10 Minute School
Log in

Cells of the gastrodermis, Hydra-র খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক প্রক্রিয়া, চলন

গ্যাস্ট্রোডার্মিস (বা অন্তঃত্বক)-এর কোষসমূহ

Cells of the gastrodermis (or endothelium)

এপিডার্মিস অপেক্ষা গ্যাস্ট্রোডার্মিস-এর গঠন অনেকটা সরল এবং নিচের পাঁচ ধরনের কোষ নিয়ে গঠিত। 

১. পুষ্টি কোষ বা পেশি-আবরণী কোষ (Nutritive cell or Musculo-Epithelial Cells) : গ্যাস্ট্রোডার্মিসের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে অবস্থিত স্তম্ভাকার এবং বড় নিউক্লিয়াস ও গহ্বরযুক্ত কোষ। কোষের সংযুক্ত প্রান্ত থেকে মায়োফাইব্রিল নামক সূক্ষ্ণ, সংকোচনশীল তন্তুবিশিষ্ট পেশি প্রবর্ধন সৃষ্টি হয়ে মেসোগ্লিয়ার সমকোণে অবস্থান করে। 

ভিতরের মুক্ত প্রান্তের গঠনের উপর ভিত্তি করে পুষ্টি কোষগুলো দূরকম, যথা-

  1. i) ফ্ল্যাজেলীয় কোষ (Flagellated cell) : এগুলোর মুক্ত প্রান্তে ১-৪টি সুতার মতো ফ্ল্যাজেলা সংযুক্ত থাকে। 
  2. ii) ক্ষণপদীয় কোষ (Pseudopodial cell) : এগুলোর মুক্ত প্রান্ত ক্ষণপদযুক্ত।

কাজ : পেশি প্রবর্ধণগুলো সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহকে সরু ও মোটা করে। মুখ ও কর্ষিকার গোড়ায় অবস্থিত পেশি-প্রবর্ধনগুলো নিজের ছিদ্র বন্ধ করতে স্ফিংক্টার (sphincter)-এর মতো কাজ করে। ফ্ল্যাজেলীয় কোষের ফ্ল্যাজেলা আন্দোলিত হয়ে খাদ্যবস্তু ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে। প্রয়োজনে এ কোষ আন্দোলিত হয়ে মুখছিদ্রপথে পানি প্রবেশ করায়। ক্ষণপদীয় কোষের ক্ষণপদ খাদ্যকণা গলাধঃকরণ করে অস্তঃস্থ খাদ্যগহ্বরে পরিপাক করে।

gastrodermis

চিত্র : Hydra-র অন্তঃত্বকের কোষসমূহ

 

২. গ্রন্থি কোয (Gland cell) : বিক্ষিপ্তভাবে পুষ্টি কোষের ফাঁকে ফাঁকে এসব কোষ অবস্থান করে। এগুলোর সংখ্যা মূলদেহ ও হাইপোস্টোমে সবচেয়ে বেশি, পদতলে কম এবং কর্ষিকায় অনুপস্থিত। গ্রন্থিকোষ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও পেশি-প্রবর্ধনবিহীন। এগুলো দুরকম হয়ে থাকে-

  1. মিউকাস ক্ষরণকারী (Mucous secreting) : এগুলো প্রধানত হাইপোস্টোম অঞ্চলে অবস্থিত এবং পিচ্ছিল মিউকাস ক্ষরণ করে।
  2. এনজাইম ক্ষরণকারী (Enzyme secreting) : অন্যান্য স্থানের কোষগুলো এ ধরনের যা থেকে পরিপাকের জন্য এনজাইম ক্ষরিত হয়।

কাজ : হাইপোস্টোমের গ্রন্থিকোষ নিঃসৃত মিউকাস খাদ্যদ্রব্য পিচ্ছিল করে গলাধঃকরণে সাহায্য করে। অন্যান্য স্থানে গ্রন্থিকোষ সিলেন্টেরনে এনজাইম-এর ক্ষরণ ঘটিয়ে পরিপাকে সাহায্য করে।

