আলোর প্রকৃতি | The Nature of Light
আলো এক প্রকার শক্তি বা বাহ্যিক কারণ যা চোখে প্রবেশ করে দর্শনের অনুভূতি জন্মায়।
- দশম শতকের শেষের দিকে আরবীয় বিজ্ঞানী আল হাসান ইউরোপে যিনি আল হ্যাজেন নামে পরিচিত তিনি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন, বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়লে সেই বস্তু আমরা দেখতে পাই।
- আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে 3×10⁸ মিটার এবং সূর্য হতে পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার।
- সূর্য হতে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগবে ৫০০ সেকেন্ড বা ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড।
- আলো শূন্যস্থানে 3×10⁸ মিটার/সেকেন্ড বেগে চলে।
- শূন্যস্থানের মধ্যে কোনো বস্তুই আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারে না।
- মাইলে আলোর গতি ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল/সেকেন্ড এবং কিলোমিটারে আলোর গতি ৩ লাখ কিলোমিটার/সেকেন্ড।
- আলো এক সেকেন্ডে যায় ৩,০০,০০০ কিলোমিটার। আলো এই গতিতে চলে এক বছরে অর্থাৎ ৩৬৫ দিনে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাই হলো এক আলোক বর্ষ। এক আলোক বর্ষ হলো প্রায় 9.46\times 10^{15} মিটার বা 9.46\times 10^{12} কিলোমিটার।
- আলোর চারটি তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়
১. কণাতত্ত্বের প্রবক্তা নিউটন, ১৬৭২ সালে
২. তরঙ্গ তত্ত্বের প্রবক্তা হাইগেন, ১৬৭৮ সালে
৩. তাড়িত চৌম্বক তত্ত্বের প্রবক্তা ম্যাক্সওয়েল, ১৮৬৪ সালে
৪. কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রবক্তা ম্যাক্স প্লাঙ্ক, ১৯০০ সালে
- তাড়িত চৌম্বক বর্ণালীতে থাকে দৃশ্যমান আলো, অবলোহিত বিকিরণ, বেতার তরঙ্গ, অতিবেগুনি বিকিরণ, এক্স–রে রশ্মি ও গামারশ্মি ।
- কয়েকটি রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য
মহাজাগতিক রশি <0.0005 Å
গামা রশ্মি 0.0005 – 1.5 Å
রঞ্জন রশ্মি 0.10100 Å
অতিবেগুনি রশ্মি < 4000 Å
দৃশ্যমান আলো 4000-7000 Å
অবলোহিত রশ্মি > 7000 Å
রেডিও ও টেলিভিশন তরঙ্গ 10⁻⁴m – 5*10⁴m
- তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ক্রম:
বেতার তরঙ্গ > অবলোহিত রশ্মি > দৃশ্যমান আলো > অতিবেগুনি রশ্মি > এক্স রশ্মি > গামা
- তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হলে ভেদন ক্ষমতা বাড়ে, এবং সে রশ্মি তত বেশি ক্ষতিকর হয়।
- সবচেয়ে ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ হচ্ছে গামা রশ্মি।বর্ণালীর 10^{-11} মিটারের চেয়ে ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য সকল বিকিরণ গামা রশ্মি। গামা রশ্মির শক্তি দৃশ্যমান আলোর চেয়ে ৫০,০০০ গুণ বেশি।
গামা রশ্মির প্রভাব
- রশ্মির প্রভাবে মানুষের দেহ পুড়ে যেতে পারে
- অকালে চুল পড়ে যেতে পারে,
- ক্যানসার–টিউমার হতে পারে,
- এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
LASER- Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation.
