10 Minute School
Log in

শৈবাল (Algae)

অত্যন্ত সরল প্রকৃতির অভাস্কুলার, সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ (অধিকাংশই জলজ) যাদের জননাঙ্গ এককোষী এবং নিষেকে র পর স্ত্রী জননাঙ্গে থাকা অবস্থায় কোনো ভ্রূণ গঠিত হয় না, তাদের শৈবাল বলে।

ফাইকোলজি/অ্যালগোলজি (Phycology): শৈবাল বিষয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, পরীক্ষণ, নিরীক্ষণ ও গবেষণা করাকে বলা হয় ফাইকোলজি (phycology) বা শৈবালবিদ্যা।

ফাইটোপ্লাংকটন (Phytoplankton): সম্পূর্ণ ভাসমান শৈবালকে ফাইটোপ্লাংকটন বলে।

বেনথিক শৈবাল (Benthic algae): জলাশয়ের পানির নিচে মাটিতে আবদ্ধ হয়ে যে শৈবাল জন্মায় তাদেরকে বেনথিক শৈবাল বলে।

লিথোফাইট (Lithophyte): পাথরের গায়ে জন্মানো শৈবালকে লিথোফাইট বলে।

এন্ডোফাইট (Endophyte): উচ্চ শ্রেণির জীবের টিস্যুর অভ্যন্তরে জন্মানো শৈবালকে এন্ডোফাইট বলে।

এপিফাইট (Epiphyte): উচ্চ শ্রেণির জীবের টিস্যুর বাহিরে জন্মানো শৈবালকে এপিফাইট বলে।

গ্রিক Phykos অর্থ seaweed । Seaweedও শৈবাল। সারা বিশ্বে প্রায় ৩০,০০০ প্রজাতির শৈবাল রয়েছে।

শৈবালের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of algae)

  • শৈবাল সালোকসংশ্লেষণকারী স্বভোজী অপুষ্পক উদ্ভিদ এবং আলো ছাড়া জন্মাতে পারে না।
  • এরা সুকেন্দ্রিক, এককোষী বা বহুকোষী। শৈবালে কখনও সত্যিকার মূল, কান্ড ও পাতা সৃষ্টি হয় না, অর্থাৎ এরা সমাঙ্গদেহী (থ্যালয়েড)। 
  • এদের দেহে ভাস্কুলার টিস্যু নেই। এদের জননাঙ্গ সাধারণত এককোষী বা বহুকোষী হলেও তাতে কোনো বন্ধ্যা কোষের আবরণী থাকে না। 
  • এদের জাইগোট স্ত্রীজননাঙ্গে থাকা অবস্থায় কখনও বহুকোষী ভ্রূণে পরিণত হয় না
  • এদের স্পোরাঞ্জিয়া (রেণুথলি) সর্বদাই এককোষী।
  • শৈবালের কোষ-প্রাচীর প্রধানত সেলুলোজ নির্মিত।
  • শৈবালের যৌন জনন আইসোগ্যামাস, অ্যানাইসোগ্যামাস অথবা ঊগ্যামাস।
  • দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ শৈবালে সঞ্চিত খাদ্য শর্করা; সায়ানোব্যাক্টেরিয়াতে গ্লাইকোজেন।
  • এরা সাধারণত জলীয় বা আর্দ্র পরিবেশে জন্মায়।

শৈবালের দৈহিক গঠন (Physical structure of algae)

  • আণুবীক্ষণিক (যেমন- Prochlorococcus) থেকে দীর্ঘদেহী (যেমন- Macrocystis, প্রায় ৬০ মিটার পর্যন্ত লম্বা।
  • সচল এককোষী, যেমন- Chlamydomonas। এদের কোষে এক বা একাধিক ফ্ল্যাজেলা থাকে।
  • সচল কলোনিয়্যাল, যেমন- Volvox, Pandorina, Eudorina । এরা সিনোবিয়াম। বিশেষভাবে সজ্জিত নির্দিষ্ট সংখ্যক কোষের কলোনি হলো সিনোবিয়াম।
  • নিশ্চল এককোষী, যেমন- Chlorococcum, Chlorella। এদের ফ্ল্যাজেলা নেই।

