শক্তির সমবিভাজন নীতি এবংবাষ্প ও গ্যাস (Principal of Equipartition of Energy And Vapor and Gas)
শক্তির সমবিভাজন নীতি (Principal of Equipartition of Energy)
নীতি: তাপীয় সাম্যবস্থায় আছে এমন তাপ গতীয় সিস্টেমের মোট শক্তি বিভিন্ন স্বাধীনতার মাত্রার ভেতর সমভাবে বণ্টিত হয় এবং প্রত্যেক স্বাধীনতার মাত্রা পিছু শক্তির পরিমাণ হয় \frac{1}{2} k T।
এক-পারমাণবিক গ্যাসের (যেমন \mathrm{He}, \mathrm{Ne} ইত্যাদি) একটি অণুর স্বাধীনতার মাত্রা 3। অতএব শক্তির সমবিভাজন নীতি অনুসারে একটি অণুর গড় গতিশক্তি =\frac{3}{2} k T। দ্বি-পারমাণবিক গ্যাসের (যেমন, O_{2}, N_{2},\mathrm{CO}_{2} ইত্যাদি)।
একটি অণুর স্বাধীনতার মাত্রা, 5, অতএব প্রতিটি অণুর গড় গতিশক্তি =\frac{5}{2} k T।
একটি অণুর কথা বিবেচনা করা যাক, যেকোনো দিকে যার বেগ c এবং X, Y এবং Z অক্ষ বরাবর তার বেগের উপাংশ যথাক্রমে u, v এবং w। সুতরাং c^{2}=u^{2}+v^{2}+w^{2}
এখন গ্যাসের গতিতত্ত্ব অনুসারে একেকটি অণু বিভিন্ন দিকে অক্রম বা এলেমেলো গতিতে গতিশীল। কাজেই গ্যাসের সকল অণুর বেগের জন্য গড় বর্গ বেগ \overline{c^{2}} এবং X, Y, ও Z- অক্ষ বরাবর সেই সকল বেগের উপাংশগুলোর গড় বর্গ বেগ যথাক্রমে \overline{u^{2}}, \overline{v^{2}} ও \overline{w^{2}} হলে \overline{c^{2}}=\overline{u^{2}}+\overline{v^{2}}+\overline{w^{2}} এবং যেহেতু কোনো বিশেষ দিকে উপাংশগুলের বর্গের গড় মান কম বা বেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই, তাই \overline{u^{2}}=\overline{v^{2}}=\overline{w^{2}}
এক্ষেত্রে বেগের উপাংশগুলের আনুষঙ্গিক গতিশক্তি সমান হয়। অর্থাৎ
\frac{1}{2} m \overline{u^{2}}=\frac{1}{2} m \overline{v^{2}}=\frac{1}{2} m \overline{w^{2}}কিন্তু, \overline{c^{2}}=\overline{u^{2}}+\overline{v^{2}}+\overline{w^{2}}
এবং,\overline{u^{2}}=\overline{v^{2}}=\overline{w^{2}}
\therefore \frac{1}{2} m \overline{u^{2}}=\frac{1}{2} m \overline{v^{2}}=\frac{1}{2} m \overline{w^{2}}=\frac{1}{3} \cdot \frac{1}{2} m \overline{c^{2}}আবার সমীকরণ 10.26 থেকে আমরা জানি,
\begin{array}{c} \frac{1}{2} m \overline{c^{2}}=\frac{3}{2} k T \\ \therefore \frac{1}{2} m \overline{u^{2}}=\frac{1}{2} m \overline{v^{2}}=\frac{1}{2} m \overline{w^{2}}=\frac{1}{3} \cdot \frac{3}{2} k T=\frac{1}{2} k T \end{array}সুতরাং প্রত্যেক অণুর রৈখিক গতির স্বাধীনতার মাত্রা প্রতি গড় গতিশক্তি হলো \frac{1}{2} k T। এটাই শক্তির সমবিভাজন নীতি। আবার কম্পনরত কণার ক্ষেত্রে অর্ধেক গতিশক্তি এবং বাকি অর্ধেক বিভবশক্তি।
সুতরাং প্রতি কণার মোটশক্তি = গতিশক্তি + বিভবশক্তি =\frac{1}{2} k T+\frac{1}{2} k T=k T
বাষ্প ও গ্যাস (Vapor and Gas)
বাষ্প বলতে আমরা কোনো পদার্থের গ্যাসীয় অবস্থাকে বুঝি যা কক্ষ তাপমাত্রায় তরল বা কঠিন অবস্থায় থাকে। পক্ষান্তরে কোনো গ্যাস কক্ষ তাপমাত্রায় সর্বদা গ্যাসীয় অবস্থাতেই থাকে, তরল বা কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয় না। যেমন, জলীয় বাষ্প (water vapour) হচ্ছে একটি বাষ্প যা কক্ষ তাপমাত্রায় পানি অর্থাৎ তরল পদার্থ। আবার নাইট্রোজেন হচ্ছে একটি গ্যাস যা কক্ষ তাপমাত্রাতেও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে।
বাষ্প ও গ্যাসের মধ্যকার একটা মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে বাষ্পকে শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগ করে তরলে রূপান্তরিত করা যায় কিন্তু কোনো গ্যাসকে তরলে পরিণত করার জন্য এর উপর চাপ প্রয়োগের সাথে সাথে তাপমাত্রাও হ্রাস করতে হয়।
পদার্থের জন্য একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা আছে যাকে ক্রান্তি তাপমাত্রা বা সংকট তাপমাত্রা (critical temperature) বলে। কোনো বাষ্পের তাপমাত্রা সংকট তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হলে যত প্রবল চাপ প্রয়োগ করা হোক না কেন সেটি তরলে পরিণত হবে না। সুতরাং বলা যায়, সকল বাষ্পই সংকট তাপমাত্রার উপরে গ্যাস আবার সকল গ্যাস সংকট তাপমাত্রার নিচে বাষ্প। বিভিন্ন পদার্থের জন্যে সংকট তাপমাত্রার মান বিভিন্ন, যেমন পানির জন্যে এই তাপমাত্রার মান 374^{\circ} \mathrm{C} বা 647 \mathrm{~K} অর্থাৎ সর্বোচ্চ 647 \mathrm{~K} তাপমাত্রা পর্যন্ত পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে। আবার অ্যামোনিয়ার \left(\mathrm{NH}_{3}\right) সংকট তাপমাত্রা হচ্ছে 132^{\circ} \mathrm{C} বা 405 \mathrm{~K}। উল্লেখ্য যে, পানির হিমাঙ্ক 0^{\circ} \mathrm{C} বা 273.15 \mathrm{~K} এবং অ্যামোনিয়ার হিমাঙ্ক-77.73^{\circ} \mathrm{C} বা 195.27 \mathrm{~K}।
সংকট তাপমাত্রার উপরে কোনো বাষ্পকে চাপ প্রয়োগ করে তরলে রূপান্তরিত করা যায় না কেন?
সংকট তাপমাত্রার উপরে কোনো পদার্থের তরল ও বাষ্পীয় অবস্থার ঘনত্ব এক হয়ে যাওয়ায় কেবলমাত্র একটি অবস্থায়ই বিরাজ করে যা হচ্ছে বাষ্পীয় অবস্থা অর্থাৎ সংকট তাপমাত্রার উপরে তরল ও বাষ্পের মধ্যকার সকল পার্থক্য তিরোহিত হয় আর সে কারণে শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগে তা সে যত প্রবলই হোক না কেন বাষ্পকে তরলে রূপান্তরিত করা যায় না।