10 Minute School
Log in

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, মাইটোকন্ড্রিয়া ও প্লাস্টিড (Endoplasmic Reticulum, Mitochondria & Plastid)

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic Reticulum)

গঠন ও ধরণ (Structure and Type) :

ভৌত গঠন (Physical Structure) : গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic Reticulum) তিন প্রকার; যথা : 

(ক) সিস্টার্নি (Cisternae) : এরা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা, শাখাবিহীন ও লম্বা চৌবাচ্চার মতো এবং সাইটোপ্লাজমে পরস্পর সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে। 

(খ) ভেসিকল (Vesicles) : এগুলো বর্তুলাকার ফোস্কার মতো।

(গ) টিউবিউল (Tubules) : এগুলো নালিকার মতো, শাখান্বিত বা অশাখ। এদের গায়ে সাধারণত রাইবোসোম যুক্ত থাকে না।

রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) : এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের (Endoplasmic Reticulum) প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো- প্রোটিন (৬০-৭০ ভাগ) ও লিপিড (৩০-৪০ ভাগ)। এতে প্রায় ১৫ ধরনের এনজাইম পাওয়া যায়; যেমন-গ্লুকোজ ৬-ফসফেটেজ, সক্রিয় ATPase, NADH ডায়াফোরেজ ইত্যাদি। অমসৃণ জালিতে RNA এবং গ্লাইঅক্সিসোম নামক ক্ষুদ্রাকার কণা থাকতে পারে।  

endoplasmic reticulum
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic Reticulum)

কাজ :

  • এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
  • অমসৃণ রেটিকুলামে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। 
  • মসৃণ রেটিকুলামে (বিশেষত প্রাণী কোষে) লিপিড, মতান্তরে বিভিন্ন হরমোন, গ্লাইকোজেন, ভিটামিন, স্টেরয়েড প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয়। 
  • অনেকের মতে এতে কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে। 
  • এটি লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে। 
  • রাইবোসোম, গ্লাইঅক্সিসোমের ধারক হিসেবে কাজ করে। 
  • এরা কোষে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থকে নিষ্ক্রিয় করে। 
  • লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে। 
  • রাইবোসোমে উৎপন্ন প্রোটিন পরিবহনে এটি প্রধান ভূমিকা রাখে।

মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria)

গঠন ও ধরণ (Structure and Type) :

ভৌত গঠন (Physical Structure) : 

১। আবরণী : প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ন লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ারের দুটি মেমব্রেন নিয়ে গঠিত। 

২। প্রকোষ্ঠ : দুই মেমব্রেনের মাঝখানের ফাঁকা স্থানকে বলা হয় বহিস্থ কক্ষ (প্রকোষ্ঠ) বা আন্তঃমেমব্রেন ফাঁক এবং ভেতরের মেমব্রেন দিয়ে আবদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ। অভ্যন্তরীণ কক্ষ জেলির ন্যায় ঘন সমসত্ত্ব , পদার্থ বা ধাত্র দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই ধাত্র পদার্থকে ম্যাট্রিক্স বলে।

৩। ক্রিস্টি (Cristae) বা প্রবর্ধক : বাইরের মেমব্রেন সোজা কিন্তু ভেতরের মেমব্রেনটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি করে। প্রবর্ধিত অংশকে ক্রিস্টি (cristae) বলে। 

৪। অক্সিসোম (Oxisome): মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) অন্তঃআবরণীর অন্তর্গাত্রে অতি সূক্ষ্ম অসংখ্য দানা লেগে থাকে। এদের অক্সিসোম বলে।

৫। ATP-Synthases ও ETC : ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATP-Synthases নামক গোলাকার বস্তু আছে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়।

৬। বৃত্তাকার DNA ও রাইবোসোম : মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) নিজস্ব বৃত্তাকার DNA এবং রাইবোসোম (70 S) রয়েছে। 

রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) : 

মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গ্লিসারাইডসমূহ, ৪% লেসিথিন ও সেফালিন এবং ২% কোলেস্টেরল। লিপিডের মধ্যে ৯০% হচ্ছে ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন E এবং কিছু অজৈব পদার্থ।

মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লি লিপো-প্রোটিন সমৃদ্ধ। মাইটোকন্ড্রিয়াতে প্রায় ১০০ প্রকারের এনজাইম ও কো-এনজাইম রয়েছে। এছাড়া এতে ০.৫% RNA ও সামান্য DNA থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তঃঝিল্লিতে কার্ডিওলিপিন নামক বিশেষ ফসফোলিপিড থাকে। 

mitochondria
মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria)

কাজ :

  • কোষের যাবতীয় কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করা। 
  • শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম প্রভৃতি ধারণ করা। 
  • নিজস্ব DNA, RNA উৎপন্ন করা এবং বংশগতিতে ভূমিকা রাখা।
  • প্রোটিন সংশ্লেষ ও স্নেহ বিপাকে সাহায্য করা।
  • শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন সম্পন্ন করা।
  • এরা Ca, K প্রভৃতি পদার্থের সক্রিয় পরিবহনে সক্ষম।
  • শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে অংশগ্রহণ করা। 
  • কোষের বিভিন্ন অংশে ক্যালসিয়াম আয়নের Ca^{2+} সঠিক ঘনত্ব রক্ষা করা। 
  • এতে বিভিন্ন ধরনের ক্যাটায়ন, যেমন-Ca^{2+}, S^{2+}, Fe^{2+}, Mn^{2+} ইত্যাদি সঞ্চিত রাখা।
  • কোষের পূর্বনির্ধারিত মৃত্যু (apoptosis) প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা। 
  • রক্ত কণিকা ও হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করা। 

প্লাস্টিড (Plastid)

গঠন ও ধরণ (Structure and Type) :

প্লাস্টিড (Plastid) প্রধানত তিন প্রকার; যথা- (ক) লিউকোপ্লাস্ট, (খ) ক্রোমোপ্লাস্ট এবং (গ) ক্লোরোপ্লাস্ট। 

(ক) লিউকোপ্লাস্ট (Leukoplast) : এরা বর্ণহীন। আলোর সংস্পর্শে এলে লিউকোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্টে, বিশেষ করে ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হতে পারে।

প্রকারভেদ (Types) :  সঞ্চিত খাদ্যের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে লিউকোপ্লাস্টকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা : 

  • অ্যামাইলোপ্লাস্ট : স্টার্চ বা শ্বেতসার জতীয় খাদ্য সঞ্চয়কারী লিউকোপ্লাস্টকে অ্যামাইলোপ্লাস্ট বলা হয়। 
  • ইলায়োপ্লাস্ট : চর্বিজাতীয় খাদ্য সঞ্চয়কারী লিউকোপ্লাস্টকে ইলায়োপ্লাস্ট বলা হয়।
  • অ্যালিউরোপ্লাস্ট : প্রোটিন সঞ্চয়কারী লিউকোপ্লাস্টকে অ্যালিউরোপ্লাস্ট বা প্রোটিনোপ্লাস্ট বলা হয়।

(খ) ক্রোমোপ্লাস্ট (Chromoplast) : প্লাস্টিডকে (Plastid) ক্রোমোপ্লাস্ট বলা হয়। যেমন : ফুলের পাপড়ি, রঙিন ফল ও বীজ, গাজরের মূল ইত্যাদি। 

(গ) ক্লোরোপ্লাস্ট (Chloroplast) : সবুজ বর্ণের প্লাস্টিডকে (Plastid) বলা হয় ক্লোরোপ্লাস্ট। ক্লোরোফিল-a, ক্লোরোফিল-b, ক্যারোটিন ও জ্যান্থোফিলের সমন্বয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত। ক্লোরোফিল নামক সবুজ বর্ণকণিকা (pigment) অধিক মাত্রায় ধারণ করে বলে এরা সবুজ বর্ণের। 

ভৌত গঠন (Physical Structure): 

১. আবরণী ঝিল্লি : সমস্ত ক্লোরোপ্লাস্ট একটি দুইস্তরবিশিষ্ট আংশিক অনুপ্রবেশ্য মেমব্রেন (ঝিল্লি) দ্বারা আবৃত থাকে। 

