10 Minute School
Log in

অজৈব যৌগ | Inorganic Compounds

সব উপাদান এবং অজৈব যৌগের উৎপাদন, বৈশিষ্ট্য, প্রতিক্রিয়া, ব্যবহার, ইত্যাদি অধ্যয়ন করতে রসায়ন বিভাগের একটি বিভাগ।জৈব রসায়ন এক জোড়া উপায়, উদ্দেশ্য, ইত্যাদি উপর নির্ভর করেএটি অজৈব সিনথেটিক রসায়ন, অজৈব পদার্থবিজ্ঞান রসায়ন, অজৈব স্ট্রাকচারাল রসায়ন, অজৈব বিশ্লেষকীয় রসায়নের মতো।

  • চকচকে এবং তাপ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী মৌলকে ধাতু বলে। যৌগিক পদার্থে এরা সাধারণত তড়িৎ ধনাত্মক আয়ন হিসেবে উপস্থিত থাকে। যেমনকপার, অ্যালুমিনিয়াম, সিলভার প্রভৃতি। ধাতুসমূহ উত্তম বিজারক কারণ তারা ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিজে জারিত হয় এবং অন্যের বিজারণ ঘটায়।
  • যে সব মৌল কখনো ধাতু বা কখনো অধাতুর ন্যায় আচরণ করে তাদের উপধাতু বলে। যেমন–  বোরন, সিলিকন, জার্মেনিয়াম, আর্সেনিক ইত্যাদি। উপধাতুগুলো অর্ধপরিবাহী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • যে সব মৌল প্রধানত তাপ বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাদের অধাতু বলে। যেমন নাইট্রোজেন, কার্বন, ক্লোরিন ইত্যাদি। অধাতুসমূহ উত্তম জারক
  • বিভিন্ন অণুতে পরমাণুসমূহ যে আকর্ষণী বলের সাহায্যে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে, তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
  • গঠনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে রাসায়নিক বন্ধন প্রধানত প্রকার
    • তড়িৎযোজী বা আয়নিক বন্ধন (Electrovalent or Ionic bond)
    • সমযোজী বা সহযোজী বন্ধন (Covalent bond)
    • সন্নিবেশ বন্ধন (Co-ordinated covalent bond)
    • ধাতব বন্ধন (Metallic bond)
  • পদার্থের অণুগুলো পরস্পর যে বল দ্বারা যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ভৌত কাঠামো গঠন করে তাকে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল বলে। 

আয়নিক যৌগের ধর্ম 

  • আয়োনিক যৌগসমূহ ধাতু অধাতুর সমন্বয়ে গঠিত।
  • এদের গলনাংক স্ফূটনাংক অনেকে বেশি।
  • আয়নিক স্ফটিকসমূহ ভঙ্গুর নমনীয় হয়।
  • আয়নিক যৌগের ক্ষেত্রে সাধারণত সমাণুতা দেখা যায় না।
  • জলীয় দ্রবণে এরা দ্রুত বিক্রিয়া করে।
  • কঠিন অবস্থায় এরা তড়িৎ পরিবহন করে না।
  • জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়ন অ্যানায়নে বিভক্ত হয়।
  • সমযোজী যৌগের চেয়ে এরা অধিক শক্তিশালী আণবিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকে।

সমযোজী যৌগ

  • সমযোজী যৌগসমূহের গলনাংক স্ফুটনাংক অনেক কম তারা উদ্বায়ী। বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না।

বিক্রিয়ার প্রকারভেদ

  • কোনো যৌগ তার উপাদান মৌলসমূহের প্রত্যক্ষ সংযোগে উৎপন্ন হওয়ার বিক্রিয়া হলো সংশ্লেষণ বিক্রিয়া।
  • কোনো যৌগ তার সরল উপাদানসমূহে বিভক্ত হওয়ার বিক্রিয়া হলো বিশ্লেষণ বিক্রিয়া।
  • যে বিক্রিয়ায় একটি মৌল বা মূলক একটি যৌগ হতে কোন মৌলকে অপসারণ করে তার স্থান দখল করে তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে।

Zn+H_2SO_4\to ZnSO_4+H_2

  • যে বিক্রিয়ায় দুটি যৌগ পরস্পরের মধ্যে তাদের উপাদান মূলক বা পরমাণু বিনিময় করে দুটি নতুন যৌগ উৎপন্ন করে তাকে দ্বি-বিয়োজন বলে।

AgNO_3+NaCl\to AgCl+NaNO_3

  • ক্ষারক অম্লের মধ্যে বিক্রিয়ায় লবণ পানি উৎপন্ন হলে তাকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে।
  • যে বিক্রিয়ায় কোন মৌলের সক্রিয় যোজনীর হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে তাকে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া বলে।
  • যে বিক্রিয়ায় এক বা একাধিক যৌগের অনেকগুলো অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বড় অণু সৃষ্টি করে, তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে।