৩. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial cell) : এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে এসব কোষ এপিডার্মিস থেকে আগত কোষ। এগুলো গোল বা ত্রিকোণাকার এবং সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, মুক্ত রাইবোজোম ও কিছু মাইটোকন্ড্রিয়া বহন করে।

কাজ : এন্ডোডার্মিসের প্রয়োজনীয় যে কোনো কোষ গঠন করাই এর কাজ।

৪. সংবেদী কোষ (Sensory cell) : এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থিত লম্বা ও সরু কোষ। কোষের মুক্ত প্রান্ত থেকে নির্গত সূক্ষ্ণ সংবেদী রোম সিলেন্টেরনে উদগত এবং মেসোগ্লিয়া সংলগ্ন প্রান্ত থেকে নির্গত রোম স্নায়ুতন্তুর সাথে যুক্ত থাকে।

কাজ : সম্ভবত পানির সাথে সিলেন্টেরনে প্রবেশিত খাদ্য ও অন্যান্য পদার্থের গুণাগুণ যাচাই করে স্নায়ুকোষে প্রেরণ করে এবং স্নায়ুকোষ উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। 

৫. স্নায়ু কোষ (Nerve cell) : এসব কোষ মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত, সংখ্যায় খুব কম। অনিয়ত আকারবিশিষ্ট এবং একটি ক্ষুদ্র কোষদেহ ও দুই বা ততোধিক সূক্ষ্ণ শাখান্বিত তন্তু নিয়ে গঠিত। তন্তুগুলো পরস্পর মিলে স্নায়ু-জালিকা গঠন করে।

কাজ : সংবেদী কোষে সংগৃহীত উদ্দীপনা স্থানান্তর করাই এর কাজ।

 

হাইড্রার এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিসের মধ্যে পার্থক্য
আলোচ্য বিষয় এপিডার্মিস গ্যাস্ট্রোডার্মিস
১. উৎপত্তি ও অবস্থান ভ্রূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উৎপন্ন এবং দেহের বাইরের দিকে অবস্থিত। এন্ডোডার্ম থেকে উৎপন্ন এবং দেহের ভিতরের দিকে অর্থাৎ সিলেন্টেরনকে ঘিরে অবস্থান করে।
২. পুষ্টি কোষ ক্ষণপদযুক্ত কোষ ও ফ্লাজেলাযুক্ত কোষ দেখা যায় না। ক্ষণপদযুক্ত ও ফ্ল্যাজেলাযুক্ত কোষ পুষ্টির কাজে নিয়োজিত।
৩. কিউটিকল পেশি-আবরণী কোষের নিঃসৃত রসে সৃষ্টি হয়। অনুপস্থিত
৪. নিডোসাইট উপস্থিত এবং প্রতিরক্ষা ও আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। অনুপস্থিত
৫. জনন অঙ্গ ও মুকুল দেখতে পাওয়া যায়। নেই
৬. কার্যকারিতা দেহকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে এবং পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে। মূলত পুষ্টির কাজে নিয়োজিত।

 

মেসোগ্লিয়া (Mesogloea)

Hydra-র এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিসের মাঝখানে অবস্থিত জেলির মতো, স্বচ্ছ, স্থিতিস্থাপক স্তরকে মেসোগ্লিয়া বলে। মেসোগ্লিয়া স্তরটি দেহ ও কর্ষিকা উভয় স্থানে বিস্তৃত, তবে কর্ষিকায় সবচেয়ে পাতলা এবং পাদ-চাকতিতে সর্বাধিক পুরু। মেসোগ্লিয়ার এ ধরনের বিন্যাস পাদ-চাকতির অতিরিক্ত যান্ত্রিক প্রসারণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং কর্ষিকাকে অধিকতর নমনীয়তা দান করে। Hydra– র মেসোগ্লিয়া প্রায় ০.১ মাইক্রোমিটার পুরু। এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিস উভয় স্তরের কোষ মেসোগ্লিয়া গঠনে অংশ গ্রহণ করে।

কাজ :

