ইউলোথ্রিক্স, শৈবালের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
Genus : Ulothrix (ইউলোথ্রিক্স)
বাসস্থান (Accommodation):
Ulothrix সাধারণত: মিঠা পানির পুকুর, খাল, বিল, হাওড়, নদী-নালা প্রভৃতি জলাশয়ে জন্মে থাকে। খাড়া পাহাড় বা অনুরূপ স্থান যেখানে সর্বদাই পানি পড়ে সেখানেও এরা জন্মে থাকে। Ulothrix শৈবালের ৬০টি প্রজাতির মধ্যে অধিকাংশই মিঠা পানিতে জন্মে থাকে, তবে কতক প্রজাতি সামুদ্রিক।
Division : Chlorophyta
Class : Chlorophyceae
Order : Ulotrichales
Family : Ulotrichaceae
Genus : Ulothrix
দৈহিক গঠন (Physical structure):
Ulothrix একটি ফিলামেন্টাস (সূত্রময়) এবং অশাখ সবুজ শৈবাল। ইহা অসীম বৃদ্ধি সম্পন্ন। এর দেহ এক সারি খর্ব ও বেলনাকার কোষদ্বারা গঠিত। এর গোড়ার কোষটি লম্বাকৃতির, বর্ণহীন এবং নিচের দিকে ক্রমশ সরু, একে হোল্ডফাস্ট বলে। হোল্ডফাস্ট দ্বারা শৈবালটি (বিশেষ করে কচি অবস্থায়) কোনো বস্তুর ক্লোরোপ্লাস্ট সাথে আবদ্ধ থাকে। ফিলামেন্টের প্রতিটি কোষের একটি সুনির্দিষ্ট কোষপ্রাচীর আছে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া প্রত্যেক কোষে একটি নিউক্লিয়াস আছে, একটি বেল্ট বা ফিতা আকৃতির (girdle shaped) বা আংটি আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট আছে এবং ক্লোরোপ্লাস্টে এক বা একাধিক পাইরিনয়েড আছে।
পাইরিনয়েড হলো প্রোটিন জাতীয় পদার্থের চকচকে দানা, যার চারদিকে অনেক সময় স্টার্চ থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টটি কোষকে আংশিকভাবে অথবা সম্পূর্ণভাবে বেষ্টন করে রাখে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া অন্য যে কোনো কোষ প্রস্থে বিভক্ত হতে পারে, ফলে ফিলামেন্ট দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। বাংলাদেশ থেকে U. simplex, U. tenerrima এবং U. variabilis নামক তিনটি প্রজাতি বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে U. simplex এর আবিষ্কারক প্রফেসর এ.কে.এম নুরুল ইসলাম (১৯৬৯)। এটি সম্ভবত বাংলাদেশে এন্ডেমিক।
চিত্র-১২ : Ulothrix শৈবাল।
খ) হেটারোথ্যালিক (Heterothalic) বা ভিন্নবাসী :
পুং ও স্ত্রী জননকোষ ভিন্ন ভিন্ন দেহে উৎপন্ন হলে তাদেরকে ভিন্নবাসী বা হেটারোথ্যালিক শৈবাল বলে। জনন কোষের ভিত্তিতে শৈবালে তিন ধরনের যৌন জনন ঘটে থাকে।
- আইোগ্যামিস (Isogamy) : এ ক্ষেত্রে দু’টি গ্যামিট (স্ত্রী- আইসোগ্যামিস পুরুষ বা +, -) বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে হুবহু একই রকম হয়। এ ধরনের গ্যামিটকে আইসোগ্যামিটস বলে। উদা- Ulothrix
- অ্যানাইসোগ্যামি (Anisogamy) : এক্ষেত্রে একটি গ্যামিট (পুং গ্যামিট) অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার হয় এবং একটি গ্যামিট (স্ত্রী গ্যামিট) অপেক্ষাকৃত বৃহৎ হয়। এ ধরনের গ্যামিটকে অ্যানাইসোগ্যামি বলে; উদা-Pandorina
- উগ্যামি (Oogamy) : এক্ষেত্রে স্ত্রী গ্যামিটটি বড় ও নিশ্চল হয় এবং নিশ্চল ডিম্বাণু সাধারণত স্ত্রী যৌনাঙ্গে অবস্থান করে। পুং গ্যামিট অপেক্ষাকৃত ছোট ও সচল হয় এবং স্ত্রী জননাঙ্গে স্ত্রী গ্যামিটকে নিষিক্ত করে। এরা হেটেরোগ্যামিটস; সচল শুক্রাণু উচ্চ উদা- Fucus