Algae

১. Chlamydomonas

Algae

২.Volvox

Algae

৩. Spirogyra

Algae and fungi

৪. Chaetophora

Algae and fungi

৫. Caulerpa 

Algae and fungi

৬. Polysiphonia (লোহিত শৈবাল))

Algae and fungi

৭. Zygnema

Algae and fungi

৮. Navicula (হলদে-সোনালী শৈবাল)  


Algae and fungi

৯. Sargassum (বাদামী শৈবাল)

Algae and fungi

১০. Chara

বি: দ্র:  ৬, ৮ ও ৯ নং ছাড়া অন্যগুলো সবুজ শৈবাল।

  • বহুকোষী এবং পাতার মতো, যেমন- Ulva, 
  • বহুকোষী এবং ফিলামেন্টাস, অশাখ, যেমন-Ulothrix, Spirogyra. 
  • বহুকোষী এবং ফিলামেন্টাস, শাখান্বিত, যেমন- Chaladophora, Chaetophora. 
  • বহুকোষী এবং হেটেরোট্রাইকাস ( শয়ান ও খাড়া অংশে বিভক্ত ), যেমন- Chaetophora
  • সাইফনের মতো (নলাকার), যেমন- Vaucheria। এরা সিনোসাইটিক অর্থাৎ কোষ অসংখ্য নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট।
  • জালের মতো, যেমন- Hydrodictyon
  • দেহ পর্ব-মধ্যপর্ব সাদৃশ্য, যেমন- Chara
  • দেহ বাহ্যত মূল, কান্ড ও পাতার ন্যায়, যেমন- Sargassum.
  • এদের ক্লোরোপ্লাসট হতে পারে সর্পিলাকার (Spirogyra), পেয়ালার ন্যায় (Chlamydomonas), থালার মতো (Caulepra), জালিকাকার (Oedogonium), গার্ডল আকৃতির (Ulothrix), তারকার মতো (Zygnema)।

শৈবালের কোষীয় গঠন (The cellular structure of algae)

সব শৈবালই সুকেন্দ্রিক (eukaryotic)। (আদিকেন্দ্রিক নীলাভ-সবুজ শৈবালকে বর্তমানে সায়ানোব্যাকটেরিয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়।) শৈবাল কোষের গঠন মোটামুটিভাবে উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদকোষের মতোই কোষের  বাইরে সেলুলোজ (প্রধান বস্ত) নির্মিত জড় কোষপ্রাচীর, কোষপ্রাচীর দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় কোষঝিল্লি, কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় সাইটোপ্লাজম থাকে। সাইটোপ্লাজমে বিদ্যমান আছে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, বৃহৎ ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, পাইরিনয়েড, রাইবোসোম ইত্যাদি অঙ্গাণু এবং সঞ্চিত খাদ্য। কোনো কোনো শৈবালের দেহ নলাকার, শাখান্বিত, প্রস্থ প্রাচীরবিহীন এবং কোষে বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত থাকে। এরূপ শৈবাল দেহকে সিনোসাইটিক (coenocytic) শৈবাল বলে; যেমন- Vaucheria, Botrydium. একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াটমের সিলিকাময় কোষ প্রাচীরকে ফ্রুস্টিউল (frustiule) বলে।

শৈবালের একটি বড় অংশই এককোষী। Pyrropthyta, Euglenophyta, Chrysophyta এবং বহু Chlorophyta শৈবাল এককোষী। Rhodophyta-এর অধিকাংশই বহুকোষী, Phaeophyta বহুকোষী বৃহৎ শৈবাল নিয়ে গঠিত।

প্রধান প্রধান শৈবাল শ্রেণির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (A brief introduction to the major algae classes):

শ্রেণি পিগমেন্ট সঞ্চিত খাদ্য
Chlorophyta (সবুজ শৈবাল)উদাহরণ- Ulothrix ক্লোরোফিল এ, বি এবং ক্যারোটিনয়েড শ্বেতসার (Starch)
Chrysophyta (গোল্ডেন ব্রাউন শৈবাল)উদাহরণ- Navicula ক্লোরোফিল এ, সি এবং অতিমাত্রায় ঘন ক্যারোটিনয়েড ক্রাইসোল্যামিনারিন (Chrysolaminarin)
Pyrrophyta (অগ্নি শৈবাল)উদাহরণ- Gymnodinium ক্লোরোফিল এ, সি ও ক্যারোটিনয়েড প্যারামা (Paramylon)
Phaeophyta (ী শৈবাল)উদাহরণ- Sargassum ক্লোরোফিল এ, সি এবং ফিউকোজ্যান্থিন ল্যামিনারিন, ম্যানিটল ও এলগিন(Laminarin, Mannitol & Algin)
Rhodophyta (লোহিত শৈবাল)উদাহরণ- Polysiphonia ক্লোরোফিল এ, ফাইকোসায়ানিন, ফাইকোইরেথ্রিন ফ্লোরিডিয়ান স্টার্চ, এগার-এগার ও ক্যারাজীনান (Floridian starch, Agar-Agar & Carrageenan)

শৈবাল পৃথিবীর মোট ফটোসিনথেসিসের প্রায় ৬০ ভাগ করে থাকে, বাকি ৪০ ভাগ উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদ করে থাকে। সবুজ শৈবাল থেকে উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদের আবির্ভাব হয়েছে বলে মনে করা হয়।

শৈবালের জনন (Reproduction of Algae)

Algae

বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শৈবালের প্রজনন হয়ে থাকে। নিম্নে এ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো :

১। অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) : দৈহিক অঙ্গের মাধ্যমে এ প্রকার জনন হয়ে থাকে। অর্থাৎ স্পোর (spore) বা গ্যামিট (gamete) সৃষ্টি ব্যতিরেকে যে জনন প্রক্রিয়ায় জীবের দৈহিক অঙ্গ থেকে নতুন জীবের সৃষ্টি হয় তাকে অঙ্গজ জনন বলা হয়। নিম্নলিখিত উপায়ে অঙ্গজ জনন হতে পারে :