  1. মেসোগ্লিয়া দেহের অবলম্বনে সহায়তা করে এবং এক ধরনের নমনীয় কঙ্কাল হিসেবে কাজ করে।
  2. মেসোগ্লিয়া দুটি কোষস্তরের ভিত্তিরূপে কাজ করে।
  3. স্নায়ুকোষ ও সংবেদী কোষতন্ত্রসমূহ এবং পেশি-আবরণী কোষের সংকোচনশীল মায়োফাইব্রিল ধারণ করে।
  4. মেসোগ্লিয়ায় অবস্থিত পেশি-আবরণী কোষের সংকোচনশীল মায়োফাইব্রিলের সংকোচনে দেহ বা কর্ষিকা খাটো হয় ফলে দেহ বাঁকানো সম্ভব হয়। 

 

সিলেন্টেরন (Coelenteron)

Hydra-র দেহের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত ও গ্যাস্ট্রোডার্মিসে পরিবৃত্ত ফাঁকা গহ্বরকে সিলেন্টরন বলে। এতে খাদ্যের বহিঃকোষীয় পরিপাক ঘটে এবং খাদ্যসার, শ্বসন ও রেচন পদার্থ পরিবাহিত হয় বলে একে গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর (gastrovascular cavity) বা পরিপাক সংবহন গহ্বর বলা হয়। কর্ষিকায় সিলেন্টেরন প্রসারিত থাকে বলে এগুলো ফাঁপা হয়। সিলেন্টেরনকে অনেকসময় ব্লাইন্ড গাট (blind gut) বা ব্লাইন্ড স্যাক (blind sac) বলা হয়। কারণ দেহের উপরিভাগে অবস্থিত একটি মাত্র ছিদ্র, অর্থাৎ মুখছিদ্রের মাধ্যমে এটি খাদগ্রহণ ও বর্জ্য পরিত্যাগ করে। 

সিলোম ও সিলেন্টেরনের মধ্যে পার্থক্য
সিলোম সিলেন্টেরন
১. ত্রিভ্রুণস্তরী প্রাণীদেহে মেসোডার্মাল পেরিটোনিয়ামে আবৃত যেকোন ফাঁকা গহ্বরকে সিলোম বলে। ১. দ্বিভ্রূণস্তরী প্রাণীদেহের অভ্যন্তরীণ প্রশস্ত গহ্বরকে সিলেন্টেরন বলে।
২. এর বাইরের ও ভিতরের দিক মোসোডার্মাল পেরিটোনিয়ামে আবৃত। ২. এর চতুর্দিক গ্যাস্ট্রোডার্মিসে আবৃত।
৩. এটি সিলোমিক তরলে পূর্ণ থাকে। ৩. এটি পানি, খাদ্য ও বর্জ্য পদার্থে পূর্ণ থাকে।
৪. এতে বিভিন্ন অঙ্গ যেমন-হৃৎপিন্ড, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদি অবস্থান করে। ৪. এতে কোন অঙ্গ অবস্থান করে না।
৫. এটি শুধু দেহগহ্বরের কাজ করে। ৫. এটি দেহগহ্বর ও পরিপাক গহ্বরের কাজ করে।

gastrodermis gastrodermis

 

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক প্রক্রিয়া (Feeding and Digestion)

পুষ্টি (Nutrition) : যে জৈবনিক প্রক্রিয়ায় প্রাণী নিজ পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় জটিল জৈব খাদ্য গ্রহণ করে বিভিন্ন এনজাইমের সহায়তায় কোষে পরিবহন ও শোষণ উপযোগী সরল ও দ্রবনীয় খাদ্যে পরিণত করে পরিপাককৃত খাদ্যসার শোষণের মাধ্যমে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ অক্ষুণ্ণ রাখে এবং খাদ্যের অপাচ্য অংশ দেহ থেকে বের করে দেয় তাকে পুষ্টি বলে।

