10 Minute School
Log in

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton’s Law of Gravitation)

মহাকর্ষ (Gravitation)

মহাকর্ষ: নভোমণ্ডলে অবস্থিত দুটি বস্তু বা বস্তুকণার মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বলে। 

অভিকর্ষ: পৃথিবী এবং অন্য একটি বস্তু বা বস্তুকণার মধ্যকার আকর্ষণ বলকে অভিকর্ষ বা আকর্ষণ বলে।

উদাহরণ: সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যকার আকর্ষণ বল মহাকর্ষ অন্যদিকে পৃথিবী এবং আমের মধ্যকার আকর্ষণ বল।

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton’s Law of Gravitation)

1687 খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন আপেল পতন এবং গ্রহ উপগ্রহের গতি পর্যবেক্ষণ করে মহকর্ষের যে সূত্র আবিষ্কার করেন তাকে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton’s Law of Gravitation)বলে। 

সূত্র: মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুকণা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বল বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যকার দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

ব্যাখ্যা:  মনে করি, দুটি বস্তুকণার ভর যথাক্রমে \mathbf{m}_1 \mathbf{m}_2  হলে তাদের মধ্যে আকর্ষণ বল F হয়, তাহলে মহাকর্ষ সূত্রানুসারে,

(i) F\mathbf{m}_1 \mathbf{m}_2

(ii) F \frac{1}{\mathrm{~d}^{2}} 

(i) ও (ii)-কে যুক্ত করলে, 

F \frac{\mathrm{m}_{\mathbf{1}} \mathrm{m}_{\mathbf{2}}}{\mathrm{d}^{2}}

F =ধ্রুবক \frac{\mathrm{m}_{\mathbf{1}} \mathrm{m}_{\mathbf{2}}}{\mathrm{d}^{2}}

F = G \frac{\mathrm{m}_{\mathbf{1}} \mathrm{m}_{\mathbf{2}}}{\mathrm{d}^{2}}………   (6.1)

এখানে G  = মহাকর্ষ ধ্রুবক বা সার্বজনীন ধ্রুবক। ইহা বস্তু দুটির মধ্যকার প্রকৃতি, যেমন- প্রবেশ্যতা, প্রবণতা, দিকদর্শিতা এবং বস্তুকণা দুটির ভৌত অবস্থার উপর নির্ভর করে না। 

মহাকর্ষ সূত্রের ভেক্টর রূপ:

মহাকর্ষ সূত্রকে ভেক্টর রাশির দ্বারা নিম্নলিখিতভাবে লেখা যায়:

\overrightarrow{\mathrm{F}_{21}} = -\mathrm{G} \frac{\mathrm{m}_{1} \mathrm{~m}_{2}}{\mathrm{r}_{12}^{3}} \overrightarrow{\mathrm{r}_{12}}

এখানে \overrightarrow{\mathrm{F}_{21}} হচ্ছে দ্বিতীয় বস্তুর উপর প্রথম বস্তুর সদিক বল (আকর্ষণ), \overrightarrow{\mathrm{r}_{12}}  হচ্ছে প্রথম বস্তু হতে দ্বিতীয় বস্তুর সদিক দূরত্ব। 

যেহেতু প্রথম বস্তু আকর্ষণ করে দ্বিতীয় বস্তুকে নিজের দিকে টানছে অর্থাৎ \overrightarrow{\mathrm{F}_{21}} এবং দিক \overrightarrow{\mathrm{r}_{12}} এর বিপরীত, সুতরাং উপরিউক্ত সমীকরণে ঋণাত্মক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু মহাকর্ষ বলের মান সূচক। সুতরাং ঋণাত্মক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়নি।

সমীকরণ (6.16) থেকে মহাকর্ষ বলের প্রকৃতি সম্বন্ধেও জানা যায়।  

মহাকর্ষ বলের প্রকৃতি (Nature of Gravitational Force): 

  1. মহাকর্ষ বল দুটি বস্তুর মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বল। 
  2. মহাকর্ষ বল বস্তু দুটির সংযোগ সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে। 
  3. মহাকর্ষ বল বহুদ্বয়ের মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে না।
  4. মহাকর্ষ বল বস্তুদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক হয়।

