প্লান্ট নিউট্রেশন ও পরাগায়ন
উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান ও তাদের অভাবজনিত রোগসমূহ
উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান মোট ১৬টি। উদ্ভিদের প্রয়োজন অনুযায়ী এদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
- যে সমস্ত খাদ্য গাছের জন্য অধিক প্রয়োজন হয় সেগুলোকে মুখ্য খাদ্য উপাদান বা Macro-nutrients বলে। উদ্ভিদের মুখ্য খাদ্য দশটি। যথা—নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার এবং লৌহ।
- যে সমস্ত খাদ্য উপাদান উদ্ভিদের জন্য খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয় সেগুলোকে গৌণ খাদ্য বা Micro-nutrients বলে। উদ্ভিদের গৌণ খাদ্য উপাদান ছয়টি। যথা- ম্যাংগানিজ, মলিবডেনাম, কপার, জিংক, বোরন এবং ক্লোরিন।
নাইট্রোজেনের অভাব
- ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটে এবং প্রথমে গাছের পাতা হালকা সবুজ রং ধারণ করে এবং পরে তা হলুদ রঙে পরিণত হয়। একে ক্লোরোসিস বলে।
- অনেক গাছের পাতা ঝরে যায়, পাপড়ি শুকিয়ে যায় এবং ফল যথেষ্ট পরিমাণে কম ধরে।
- কোষের বৃদ্ধি হয় না, বিভাজন কমে যায়। ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় বলে উদ্ভিদ খর্বাকৃতির হয়।
ফসফরাসের অভাব
- চারাগাছ গাঢ় সবুজ ও ফ্যাকাসে গোলাপি বেগুনি রং ধারণ করে, পরে তা হলদে রঙে রূপান্তরিত হয়।
- মূলের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফুল, ফল এবং পাতা ঝরে যায়। ফসল পাকতে ও ফলের বীজে পরিণত হতে বিলম্ব ঘটে।
পটাশিয়ামের অভাব
- প্রায় গাছেই পোড়ানো ঝাঁঝালো পাতা দেখা যায় ।
- ক্রমান্বয়ে পাতার শীর্ষ ও কিনারায় হলুদ দাগ দেখা দেয় এবং পরিশেষে শুকিয়ে মৃত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
ক্যালসিয়ামের অভাব
- পাতার শীর্ষভাগ বিকৃতভাবে গঠিত হয় এবং পরিশেষে তাতে পচন দেখা যায় ।
- পাতার কিনারা ও দুই শিরার মাঝখানে হলুদ ও বাদামি রঙের সৃষ্টি হয়।
ম্যাগনেশিয়ামের অভাব
- ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় ।
- জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে পাতা ঝরে যায়।
লৌহের অভাব
- লৌহের অভাবে সয়াবিন, কমলালেবু এবং সবজি জাতীয় গাছের পাতায় পচন ধরে।
- খুব সংকটাপন্ন অবস্থায় পাতা একেবারে সাদা হয়ে যায় ।
সালফারের অভাব
- সালফারের অভাবে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং কাণ্ড কৃশ ও খর্বাকৃতি হয়ে যায়।
- কোনো কোনো গাছে নিচের পাতা গাঢ় লাল রং ধারণ করে।
ম্যাঙ্গানিজের অভাব
- ম্যাঙ্গানিজের অভাবে গাছ বামনাকৃতি প্রাপ্ত হয়।
- গাছে ফুল ও ফল ধরতে বিলম্ব ঘটে।
মলিবডেনামের অভাব
- মলিবডেনামের অভাবে ফুলকপিতে আশ্চর্যজনক বিকৃতি ঘটে।
- এই বিকৃতি ঘটিত রোগকে ‘হুইপ টেইল’ বলে। গাছ লম্বা হয়ে বিদঘুটে দেখায়।
উদ্ভিদের পানি ও খনিজ লবণ শোষণ
অধিকাংশ উদ্ভিদ পানির সাথে আয়ন হিসেবে খনিজ লবণ শোষণ করে। কিছু লবণ মূলরোম দিয়ে শোষিত হলেও মূলত মূলের অগ্রভাগের কোষ বিভাজন অঞ্চলই শোষণ অঞ্চল হিসেবে কাজ করে।
শোষণ দুই ভাবে হয়ে থাকে- নিষ্ক্রিয় (বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন হয় না) ও সক্রিয় (বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন হয়)।