- বিজ্ঞানী মাইম্যান ১৯৬০ সালে লেজার রশ্মি আবিষ্কার করেন।
- 10^{-4} মিটারের অধিক বা 10^{-4} থেকে 5\times 10^{-4} মিটার দৈর্ঘ্যের তরঙ্গদৈর্ঘ্য হলো বেতার তরঙ্গ। সবচেয়ে বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ হলো বেতার তরঙ্গ।
- 10^{-4}m থেকে 5\times 10^{4} দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ হচ্ছে বেতার তরঙ্গ।
- 10 হতে 100 m পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের তরঙ্গকে শর্ট ওয়েভ বলে।
- 200 হতে 500 m পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের তরঙ্গকে মিডিয়াম ওয়েভ বলে।
- 3 cm দৈর্ঘ্যের তরঙ্গকে মাইক্রোওয়েভ বলে।
- আলো এক ধরনের তাড়িত চুম্বক তরঙ্গ।
- 4\times 10^{-7} থেকে 7\times 10^{-7} মিটার বা 400-700 nm(ন্যানোমিটার) তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকতরঙ্গ হলো দৃশ্যমান আলো।
- যে আলোতে দেখি সেটি দৃশ্যমান আলো। তবে দৃশ্যমান আলোর সকল তরঙ্গ একই দৈর্ঘ্যের নয়।
- লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি।
- বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম।
- তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হিসেবে ছোট থেকে বড় অনুযায়ী সাজালে পাওয়া যায় বেনিআসহকলা।
- বেগুনি< নীল< আসমানি < সবুজ <হলুদ <কমলা <লাল।
- অবলোহিত বিকিরণ– 10^{-3} থেকে 10^{-7} m.
- অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণ– 5\times 10^{-7}m থেকে 6\times 10^{-10}m
- 10^{-7} থেকে 10^{-3} মিটার পর্যন্ত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক তরঙ্গ হলো অবলোহিত রশ্মি। উইলিয়াম হার্শেল ১৮০০ সালে এই বিকিরণ আবিষ্কার করেন।
- সূর্য থেকে যে বিকীর্ণ তাপ আসে তাকে বলা হয় অবলোহিত রশ্মি।
অবলোহিত রশ্মির ব্যবহার
- মাংসপেশির ব্যথা নিরাময়ে।
- অন্ধকারে ছবি তুলতে।
- আবহাওয়া পূর্বাভাস দিতে।
- চর্ম ও বাতের চিকিৎসায় এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হয়।
- গামা রশ্মি অপেক্ষা বড় 10^{-11} থেকে 10^{-8} মিটার পর্যন্ত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্নি হচ্ছে এক্স–রে।
- রঙিন টেলিভিশন হতে মৃদু রঞ্জনরশ্মি বের হয়। হাড়ের ভাঙ্গা বা ফাটল ও টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয়ে এটি ব্যবহৃত হয়।
- বর্ণালীতে 5\times 10^{-7}m থেকে 6\times 10^{-10}m তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মিই সাধারণত অতিবেগুনি রশ্মি।
- ফোটন হচ্ছে আলোর কণা বা একক।
- আইনস্টাইন কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন এবং এজন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
- ১৮৭৩ সালে ডব্লিউ স্মিথ (W. Smith) নামক একজন টেলিফোন অপারেটর আলোক তড়িৎ ক্রিয়া প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন।
- কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোনো মাধ্যমে বাধা পেয়ে আলোর পুনরায় পূর্বের মাধ্যমে ফিরে আসাকে আলোর প্রতিফলন বলে।
- এক স্বচ্ছ মাধ্যম হতে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতলে তির্যকভাবে আপতিত আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তনের ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।
- যে মসৃণ তলে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তাকে দর্পণ বলে । দর্পণ দুই ধরনের। যথা-.
