10 Minute School
Log in

 খনিজ | Minerals

খনিজ

যখন কতগুলো মৌলিক উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যৌগিক পদার্থ তৈরি করে তখন তাকে খনিজ বলে। খনিজ দুই বা তার চেয়ে বেশি মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। তবে কিছু কিছু খনিজ একটি মাত্র মৌল দিয়ে গঠিত। ভূত্বকের গভীর থেকে যা তোলা হয় তাই খনিজ, ব্যাপক অর্থে, বিভিন্ন প্রকার শিলার গঠন উপাদানই খনিজ। একটি মাত্র মৌল দিয়ে গঠিত খনিজ পদার্থ হীরা, সোনা, তামা ইত্যাদি। হেমাটাইট খনিজটি একটি যৌগিক পদার্থ (Fe_2O_3, ফেরিক অক্সাইড), যা লোহা (Fe) এবং অক্সিজেন (O_2) মৌলের সমন্বয়ে গঠিত। 

  • ভূত্বকে প্রাপ্ত খনিজ প্রায় ৯০টি স্বাভাবিক মৌলিক উপাদানের দুই বা ততোধিকের রাসায়নিক সংযোগে গঠিত। 
  • প্রকৃতিতে খনিজ সাধারণত দুপ্রকারের স্থানে পাওয়া যায়। খনিজের দু’টি উৎস হলো:

ভূগর্ভ:

খনিজের প্রধান উৎস হলো ভূগর্ভ। অধিকাংশ খনিজ আহরণের জন্য ভূত্বকের গভীরে খাঁজ কেটে বা গর্ত খুঁড়ে নিচে নামতে হয়। অনেক সময় শিলাস্তরের মধ্যে স্তরে স্তরে খনিজ সঞ্চিত থাকে। খনিজের উৎসকে বলা হয় ভূগর্ভস্থ খনি। উদাহরণ: দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনার খনি ভূত্বকের প্রায় কিলোমিটার গভীরে এবং আমেরিকায় এগুলো প্রায় ১৬০ মিটার গভীরে অবস্থিত। 

ভূপৃষ্ঠ:

পূর্বে ধারণা করা হতো খনিজের উৎস কেবলই ভূগর্ভ। কিন্তু ধারণা সঠিক নয়। ভূত্বকেও কিছু কিছু খনিজ দ্রব্য সৃষ্ট হয়। ধরনের খনিজ উৎসকে বলা হয় ভূপৃষ্ঠ খনিজ। উদাহরণ: লৌহজাত খনিজ (হেমাটাইট), অ্যালুমিনিয়াম জাত খনিজ (বক্সাইট) এমনকি কয়লার মতো মূল্যবান খনিজও অনেক সময় ভূপৃষ্ঠের উপরেই পাওয়া যায়। 