Hydra-র খাদ্য : Hydra মাংসাশী (carnivorous) প্রাণী। যে সব ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীকে নেমাটোসিস্ট দিয়ে সহজেই কাবু করা যায়, সে সব প্রাণী Hydra-র প্রধান খাদ্য। Hydra-র খাদ্য তালিকার বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পতঙ্গের লার্ভা Cyclops (সাইক্লপস) ও Daphnia (ড্যাফনিয়া) নামক ক্রাস্টাসীয় সন্ধিপদী প্রাণী (arthropods), ছোট ছোট কৃমি, খণ্ডকায়িত প্রাণী (annelids) ও মাছের ডিম। তবে প্রধান খাদ্য হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্রাস্টাসীয় সন্ধিপদী।

খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি : ক্ষুধার্ত Hydra পদতলকে ভিত্তির সাথে আটকে নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে মূলদেহ ও কর্ষিকাগুলো ভাসিয়ে শিকারের অপেক্ষায় থাকে। কোনো খাদ্যপ্রাণী বা শিকার কাছে আসামাত্র কর্ষিকার নেমাটোসিস্টগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে এবং ঐ শিকার কর্ষিকা স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নেমাটোসিস্ট-সূত্র নিক্ষিপ্ত হয়। ভলভেন্ট নেমাটোসিস্ট-সূত্রক শিকারের উপাঙ্গ জড়িয়ে গতিরোধ করে এবং গুটিন্যান্টগুলো আঠালো রস ক্ষরণ  করে  আটকে  ফেলে।  স্টিনোটিল  নেমাটোসিস্ট  তখন  শিকারের  দেহে হিপনোটক্সিন প্রবেশ করিয়ে শিকারকে অবশ করে দেয়। এরপর কর্ষিকা সেটিকে মুখের কাছে নিয়ে আসে। মুখছিদ্র স্ফীত ও চওড়া হয়ে তা গ্রহণ করে। মুখের চারদিকে অবস্থিত গ্রন্থিকোষ নিঃসৃত মিউকাসে সিক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে এবং হাইপোস্টোম ও দেহপ্রাচীরের সংকোচন-প্রসারণের ফলে খাদ্য সিলেন্টেরনে এসে পৌছে।

gastrodermis gastrodermis

 

Hydra-র খাদ্য পরিপাক প্রণালী (Process of Digestion) : যে জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল জৈব খাদ্যবস্তু বিভিন্ন এনজাইমের সাহায্যে ভেঙ্গে তরল, সরল ও কোষের শোষণ উপযোগী অণুতে পরিণত হয়, তাকে পরিপাক বলে। Hydra-র খাদ্য পরিপাকের সময় অন্তঃত্বকের গ্রন্থিকোষ থেকে এনজাইম নিঃসৃত হয়। পরিপাক দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

চিত্র : হাইড্রার শিকার ধরার কৌশল

gastrodermis

১. বহিঃকোষীয় পরিপাক (Extracellular digestion): কোষের বাইরে খাদ্যবস্তুর পরিপাককে বহিঃকোষীয় বা আন্তঃকোষীয় পরিপাক বলে। খাদ্য সিলেন্টেরনে পৌছার সঙ্গে সঙ্গে মুখছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্তঃত্বকীয় গ্রন্থিকোষগুলো সক্রিয় হয়। কোষগুলো বড় ও দানাদার হয়ে উঠে এবং এনজাইম ক্ষরণ করে। প্রথমে এনজাইমের প্রভাবে শিকারের মৃত্যু ঘটে। দেহপ্রাচীরের প্রবল সংকোচন-প্রসারণের ফলে শিকারটি ছোট ছোট কণায় পরিণত হয়। এ সময় অন্তঃত্বকীয় কোষের ফ্ল্যাজেলা সঞ্চালিত হয়ে খাদ্যকণাকে এনজাইমের সাথে ভালভাবে মিশ্রিত করে। গ্রন্থিকোষ থেকে নিঃসৃত এনজাইমের প্রভাবে খাদ্যকণা পরিপাক হতে থাকে। পেপসিন নিঃসৃত হয়ে প্রোটিনকে পলিপেপটাইড-এ পরিণত করে, তবে লিপিড ও শর্করা খাদ্যাংশের কোনো পরিবর্তন হয় না।