সমতল দর্পণ
যখন কোনো সমতল পৃষ্ঠ মসৃণ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে, তাকে সমতল দর্পণ বলে। আমরা চেহারা দেখার জন্য যে দর্পণ ব্যবহার করি তা সমতল দর্পণ। সমতল দর্পণে নিজের পূর্ণ চেহারা দেখতে হলে দর্পণের দৈর্ঘ্য দর্শকের উচ্চতার অর্ধেক হওয়া প্রয়োজন।
গোলীয় দর্পণ
কোনো বক্র প্রতিফলক তল যদি কোনো গোলকের অংশবিশেষ হয়, তাহলে তাকে গোলীয় দর্পণ বলে।
- গোলীয় দর্পণ দুই ধরণের হতে পারে।
অবতল দর্পণ
কোনো ফাঁপা গোলকের ভিতরের বা অবতল পিঠের কিছু অংশ যদি মসৃণ হয় বা প্রতিফলক রূপে কাজ করে তবে তাকে অবতল দর্পণ বলে।
উত্তল দর্পণ
কোনো ফাঁপা গোলকের বাইরের বা উত্তল পিঠের কিছু অংশ যদি মসৃণ হয় বা প্রতিফলক রূপে কাজ করে তবে তাকে উত্তল দর্পণ বলে।
অবতল দর্পণের ব্যবহার
- মুখমণ্ডলের বিবর্ধিত ও সোজা প্রতিবিম্ব তৈরি যাতে রূপচর্চা ও দাড়ি কাটার সুবিধা হয়।
- দন্ত চিকিৎসকগণ।
- প্রতিফলক হিসেবে- টর্চলাইট, স্টিমার বা লঞ্চের সার্চ লাইটে।
- রাডার ও টিভি সংকেত সংগ্রহে।
- চোখ, কান, নাক ও গলা পরীক্ষায়।
উত্তল দর্পণের ব্যবহার
- যানবাহন ও পথচারী দেখার জন্যে গাড়িতে ও ভিউ মিররে।
- দোকান বা শপিংমলে নিরাপত্তার কাজে।
- প্রতিফলক টেলিস্কোপে।
- রাস্তার বাতিতে প্রতিফলক রূপে দর্পণ তৈরি করা হয়।
- সাধারণত কাচের একদিকে সিলভার ধাতুর প্রলেপ লাগিয়ে দর্পণ তৈরি করা হয়। একে সিলভারিং বলে।
- উত্তল লেন্সকে আতশি কাচ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শত্রুপক্ষের জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেয়ার জন্য বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস প্রথম উত্তল লেন্সকে আতশি কাচ হিসেবে ব্যবহার করেন।
- চশমা, ক্যামেরা, বিবর্ধক কাচ, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি আলোক যন্ত্রে উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়।
- অবতল লেন্স প্রধানত চশমায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সিনেমাস্কোপ প্রজেক্টরে এবং গ্যালিলিওর দূরবীক্ষণ যন্ত্রেও অবতল লেন্স ব্যবহার করা হয়।
- লেন্সের ক্ষমতার একক: ডাইঅপ্টার
- হীরকের ক্রান্তিকোণ 24°
- আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম হতে হালকা মাধ্যমে ক্রান্তি কোণের চেয়ে অধিক কোণে আপতিত হলে প্রতিসরণের পরিবর্তে আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়। একে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলে।
- বায়ুর সাপেক্ষে গ্লিসারিনের প্রতিসরাংক ১.৪৭ এবং কাচের প্রতিসরাংক ১.৫২ বায়ুর সাপেক্ষে, উভয়ের প্রতিসরাংক ব্যবধান অত্যন্ত কম এবং প্রায় সমান। গ্লিসারিন পাত্রে কাচদণ্ড ডুবলে প্রায় সমান প্রতিসরাঙ্কের জন্য দেখা যায় না।
- বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণাঙ্ক–
শূন্য ১.০০
বাতাস ১.০০০২৯
পানি ১.৩৩
কাঁচ ১.৫২
হীরা ২.৪২
- কাঁচ বা পানির মধ্য দিয়ে সাদা আলোক-মধ্যস্থ সাতটি বর্ণের আলোকরশ্মি শোষিত না হয়ে সঠিক অনুপাতে বেরিয়ে যায়। এই বস্তুদ্বয় থেকে কোনো বর্ণের আলো শোষিত বা প্রতিফলিত না হওয়ার ফলে বস্তুগুলোকে বর্ণহীন ও স্বচ্ছ দেখায়।
- নক্ষত্রের ঝিকিমিকির কারণ আলোর প্রতিসরণ।