জনন (Birth):
Ulothrix অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধি করে।
১। অঙ্গজ বংশবৃদ্ধি (Organ Breeding):
খণ্ডায়নের মাধ্যমে এর অঙ্গজ বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। দৈবক্রমে মাঝখানে কেটে দেয়া হয়েছে।) ফিলামেন্টটি ভেঙ্গে কয়েকটি খণ্ডে পরিণত হলে প্রত্যেক খণ্ড কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে এক একটি নতুন Ulothrix রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
২। অযৌন জনন (Asexual reproduction):
জুষ্পের সৃষ্টির মাধ্যমে Ulothrix-এর অযৌন জনন সম্পন্ন হয়। কখনো কখনো অ্যাপ্লানোস্পোর সৃষ্টির মাধ্যমেও অযৌন জনন হয়ে থাকে। জুস্পোরগুলো সাধারণত চার ফ্ল্যাজেলা যুক্ত। যে কোষ হতে জুস্পোর উৎপন্ন হয় তাকে জুস্পোরাঞ্জিয়াম বলে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া অন্য যে কোনো কোষ হতে জুষ্পের সৃষ্টি হতে পারে। প্রজাতির ওপর নির্ভর করে প্রত্যেক জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে ১ – ৩২টি জুস্পোর সৃষ্টি হয়। একটি মাত্র জুস্পোর সৃষ্টি হলে কোষের সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাস্টই একটি জুস্পোরে রূপান্তরিত হয়।
একাধিক জুস্পোর উৎপন্ন হলে জুস্পোরাঞ্জিয়ামের প্রোটোপ্লাস্ট একটু সংকুচিত হয় এবং লম্বালম্বিভাবে দু’ভাগে বিভক্ত হয়। প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ৩২টি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট সৃষ্টি পর্যন্ত এই বিভাজন চলতে পারে। প্রতিটি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট তখন চার ফ্ল্যাজেলা যুক্ত জুস্পোরে রূপান্তরিত হয়। সরু কোষের প্রজাতি হতে সৃষ্ট সকল জুস্পোর একই প্রকার হয় কিন্তু মোটা কোষের প্রজাতি হতে দুই প্রকার জুস্পোর উৎপন্ন হয়।
(১) ক্ষুদ্রাকৃতির বা মাইক্রোজুস্পোর-এর আইস্পট মধ্যখানে থাকে এবং একটি জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে ৮-৩২টি জুস্পোর উৎপন্ন হয়;
(২) বৃহদাকৃতির বা মেগাজুস্পোর-এর আইস্পট সম্মুখভাগে থাকে এবং একটি জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে ১-৪টি জুস্পোর উৎপন্ন হয়। জুস্পোরগুলো নাসপাতি আকৃতির। একটি ভেসিকল দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় জুস্পোরগুলো জুস্পোরাঞ্জিয়াম প্রাচীরের গায়ে উৎপন্ন ছিদ্রপথে বের হয়ে আসে এবং ভেসিকলের অবলুপ্তির পর এরা মুক্তভাবে ভেসে বেড়ায়। ২-৬, দিন সন্তরণের (সাঁতার কাটার) পর জুস্পোরের ফ্লাজেলাযুক্ত মাথাটি কোনো জলজ বস্তুর সাথে আবদ্ধ হয়। আবদ্ধ হওয়ার পর এরা আস্তে আস্তে ফ্লাজেলাবিহীন হয়, এর চারদিকে একটি প্রাচীর গঠন করে এবং ক্রমে দীর্ঘ হয় ও বিভাজনের মাধমে নতুন Ulothrix ফিলামেন্ট সৃষ্টি করে। প্রতিকূল পরিবেশে জুস্পোরগুলো জুস্পোরাঞ্জিয়াম হতে নির্গত হয় না, অধিকন্তু এদের চারদিকে একটি প্রাচীর গঠন করে। অ্যাপ্ল্যানোস্পোরে পরিণত হয়।
