10 Minute School
Log in

এসিড, ক্ষার ও লবণ

এসিড

  • যে সকল পদার্থের অণুতে প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু আছে এবং জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত (ভেঙে) হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন (H^{+}) বা প্রোটন প্রদান করে তাদেরকে এসিড বলে। যেমন: হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কার্বনিক এসিড। 
  • যে সকল এসিড জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণ বিয়োজিত হয় তাদেরকে শক্তিশালী এসিড বলে। যেমন : নাইট্রিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড।
  • যে সকল এসিড জলীয় দ্রবণে আংশিক বিয়োজিত হয়, তাদেরকে দুর্বল এসিড বলে। সাধারণত জৈব এসিড সমূহ দুর্বল এসিড হিসেবে কাজ করে যেমন: এসিটিক এসিড, মিথানয়িক এসিড, ইথানয়িক এসিড। তাছাড়া আরো অনেক দুর্বল এসিড রয়েছে। যেমন: সাইট্রিক এসিড, ফরমিক এসিড, কার্বনিক এসিড। 

এসিডের বৈশিষ্ট্য:

  • জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন দান করে। 
  • ক্ষারের সাথে বিক্রিয়ায় লবণ পানি উৎপন্ন করে।
  • নীল লিটমাসকে লাল করে। 
  • এসিড সাধারণত টক স্বাদযুক্ত হয়।  
  • এসিড ধাতব কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ, পানি কার্বনডাইঅক্সাইড তৈরি করে।

এসিডের ব্যবহার

  • সিরকা বা ভিনেগারে এসিটিক এসিডের 4% – 10% জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়, যা খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এসিটিক এসিডের প্রোটন ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং এর ফলে খাবার অনেকদিন সতেজ থাকে।
  • কোমল পানীয়তে কার্বনিক এসিড থাকে যা কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানির বিক্রিয়ায় তৈরি হয়। খাবার হজম করার জন্য কোমল পানীয় ব্যবহার করা হয়।
  • ভিটামিন সি হচ্ছে এসকরবিক এসিড
  • বিভিন্ন ধরনের আচার সংরক্ষণে ভিনেগার বা এসিটিক এসিড (CHCOOH) ব্যবহার করা হয়।
  • টয়লেট পরিষ্কারে যে পরিষ্কারক ব্যবহার করা হয় তার মূল উপাদান শক্তিশালী এসিড।  যেমন: HCl, HNO_3, H_2SO_4অ্যামোনিয়া সার উৎপাদনে এসিড ব্যবহৃত হয়। 

ক্ষারক

কোনো ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইড যৌগ যা এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ পানি প্রস্তুত করে তাকে ক্ষারক বলে। যেমন: ZnO, Ca(OH)_2

  • যে সমস্ত ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH⁻) দেয় তাদের ক্ষার বলে। যেমন: NaOH, KOH, Ca(OH)_2 ইত্যাদি।  
  • সকল ক্ষারই ক্ষারক, কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয়
  • Fe(OH)_2 ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়। 
  • টমেটোতে যে এসিড থাকে  ম্যালিক এসিড
  • লেবুর রসে যে এসিড থাকে সাইট্রিক এসিড
  • আপেলে যে এসিড থাকে    ম্যালিক এসিড
  • তেঁতুলে যে এসিড থাকে  টারটারিক এসিড
  • আমলকিতে যে এসিড থাকে অক্সালিক এসিড
  • আঙ্গুরে যে এসিড থাকে  টারটারিক এসিড
  • কমলালেবুতে যে এসিড থাকে এসকরবিক এসিড
  • দুধে যে এসিড থাকে ল্যাকটিক এসিড
  • পাকা কলায় যা থাকে এমাইল এসিটেট
  • পাকা আনারসে যা থাকে ইথাইল এসিটেট
  • পাকা কমলায় যা থাকে  অকটাইল এসিটেট
  • কচু খেলে গলা চুলকায় থাকে কারণ কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট 
  • সিরকায় যে এসিড থাকে এসিটিক এসিড
  • একোয়া রেজিয়া বা রাজ অম্ল এক মোল গাঢ় নাইট্রিক এসিড এবং তিন মোল গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মিশ্রণকে রাজ অম্ল বলে।
  • ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর পাতলা দ্রবণ চুনের পানি/লাইম ওয়াটার নামে পরিচিত। 
  • ব্লিচিং পাউডার তৈরি হয় ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্লোরিন গ্যাসের বিক্রিয়া ঘটানোর মাধ্যমে। ব্লিচিং পাউডারের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম ক্লোরো হাইপোক্লোরাইট (Ca(OCl)Cl)