২. অন্তঃকোষীয় পরিপাক (Intracellular digestion) : দেহের সংকোচন-প্রসারণের ফলে খাদ্য আরও ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। তখন পেশি-অন্তঃআবরণীর ক্ষণপদীয় কোষগুলো ক্ষণপদ বের করে কিছু খাদ্যকণা সামান্য তরল পদার্থের সাথে কোষীয় ভক্ষণ প্রক্রিয়ায় (ফ্যাগোসাইটোসিস) গলাধঃকরণ করে। খাদ্যকণা তখন কোষের অভ্যন্তরে খাদ্যগহ্বরে সাইটোপ্লাজম থেকে নিঃসৃত এনজাইমের সাহায্যে পরিপাক হয়। খাদ্যগহ্বরে প্রথমে সাইটোপ্লাজম থেকে এসিড ক্ষরিত হয়ে খাদ্যকে আম্লিক করে। পরে ক্ষারীয় রস নিঃসৃত হয়ে ক্ষারীয় মাধ্যম সৃষ্টি হলে সাইটোপ্লাজম থেকে বিভিন্ন এনজাইম নিঃসৃত হয়।

ট্রিপসিন আমিষ জাতীয় খাদ্যকে অ্যামিনো এসিডে, লাইপেজ স্নেহজাতীয় খাদ্যকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে এবং অ্যামাইলেজ শর্করাকে গ্লুকোজে পরিণত করে। খাদ্যগহ্বরে খাদ্য সম্পূর্ণরূপে পরিপাক হয়। Hydra আমিষ, স্নেহ ও কিছু শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাক করতে পারে কিন্তু শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য পরিপাক করতে পারে না। 

আন্তঃকোষীয় ও বহিঃকোষীয় পরিপাকের পার্থক্য
বিষয় আন্তঃকোষীয় পরিপাক বহিঃকোষীয় পরিপাক
১. সংজ্ঞা ১. যে পরিপাক কোনা নির্দিষ্ট কোষের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়, তাকে অন্তঃকোষীয় পরিপাক বলে। ১. যে পরিপাক নির্দিষ্ট কোনো কোষের অভ্যস্তরে সংঘটিত না হয়ে দেহাভ্যন্তরে অবস্থিত কোনো গহ্বর বা থলির ভিতর সংঘটিত হয়, তাকে আন্তঃকোষীয় বা বহিঃকোষীয় পরিপাক বলে।
২. খাদ্য গ্রহণ ২.ফ্যাগোসাইটোসিস, পিনোসাইটোসিস বা ব্যাপন প্রক্রিয়ায় খাদ্য গৃহীত হয়। ২. সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গের সাহায্যে নির্দিষ্ট পথে খাদ্য গৃহীত হয়।
৩. খাদ্য গহ্বর ৩. গৃহীত খাদ্য ‘খাদ্য গহ্বরের’ ভিতর অবস্থান করে। ৩. খাদ্য পৌষ্টিকনালি বা সিলেন্টেরনে অবস্থান করে।
৪. এনজাইম ৪. পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ঐ কোষের সাইটোপ্লাজম থেকে নিঃসৃত হয়। ৪. ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থিকোষ থেকে এনজাইম নিঃসৃত হয়।
৫. শোষণ ৫. খাদ্য গহ্বরের পার্শ্ববর্তী সাইটোপ্লাজমই খাদ্যের সারবস্তু শোষণ করে। ৫. পরিপাকের পর খাদ্যের সারবস্তু বিভিন্ন কোষ, রক্ত জালিকা ইত্যাদির মাধ্যমে শোষিত হয়।

পরিশোষণ, আত্মীকরণ ও বর্জন : খাদ্যের পরিপাককৃত সারাংশ সাইটোপ্লাজমে পরিশোষিত হয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় প্রাণিদেহের বিভিন্ন কোষে বাহিত হয়। অপাচ্য খাদ্যাংশ দেপ্রাচীরের সংকোচন-প্রসারণ ও ফ্ল্যাজেলার সঞ্চালনের ফলে মুখছিদ্র দিয়ে বহিঃগামী পানির স্রোতের সঙ্গে মিশে দেহের বাইরে বর্জিত হয়।

 

Hydra-র চলন (Locomotion)