প্রভাবক

  • যে বস্তু বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কের সংস্পর্শে থেকে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি বা হ্রাস করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে ভর রাসায়নিক সংযুক্তিতে অপরিবর্তিত থাকে, তাকে বিক্রিয়ার প্রভাবক বলা হয় এবং এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবন বলে।
  • যে প্রভাবক বিক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিকে বৃদ্ধি করে তাকে ধনাত্মক প্রভাবক বলে। যেমনপটাশিয়াম ক্লোরেটের তাপীয় বিযোজনের ক্ষেত্রে MnO_2 ধনাত্মক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

         2KClO_3+[MnO_2]\to 2KCl+3O_2+[MnO_2] 

  • ঋণাত্মক প্রভাবক বিক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিকে হ্রাস করে। যেমনসোডিয়াম সালফাইটের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় গ্লিসারিন ঋণাত্মক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে প্রভাবক বিক্রিয়কের সাথে যুক্ত হয়ে এমন যৌগ উৎপন্ন করে যার সক্রিয়তা কম বা সহজে বিয়োজিত হয় না বা অন্য বিক্রিয়কের সাথে সহজে বিক্রিয়া করে না। 

Na_2SO_3+O_2+[গ্লিসারিন]\to Na_2SO_4

  • শিল্পক্ষেত্রে অ্যামোনিয়ার ব্যবহার: শিল্পোৎপাদনে, অ্যামোনিয়া হতে নাইট্রিক এসিড প্রস্তুতিতে, সালফিউরিক এসিড তৈরিতে, কৃত্রিম ঘি তৈরিতে, পলিথিলিন প্রস্তুতিতে আবিষ্ট প্রভাবক ব্যবহার করা হয়।
  • যে সকল পদার্থ বিক্রিয়ার সময় প্রভাবকের ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস করে এবং শেষে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে তাদেরপ্রভাবক বিষবলে।
  • যে সকল রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি প্রভাবকের প্রভাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদেরকে প্রভাবক সহায়ক বলে।
  • যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের সময় কোনোরূপ রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না তাদের ধাতব পরিবাহী বলে। সকল ধাতু এবং গ্রাফাইট ধরনের পরিবাহী।

পর্যায় সারণী

  • বিভিন্ন মৌলের মধ্যে ভৌত রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মিল এবং সকল ধর্মের ক্রম পরিবর্তন দেখানোর জন্য বিজ্ঞানীগণ সকল মৌলকে সারি কলামের মাধ্যমে একটি বিশেষ সারণীতে সাজিয়েছেন। এই সারণীকে পর্যায় সারণী বলা হয়।
  • রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ সর্বপ্রথম পর্যায় সারণীর ধারণা প্রদান করেন। এজন্য তাকে পর্যায় সারণীর জনক বলা হয়।
  • পর্যায় সারণীর আধুনিক সূত্র হলো – মৌল সমূহের ভৌত রাসায়নিক ধর্মাবলী তাদের পারমাণবিক সংখ্যানুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
  • যে সকল ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার উৎপন্ন করে তাদের ক্ষার ধাতু বলে। পর্যায় সারণীর IA গ্রুপের মৌলগুলো হলো ক্ষার ধাতু। এগুলো হলো – লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম।
  • পর্যায় সারণীর IIA গ্রুপের মৌলগুলো হলো মৃৎক্ষার ধাতু মৃৎক্ষার ধাতুগুলো হলো – ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বেরিলিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, বেরিয়াম, রেডিয়াম ইত্যাদি। 
  • মুদ্রা তৈরিতে যে সকল ধাতু ব্যবহার করা হয় তাদেরকে মুদ্রা ধাতু বলে। পর্যায় সারণীর IB গ্রুপের মৌলগুলো হলো মুদ্রা ধাতু। ধাতুগুলো হলো কপার, সিলভার, গোল্ড। 
  • যেসব মৌল রাসায়নিকভাবে ক্রিয়াক্ষম নয়, তাদের নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে। পর্যায় সারণির ডানদিকে শূন্যগ্রুপে অবস্থিত ৬টি গ্যাসীয় মৌল হলো নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এদের পরমাণুর বহিঃস্থ শেলে ইলেকট্রনের অষ্টক পূর্ণ থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়। নিষ্ক্রিয় গ্যাস হলোহিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, রেডন জেনন।
  • গ্যাস হিসেবে রেডন সবচেয়ে ভারী হিলিয়ামের চেয়ে কেবল হাইড্রোজেন হালকা। তবে হাইড্রোজেন দাহ্য বলে বিমানে হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হিলিয়াম ব্যবহৃত হয়।
  • হিলিয়াম ব্যতীত প্রত্যেকটি মৌলের শেষ কক্ষপথে আটটি ইলেক্ট্রন রয়েছে। হিলিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা দুই, তাই এর একটি মাত্র কক্ষপথ দুটি ইলেক্ট্রন দ্বারা পূর্ণ।