উপর থেকে কোনো বস্তুকে অবাধে নিচে পড়তে দিলে তা নিচে পড়ে অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠে পড়ে। আম গাছের আম সব সময় মাটিতে পতিত হয়। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছ, আম কেন গাছ থেকে পড়ে উপরের দিকে যায় না? আসলে কোনো বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে টানে। আবার বস্তুটিও পৃথিবীকে সমান ও বিপরীতমুখী বলে আকর্ষণ করে। যেকোনো পার্থিব বস্তুর তুলনায় পৃথিবীর ভর বহুগুণে বেশি হয়। তাই এই বলের ক্রিয়ায় পৃথিবীর গতি উপেক্ষণীয় হয়, তাই সব সময় বস্তুটি পৃথিবীর দিকে পড়ে, পৃথিবী বস্তুর দিকে এগিয়ে যায় না। সেজন্য আম গাছ থেকে পড়ে উপরের দিকে যায় না।

উপরের আলোচনায় স্পষ্ট যে, প্রত্যেক বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে টানে বা আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলই হলো বস্তুর ওজন। অর্থাৎ ওজন হলো কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত অভিকর্ষ বল। এই ওজন সর্বদা বস্তুর ভারকেন্দ্র নিয়ে খাড়া নিচের দিকে ক্রিয়া করে। 

m ভরের বস্তুর ওজন W হলে আমরা লেখতে পারি,

W =mg  

অর্থাৎ ওজন = ভর × অভিকর্ষজ ত্বরণ

অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তিত হলে বস্তুর ওজনও সমহারে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ বস্তুর ওজন পরিবর্তনশীল, বস্তুর ওজন স্থান নিরপেক্ষ নয়। বস্তুর ওজন তার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য নয়। বস্তুর ওজন থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে।

কোনো একটি বস্তু যে পরিমাণ বল দ্বারা পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয় তাকে তার ওজন লোভ বলে। 

নিউটনের সূত্র থেকে কেপলারের সূত্র (Kepler’s Law from Newton’s Law)

Gravitation

মনে করি সূর্যকে কেন্দ্র করে r ব্যাসার্ধের কক্ষপথে একটি গ্রহ v দ্রুতিতে আবর্তন করছে [চিত্র ৬.৪] সূর্যের ভর M , গ্রহের (পৃথিবী) ভর m এবং গ্রহের পর্যায়কাল T হলে,

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী দুটি বস্তুর মধ্যকার মহাকর্ষ বল, 

\mathbf{F}_{\mathbf{g}} = \frac{\mathbf{G M m}}{r^{2}}

এখানে G মহাকর্ষ ধ্রুবক 

আবার গ্রহের বৃত্তাকার গতির জন্য প্রয়োজনীয় কেন্দ্রমুখী বল,  

\mathbf{F}_{\mathbf{c}} =\frac{\mathbf{m v}^{2}}{\mathbf{r}}

গ্রহের উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বলই এই কেন্দ্রমুখী বল যোগান দেয়।

\mathbf{F}_{\mathbf{g}}=\mathbf{F}_{\mathbf{c}}

বা,  \frac{\mathrm{GMm}}{\mathrm{r}^{2}} =\frac{\mathrm{mv}^{2}}{\mathrm{r}}

বা, \frac{\mathrm{GM}}{\mathrm{r}} =\mathrm{v}^{2}  …   …   …   (6.5)

উপগ্রহটির পর্যায়কাল T  হলে অর্থাৎ r ব্যাসার্ধের কক্ষপথে সূর্যকে একবার আবর্তন করতে T সময় প্রয়োজন হলে এর রৈখিক বেগ হবে v =\frac{2 \pi r}{T}

∴ (6.3) নং সমীকরণে মান বসিয়ে পাই,

\frac{\mathrm{GM}}{\mathrm{r}} =\left(\frac{2 \mathrm{mr}}{\mathrm{T}}\right)^{2}

বা, \frac{\mathrm{GM}}{\mathrm{r}} =\frac{4 \pi^{2} r^{3}}{T^{2}}

\mathrm{T}^{2} =\left(\frac{4 \pi^{2}}{\mathrm{GM}}\right) x \mathrm{r}^{3} …   …   …   (6.6)

এই সমীকরণে \left(\frac{4 \pi^{2}}{\mathrm{GM}}\right)  ধ্রুবরাশি।

\mathrm{T}^{2} =  ধুবক × \mathrm{r}^{3}

\mathrm{T}^{2} \propto \mathrm{r}^{3} …   …   …   (6.7)

অর্থাৎ গ্রহের পর্যায়কালের বর্গ কক্ষপথের গ্রহ হতে সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্বের ঘন-এর সমানুপাতিক। ইহাই কেপলারের সূত্র (তৃতীয় সূত্র)।