10 Minute School
Log in

রেচন প্রক্রিয়া 

রেচন প্রক্রিয়া (Excretion Process)

রেচন (excretion)

রেচন মানবদেহের একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দেহে বিপাক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থগুলো বের করে দেয়া হয়।

রেচনতন্ত্র (Excretory system)

যে তন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশিত হয়, তাকে রেচনতন্ত্র বলে।

রেচন অঙ্গ (Excretory organ)

মানবদেহের রেচন অঙ্গ হল কিডনি বা বৃক্ক।

বৃক্কের একক (Kidney unit)

নেফ্রন।

রেচন পদার্থ (Excretory products)

রেচন পদার্থ বলতে মূলত নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থকে বোঝায়। মানবদেহের রেচন পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। মূত্রের প্রায় ৯০ ভাগ উপাদান হচ্ছে পানি। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে আছে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ও বিভিন্ন ধরনের লবণ।

১। ইউরোক্রোম রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতির কারণে মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়।

২। আমিষ জাতীয় খাদ্য খেলে মূত্রের অম্লতা বৃদ্ধি পায়।

৩। ফলমূল ও তরকারি খেলে ক্ষারীয় মূত্র তৈরি হয়।

Excretion Process

বৃক্ক 

(Kidney)

 

অবস্থান (Position)

উদর গহ্বরে মেরুদন্ডের দুইপাশে পৃষ্ঠ প্রাচীর সংলগ্ন অবস্থায় দুইটি বৃক্ক অবস্থান করে।

রং (Color)

লালচে খয়েরি।

আকৃতি (Size)

শিমবিচির মত দেখতে।

গঠন (Structure)

১। বৃক্কের বাইরের দিকে উত্তল এবং ভেতরের দিক অবতল।

২। অবতল অংশের ভাজকে হাইলাস বা  হাইলাম বলে।

৩। হাইলাসে  অবস্থিত গহ্বরকে পেলভিস বলে।

৪। বৃক্ক সম্পূর্ণরূপে এক ধরনের তন্তুময় আবরণ দিয়ে বেষ্টিত থাকে যাকে, ক্যাপসুল বলে।

৫। ক্যাপসুল সংলগ্ন অংশকে বলা হয় কর্টেক্স।

৬। কর্টেক্সের  ভেতরের অংশকে মেডুলা বলে।

৭। হাইলাসের অগ্রভাগ  প্রসারিত হয়ে প্যাপিলা গঠন করে। একে রেনাল পিরামিড বলে। 

৮। বৃক্কের ইউরেনিফেরাস নালিকার ক্ষরণকারী অংশকে নেফ্রন বলে।

Excretion Process

নেফ্রন

(Nephron)

 

Excretion Process

নেফ্রনের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of nephrons)

১। মানবদেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় 10-12 লক্ষ নেফ্রন থাকে। দুটি বৃক্কে 20-24 লক্ষ নেফ্রন থাকে।

২। প্রতিটি নেফ্রন একটি রেনাল করপাসল  ও রেনাল টিউব্যুল নিয়ে গঠিত।

৩। গ্লোমেরুলাস ও বোম্যান্স ক্যাপসুল নিয়ে রেনাল করপাসল  গঠিত।

৪। গ্লোমেরুলাস ছাঁকনির মত কাজ করে। রক্ত থেকে পরিস্রুত তরল উৎপন্ন করে। এই তরলকে বলে আল্ট্রাফিলট্রেট। এই আল্ট্রাফিলট্রেট রেনাল টিউব্যুলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কয়েক দফা শোষণ ও নিঃসরণ শেষে মূত্র তৈরি হয় যা সংগ্রাহী নালিকার মধ্য দিয়ে ইউরেটার হয়ে মূত্রথলিতে জমা হয়। 

৫। রেনাল টিউব্যুল ৩ টি অংশে বিভক্ত। যথা: 

(ক) গোড়াদেশীয় বা নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা।

(খ) লুপ অব হেনলি।

(গ) প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা।

 

বৃক্কের কাজ (Kidney function)

১। অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে অপসারণে বৃক্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২। বৃক্ক মানবদেহে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

৩। মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি, অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৪। বৃক্ক মানবদেহ থেকে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থসহ বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণ করে।

বৃক্ক সংশ্লিষ্ট বিষয়

(Kidney related topics)

 

