মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র প্রাবল্য ও মহাকর্ষীয় বিভব (Gravitational Field Intensity & Gravitational Potential)
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র ও মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র প্রাবল্য (Gravitational Potential
and Gravitational field Intensity)
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র (Gravitational Field)
কোনো বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চলব্যাপী এর মহাকর্ষীয় প্রভাব বাজায় থাকে, অর্থাৎ অন্য কোনো বস্তু রাখা হলে সেটি আকর্ষণ বল লাভ করে, তাকে বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র (Gravitational Field) বলে।
একটি বক্ররেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রের মধ্যে A বিন্দুতে একটি বড় ভরের বত আছে। এর কারণে বক্ররেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্ৰব্যাপী একটি মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। এখন B অথবা C বিন্দুতে যেকোনো ভরের বস্তু রাখলে তার উপর মহাকর্ষীয় বল ক্রিয়াশীল হবে। B ও C বিন্দুর দূরত্ব যত বেশি হবে বলের মান তত কমতে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।
কোনো বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের মধ্যে সর্বত্র এর প্রভাব সমান থাকে না। বিভিন্ন বিন্দুতে এর প্রভাব বিভিন্ন হয়। এই প্রভাব পরিমাপ করা হয় মহাকর্ষ ক্ষেত্র প্রাবল্য বা তীব্রতা দ্বারা। মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একক ভরের বস্তু রেখে ঐ বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বল দ্বারা মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র পরিমাপ করা হয়।
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র প্রাবল্য (Gravitational Field Intensity)
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের যেকোনো বিন্দুতে একটি একক ভরের বস্তু স্থাপন করলে ঐ ভরের উপর যে বল ক্রিয়া করে, তাকে ঐ বিন্দুতে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের তীব্রতা বলে। মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে কোনো বিন্দুতে m বস্তুর উপর F বল ক্রিয়া করলে ঐ বিন্দুতে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের প্রাবল্য হবে
E=\frac{\mathbf{F}}{\mathbf{m}} … … … (6.22)
এই সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, m -এর মান বৃদ্ধি পেলে E হ্রাস পায়। প্রাবল্য একটি ভেক্টর রাশি। এর মান ও দিক আছে। কোনো বিন্দুতে একাধিক প্রাবল্য ক্রিয়াশীল হলে ভেক্টর যোগের পদ্ধতি অনুযায়ী ঐ বিন্দুতে লব্ধি প্রাবল্য গণনা করা যায়। প্রাবল্যের অভিমুখই মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের অভিমুখ নির্দেশ করে। অনেক সময় মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের প্রাবল্য বোঝাতে শুধু মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র লেখা হয়। এস. আই. পদ্ধতিতে প্রাবল্যের একক {Nkg}^{-1}
এখন প্রাবল্যের দিক কোন দিকে হবে তা বোঝার জন্য মনে করি P বিন্দুতে m ভরের একটি বস্তু রাখা আছে। ঐ বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের মধ্যে A বিন্দুতে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র প্রাবল্য নির্ণয় করতে হলে ঐ বিন্দুতে একটি একক ভরের বস্তু আছে বলে বিবেচনা করা হয়। এখন A বিন্দুতে স্থাপিত একক ভরের বস্তুটি PA বরাবর আকর্ষণ বল লাভ করবে। সুতরাং A বিন্দুতে প্রাবল্যের দিক হবে AP বরাবর। অনুরূপভাবে B বিন্দুতেও প্রাবল্যের দিক হবে BP বরাবর। সুতরাং সমীকরণ (6.14) অনুযায়ী প্রাবল্যকে ভেক্টররূপে প্রকাশ করলে, \overrightarrow{\mathbf{E}_{\mathbf{G}}} =\frac{\overrightarrow{\mathbf{F}}}{\mathbf{m}} হয়।
এবং সেক্ষেত্রে বল, \overrightarrow{\mathbf{F}} =\overrightarrow{\mathbf{E}_{\mathbf{G}}} ×m
এখানে আমরা দেখব মহাকর্ষ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর প্রাবল্য 4 {Nkg}^{-1} – কথাটির অর্থ কী? এর উত্তরে বলা যায় যে মহাকর্ষ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে 1 kg ভরের একটি বস্তু রাখলে তার উপর প্রযুক্ত আকর্ষণ বল হবে 4 N অথবা মহাকর্ষের কোনো বিন্দুতে 4 kg ভরের একটি বস্তু রাখলে তার উপর প্রযুক্ত আকর্ষণ বল হবে 1N।
বিন্দু ভরের জন্য প্রাবল্য (Gravitational Intensity due to a point mass)