যে প্রক্রিয়ায় জীবদেহ জৈবিক প্রয়োজনে নিজ চেষ্টায় স্থানান্তরিত হয়, তাকে চলন বলে। সাধারণত এটি প্রাণীর এক স্বতঃস্ফূর্ত সহজাত আচরণ। প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলায়, জনন, খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষা, বিনোদন প্রভৃতি কারণে জীব স্থানান্তরে গমন করে। Hydra সাধারণত নিমজ্জিত বস্তু বা উদ্ভিদের গায়ে সংলগ্ন থাকে, তবে বিভিন্ন উত্তেজকে সাড়া দেয়ার জন্য বা খাদ্য গ্রহণের জন্য স্থান ত্যাগ করতে হয়। নির্দিষ্ট চলন অঙ্গ না থাকায় সমগ্র প্রক্রিয়াটি বিভিন্নভাবে প্রধানত পদতল, দেহের সংকোচন-প্রসারণশীল পেশিতন্তু ও তিন ধরনের নেমাটোসিস্টের সাহায্যে সম্পন্ন হয়।চলনের সময় প্রথমে সংবেদী কোষ সাড়া দেয় এবং সে বার্তা বহিঃত্বক ও অন্তঃত্বকের স্নায়ু-জালকের ভিতর সঞ্চালিত হয়। ফলে পেশিতন্তু সঙ্কুচিত হয় এবং চলন প্রক্রিয়া শুরু হয়। Hydra-য় নিচে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের চলন দেখতে পাওয়া যায়।

১. লুপিং (Looping) বা ফাসাচলন : লম্বা দূরত্ব অতিক্রমের জন্য Hydra সাধারণত লুপিং চলনের আশ্রয় নেয়। এ প্রক্রিয়ার শুরুতে এক পাশের পেশি-আবরণী কোষগুলো সঙ্কুচিত হয় এবং অপর পাশের অনুরূপ কোষগুলো সম্প্রসারিত হয়। ফলে Hydra গতিপথের দিকে দেহকে প্রসারিত করে ও বাঁকিয়ে মৌখিক তলকে ভিত্তির কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং কর্ষিকার গুটিন্যান্ট নেমাটোসিস্টের সাহায্যে ভিত্তিকে আটকে ধরে। এরপর পাদ-চাকতিকে মুক্ত করে মুখের কাছাকাছি এনে স্থাপন করে এবং কর্ষিকা বিযুক্ত করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এ পদ্ধতির পুনারাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra স্থান ত্যাগ করে৷ জোঁক বা শুঁয়াপোকা চলার সময় যেভাবে ক্রমান্বয়িক লুপ বা ফাঁসের সৃষ্টি হয় হাইড্রার এ চলনও দেখতে অনেকটা একই রকম হওয়ায় ফাঁসাচলনকে জোঁকা চলন বা শুঁয়াপোকা চলন নামেও অভিহিত করা যায়।

gastrodermis

 

২. সমারসল্টিং (Somersaulting) বা ডিগবাজী : এটি Hydra-র সাধারণ ও দ্রুত চলন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার শুরুতে Hydra দেহকে বাকিয়ে চলনের গতিপথে কর্ষিকায় অবস্থিত গুটিন্যান্ট জাতীয় নেমাটোসিস্টের আঠালো ক্ষরণের সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে। এ সময় গন্তব্যস্থলমুখী পেশি-আবরণী কোষের সংকোচন ও অপর পাশের অনুরূপ কোষের সম্প্রসারণ ঘটে। পরে পাদ-চাকতি বিযুক্ত করে কর্ষিকার উপর ভর দিয়ে দেহকে সোজা করে দেয়। পুনরায় দেহকে বাঁকিয়ে পাদ-চাকতির সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে। পরে কর্ষিকা মুক্ত করে দেহকে সোজা করে দেয়। এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

gastrodermis

 