Ca(OH)_2+Cl_2\to Ca(OCl)Cl+2H_2O 

  • ব্লিচিং পাউডার দ্বারা  ঘরের মেঝে, বেসিনের জীবাণু ধ্বংস করা হয়।
  • সোডিয়াম বাই কার্বনেট (খাবার সোডা), টারটারিক এসিডের মিশ্রণকে বেকিং পাউডার বলে। বেকিং পাউডার ব্যবহার করে কেক প্রস্তুত করা হয়
  • যেসকল মৌল পর্যায় সারণীতে এক এবং দুই নম্বর গ্রুপে অবস্থিত এরা ধাতু বলে তাদের অক্সাইড ক্ষারকীয় হয়। লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম এবং ফ্রান্সিয়াম ক্ষার ধাতু
  • বেরিলিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, ব্যারিয়াম এবং র‍্যাডিয়াম মৃৎক্ষার ধাতু কারণ এদের মাটিতে পাওয়া যায়

ক্ষার ক্ষারকের ব্যবহার

  • সাবান, কাচ, কস্টিক সোডা, কাগজ প্রভৃতি উৎপাদনে, কাপড় ধোয়ার কাজে এবং পানির খরতা অপসারণে এবং পেট্রোলিয়াম বিশোধনে কাপড় কাচার সোডা ব্যবহৃত হয়।
  • টয়লেট ক্লিনারে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যা একটি তীব্র ক্ষার। টয়লেট ক্লিনার পানির সাথে বিক্রিয়ায় জায়মান অক্সিজেন উৎপন্ন করে যা জীবাণু ধ্বংস করে।
  •  গ্লাস ক্লিনারে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড একটি দুর্বল ক্ষার যা অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ

লবণ

  • এসিডের অণুতে প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন ক্ষার বা ক্ষারকের মধ্যে অবস্থিত ধাতু বা যৌগমূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে পদার্থ উৎপন্ন করে তাই লবণ।
  • সোডিয়াম ক্লোরাইড হলো খাবার লবণ  
  • তুঁতে বা ফিটকিরি একটি লবণ। 

 নির্দেশক

নির্দেশক এসিডে বর্ণ  আসল বর্ণ / প্রশম দ্রবণে বর্ণ  ক্ষারকীয় দ্রবণে বর্ণ 
ফেনলফথ্যালিন বর্ণহীন বর্ণহীন গোলাপী 
মিথাইল রেড লাল  লাল হলুদ
মিথাইল অরেঞ্জ লাল কমলা হলুদ
লাল লিটমাস লাল লাল নীল
নীল লিটমাস লাল নীল নীল

কোন দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়নের ঘনমাত্রার লগারিদমের ঋণাত্বক মানকে দ্রবণের pH বলা হয়, এর মান অনুযায়ী দ্রবণ অম্লীয় বা ক্ষারীয় হবে তা নির্ধারিত হয়।

  • pH এর মান হলে তাকে নিরপেক্ষ দ্রবণ বা প্রশম দ্রবণ বলা হয়।
  • pH স্কেলের বিস্তৃতি: ১৪
  • বিশুদ্ধ পানির pH হলো ৭; এর মান এর কম হলে দ্রবণ অম্লীয় এবং এর বেশি হলে দ্রবণ ক্ষারীয়।
  • মানুষের রক্তের pH এর মান 7.4; মানুষের রক্ত ঈষৎ ক্ষারীয়।