M ভরের একটি বিন্দু ভরের জন্য r দূরত্বে B বিন্দুতে প্রাবল্য নির্ণয় করতে হলে B বিন্দুতে একক ভরের একটি বস্তু বিবেচনা করি। তাহলে M এবং 1 kg ভরের মধ্যকার আকর্ষণ বলই হবে ঐ বিন্দুতে প্রাবল্য।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রানুযায়ী,
প্রাবল্য, E=\frac{\mathrm{GM} \times 1}{r^{2}} ∴E=\frac{G M}{r^{2}}… … … (6.23)
এর দিক BA বরাবর।
বিশেষ ক্ষেত্র:
- সুষম গোলাকার খোলকের বা গোলকের ভেতরে অবস্থিত সকল বিন্দুতে প্রাবল্য শূন্য হয়।
- কোনো সুষম নিরেট গোলক বা সুষম গোলাকার গোলকের ক্ষেত্রে সমস্ত ভর এদের নিজ নিজ কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত আছে ধরে নিয়ে ঐ গোলক বা গোলকের বাইরে অবস্থিত বিন্দুতে প্রাবল্য নির্ণয় করা হয়।
মহাকর্ষীয় বিভব (Gravitational Potential)
কোনো বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে মহাকর্ষীয় বিভব হবে অসীম থেকে একক ভরের কোনো বস্তুকে ঐ বিন্দুতে আনতে মহাকর্ষীয় বল দ্বারা সম্পন্ন কাজের পরিমাণ।
অর্থাৎ অসীম দূর হতে একক ভরের কোনো বস্তুকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সাধিত হয়, তাকে ঐ বিন্দুর মহাকর্ষীয় বিভব (Gravitational Potential) বলে। একে সাধারণত V দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বলই কাজ করে থাকে। বাইরের কোনো বল বা শক্তির প্রয়োজন হয় না। সুতরাং মহাকর্ষীয় বিভবকে ঋণ রাশি দ্বারা প্রকাশ করা হয় অর্থাৎ মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বিভব ঋণাত্মক। এটা একটি স্কেলার রাশি।
এম. কে. এস. বা এস. আই. পদ্ধতিতে এর একক জুল/কিলোগ্রাম \mathrm{Jkg}^{-1} ।
বিভব পার্থক্য (Potential difference)
একক ভরের কোনো বস্তুকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের এক বিন্দু হতে অন্য বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সাধিত হয়, তাকে ঐ বিন্দুর মধ্যে মহাকর্ষীয় বিভব পার্থক্য(Potential difference) বলে।
আকর্ষণ বলের অভিমুখে সরণ হলে বিভব পার্থক্য ঋণাত্মক এবং আকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে সরণ হলে বিভব পার্থক্য ধনাত্মক হবে।
বিন্দু ভরের দরুন মহাকর্ষীয় বিভব (Gravitational potential due to a point mass)
আমরা জানি, অসীম দূরত্ব হতে একক ভরের কোনো বস্তুকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সাধিত হয়, তাকে উক্ত বিন্দুর মহাকর্ষীয় বিভব(Gravitational potential due to a point mass) বলে। এখন বিন্দু ভরের দরুন মহাকর্ষীয় বিভবের সাধারণ সমীকরণ বের করা যাক।
মনে করি, O বিন্দুতে M ভরের একটি বিন্দু ভর বস্তু অবস্থিত O হতে r দূরে P একটি বিন্দু। P বিন্দুতে মহাকর্ষীয় বিভব বের করতে হবে।
P বিন্দুতে একক ভরের উপর O বিন্দু অভিমুখী প্রযুক্ত বল অর্থাৎ মহাকর্ষীয় প্রাবল্য =GM/r^2 । এখন একক ভরেকে সামান্য দূরত্ব dr নিয়ে যেতে কাজের পরিমাণ অর্থাৎ বিভব,
dV = বল × সরণ = প্রাবল্য × সরণ =\frac{\mathrm{GM}}{\mathrm{r}^{2}} d r
∴ একক ভরকে অসীম দূরত্ব হতে P বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ অর্থাৎ P বিন্দুতে বিভব,
V=\int d \mathrm{~V} =\int_{r=\infty}^{r=r} \frac{\mathrm{GM}}{\mathrm{r}^{2}} \times d r
বা, V=\mathrm{GM} \int_{r=\infty}^{r=r} \frac{1}{r^{2}} d r
বা, \mathrm{V}=\mathrm{GM}\left[-\frac{1}{\mathrm{r}}\right]_{\infty}^{\mathrm{r}}
বা, V=-\frac{G M}{r} … … … (6.24)
এখানে ঋণচিহ্ন এই অর্থ প্রকাশ করে যে, বাহ্যিক কোনো বল বা শক্তি দ্বারা কাজ সম্পন্ন হয়নি, মহাকর্ষীয় বলই কাজ সম্পন্ন করেছে।
বিশেষ ক্ষেত্র:
- কোনো সুষম নিরেট গোলক বা সুষম গোলকের ক্ষেত্রে সমস্ত ভর এদের নিজ নিজ কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত আছে ধরে নিয়ে ঐ গোলক বা গোলকের বাইরে অবস্থিত বিন্দুতে বিভব নির্ণয় করা যায়।
- সুষম গোলকের ভেতরে অবস্থিত সকল বিন্দুতে বিভব স্থির থাকে। এই বিভব গোলকের পৃষ্ঠের বিভবের সমান হয়। গোলকের ভর M এবং ব্যাসার্ধ a হলে ভেতরে অবস্থিত যে কোনো বিন্দুর বিভব, V=-\frac{G M}{a}
বিভব পার্থক্য (Potential difference): কোনো মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের দুটি বিন্দুর বিভব পার্থক্য বলতে বুঝায়- একটি একক ভরের বস্তুকে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে নিতে কোনো বাহ্যিক বল দ্বারা সম্পাদিত কাজের পরিমাণ। যেমন m ভরকে A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে নিতে যদি \mathrm{W}_{\mathrm{AB}} কাজ করতে হয় তাহলে ঐ দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য হবে, \mathrm{V}_{\mathrm{A}} –\mathrm{V}_{\mathrm{B}} =V=\frac{W_{A B}}{m}
বিভব পার্থক্য এবং বিভবের একক অভিন্ন।