10 Minute School
Log in

চোখের আনুষঙ্গিক অংশ (Accessory Parts of Eye), প্রতিবিম্ব গঠন ও দর্শন প্রক্রিয়া

চোখের আনুষঙ্গিক অংশ (Accessory Parts of Eye)

১. অক্ষিকোটর (Orbit) : এটি মস্তক ও মুখমন্ডলের অস্থি দিয়ে নািমত প্রাচীরে আবদ্ধ একটি ফাপা গর্তবিশেষ। এতে অক্ষিগোলক সুরক্ষিত থাকে।

২. অক্ষিপেশি (Eye muscles) : অক্ষিকোটরে (orbit) দুই শ্রেণির পেশি থাকে- এক্সট্রিনসিক ও ইন্ট্রিনসিক। যেসব পেশি অক্ষিগোলকের বাইরের দিকে অবস্থান করে তাদেরকে এক্সট্রিনসিক (extrinsic or extraocular) পেশি বলে। অপরদিকে যেসব পেশি অক্ষিগোলকের অভ্যন্তরে থাকে তাদের বলা হয় ইন্ট্রিনসিক (intrinsic) পেশি। আইরিশের পেশি ইত্যাদি ইন্ট্রিনসিক পেশির উদাহরণ। প্রতিটি অক্ষিগোলকের বাইরের দিকে সাতটি করে এক্সট্রিনসিক পেশি থাকে। এর মধ্যে ৪টি রেক্টাস (rectus), ২টি অবলিক (oblique) এবং ১টি লিভেটর পালপেত্রি সুপিরিওরিস (levator palpebrae superioris)। এসব পেশিতে করোটি স্নায়ু বিস্তৃত থাকে। পেশিগুলো অক্ষিগোলককে সঠিক স্থানে ধরে রাখে। তাছাড়া গোলককে বিভিন্ন দিকে ঘোরাতে এবং অক্ষিপল্লব উত্তোলনে সাহায্য করে। পেশিগুলো নিমরূপ :

  • মিডিয়াল রেক্টাস (Medial rectus) : অক্ষিগোলককে অক্ষিকোটরের ভিতরের দিকে ঘুরতে সাহায্য করে।
  • ল্যাটেরাল রেক্টাস (Lateral rectus) : অক্ষিগোলককে অক্ষিকোটরের বাইরের দিকে ঘুরতে সাহায্য করে।
  • সুপিরিয়র রেক্টাস (Superior rectus) : অক্ষিগোলককে অক্ষিকোটরের উপর দিকে ঘুরতে সাহায্য করে।
  • ইনফিরিয়র রেক্টাস (Inferior rectus) : অক্ষিগোলককে অক্ষিকোটরের নিচের দিকে ঘুরতে সাহায্য করে।
  • সুপিরিয়র অবলিক (Superior oblique) : অক্ষিগোলককে অপটিক স্নায়ু ও কর্নিয়ার মধ্যবর্তী অক্ষ বরাবর ঘুরতে সাহায্য করে।
  • ইনফিরিয়র অবলিক (Inferior oblique) : অক্ষিগোলককে সুপিরিয়র অবলিক পেশির বিপরীত দিকে ঘুরতে  সহায়তা করে।
  • লিভেটর পালপেব্রি সুপিরিওরিস (Levator palpebrae superioris) : এ পেশি উর্ধ্ব অক্ষিপল্লবকে উপরে তুলতে সাহায্য করে। উপরোক্ত পেশিগুলো চোখকে অক্ষিকোটরের স্বস্থানে আটকে রাখে এবং অক্ষিগোলককে ঘুরতে সাহায্য করে।

উপরোক্ত পেশিগুলো চোখকে অক্ষিকোটরের স্বস্থানে আটকে রাখে এবং অক্ষিগোলককে ঘুরতে সাহায্য করে।

 

Eye muscles

৩. অক্ষিপল্লব বা চোখের পাতা (Eyelid) : প্রত্যেক চোখের উপরে ও নিচে রোমযুক্ত পেশিবহুল পাতার মতো দুটি পর্দা থাকে। উপরেরটি উর্ধ্ব অক্ষিপল্লব ও নিচেরটি নিম্ন অক্ষিপল্লব। এছাড়া আরও একটি অক্ষিপত্র রয়েছে যা উপ-অক্ষিপল্লব বা নিকটিটেটিং পর্দা (nictitating membrane) নামে পরিচিত। এটি মানুষের একটি লুপ্তপ্রায় নিক্রিয় (vestigeal organ) অঙ্গ হিসেবে উভয় চোখের ভিতরের কোণায় অবস্থিত এবং দেখতে লালচে রঙের মাংসপিণ্ডের মতো। অক্ষিপল্লব ধূলাবালি, তীব্র আলো ও বাতাস থেকে চোখকে রক্ষা করে।