৩. গ্লাইডিং (Gliding) বা অ্যামিবয়েড চলন : এ প্রক্রিয়ায় Hydra পদতলের বহিঃত্বকীয় কোষগুলো থেকে পিচ্ছিল রস ক্ষরণ করে। পরে ঐ স্থান থেকেই প্রক্ষিপ্ত কোষীয় ক্ষণপদের অ্যামিবয়েড চলনের সাহায্যে দেহটি অত্যন্ত ধীরগতিতে মসৃণতলে খুব সামান্য দূরত্বে স্থানান্তরিত হয়।

  1. ভাসা (Floating) : মাঝে মাঝে Hydra পাদ-চাকতির বহিঃত্বকীয় কোষ থেকে গ্যাসীয় বুদবুদ সৃষ্টি করে, ফলে প্রাণী ভিত্তি থেকে বিচ্যুত, হালকা ও উপুর হয়ে পানির পৃষ্ঠতলে ভেসে ওঠে। এখানে বুদবুদ ফেটে মিউকাস ভেলার মতো ছড়িয়ে গেলে Hydra নিম্নমূখী হয়ে ভেসে থাকে। এভাবে প্রাণী ডেউয়ের আঘাতে কিছুদূর ভেসেও যেতে পারে। 

gastrodermis gastrodermis gastrodermis gastrodermis gastrodermis

চিত্র : Hydra-র বিভিন্ন ধরনের চলন

 

৫. সাঁতার (Swimming) : কর্ষিকাগুলোকে ডেউয়ের মতো আন্দোলিত করে এবং দেহকে ভিত্তি থেকে মুক্ত করে Hydra সহজেই দেহকে ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত করে সাঁতার কাটতে পারে। 

৬. হামাগুড়ি (Crawling) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra কর্ষিকার সাহায্যে কাছাকাছি কোনো বস্তুকে আঁকড়ে ধরে। পরে পাদ-চাকতি মুক্ত ও কর্ষিকা সংকুচিত করে পাদ-চাকতিকে নতুন জায়গায় স্থাপন করে। এ প্রক্রিয়ায় Hydra-র আরোহণ ও অবরোহণ সম্পন্ন হয়।

৭. হাঁটা (Walking) : এ ক্ষেত্রে Hydra তার দেহের ভার পাদ-চাকতির উপর না রেখে কর্ষিকার উপর স্থাপন করে এবং কর্ষিকাকে পায়ের মতো ব্যবহার করে উল্টোভাবে ধীর গতিতে চলতে পারে।

৮. দেহের সংকোচন-প্রসারণ (Body contraction and expansion) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra দেহকে মুক্ত করে দেহপ্রাচীরের পেশি-আবরণী কোষের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে দেহের আকার দ্রুত খাটো ও লম্বা করে, ফলে এক ধরনের চলনের সৃষ্টি হয়।

 

লুপিং ও সমারসল্টিং চলনের মধ্যে পার্থক্য
লুপিং/ ফাঁসা চলন সমারসল্টিং/ডিগবাজী চলন
১. এটি হাইড্রার বিশেষ চলন পদ্ধতি। ১. এটি হাইড্রার সাধারণ চলন পদ্ধতি।
২. এটি মস্থর গতিসম্পন্ন প্রক্রিয়া।
৩. এ পদ্ধতিতে পদতল কখনো মাটির উপরে উঠে আসে না। ৩. এ পদ্ধতিতে পদতল মাটির উপরে উঠে আসে।
৪. এ পদ্ধতিতে হাইড্রা কখনো কর্ষিকার উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায় না। ৪. এ পদ্ধতিতে হাইড্রা একবার কর্ষিকা এবং একবার পাদচাকতির উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায়।
৫. কর্ষিকা সর্বদা গতিপথের দিকে থাকে। ৫. এক্ষত্রে একবার কর্ষিকা এবং আরেকবার পাদ-চাকতি গতিপথের দিকে থাকে।
৬. এ পদ্ধতিতে একবার চলতে একটিমাত্র লুপ তৈরি হয়। ৬. এ পদ্ধতিতে একবার চলনে দুটি লুপ তৈরি হয়।
৭. দীর্ঘপথ অতিক্রম করার জন্য এ পদ্ধতি অনুসৃত হয়। ৭. অল্প পথ অতিক্রম করার জন্য এ পদ্ধতি অনুসৃত হয়।