কখনো কখনো কোনো একটি কোষের সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাস্ট গোলাকার হয় এবং চারপাশে একটি পুরু প্রাচীর গঠন করে অ্যাকাইনিটিতে পরিণত হয়। একে হিপনোস্পোরও বলা হয়। প্রচুর সঞ্চিত খাদ্য সম্বলিত যে স্পোরের মাধ্যমে জীব তার প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে তাকে রেস্টিং স্পোর বলে। অনুকূল পরিবেশে এরা এদের পুরু প্রাচীর বিদীর্ণ করে বের হয়ে আসে এবং অঙ্কুরায়ন ও বিভাজনের মাধ্যমে নতুন ফিলামেন্টে পরিণত হয়।
৩। যৌন জনন (Sexual reproduction):
Ulothrix একটি ভিন্নবাসী বা হেটেরোথ্যোলিক শৈবাল (স্ত্রী ও পুরুষ জননকোষ আলাদা দেহে উৎপন্ন হয়)। Ulothrix শৈবাল এর যৌন মিলন আইসোগ্যামাস। হোল্ডফাস্ট ছাড়া যে কোনো একটি কোষের প্রোটোপ্লাস্ট বিভাজনের মাধ্যমে ৮-৬৪টি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট সৃষ্টি করে। প্রতিটি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট একটি নাসপাতি আকৃতির বাইফ্ল্যাজিলেট গ্যামিটে রূপান্তরিত হয়। গ্যামিটগুলো জুস্পোর হতে ক্ষুদ্রাকৃতির। এদের আইস্পট অত্যন্ত স্পষ্ট।
একটি ভেসিকল দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় এরা জননকোষাধার বা গ্যামিটেঞ্জিয়াম (যে কোষ হতে গ্যামিট সৃষ্টি হয়)-এর প্রাচীরে সৃষ্ট ছিদ্রপথে বের হয়ে আসে এবং ভেসিকলের অবলুপ্তির পর মুক্তভাবে সাঁতরে বেড়ায়। দুটি ভিন্ন ফিলামেন্ট হতে দু’টি ভিন্নধর্মী (+,-) গ্যামিট দেহের বাইরে এসে যৌন মিলন সম্পন্ন করে এবং একটি চার ফ্ল্যাজেলাযুক্ত ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট সৃষ্টি করে।
জাইগোট কিছুকাল সচল থাকে, পরে ফ্ল্যাজেলাবিহীন হয়ে পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট হয় এবং পরে বিশ্রামকাল কাটায়। বিশ্রামের পূর্বে এরা প্রচুর খাদ্য সঞ্চয় করে এবং চারদিকে একটি প্রাচীর সৃষ্টি করে। বিশ্রামকাল শেষে এতে মায়োসিস বিভাজন হয় এবং ৪-১৬টি হ্যাপ্লয়েড (n) জুস্পোর (প্রতিকূল অবস্থায় অ্যাপ্ল্যানাস্পোর) সৃষ্টি করে। জাইগোট প্রাচীর বিদীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে জুস্পোরগুলো (অথবা অ্যাপ্লানোস্পোর) বের হয়ে আসে এবং অঙ্কুরায়ন ও বিভাজনের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদে পরিণত হয়। Ulothrix এর জীবন চক্র Hanlantic অর্থাৎ বহুকোষী গ্যামিটোফাইটিক জনুর সাথে এককোষী স্পোরোফাইটিক জনুর জনুক্রম ঘটে।
চিত্র-১৪ : Ulothrix- এর যৌন জনন
- পামেলা দশা (Palmella Stage) : কিছু শৈবালের ক্ষেত্রে শুষ্ক পরিবেশে প্রোটোপ্লাজম বার বার বিভাজিত হয়ে মাতৃ কোষ প্রাচীরের মধ্যে জেলাটিনে আবদ্ধ থাকে। এ অবস্থাকে পামেলা দশা বলে। সাধারণত Chlamydomonas শৈবালে এ অবস্থা দেখা। যায়। আবাসস্থলে পানির অভাব দেখা দিলে স্পোর ফ্ল্যাজেলা তৈরি না করে অ্যাপ্লানোস্পোর-এ পরিণত হয়। একটি জেলাটিনের সাধারণ আবরণী দ্বারা আবৃত অবস্থায় উপর্যুপরি বিভাজনের ফলে বহু কোষের সৃষ্টি হয়। আবাসস্থলে পানির প্রবাহ ফিরে এলে জেলাটিনের আবরণটি গলে যায় এবং প্রতিটি কোষ ফ্ল্যাজেলা সৃষ্টি করে জুস্পোর গঠনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ নতুন শৈবালে পরিণত হয়। Ulothrix-এ পামেলা দশা হতে পারে। এটি একটি অস্বাভাবিক অযৌন জনন প্রক্রিয়া। বহুকোষী ডিপ্লয়েড জনুর সাথে এককোষী হ্যাপ্লয়েড (গ্যামিট) জনুর অনুক্রম ঘটলে তাকে Diplontic জীবন চক্র বলে; উদাহরণ- Fucus, Sargassum .