অসমোরেগুলেশনে বৃক্কের ভূমিকা (The role of the kidneys in osmoregulation)

যাবতীয় শারীরবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের জন্য মানবদেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। মূলত মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের পানিসাম্য নিয়ন্ত্রণে বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে। বৃক্ক নেফ্রনের মাধ্যমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। গ্লোমেরুলাসে রেচন বর্জ্য, পানি এবং অন্যান্য তরল পদার্থ পরিস্রত হয়। বৃক্ক অকার্যকর হয়ে গেলে দেহে পানি জমতে থাকে। চোখ-মুখসহ সারা শরীর ফুলে যেতে পারে, এমনকি উচ্চ রক্তচাপও সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো প্রকৃতপক্ষে অসমোরেগুলেশন জনিত ত্রুটির লক্ষণ।

 

বৃক্কে পাথর (Kidney stones)

নানারকম রোগের কারণে বৃক্ক বা কিডনির স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে। কিডনির প্রদাহ, প্রস্রাবে সমস্যা, কিডনিতে পাথর হওয়া এর মাঝে উল্লেখযোগ্য। কিডনির রোগের লক্ষণগুলো হলো শরীর ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন যাওয়া, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা ক্ষেত্রবিশেষে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া। মানুষের কিডনিতে ছোট আকারের পাথর জাতীয় পদার্থের সৃষ্টিই বৃক্ক বা কিডনির পাথর হিসেবে পরিচিত। কিডনিতে পাথর সবারই হতে পারে, তবে দেখা গেছে, মেয়েদের থেকে পুরুষের পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, কিডনির সংক্রমণ, কম পানি পান করা ইত্যাদি বৃক্ক বা কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে বৃক্কে পাথর হলে তেমন সমস্যা ধরা পড়ে না। সমস্যা হয় যখন পাথর প্রস্রাব নালিতে চলে আসে এবং প্রস্রাবে বাধা দেয়।

উপসর্গ হিসেবে কোমরের পিছনে ব্যথা হবে। অনেকের প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়। অনেক সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। বৃক্কের পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের আকার এবং অবস্থানের উপর। সাধারণত অধিক পানি গ্রহণ এবং ঔষধ সেবনে পাথর অপসারণ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে ইউরেটারোস্কোপিক কিংবা আল্ট্রাসনিক  লিথট্রিপসি অথবা বৃক্কে অস্ত্রোপচার করে পাথর অপসারণ করা যায়।

 

ডায়ালাইসিস (Dialysis)

বৃক্ক সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস। সাধারণত ‘ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এ মেশিনের ডায়ালাইসিস টিউবটির এক প্রান্ত রোগীর হাতের কব্জির ধমনির সাথে এবং অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কব্জির শিরার সাথে সংযোজন করা হয়। ধমনি থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্যভেদ্য হওয়ায় ইউরিয়া, ইউরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশোধিত রক্ত রোগীর দেহের শিরার মধ্য দিয়ে দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করে। এখানে উল্লেখ্য, ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে ডুবানো থাকে, যার গঠন রক্তের প্লাজমার অনুরূপ হয়।

 

চিত্রঃ ডায়ালাইসিস

 

এভাবে ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ) বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

 

প্রতিস্থাপন (Replacement)

প্রতিস্থাপন যখন কোনো ব্যক্তির কিডনি বিকল বা অকেজো হয়ে পড়ে তখন কোনো সুস্থ ব্যক্তির কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাকে কিডনি সংযোজন বলে। কিডনি সংযোজন দুভাবে করা যায়: কোনো নিকট আত্মীয়ের কিডনি অথবা কোনো মৃত ব্যক্তির কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। নিকট আত্মীয় বলতে বাবা, মা, ভাইবোন, মামা, খালাকে বোঝায়। মৃত ব্যক্তি বলতে ‘ব্রেন ডেড’ মানুষকে বোঝায়, যাঁর আর কখনোই জ্ঞান ফিরবে না কিন্তু তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে জীবিত রাখা হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো মরণোত্তর বৃক্ক দানের মাধ্যমে একজন কিডনি বিকল রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হতে পারে। মরণোত্তর সুস্থ কিডনি দানে মানবজাতির উপকার করা যায়। তবে দেখতে হবে যে টিস্যু ম্যাচ করে কি না। পিতামাতা, ভাইবোন এবং নিকট আত্মীয়ের কিডনির টিস্যু ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।