  1. অক্ষিপক্ষ (Eyelash) : চোখের পাতার লোমকে পিউপিল অক্ষিপক্ষ বলে। এগুলো চোখে ধূলাবালি প্রবেশে বাধা দেয়।

৫. আই ব্রো (Eye brow) : চোখের পাতার উপর অংশের লোমকে আই ব্রো বলে । কপাল থেকে গড়িয়ে আসা ঘামের চোখে প্রবেশ প্রতিহত করাই এর কাজ।

Accessory Parts of Eye

 

৬. অক্ষিগ্রন্থি (Eye glands) : চক্ষুতে বিদ্যমান রস ক্ষরণকারী কোষগুলোকে অক্ষিগ্রন্থি বলে। চক্ষুতে তিন    প্রকার অক্ষিগ্রন্থি থাকে, যথা-

  • ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি (Lacrimal gland) : এটি অক্ষি গোলকের অগ্রভাগের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত। এটি অশ্রু (tear) নামক এক প্রকার মৃদু লবণাক্ত জলীয় তরল ক্ষরণ করে যাতে ব্যাকটেরিয়ানাশক  লাইসোজাইম (lysozyme) এনজাইম থাকে।

কাজ :

  1. এটি থেকে নিঃসৃত অশ্রু ধূলোবালি বিধৌত করে চক্ষুকে পরিষ্কার রাখে, কনজাংক্টিভাকে নরম ও  আর্দ্র রাখে এবং কর্নিয়াকে পুষ্টি দেয়।
  2. অশ্রুতে বিদ্যমান লাইসোজাইম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস সুরক্ষা দেয়।
  • হার্ডেরিয়ান গ্রন্থি (Harderian gland) : এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাৎভাগের অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত। এক প্রকার পাতলা তৈলাক্ত রস ক্ষরণ করে।

কাজ : এর তৈলাক্ত ক্ষরণ অক্ষিপল্লব, কনজাংকিভা ও কর্নিয়াকে সিক্ত ও পিচ্ছিল রাখে।

  • মিবোমিয়ান গ্রন্থি (Meibomian gland) : এটি অক্ষিপল্লবের কিনারায় অবস্থিত এবং এক প্রকার গাঢ় তৈলাক্ত রস ক্ষরণ করে।

কাজ : এর তৈলাক্ত ক্ষরণ কনজাংক্টিভা ও কর্নিয়াকে পিচ্ছিল রাখে।

৭. কনজাংক্টিভা (Conjunctiva) : অক্ষিপল্লবের ভিতরের অংশ এবং স্ক্লেরার অগ্রাংশ (সাদা অংশ) যে স্বচ্ছ পাতলা মিউকাস স্তরে আবৃত থাকে তার নাম কনজাংটিভা। এটি চোখকে ধূলাবালি ও জীবাণু থেকে রক্ষা করে। চোখের সম্মুখতল এবং অক্ষিপরের ভিতরের তল আর্দ্র ও পিচ্ছিল রাখে।

 

প্রতিবিম্ব গঠন ও দর্শন প্রক্রিয়া (Formation of Image and Mechanism of Vision)

দর্শন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং পাঁচটি ধাপে সংঘটিত হয়, যথা-

  1. চোখে আলোর প্রবেশ।
  2. রেটিনায় প্রতিবিম্ব গঠন।
  3. প্রতিবিম্ব গঠনকারী রশ্মির বৈদ্যুতিক সিগন্যালে রূপান্তর।
  4. প্রতিবিম্ব সম্পর্কে স্নায়ু অনুভূতি (impulse) মস্তিষ্কে প্রেরণ।
  5. মস্তিষ্কের মাধ্যমে স্নায়ু অনুভূতির বিশ্লেষণ ও দর্শন।

Formation of Image

আমরা যে বস্তুকে দেখি, আলোকিত সে বস্তু থেকে আলোক রশ্মি প্রথমে কর্নিয়ার উপর পড়ে। স্বচ্ছ কর্নিয়ায় প্রতিসরিত আলোক রশ্মি পিউপিলের মাধ্যমে লেন্সে এসে পড়ে। দ্বিউত্তল লেন্স এ আলোক রশ্মিকে পুনরায় প্রয়োজনমত প্রতিসরণের মাধ্যমে রেটিনায় প্রতিফলিত করে। ফলে রেটিনার উপর বস্তুর একটি উল্টা প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়। রেটিনায় সৃষ্ট প্রতিবিম্ব রেটিনার আলোক সংবেদী কোষ (রডকোষ ও কোণকোষ)-কে উদ্দীপ্ত (simulate) করে। আলোক সংবেদী কোষের এ অনুভূতি বাইপোলার কোষ, গ্যাংলিয়ন কোষ এবং অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে অপটিক লোবের দৃষ্টি কেন্দ্র বা ভিসুয়াল কর্টেক্স-এ পৌছায়। এ অঞ্চলে স্নায়ু অনুভূতি থেকে প্রাপ্ত উল্টা প্রতিবিম্বের তথ্য বিশ্লেষণ হয় ফলে মানুষ বস্তুটিকে সোজা দেখতে পায়।