  • যে খনিজ থেকে সহজে এবং লাভজনক উপায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌলিক পদার্থ আহরণ করা যায় তাকে মৌলের আকরিক বলে। 
  • ধাতু তাদের আকরিক:
ধাতু আকরিক
সোডিয়াম বোরাক্স, চিলি সল্টপিটার, রকসল্ট 
পটাশিয়াম  সল্টপিটার ( নাইটার)
ক্যালসিয়াম চুনাপাথর, জিপসাম, ডলোমাইট 
ম্যাগনেসিয়াম  ম্যাগনেসাইট, ডলোমাইট, ইপসম সল্ট, কার্নালাইট
আয়রন ম্যাগনেটাইট, হেমাটাইট, আয়রন পাইরাইটস 
এলুমিনিয়াম বক্সাইট, কোরান্ডাম, ক্রাইয়োলাইট
কপার  কপার পাইরাইটস 
জিংক  জিংক ব্লেন্ড বা জিংক সালফাইড, ক্যালামাইন
সীসা  গ্যালেনা বা লেড সালফাইড 
টাইটেনিয়াম রুটাইল, ইলমেনাইট 
  • প্রকৃতিতে সব আকরিকই মাটি, বালি অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সাথে মিশ্রিত থাকে। এইসব খনিজ অপদ্রব্যকে খনিজ মল বা গ্যাং বলে। সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়কার্বন বিজারণ পদ্ধতি (উচ্চ তাপ), তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি।
  • দুই বা ততোধিক ধাতুর সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণে যে কঠিন পদার্থ তৈরি হয় তাকে সংকর ধাতু বা ধাতু সংকর বলা হয়।
  • পিতল [Brass]:- কপার ৬৫% ; জিংক ৩৫% মিশ্রিত ধাতু সংকর
  • কাঁসা [Bell Metal]:- তামা [Cu] 80% এবং টিন [Sn] 20% –এর মিশ্রিত ধাতু সংকর  
  • ব্রোঞ্জ [Bronze]:- তামা [Cu] 75-90% এবং টিন [Sn] 25-10% –এর মিশ্রিত ধাতু সংকর।
  • অ্যালুমিনিয়ামব্রোঞ্জ [Aluminium-Bronze]:- তামা [Cu] 90% এবং অ্যালুমিনিয়াম [Al] 10% –এর মিশ্রিত ধাতু সংকর  
  • জার্মান সিলভার [German Silver]:- তামা [Cu] 50%, দস্তা [Zn] 30% এবং নিকেল [Ni] 20% –এর মিশ্রিত ধাতু সংকর  
  • ডুরালুমিন [Duralumin]:-  অ্যালুমিনিয়াম [Al] 95%, তামা [Cu] 4%, ম্যাগনেসিয়াম [Mg] 0.5% এবং ম্যাঙ্গানিজ [Mn] 0.5% –এর মিশ্রিত ধাতু সংকর
  • ম্যাগনেলিয়াম [Magnelium]:- অ্যালুমিনিয়াম [Al] 98% এবং ম্যাগনেসিয়াম [Mg] 2% –এর মিশ্রিত ধাতু সংকর
  • স্টেইনলেস স্টিল [Stainless Steel]:-  লোহা ৭৪% ; ক্রোমিয়াম ১৮% ; নিকেল % –এর মিশ্রিত ধাতু সংকর
  • মুদ্রা ধাতুসীসা ৭৫%, এন্টিমনি ২০%, তামা
  • নাইক্রোমনিকেল ৬০%, লোহা ২৫%, ক্রোমিয়াম ১৫%
  • গান মেটালতামা ৮৮%, টিন ১০%, দস্তা
  • ঢালাই লোহাতে %-.৫৬% শতাংশ কার্বন এবং সামান্য পরিমাণে সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস সালফার অপদ্রব্য হিসেবে থাকে।
  • পেটা লোহার .০৫%-.২৫% কার্বন অশুদ্ধরূপে থাকে। একে স্থায়ীভাবে চুম্বকে পরিণত করা সম্ভব হয় না। তড়িৎ চুম্বকের মজ্জা, তার,শিকল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে রট আয়রনের ব্যবহার হয়।
  • কাস্ট আয়রনের কার্বনের পরিমাণ বিভিন্ন অনুপাতে কমিয়ে বা বাড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের স্টিল বা ইস্পাত তৈরি করা হয়। ইস্পাত স্টিলে .১৫%-.% শতাংশ পর্যন্ত কার্বন অশুদ্ধ হিসাবে মেশানো থাকে। স্টিলের বা ইস্পাতের মধ্যে কার্বনের মাত্রা অনুসারে বিভিন্ন রকমের স্টিল তৈরি করা হয়।
  • লোহার প্রধান খনিজ আকরিকগুলো হলো রেড হেমাটাইট, ব্রাউন হেমাটাইট বা লিমোনাইট, ম্যাগনেটাইট, সিডারাইট ইত্যাদি।
  • লোহার পাত্রে কপার সালফেট দ্রবণে রাখা যায় না, কারণ লোহার সঙ্গে কপার সালফেটের বিক্রিয়ার ফলে দ্রবণে ফেরাস সালফেট উৎপন্ন হয় এবং লাল রঙের ধাতব কপার অধঃক্ষিপ্ত হয়।
  • পৃথিবীতে যে ধাতুটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় তা হলো অ্যালুমিনিয়াম, ভূপৃষ্ঠের প্রায় শতকরা ভাগ।
  • অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক:
    • ডায়াস্পোর (Diaspore), Al₂O₃, H₂O ;   
    • বক্সাইট (Bauxite), Al₂O₃, 2H₂O ;   
    • গিবসাইট (Gibbsite),  Al₂O₃, 3H₂O;   
    • ক্রায়োলাইট (Cryolite), AlF₃, 3NaF 
  • গন্ধকের চারটি রূপভেদ হলো– 
    • রম্বিক গন্ধক; একাক্ষী গন্ধক; প্লাস্টিক বা নমনীয় গন্ধক শ্বেত গন্ধক।
  • ফসফরাসের রূপভেদ দুটি
    • শ্বেত ফসফরাস, লোহিত ফসফরাস
  • ধাতব যৌগ
টেস্টিং সল্ট মনো সোডিয়াম গ্লুটামেট (C_5H_8NO_4Na) 
অ্যালুমিনা এলুমিয়াম অক্সাইড (Al_2O_3</span><span style="font-weight: 400;">)
ফিটকিরি  পটাশিয়াম এলুমিনিয়াম সালফেট (Al_2(SO_4)_3).K-2SO_4.24H_2O 
জিংক অক্সাইড ZnO
সাদা ভিট্রিয়ল ZnSO_4.7H_2O 
Plaster of Paris 2CaSO_4.H_2O 
লাল লেড  Pb_3O_4
সোহাগা সোডিয়াম পাইরো বোরেট বা বোরাক্স (Na_2[B_4O_5(OH)_4].8H_2O) 
চুন  CaO
তুঁতে বা ব্লু ভিট্রিয়ল CuSO_4.5H_2O 
Bleaching Powder Ca(OCl)Cl 