- Ulothrix শৈবালের গুরুত্ব : এরা পরিবেশতন্ত্রে উৎপাদক হিসেবে কাজ করে, বায়ুমণ্ডলে O2 যোগ করে এবং CO2 শোষণ করে।
শৈবালের অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance of Algae)
শৈবালের উপকারী ভূমিকা (Beneficial role of algae):
- বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন যোগ : শৈবালের সবচেয়ে উপকারী দিক হলো বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন সংযোগ। লক্ষ লক্ষ বছর আগে বায়ুমণ্ডলে কোনো অক্সিজেন ছিল না। নীলাভ-সবুজ শৈবাল প্রথম সালোকসংশ্লেষণ শুরু করে এবং লক্ষ লক্ষ বছরের সালোকসংশ্লেষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন জমা হতে হতে বর্তমান পর্যায়ে (প্রায় ২০ ভাগ) আসে। এর পরই উচ্চ পর্যায়ের উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদ্ভব ঘটে।
- পরিবেশ দূষণ রোধ : সমুদ্রের বিপুল পরিমাণ শৈবাল সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 গ্রহণ করে এবং পরিবেশে O2 ত্যাগ করে। মোট সালোকসংশ্লেষণের শতকরা ৬০ ভাগই শৈবালে ঘটে থাকে।
- উৎপাদক হিসেবে : বিভিন্ন জলাশয়ে (স্বাদু পানি এবং লোনা পানি) শৈবাল ফুড চেইন-এর প্রধান উৎপাদক হিসেবে কাজ করে।
- বায়োফুয়েল (Biofuel) তৈরি : Biofuel বা Biodiesel তৈরির জন্য বর্তমানে শৈবালকে বেছে নেয়া হয়েছে। তাই শৈবালকে second generation biofuel নামে অভিহিত করা হয়েছে। Botryococcus bramanii এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। Chlorella, Scenedesmus কেও ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে।
- গোয়েন্দা সাবমেরিন-এর অবস্থান নির্ণয় : নীলাভ সবুজ শৈবালে অবস্থিত phycobilin protein নামে অতিরিক্ত রঞ্জক কণিকা (C-phycoerythrin, C-phycocyanin) দৃশ্যমান আলোর বাইরের আলোকরশ্মি শোষণ করতে পারে। পানির নিচে গোয়েন্দা সাবমেরিন হতে বিকরিত বিভিন্ন রশ্মি এরা শোষণ করে নেয় এবং এই শোষিত রশ্মির পরিমাণ থেকে আশপাশে গোয়েন্দা সাবমেরিন-এর অবস্থান জানা যায়।
- সমুদ্রে মাছের অবস্থান নির্ণয় : সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে সময় সময় শৈবালের অধিক বৃদ্ধি ঘটে এবং খাদ্য প্রাপ্তির আশায় মাছ ঐ অঞ্চলে ছুটে আসে। স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণে ঐ অঞ্চলগুলো নির্ণয় করে মাছ ধরার ট্রলারকে অবস্থান নির্দেশ করা হয়, ফলে প্রচুর পরিমাণ মাছ অল্পসময়ে ধরা সম্ভব হয়।
- মাটির বয়স নির্ণয় : জলাশয়ের তলদেশে মাটির স্তরে জমাকৃত ডায়াটম খোলস এর কার্বন ডেটিং করে ঐ মাটির উৎপত্তির বয়স নির্ণয় করা হয়।
- মানুষের খাদ্য হিসেবে : প্রাচীনকাল হতে বিভিন্ন প্রজাতির শৈবাল, যেমন- Uiva lactuca– কে মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে আসছে। মানুষের খাদ্য তালিকায় Chlorella একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ শৈবাল।
