টিস্যু (Tissue)
টিস্যু ও কোষ কলা (Tissue and cell tissue)
একই উৎস থেকে সৃষ্ট, একই ধরণের কাজ সম্পন্নকারী, সমধর্মী অবিচ্ছিন্ন কোষগুচ্ছকে টিস্যু বলে। টিস্যু সৃষ্টির মূল কারন কোষের শ্রমবিভাগ।
টিস্যুর প্রকারভেদ (Type of Tissue)
টিস্যু দুই প্রকার –
১। ভাজক টিস্যু (Merismatic tissue) : যে কোষগুলো বিভাজিত হয় তা হল ভাজক কোষ, আর ভাজক কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুই ভাজক টিস্যু। ভাজক টিস্যুর অপর নাম মেরিস্টেম।
২। স্থায়ী টিস্যু (Permanent tissue) : যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম সে টিস্যুকে স্থায়ী টিস্যু বলে। এ টিস্যুর কোষগুলো পূর্ণভাবে বিকশিত এবং সঠিক আকার-আকৃতি বিশিষ্ট অর্থাৎ এরা আকার-আকৃতি ও বিকাশে স্থায়িত্ব লাভ করেছে, তাই এরা স্থায়ী টিস্যু। বিশেষ অবস্থা ছাড়া এরা আর বিকশিত হতে পারে না। ভাজক টিস্যু হতে কোষের পূর্ণ বিকাশ লাভের পর বিভাজন ক্ষমতা স্থগিত হওয়ার মাধ্যমে স্থায়ী টিস্যুর উদ্ভব হয়।
টিস্যু | বৈশিষ্ট্য | কাজ | অবস্থান |
১. ভাজক | (i) কোষগুলো জীবিত, অপেক্ষাকৃত ছোট এবং সমব্যাসীয়।
(ii) ভাজক টিস্যুর কোষগুলো সর্বদাই বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন। (iii) ভাজক টিস্যুর কোষগুলো সাধারণত আয়তাকার, ডিম্বাকার, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজাকার হয়। (iv) এই টিস্যুর কোষগুলো সেলুলোজ নির্মিত পাতলা কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট হয়। (v) কোষের নিউক্লিয়াস অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং দানাদার ঘন সাইটোপ্লজমে পূর্ণ থাকে। (vi) ভাজক টিস্যুর কোষে সাধারণত কোষ গহ্বর থাকেনো (vii) কোষগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট হওয়ায় এদের মধ্যে আন্তঃকোষীয় ফাক থাকে না। (viii) এই টিস্যুর কোষগুলোর বিপাকীয় হার বেশি এবং সর্বদাই সক্রিয় বিপাকীয় অবস্থায় থাকে। (ix) কোষে কোনো প্রকার সঞ্চিত খাদ্য, ক্ষরিত বস্তু বা বর্জ্য পদার্থ থাকে না। (x) প্লাস্টিডগুলো প্রোপ্লাস্টিড অবস্থায় থাকে। (xi) কোষগুলো আকারে সাধারণত ছোট এবং দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে প্রায় সমান। |
(i) শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর কোষ বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। এতে ছোট গাছ ক্রমে উচু ও লম্বা হয় ।
(ii) পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যুর কোষ বিভাজনের ফলে উদ্ভিদের ব্যাস বৃদ্ধি পায়। এতে সরু কাণ্ড ক্রমে মোটা হয়। (iii) ভাজক টিস্যু হতে স্থায়ী টিস্যু সৃষ্টি হয়। (iv) ভাজক টিস্যুর কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ক্ষত স্থান পূরণ হয়। |
কান্ড, শীর্ষ, মূল শীর্ষ ইত্যাদি |
২. স্থায়ী | (i) স্থায়ী টিস্যুর কোষগুলো সাধারণত বিভাজনে অক্ষম।
(ii) টিস্যুতে দু’রকম কোষ থাকে-জীবিত ও মৃত। (iii) জীবিত কোষে সাইটোপ্লাজম স্বাভাবিকের চেয়ে কম। (iv) মৃত কোষ প্রোটোপ্লাজমবিহীন। (v) কোষগুলোর প্রাচীর অপেক্ষাকৃত স্থূল অর্থাৎ বেশ পুরু। (vi) কোষ গহ্বর অপেক্ষাকৃত বড়। (vii) নিউক্লিয়াস স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট এবং কোষের এক পাশে অবস্থান করে। (viii) কোষ প্রাচীরে নানা নকশা দেখা যায়। |
(i) খাদ্য তৈরি।
(ii) পানি ও খাদ্য পরিবহন। (iii) পানি ও খাদ্য সঞ্চয়। (iv) দৃঢ়তা প্রদান। |
কোষের পূর্ণ বিকাশ লাভের পর উৎপত্তি। |
ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Meristematic and Permanent Tissue)
পার্থক্যের বিষয় | ভাজক টিস্যু | স্থায়ী টিস্যু |
১। টিস্যুর ধরন | উদ্ভিদের ভ্রূণাবস্থাতেই প্রাথমিক ভাজক টিস্যুর জন্ম হয়। কাজেই
এ টিস্যু উদ্ভিদ দেহের আদি টিস্যু। |
ভাজক টিস্যু থেকেই স্থায়ী টিস্যুর জন্ম হয়। কাজেই হয়। এ টিস্যু কখনই আদি টিস্যু নয়। |
২। বিভাজন ক্ষমতা | এ টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম | এ টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম। |
৩। কোষের ধরন | এ টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম | এ টিস্যুর কোষগুলো পরিণত। |
৪। টিস্যুর অবস্থান | প্রাথমিক ভাজক টিস্যুর অবস্থান উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে। | বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে স্থায়ী টিস্যু থাকে না। বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের পেছনে এদের অবস্থান। |
৫। নিউক্লিয়াস | কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড়। | কোযের নিউক্লিয়াস আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। |
৬। নিউক্লিয়াসের অবস্থান | নিউক্লিয়াস কোষের কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং সাইটোপ্লাজম ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। | নিউক্লিয়াস কোষের এক পার্শ্বে অবস্থান করে এবং সাইটোপ্লাজম ততটা ঘনীভূত অবস্থায় থাকে না |
৭। উদ্ভিদ দেহে অবস্থান | নিউক্লিয়াস কোষের কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং সাইটোপ্লাজম ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। | উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধিতে এ টিস্যুর ভূমিকা কম। |
৮। যান্ত্রিক দূরত্ব | যান্ত্রিক কাজে এ টিস্যুর ভূমিকা সামান্য। | এ টিস্যু উদ্ভিদ দেহের যান্ত্রিক দৃঢ়তা বাড়ায়। |
৯। খাদ্য তৈরি | এ টিস্যু কখনো খাদ্য তৈরি করে না। | ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত স্থায়ী টিস্যু খাদ্য তৈরি করে। |
১০। পরিবহন | খাদ্য পরিবহনে এ টিস্যুর কোন ভূমিকা নেই। | ভাস্কুলার বান্ডল গঠনকারী জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক স্থায়ী টিস্যু যথাক্রমে পানি ও উৎপাদিত খাদ্য পরিবহন করে। |
১১। কোষাবকাশ | টিস্যুতে সাধারণত কোষাবকাশ থাকে না। | টিস্যুতে সাধারণত কোষাবকাশ থাকে। |
সরল টিস্যু ও জটিল টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য (The difference between simple tissue and complex tissue)
পার্থক্যের বিষয় | সরল টিস্যু | জটিল টিস্যু |
১। গঠন | সরল টিস্যু একই ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত। | জটিল টিস্যু বিভিন্ন ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত। |
২। প্রকৃতি | এ টিস্যু সমসত্ত্ব প্রকৃতির। | এ টিস্যু অসমসত্ত্ব প্রকৃতির। |
৩। নালিকা বান্ডিল | এ টিস্যু নালিকা বান্ডিল গঠন করে না। | এ টিস্যু নালিকা বান্ডিল গঠন করে। |
৪। প্রকারভেদ | সরল টিস্যু তিন প্রকার। যথা-প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা ও স্ক্লেরেনকাইমা। | জটিল টিস্যু দুই প্রকার। যথা-জাইলেম ও ফ্লোয়েম। |
৫। তন্ত্র গঠন | ত্বক, অধঃত্বক, অন্তঃত্বক, কর্টেক্স, মজ্জা ইত্যাদি তন্ত্র গঠন করে। | জটিল টিস্যু মিলিতভাবে উদ্ভিদের পরিবহন অঙ্গ গঠন করে। |
৬। কাজ | দৃঢ়তা প্রদানে সহায়তা করে। | পানি ও খাদ্যরস সংবহন করে ও দৃঢ়তা প্রদান করে। |