ধাতুর বৈশিষ্ট্য 

  • ধাতু দেখতে চকচকে। 
  • ধাতুকে আঘাত করলে টুনটুন শব্দ হয়(ব্যতিক্রম: ধাতুর মধ্য অ্যান্টিমনিকে আঘাত করলে টুনটুন শব্দ করে না)
  • ধাতুর মধ্য দিয়ে তাপ বিদ্যুৎ সহজে চলাচল করতে পারে।
  • ধাতু ঘাতসহ প্রসারণশীল নমনীয়যেমন; তামা অধিক ঘাতসহ হওয়ায় বৈদ্যুতিক তার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। 
  • সোডিয়াম ধাতু শিখা পরীক্ষায় উজ্জ্বল সোনালী হলুদ বর্ণ হয়।
  • ক্যালসিয়াম ধাতু ইটের ন্যায় লাল বর্ণের হয়।
  • পটাসিয়াম ধাতু বেগুনী বর্ণের। 
  • তামা নীলাভ সবুজ বর্ণের।
  • ধাতুর সক্রিয়তার ক্রম পটাসিয়াম> সোডিয়াম>ক্যালসিয়াম> ম্যাগনেসিয়াম> অ্যালুমিনিয়াম> দস্তা> লোহা> টিন> লেড> হাইড্রোজেন> কপার> পারদ> রূপা> প্লাটিনাম> সোনা 
  • সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু প্লাটিনাম। 
  • ২৪ ক্যারেট স্বর্ণকে মোটামুটিভাবে বিশুদ্ধ স্বর্ণ বলা হয় কারণ এতে ৯৯.৯৫% এর বেশি খাঁটি সোনা আছে।