বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান | Wonderful Contributions of Physics
আধুনিক যুগকে বৈদ্যুতিক যুগ বললেও অত্যুক্তি হয় না। বায়ুর চাপ মাপার জন্য ব্যারোমিটার, উষ্ণতা বা তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মোমিটার, বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ মাপার জন্য আমরা হাইগ্রোমিটার (hygrometer) নামক যন্ত্র ব্যবহার করি। বিজ্ঞানের কল্যাণে 10-30 মিটার আকৃতির মৌলিক কণাসহ 1030 মিটার দূরত্বের আকাশ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।
ধারণা বা প্রত্যয় (Concept):
কোনো কিছু সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি বা বোধগম্যতা হলে ওই বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা। অথবা, ধারণা হলো কোনো ভাবনা বা চিন্তাধারা বা কোনো সাধারণ অভিমত। যেমন তাপের ধারণা হলো— তাপ এক প্রকার শক্তি যা কোনো বস্তুতে প্রয়োগ করলে বা বস্তুটিকে গরম করলে বস্তুটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বর্জন করলে তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
সূত্র (Law):
যখন কোনো তত্ত্ব অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয় এবং এর মূল কথাগুলি একটি উক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে বৈজ্ঞানিক সূত্র বলা হয়। সূত্র অনেক সময় আবিষ্কর্তার নামানুসারে হয়, যেমন ও’মের সূত্র(Ohm’s law) , বয়েলের সূত্র(Boyle’s law); কখনওবা বিষয়ের নামে, যেমন শক্তির নিত্যতা সূত্র, তাপগতিবিদ্যার সূত্র (law of thermodynamics); আবার কখনও আবিষ্কারক এবং বিষয় উভয়ের নামে হয়ে থাকে, যেমন নিউটনের গতিসূত্র, গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (Galileo’s law of falling bodies)।
নীতি (Principle):
যে সকল প্রাকৃতিক সত্য সরাসরি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করা যায় এবং ওই সত্যের সাহায্যে অনেক প্রাকৃতিক ঘটনাকে প্রমাণ করা যায়, তাকে নীতি বলে। যেমন ডপলারের নীতি, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি ইত্যাদি।
স্বীকার্য (Postulates):
কোনো গাণিতিক মডেল বা সূত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যদি কিছু পূর্বশর্ত স্বীকার করে নেওয়া হয়, তবে ওই পূর্বশর্তসমূহকে স্বীকার্য (Postulates) বলে। সাধারণত কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব একটি সার্বিক বিবৃতি দিয়ে শুরু হয়, ইহাই স্বীকার্য। যেমন বিখ্যাত বিজ্ঞানী নীলস বোর (Neils Bohr) পরমাণু মডেল (Bohr’s atomic model) প্রদানের জন্য দুটি স্বীকার্য গ্রহণ করেন। আবার, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রবর্তন করেন যা দুটি মৌলিক স্বীকার্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।
অনুকল্প (Hypothesis):
বিজ্ঞানীরা তাঁদের পর্যবেক্ষিত ঘটনার কারণ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য অনেক সময় পূর্বে আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু অনুমান করেন। এই অনুমানগুলোকে বলা হয় অনুকল্প। অনুকল্পগুলো পর্যবেক্ষিত ঘটনার প্রাথমিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। অনুকল্পগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা সম্পাদন করা হয় এবং পরীক্ষায় সত্য প্রমাণিত হলে তা তত্ত্বে পরিণত হয়। পরীক্ষণ বা পর্যবেক্ষণ দ্বারা অনুকল্প সমর্থিত হতেও পারে, আবার বাতিলও হতে পারে। তবে কিছু কিছু অনুকল্প আছে যা প্রমাণিত হওয়ার পরেও অনুকল্প হিসেবে এখনও পরিচিত। যেমন অ্যাভোগেড্রোর অনুকল্প (Avogadro’s hypothesis)।
তত্ত্ব (Theory):
অনুকল্প ও নিয়মের সমন্বয়ে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত। পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত অনুকল্পকে তত্ত্ব বলে। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাহায্যে প্রকৃতিকে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যখন কোনো তত্ত্বকে কিছু ধারণা বা উক্তি এবং সমীকরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়, তখন সেই তত্ত্বকে সূত্র বলে। সুতরাং সকল সূত্রই তত্ত্ব, তবে সকল তত্ত্ব সূত্র নয়। আবার সকল তত্ত্বই অনুকল্প, তবে সকল অনুকল্প তত্ত্ব নয়। তত্ত্ব সাধারণত আবিষ্কর্তার নামানুসারে অথবা বিষয়ের সাথে সংগতি রেখে নামকরণ করা হয়। যেমন আলবার্ট আইনস্টাইনের (Albert Einstein) আবিষ্কৃত আপেক্ষিক তত্ত্ব (Theory of relativity), কোয়ান্টাম তত্ত্ব (Quantum theory) ইত্যাদি।