিজ্যের অ-শুল্ক বাধাসমূহ দূর করা।
UN Women বিভিন্ন আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা ও সংগঠনকে নারী ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা ও সমর্থন করা।

বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ

  • সদস্যপদ লাভ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ সাল। 
  • ৮ আগস্ট, ১৯৭২ বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। ১০ আগস্ট ‘৭২ চীন বাংলাদেশের সদস্যপদের বিরুদ্ধে ভেটো প্রদান করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম দেশ। সদস্যভুক্তিকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইম। 
  • শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২৯তম অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন। 
  • জনাব এস. এ. এম. এস. কিবরিয়া এসকাপের নির্বাহী সচিব হিসেবে (Under Secretary General) এর পদমর্যাদায় ১৯৮১ – ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
  • বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৫ – ৮৬ সালে দায়িত্ব পালন করেন। 
  • বিচারপতি টি. এইচ. খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে ১৯৯৫ সালে দায়িত্ব পালন করেন। 
  • মেজর জেনারেল আবদুস সালাম মোজাম্বিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ১৯৯২ – ‘৯৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
  • ২৪ এপ্রিল ২০১২ আমিরা হক জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের তৃতীয় এবং প্রথম নারী আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। 
  • প্রথম এশিয়ান হিসেবে সালমা খান সিডোও এর চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে। এর পূর্বে সালমা খান ১৯৯২ সালে সিডোও এর সদস্য নির্বাচিত হন। 
  • IPU (Inter parliamentary Union) এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাবের হোসেন চৌধুরী।
  • স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন

  • বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন United Nations Iran-Iraq Military Observer Group (UNIIMOG)-এ কাজ করে।
  • বাংলাদেশ এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৫৪টি শান্তি মিশনে এবং ৪০টি দেশের শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত মোট ১,২৬,৪৮৯ জন সৈন্য জাতিসংঘের শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করে।
  • বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশের ১১৮ জন সৈন্য মৃত্যুবরণ করেন এবং আহত হন প্রায় ১১৩ জন।
  • বর্তমানে জাতিসংঘের ৮টি শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮৩৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন এবং বাংলাদেশ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আবারো শান্তিরক্ষী বাহিনীর সংখ্যায় শীর্ষ স্থান দখল করেছে।
  • সর্বপ্রথম ৫জন মহিলা পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের UNIAET (পূর্ব তিমুরে) অংশগ্রহণ করে ২০০০ সালে। এ মিশনের নেতৃত্ব দেন-এস.পি, মিলি বিশ্বাস।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যক্রম

  • জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কার্যক্রম শুরু করে।
  • রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে UNHCR. 
  • বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত আছে জাতিসংঘের ১১টি সংস্থা। এগুলো হলো – WORLD BANK, IMF, UNHCR, ILO, FAO, WHO, UNICEF, UNFPA, WEPs, UNDP, UNESCO.