10 Minute School
Log in

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Einstein’s theory of relativity)

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Einstein’s theory of relativity)

বলবিদ্যা শাস্ত্র নিউটনের তিনটি সূত্রের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইনস্টাইন স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেন যে স্থান, কাল এবং ভর এদের কোনোটিই নিরপেক্ষ বা পরম কিছু নয়, এগুলো আপেক্ষিক। এই তিনটি বিষয়ের প্রত্যেকটি অন্য কোনো কিছুর সাপেক্ষে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ কোনো বিষয় অন্য কোনো কিছুর সাপেক্ষে বিবেচিত হবার নামই আপেক্ষিকতা। আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব অনুসারে পরম গতি নিরর্থক, সব গতিই আপেক্ষিক।

আপেক্ষিক তত্ত্ব (Theory of Relativity) মূলত দুভাগে বিভক্ত, যথা-

(১) আপেক্ষিকতার সাধারণ বা সার্বিক তত্ত্ব (The general theory of relativity) এবং

(২) আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব (The special theory of relativity)।

আপেক্ষিকতার সাধারণ বা সার্বিক তত্ত্ব পরস্পরের তুলনায় ঊর্ধ্ব বা নিম্নগতিশীল (ত্বরিত) বস্তুসমূহ বা সিস্টেম (system) নিয়ে আলোচনা করেছে। যেমন সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, ধূমকেতু, উল্কাপিণ্ড প্রভৃতির গতি, মাধ্যাকর্ষণ এবং সমগ্র বিশ্বের গঠন সম্পর্কে তার বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক মতবাদসমূহ আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত। এটি প্রকাশিত হয় 1916 সালে।

পক্ষান্তরে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব শুধু পরস্পরের তুলনায় সমগতিতে সঞ্চরণশীল (অত্বরিত) বা অসঞ্চরণশীল (অপরিবর্তনীয়ভাবে শূন্যগতিবিশিষ্ট) বস্তু বা সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বস্তুত বিশেষ তত্ত্ব সার্বিক বা সাধারণ তত্ত্বের একটি বিশেষ রূপ। এটি আবিষ্কৃত হয় 1905 সালে। এই অধ্যায়ে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব আলোচনা করা হবে।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব এবং এর মৌলিক স্বীকার্য (The special theory of relativity and its fundamental postulates)

1905 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রবর্তন করেন যা নিম্নলিখিত দুটি মৌলিক স্বীকার্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই দুটি স্বীকার্যকে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্য (Fundamental postulates of the special theory of relativity) বলে।

আপেক্ষিকতার মৌলিক স্বীকার্যসমূহ (Fundamental postulates of relativity)

প্রথম স্বীকার্য:

জড় কাঠামোতে বা গ্যালিলিয় কাঠামোতে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্ৰসমূহ অভিন্ন থাকে। অন্য কথায় বলা যায় পরস্পরের সাথে সমবেগে ধাবমান সকল প্রসঙ্গ কাঠামোতে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো একইরূপ সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা যেতে পারে।

ব্যাখ্যা: নিউটনের গতি সূত্রের ১ম সূত্র যে প্রসঙ্গ কাঠামোতে প্রযুক্ত হয়, তাকে জড়তার কাঠামো বলে। যদি কোনো বস্তু জড়তায় (স্থির বা গতি) থাকে, তবে এর ওপর বাহ্যিক বল প্রযুক্ত না হলে এর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। এই স্বীকার্য অনুসারে দুজন পর্যবেক্ষক একই রৈখিক বেগে চলতে থাকলে যে কোনো ভৌত সূত্রের রূপ বা অবস্থা একই থাকবে।

উদাহরণঃ সমগতিসম্পন্ন কোনো ট্রেনযাত্রী কামরার ভেতরের কোনো পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করতে পারবেন না ট্রেন স্থির না চলছে। পদার্থবিজ্ঞানের সকল পরীক্ষার ফল ট্রেন স্থির থাকলেও যা হবে, সমবেগে চললেও তাই পাওয়া যাবে। 

দ্বিতীয় স্বীকার্য:

শুন্যস্থানে সকল পর্যবেক্ষকের নিকট আলোকের বেগ সর্বদা একই থাকে। এ বেগ আলোক প্রবাহের দিক, উৎস এবং পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক বেগের ওপর নির্ভর করে না।

