পদ প্রকরণ
পদ কাকে বলে?
বাংলা ব্যাকরণের একটি অন্যতম গুরুত্বতম অংশ হচ্ছে পদ। বাক্যে ব্যাবহৃত বিভক্তিযুক্ত যেকোনো শব্দেই পদ (parts of speech) বলে। ৷ সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি অর্থবোধক শব্দকে পদ বলে।
যেমনঃ রহিম স্কুলে যাচ্ছে। – এখানে প্রত্যেকটি শব্দই এক একটি পদ।
পদের প্রকারভেদ
পদ ( parts of speech) মোট পাঁচ প্রকার। যথা:
- বিশেষ্য
- সর্বনাম
- বিশেষণ
- ক্রিয়া
- অব্যয়
বিশেষ্য পদ (Noun)
বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদের বিশেষ্য পদ বলে।
যেমন: আনিস, লবণ, সমিতি ইত্যাদি।
বিশেষ্য পদ ছয় প্রকার। যথা:
- নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য (Proper Noun): যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, ভৌগোলিক স্থান, গ্রন্থ ইত্যাদির নাম বা সংজ্ঞা প্রকাশ পায় তাকে নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: ক. ব্যক্তির নাম: নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল খ. ভৌগোলিক স্থানের নাম: ঢাকা, দিল্লি, লন্ডন, মক্কা
- জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun): যে পদ দ্বারা কোনো একজাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: মানুষ, গরু, পাখি, গাছ, পর্বত, নদী, ইংরেজ।
- বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য (Material Noun): যে পদে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। এই জাতীয় বস্তুর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। যেমন: বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবণ, পানি।
- সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun): যে পদে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণির সমষ্টি বোঝায় তাই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যেমন: সভা, জনতা, সমিতি, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল।
- ভাববাচক বিশেষ্য (Verbal Noun): যে বিশেষ্য পদে কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: গমন (যাওয়ার ভাব বা কাজ), দর্শন (দেখার কাজ)।
- গুণবাচক বিশেষ্য (Abstract Noun) : যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায় তাই গুণবাচক বিশেষ্য। যেমন: মধুর মিষ্টত্বের গুণ-মধুরতা, তরল দ্রব্যের গুণ-তারল্য।
বিশেষণ পদ ( Adjective)
যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন: চলন্ত গাড়ি (বিশেষ্যের বিশেষণ), করুণাময় তুমি (সর্বনামের বিশেষণ), দ্রুত চল (ক্রিয়া বিশেষণ)।
বিশেষণ কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১. নাম বিশেষণ ও ২. ভাব বিশেষণ ।
বিভিন্নভাবে বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন:
ক. ক্রিয়াজাত: হারানো সম্পত্তি, খাবার পানি, অনাগত দিন
খ. অব্যয়জাত: আচ্ছা মানুষ, উপরি পাওনা, হঠাৎ বড়লোক
গ. সর্বনামজাত: কবেকার কথা, কোথাকার কে, স্বীয় সম্পত্তি
ঘ. সমাসসিদ্ধ: বেকার, নিয়ম-বিরুদ্ধ, জ্ঞানহারা, চৌচালা ঘর
ঙ. বীপ্সামূলক: হাসিহাসি মুখ, কাঁদকাঁদ চেহারা, ডুবুডুবু নৌকা
চ. অনুকার অব্যয়জাত: কনকনে শীত, শনশনে হাওয়া
- বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। যেমন: যমুনা একটি দীর্ঘ নদী। পদ্মা দীর্ঘতর কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী।
একই পদের বিশেষ্য ও বিশেষণ রূপে প্রয়োগ:
১. ভালো বিশেষণ রূপে: ভালো বাড়ি পাওয়া কঠিন।
বিশেষ্য রূপে: আপন ভালো সবাই চায়।
২. নিশীথ বিশেষণ রূপে: নিশীথ রাতে বাজছে বাঁশি।
বিশেষ্য রূপে: গভীর নিশীথে প্রকৃতি সুপ্ত।
৩. পুণ্য বিশেষণ রূপে: তোমার এ পূণ্য প্রচেষ্টা সফল হোক।
বিশেষ্য রূপে: পূণ্যে মতি হোক।
সর্বনাম পদ (Pronoun)
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সর্বনামকে ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক: আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে
২. আত্মবাচক: স্বয়ং, নিজে, খোদ, আপনি
৩. সামীপ্যবাচক: এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি
৪. দূরত্ববাচক: ঐ, ঐসব
৫. সাকুল্যবাচক: সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