ভেক্টর উপাংশ (Vector Components)
একটি ভেক্টর রাশিকে সামান্তরিক সূত্রের দ্বারা বহুভাবে দুটি ভেক্টর রাশিতে বিভক্ত করা যায়। একটি ভেক্টর রাশিকে দুই বা ততোধিক ভেক্টর রাশিতে বিভক্ত করার প্রক্রিয়াই হলো ভেক্টর রাশির বিভাজন বা বিশ্লেষণ (Vector Division)। একটি ভেক্টর রাশি \vec{R} কে লম্ব উপাংশে বিভাজন করা যায় এবং এর সাহায্যে ভেক্টর রাশির যোজন ও বিয়োজন করা যায় । এই বিভাজিত ভেক্টর রাশিগুলোর প্রত্যেকটিকে মূল ভেক্টর রাশির এক একটি অংশক বা উপাংশ (Component) বলে।
P এবং Q উপাংশ দুটিকে মূল ভেক্টর রাশি R-এর লম্বাংশ বলে। P-কে অনুভূমিক উপাংশ (Horizontal Component) এবং Q কে উল্লম্ব উপাংশ (Vertical Component) বলা হয়।
১। নৌকার গুণ টানাঃ
মনে করি M একটি নৌকা। এর O বিন্দুতে গুণ বেঁধে OR বরাবর নদীর পাড় দিয়ে। \vec{F} বলে টেনে নেওয়া হচ্ছে। বিভাজন পদ্ধতি দ্বারা O বিন্দুতে F-কে দুটি উপাংশে বিভাজিত করা যায়; যথা— অনুভূমিক উপাংশ (Horizontal Component) ও উল্লম্ব উপাংশ (Vertical Component)।
অনুভূমিক উপাংশ =F \cos \theta, এর দিক OA বরাবর। উল্লম্ব উপাংশ =F \sin \theta, এর দিক OB বরাবর।
বলের অনুভূমিক উপাংশে =F \cos \theta নৌকাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং উল্লম্ব উপাংশে =F \sin \theta নৌকাটিকে পাড়ের দিকে টানে। কিন্তু নৌকার হাল দ্বারা উল্লম্ব উপাংশ =F \sin \theta প্রতিহত করা হয়। গুণ যত লম্বা হবে এর মান তত কম হবে; ফলে =F \sin \theta এর মান কম হবে এবং =F \cos \theta এর মান বেশি হবে। ফলে নৌকা দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
২। লন-রোলার চালনাঃ
তলের উপর দিয়ে কোনো বস্তুকে ঠেলা বা টানা হলে তল ও বাস্তুর মধ্যে ঘর্ষণ বল ক্রিয়াশীল হয় এবং বস্তুর গতিকে বাধা দেয়। বস্তুর ওজন বেশি হলে ঘর্ষণ বলও বেশি হয়। রোলারকে ঠেলে বা টেনে গতিশীল করা হয়।
ঠেলার ক্ষেত্রেঃ
ধরা যাক, রোলারের ওজন =\vec{W}, A রোলারের হাতলের উপর প্রযুক্ত বল =\vec{F}। F বল রোলারের O বিন্দুতে অনুভূমিকের সাথে \theta টানার ক্ষেত্রে কোণে ক্রিয়াশীল [চিত্র (ক)]। O বিন্দুতে এই বল টানার ক্ষেত্রে দুটি লম্ব উপাংশে বিভক্ত হয়ে যায়।
বলের অনুভূমিক উপাংশ =\mathrm{F} \cos \theta এর দিক OB বরাবর সামনের দিকে এবং উল্লম্ব উপাংশ =\mathrm{F} \cos \theta, এর দিক OC বরাবর নিচের দিকে ক্রিয়াশীল যা রোলারের ওজন বৃদ্ধি করে। সুতরাং, রোলারের মোট ওজন হয় (\mathrm{W}+\mathrm{R} \sin \theta)। ফলে রোলার প্রকৃত ওজনের চেয়ে ভারী হয়ে যায় বলে ঘর্ষণ বলের মান বেড়ে যায়। তাই রোলার ঠেলা কষ্টকর হয়।
টানার ক্ষেত্রেঃ
ধরা যাক, রোলারের ওজন =\vec{W} এবং রোলারের হাতলের উপর প্রযুক্ত বল =\vec{F}। F বল O বিন্দুতে অনুভূমিক রেখা OB-এর সাথে \theta কোণে ক্রিয়াশীল [চিত্র ২.২০ (খ)]। F বল দুটি লম্ব উপাংশে বিভাজিত হয়ে যায়।
অনুভূমিক উপাংশ =\mathrm{F} \cos \theta , এর ক্রিয়ায় ঢেলাটি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং উল্লম্ব উপাংশ =\mathrm{F} \sin \theta, এর ক্রিয়া OD বরাবর উপরের দিকে হওয়ায় রোলারের মোট ওজন W-কে প্রশমিত করে। ফলে রোলারের ওজন হয় (W-R \sin \theta)। ফলে টানার ক্ষেত্রে রোলার হাল্কা অনুভূত হয় এবং দুর্বল। বলও হ্রাস পায়। ফলে রোলার টানা সহজতর হয়। তাই বলা যায়, লন-রোলার ঠেলা অপেক্ষা টানা সহজতর।