ব্যাখ্যা: এই স্বীকার্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইথারের অস্তিত্ব স্বীকার করা কোনো মতেই সম্ভব হয় না। তাছাড়া ইথার মাধ্যমের ওজন বা সান্দ্রতা কিছুই নির্ণয় করা যায় না। আইনস্টাইনেৱ মতে আলোক পরিবাহী ইথারের প্রবর্তন অনাবশ্যক। মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষা এবং পরবর্তী যুগে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয়েছে যে শূন্যস্থানে বা বায়ু মাধ্যমে আলোকের বেগ আলোক প্রবাহের দিক, উৎস এবং পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক বেগের ওপর নির্ভরশীল নয়। এটি একটি ধ্রুব রাশি।

মহাকাশ ভ্রমণে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Theory of relativity for journey to space)

কাল দীর্ঘায়নের ও দৈর্ঘ্য সংকোচনের কৌতূহলী দিক মহাকাশ ভ্রমণে ঘটে থাকে। প্রচুর দূরত্ব অন্তর্ভুক্তির কারণে এমনকি আমাদের সৌরজগতের বাইরের নিকটতম তারায় গমন করতেও অনেক সময় লাগবে। আলফা সেন্টোরাই (Alpha Centauri) আমাদের গ্যালাক্সির নিকটতম তারা যা 4.3 আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। অর্থাৎ এই তারায় আলো পৌছাতে পৃথিবীতে অবস্থিত ব্যক্তি কর্তৃক পরিমাপকৃত সময় 4.3 বছর।

ধরি একটি রকেট পৃথিবীর সাপেক্ষে 0.95c বেগে আলফা সেন্টোরাই-এর দিকে গমন করল। এখানে দুটি বিষয় জড়িত রয়েছে একটি হলো পৃথিবী থেকে গমন এবং অপরটি আলফা সেক্টোরাই-এ আগমন। গমনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পৃথিবী মহাকাশযানের বাইরে এবং গন্তব্যে পৌছার ঠিক পর মুহূর্তে আলফা সেন্টোরাই মহাকাশযানের বাইরে। সুতরাং মহাকাশযাত্রীর নিকট দুটো ঘটনা একই স্থানে সংঘটিত হয়, অর্থাৎ মহাকাশযানের বাইরে।

পৃথিবীতে অবস্থিত ব্যক্তির কাছে ঘটনা দুটো ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয়। সুতরাং এরূপ ব্যক্তি কর্তৃক পরিমাপকৃত দীর্ঘায়িত সময় ব্যবধান t যেখানে,

\Delta t=\frac{4.3}{0.95} বছর = 4.5  বছর

কাল দীর্ঘায়ন সূত্রানুসারে মহাকাশযাত্রী কর্তৃক তাদের ঘড়িতে পরিমাপকৃত আসল সময় ব্যবধান হবে

\Delta t_{0}=\Delta t \sqrt{1-\frac{v^{2}}{c^{2}}}=4.5 \times \sqrt{1-\left(\frac{0.95 c}{c}\right)^{2}}

                                   = 1.4 বছর

সুতরাং, যখন মহাকাশযাত্রী আলফা সেন্টোরাইতে পৌছবে তখন তার বয়স বাড়বে 1.4 বছর। কিন্তু পৃথিবীর পর্যবেক্ষক কর্তৃক নির্ণীত 4.5 বছর নয়।

আবার ধরা যাক একটি দণ্ড দ্রুতযান রকেটের মধ্যে আছে। রকেট যখন আলোর বেগের কাছাকাছি বেগ নিয়ে গতিশীল থাকে তখন ওই রকেটের মধ্যে যদি দণ্ডটির দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, গতিশীল অবস্থায় দণ্ডটির দৈর্ঘ্য নিশ্চল অবস্থায় দৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট হবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে দণ্ডটি স্থির অবস্থায় থাকাকালীন দৈর্ঘ্য গতিশীল অবস্থায় থাকাকালীন দৈর্ঘ্যের চেয়ে বড় হবে।

যদি পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে গতিশীল কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য L হয় এবং যদি ওই পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে নিশ্চল অবস্থায় একই বস্তুর দৈর্ঘ্য L_0 হয় তাহলে L সব সময় L_0 অপেক্ষা ছোট হবে। এখানে L_0 কে বলা হয় যথোপযুক্ত বা প্রকৃত দৈর্ঘ্য (proper length) যা নিচের সমীকরণ দ্বারা সম্পর্কিত।

\mathrm{L}=\mathrm{L}_{0} \sqrt{1-\frac{v^{2}}{c^{2}}}

এখানে, 

v = রকেটের বেগ

c = আলোর বেগ