দর্শন কৌশলের গতিপথ হচ্ছে–

আলোকরশ্মি → কর্নিয়া → অ্যাকুয়াস হিউমার → পিউপিল → লেন্স → ভিট্রিয়াস হিউমার → রেটিনা → অপটিক স্নায়ু → মস্তিষ্কের ভিসুয়্যাল কর্টেক্স।

উপযোজন (Accommodation)

দর্শনীয় বস্তু ও লেন্সের মধ্যকার দূরত্বের পরিবর্তন না করেই সিলিয়ারি পেশি ও সাসপেন্সরি লিগামেন্টের সংকোচন, এ লেন্সের বক্রতার তথা ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত বস্তুকে সমান স্পষ্ট দেখার যে বিশেষ ধরনের পরিবর্তন ঘটে সে প্রক্রিয়াকে উপযোজন বলে। চোখ থেকে ৬ মিটার দূরত্বে অবস্থিত কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব স্বাভাবিকভাবে রেটিনায় প্রতিফলিত হয়। এ দূরত্বের কম বেশি হলে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনায় মাসের জন্য উপযোজন প্রয়োজন । মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীতে উপযোজন একটি বৈশিষ্ট্য। এ সময় সিলিয়ারি বডিতে বিদ্যমান বৃত্তাকার পেশির সংকোচনের ফলে সাসপেনসরি লিগামেন্টের প্রসারণ ঘটে। ফলে লেন্সের বক্রতা বাড়ে ও খাটো হয়। লেন্সের ফোকাস দূরত্ব কমে গিয়ে কাছের বস্তুটি দৃষ্টিগোচর হয়। দূরের বস্তু দেখার সময় এর উল্টোটি ঘটে। অর্থাৎ, সিলিয়ারি বডির বৃত্তাকার পেশির প্রসারণ, সাসপেনসরি লিগামেন্টের সংকোচনে লেন্সের বক্রতা কমে, লেন্স সরু ও লম্বা হয় এবং ফোকাস দূরত্ব বেড়ে যায় এবং দূরের বস্তু থেকে আলোকরশ্মি রেটিনায় পতিত হয়ে প্রতিবিম্ব গঠন করে। তখন বস্তুটি দৃশ্যমান হয়। যে দৃষ্টিতে কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না তাকে হাইপারমেট্রোপিয়া (hypermetropia) বলে। উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহারে সমস্যার সমাধান হয়। যদি দূরের বস্তু দেখতে সমস্যা হয় তবে তাকে মায়োপিয়া (myopia) বলে। অবতল লেন্সের চশমা কাছের বস্তু দর্শন কৌশল দূরের বস্তু দর্শন কৌশল ব্যবহারে এ সমস্যা দূরীভূত হয়।

উপযোজন

দ্বিনেত্র দৃষ্টি (Binocular vision) বা স্টেরিওস্কোপিক দৃষ্টি (Stereoscopic vision)

মানুষের দৃষ্টিকে দ্বিনেত্র দৃষ্টি বলে। কারণ আমরা কোনো দৃশ্যযোগ্য বস্তু একই সাথে দু’চোখের সাহায্যে এককভাবে দেখতে পাই। কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি রেটিনায় পড়লে যে স্নায়ু উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মস্তিষ্কের দৃষ্টিকেন্দ্রে (visual cortex) একটি মাত্র প্রতিবিম্বে একত্রীভূত হয়, ফলে আমরা দুচোখে একটি বস্তুকে এককভাবে দেখি। মানুষের চোখদুটি মাথার সামনে ৬.৩ সেন্টিমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ফলে কোনো বস্তু দেখার সময় প্রত্যেক চোখ বস্তটির একটি করে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। প্রতিবিম্ব দুটির একটি থেকে অন্যটি কিছুটা আলাদা। উভয় উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। মস্তিষ্ক দুটি উদ্দীপনাকে সমন্বয় সাধন করে। ফলে বস্তুর একটি ত্রিমাত্রিক (three dimensional) চিত্র দেখা যায়।

দ্বিনেত্র দৃষ্টির শর্ত (Conditions of Binocular vision) :

নির্দিষ্ট বস্তুতে নিবদ্ধ করার জন্য এভাবে দেখে অক্ষিপেশিকে সঠিকভাবে সংকুচিত হতে হবে।

  • দুচোখের রেটিনায় সদৃশ বিন্দুর উপস্থিতি থাকতে হবে।
  • দুচোখের রেটিনায় প্রায় একইরকম প্রতিবিম্বের সৃষ্টি হতে হবে।
  • দুটি বীক্ষণক্ষেত্রকে এক জায়গায় পরস্পর মিলে যেতে হবে।

Binocular vision