- পশুখাদ্য হিসেবে : Laminaria saccharina, Alaria, Rhodymenia প্রভৃতি শৈবাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- শৈবাল থেকে ন্যানোফিল্টার উৎপাদন : ন্যানোফিল্টার হলো এমন ফিল্টার (ছাঁকনি) যা দিয়ে আমাদের শরীরে রোগে সৃষ্টিকারী সকল ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া হেঁকে ফেলা যায়, তাই পানি হয় সম্পূর্ণভাবে জীবাণু মুক্ত ও ঝুঁকি মুক্ত। এই ফিল্টার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পিথোফেরা (Pithophora) শৈবাল যার সন্ধান ও কাঁচামাল প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শৈবালবিদ ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেসানী।
ফিল্টার তৈরির কাজটি করা হয়েছে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে। Pithophora শৈবাল সেলুলোজ সমৃদ্ধ, তাই প্রকৃতপক্ষে এই ন্যানোফিল্টারটি একটি সেলুলোজ ফিল্টার, দেখতে একটি সাদা কাগজের মতো এবং এর ছাকনিগুলোর ফুটো (ছিদ্র) ১৭ ন্যানোমিটার । পানিবাহিত রোগজীবাণুসমূহের আকার সাধারণত ৩০-১০০ ন্যানোমিটার হয়, তাই পানিতে থাকা সব ধরনের রোগজীবাণুই এই ছাঁকনিতে আটকা পড়ে যায়।
বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রচুর আর্সেনিক আছে, যা শরীরের জন্য বিষাক্ত, তাই আমাদের নির্ভর করতে হবে নদী বা হ্রদের পানির ওপর। আর এই ন্যানোফিল্টার পুকুর, নদী-হাওর-বিলের পানিকে শতকরা ১০০ ভাগ পানের উপযোগী করে দিবে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যেকোনো ছাঁকনির ছিদ্র ১৭ ন্যানোমিটারের কম হলে পানিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ আয়ন, লবণ আটকে যাবে কিন্তু এ শৈবাল থেকে তৈরি ন্যানোফিল্টার দিয়ে ছাঁকলে জীবাণু আটকা পড়ে কিন্তু প্রয়োজনীয় আয়ন-লবণ পানির সাথে থেকে যায়। এই জনগুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক কাজটি ২০১৯ সালের আগস্টে American Chemical Society-র Sustainable Chemistry & Engineering জার্নালে প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে একজন বাংলাদেশী শৈবালবিদ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল।
শৈবালের অপকারী ভূমিকা (Harmful role of algae):
- ওয়াটার ব্লুম (Water bloom) সৃষ্টি : পুকুর বা জলাধারে পুষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলে কিছু নীলাভ সবুজ শৈবালের (বর্তমানে সায়ানোব্যাকটেরিয়া) সংখ্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়, যাকে ওয়াটার ব্লুম বলে। এতে জলাধারের পানি দূষিত হয়, খাবার ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়। ঐ জলাধারের মাছ মরে যায়। Ocillatoria, Nostoc, Mycrocystis এ ধরনের শৈবাল। অবশ্য বর্তমানে এগুলোকে সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে অভিহিত করা হয়।
- উদ্ভিদের রোগে সৃষ্টি : Cephaleuros wirescens নামক প্রজাতি চা, কফি, ম্যাগনোলিয়া গাছে রোগে সৃষ্টি করে। এতে চা এবং কফির ফলন কমে যায়।
- মাছের রোগে সৃষ্টি : কোনো কোনো শৈবাল (যেমন- Oedogonium-এর কোনো কোনো প্রজাতি) মাছের ফুলকা রোগে সৃষ্টি করে।
- স্থাপনার ক্ষতি : দেয়ালে শৈবালের অতিবৃদ্ধি দালানের বেশ ক্ষতি করে থাকে।
- রাস্তাঘাট পিচ্ছিলকরণ : পাকা নদীর ঘাট, পুকুর ঘাট, বাথরুমের মেঝ, পায়ে হাঁটার রাস্তায় জন্মানো নীলাভ সবুজ শৈবালের মিউসিলেজ আবরণ অত্যন্ত বিপদজনক হতে পারে। এতে পা পিছলে পড়ে অস্থিভাঙ্গা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।