২. স্ট্রোমা/ম্যাট্রিক্স : আবরণী ঝিল্লি দ্বারা আবৃত পানিগ্রাহী, কলয়েডধর্মী ম্যাট্রিক্স তরলকে স্ট্রোমা (stroma) বলে। স্ট্রোমাতে 70 S রাইবোসোম, অসমোফিলিক দানা DNA, RNA ইত্যাদি থাকে। এতে শর্করা তৈরির এনজাইমও থাকে। সালোকসংশ্লেষণে কার্বন বিজারণের মাধ্যমে শর্করা উৎপাদন প্রক্রিয়া (C3 বা C4 চক্র) স্ট্রোমাতে ঘটে থাকে।

৩. থাইলাকয়েড ও গ্রানাম : স্ট্রোমাতে অসংখ্য থলে আকৃতির 100-300 প্রস্থ বিশিষ্ট ত্রিমাত্রিক সজ্জার গঠন বিদ্যমান। এদের থাইলাকয়েড (thylacoid) বলে। 

৪. স্ট্রোমা ল্যামেলি : দুটি পাশাপাশি গ্রানার কিছু সংখ্যক থাইলাকয়েডস্ সূক্ষ্ম নালিকা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এই সংযুক্তকারী নালিকাকে স্ট্রোমা ল্যামেলি (একবচন-ল্যামেলাম) বলে।

৫. ফটোসিনথেটিক ইউনিট ও ATP-synthases : থাইলাকয়েড মেমব্রেন বহু গোলাকার বস্তু বহন করে। থাইলাকয়েড মেমব্রেনের ভেতরের গাত্রে অসংখ্য সালোকসংশ্লেষণকারী একক ও ATP সিন্থেসেস নামক বস্তু থাকে। ATP-সিন্থেসেস নামক বস্তুতে ATP-তৈরির সকল এনজাইম থাকে। মেমব্রেনগুলোতে অসংখ্য ফটোসিনথেটিক ইউনিট থাকে। প্রতি ইউনিটে ক্লোরোফিল-এ, ক্লোরোফিল-বি, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল এর প্রায় ৩০০-৪০০টি অণু থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এনজাইম, মেটাল আয়ন, ফসফোলিপিড, কুইনোন, সালফোলিপিড ইত্যাদি থাকে।

৬. DNA ও রাইবোসোম : একটি ক্লোরোপ্লাস্টের মধ্যে সমআকৃতির প্রায় ২০০টি DNA অণু থাকতে পারে । ক্লোরোপ্লাস্টে তার নিজস্ব বৃত্তাকার DNA ও রাইবোসোম থাকে। এদের সাহায্যে ক্লোরোপ্লাস্ট নিজের অনুরূপ সৃষ্টি (reproduce) ও কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি বা সংশ্লেষ করতে পারে।

রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) : রাসায়নিকভাবে ক্লোরোপ্লাস্ট প্রধানত কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, প্রোটিন নিয়ে গঠিত। এছাড়া এতে থাকে ক্লোরোফিল। ক্লোরোপ্লাস্টে ৭৫% ক্লোরোফিল-a ও ২৫% ক্লোরোফিল-b রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সামান্য ক্যারোটিনয়েড ও নিউক্লিক অ্যাসিড।

(Plastid)
প্লাস্টিড (Plastid)

কাজ :

  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করা ক্লোরোপ্লাস্টের প্রধান কাজ।
  • সৌরশক্তিকে জৈবিকশক্তিতে রূপান্তর করা এবং বায়ুর CO_2কে RuBP-তে যুক্ত করা। 
  • ক্লোরোপ্লাস্টের প্রয়োজনে প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরি করা।
  • ফটোফসফোরাইলেশন অর্থাৎ সূর্যালোকের সাহায্যে ADP-কে ATP-তে রূপান্তর করা।
  • সালোক-শ্বসন (ফটোরেসপিরেশন) করা।
  • সাইটোপ্লাজমিক ইনহেরিটেন্সে সাহায্য করা।
  • বংশানুক্রমে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের স্বকীয়তা ধারণ করে রাখা।