  • কোষের বিভাজন (Cell division) : এককোষী শৈবালে মাতৃকোষটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে দুটি অপত্য কোষ (daughter cell) তৈরি করে এবং প্রতিটি অপত্য কোষ এক একটি পূর্ণাঙ্গ শৈবাল কোষে পরিণত হয়। উদা- Euglena .
  • খণ্ডায়ন (Fragmentation) : বহুকোষী ফিলামেন্টাস শৈবালে যে কোনো কারণে বা যে কোনো ভাবে ফিলামেন্টটি ভেঙ্গে গেলে প্রতিটি খণ্ড ক্রমে একটি পূর্ণ শৈবালে পরিণত হয়। উদা- Nostoc, Ocillatoria 
  • টিউবার সৃষ্টির মাধ্যমে (By formation of tuber) : কোনো কোনো শৈবালের রাইজয়েড বা মাটির নিচের অংশে টিউবার তৈরি হয়, যা পরে পৃথক হয়ে পূর্ণাঙ্গ শৈবালে পরিণত হয়। Chara শৈবালে এরূপ হয়। 
  • কুঁড়ি সৃষ্টি (Budding) : কুঁড়ি (bud) সৃষ্টির মাধ্যমে কোনো কোনো শৈবালে (যেমন-Protosiphon) নতুনভাবে পূর্ণাঙ্গ শৈবাল দেহ সৃষ্টি হয়।
  • হরমোগোনিয়া (Hormogonia) : সূত্রাকার নীলাভ-সবুজ শৈবালের ট্রাইকোম খন্ডিত হলে প্রতিটি খন্ডকে হরমোগোনিয়া বলা হয়। আঘাত, সেপারেশন ডিক্স বা হেটারোসিস্ট তৈরির ফলে হরমোগোনিয়া তৈরি হয়। হরমোগোনিয়া অঙ্কুরিত হয়ে নতুন সূত্র তৈরি হয়; যেমন; Nostoc, Ocillatoria। বর্তমানে এরা সায়ানোব্যাকটেরিয়া হিসেবে পরিচিত।

২। অযৌন জনন (Asexual reproduction):

স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন জনন ঘটে থাকে। অযৌন জননের একক হলো রেণু বা স্পোর। বিভিন্ন ধরনের রেণু তৈরির মাধ্যমে যে জনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে অযৌন জনন বলা হয়। যে কোনো একটি অঙ্গজ কোষ স্পোরাঞ্জিয়াম হিসেবে কাজ করে এবং এতে এক থেকে অসংখ্য স্পোর তৈরি করে। স্পোরের ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট ও সচল হলে তাকে চলরেণু বা জুস্পোর (zoospore) বলে; যেমন- Ulothrix.

Algae

চিত্র-১১: শৈবালে অ্যাপ্লানোস্পোর ও অ্যাকাইনিটি।

(ক) অ্যাপ্লানোস্পোর, (খ) অ্যাকাইনিটি

জুস্পোরগুলো সাধারণত ২-৪  ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধিক ফ্ল্যাজেলা থাকতে পারে। স্পোর ফ্ল্যাজেলাবিহীন নিশ্চল হলে তাকে অচলরেণু বা অ্যাপ্লানোস্পোর (aplanospore) বলে; যেমন- Microspora . 

চরম প্রতিকূল পরিবেশে অর্থাৎ দীর্ঘ শুষ্ক পরিবেশে অ্যাপ্ল্যানাস্পোরের পুরু প্রাচীরবেষ্টিত হলে তাকে হিপনোস্পোর (hypnospore) বলে, যেমন- Ulothrix। মাতৃকোষের অনুরূপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অচল রেণুকে অটোস্পোর (autospore) বলে; যেমন- Chlorella। কতক শৈবালে কোষের পুরো প্রোটোপ্লাস্ট খাদ্য সঞ্চয় করে এবং পুরু প্রাচীর বেষ্টিত হয়, তখন তাকে অ্যাকাইনিটি বলে। অনুকূল পরিবেশে অ্যাকাইনিটি অঙ্কুরিত হয়ে নতুন শৈবালে পরিণত হয়, যেমন-Pithophora, Cladophora। ডায়াটম জাতীয় শৈবালে বিশেষ ধরণের  রেণু সৃষ্টির মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। এদেরকে অক্সোস্পোর বলে ; যেমন- Navicula।

৩। যৌন জনন (Sexual reproduction) : গ্যামিট সৃষ্টি ও দ’টি গ্যামিটের মিলনের মাধ্যমে যে জনন ঘটে তাকে যৌন জনন বলে। শৈবালের যৌন জননের সক্ষমতা অনুসারে এদেরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে; যথা-

ক) হোমোথ্যালিক (Homothalic) বা সহবাসী : একই দেহে বিপরীত যৌনধর্মী জননকোষ উৎপন্ন হয় এবং মিলিত । হয়ে জাইগোট উৎপন্ন করে তাকে হোমোথ্যালিক শৈবাল বলে। যেমন- Spirogyra-র কতক প্রজাতি।