10 Minute School
Log in

ফোটন ও রঞ্জন রশ্মি (Photon & X-rays)

ফোটন (Photon)

কোনো বস্তু থেকে আলো বা কোনো শক্তির নিঃসরণ নিরবচ্ছিন্নভাবে হয়না। শক্তি বা বিকিরণ গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে প্যাকেট বা কোয়ান্টাম হিসেবে নিঃসৃত হয়। আলো তথা যেকোনো বিকিরণ অসংখ্য কোয়ান্টার সমষ্টি। আলোর এই কণা বা প্যাকেট বা কোয়ান্টাকে ফোটন (Photon) বলে। একটি ফোটনের শক্তি, E = h \vartheta

ফোটনের ধর্মাবলি 

১। প্রতিটি ফোটন কণাই চার্জহীন অর্থাৎ নিস্তড়িৎ। তাই তড়িৎ ক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা এর কোনো বিক্ষেপ হয় না।

২। প্রতিটি ফোটন কণা আলোর বেগে চলে। এই বেগের কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি নেই।

৩। একটি ফোটন কণার শক্তি E = h \vartheta, এখানে ϑ = বিকিরণের কম্পাঙ্ক, h= প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক।

৪। ফোটন কণার স্থির ভর শূন্য।।

৫। এদের আয়নিত করা যায় না।

৬। ফোটন ভরহীন কণা হলেও এর সুনির্দিষ্ট ভরবেগ আছে। এর ভরবেগ, \rho=\frac{h v}{c}

৭। EP যথাক্রমে ফোটনের শক্তি ও ভরবেগ হলে এবং ϑ\lambda যথাক্রমে একই আলোর ফোটনের কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য হলে,\mathrm{E}=h ϑ=\frac{h c}{\lambda}

৮। ফোটন পদার্থের কণার সাথে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে। এই সংঘর্ষে মোটশক্তি ও মোট ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে।

এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মি (X-rays or Röntgen ray)

1895 খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত জার্মাল বিজ্ঞানী অধ্যাপক উইলহেম কে. রনজেন (Wilhelm K. Röntgen) এই রশ্মি আবিষ্কার করেন। তিনি ক্ষরণ নল নিয়ে ক্যাথোড রশ্মি সম্পর্কে গবেষণা চালাবার সময় দেখতে পান যে, ক্ষরণ নলের পার্শ্বে স্থাপিত বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইডের পাতের উপর ক্যাথোড রশ্মি পতিত হয়ে প্রতিভা সৃষ্টি করেছে। তিনি একটি মোটা লাল কাগজ দ্বারা ক্ষরণ নলকে আবৃত করে পাতের উপর প্রতিপ্রভা লক্ষ্য করেন। তারপর পাত এবং নলের মধ্যে পুরু ধাতব পাত স্থাপন করেও একই জিনিস দেখতে পান। তখন তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ওই রশ্মিসমূহ ক্যাথোড রশ্মি নয়। বরং ক্যাথোড রশ্মি ক্ষরণ নলের গায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হবার পর তা হতে বিশেষ এক প্রকার রশ্মি উৎপন্ন হচ্ছে যার ফলে ওই প্রতিপ্রভা সৃষ্টি হচ্ছে।

এই বিশেষ রশ্মির প্রকৃতি এবং ধর্মাবলি জানা না থাকায় তিনি ঐ রশ্মিসমূহের নামকরণ করেন এক্স-রে বা অজানা রশ্মি। সাধারণত অঙ্ক করার সময় অজানা রাশিকে আমরা X ধরে থাকি। বিজ্ঞানী রনজেনও তাই করেছেন। আবিষ্কারকের নামানুসারে তাদেরকে রনজেন রশ্মি ও বলা হয়। পরবর্তী কালে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এই রশ্মিসমূহের প্রকৃতি এবং ধর্ম জানা যায়।

সংজ্ঞাঃ দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন কোনো ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন এক প্রকার বিকিরণ উৎপন্ন হয়। এই বিকিরণকে এক্স-রে বলে।

এক্স-রের প্রকৃতি:

বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন পরীক্ষার সাহায্যে এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মির প্রকৃতি নির্ণয় করেন। এক্স-রে চার্জযুক্ত কণা দ্বারা গঠিত নয়। এরা দৃশ্যমান আলোকের বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ তরঙ্গ। এই তরঙ্গ আড় তরঙ্গ, লম্বিক তরঙ্গ নয়। দৃশমান আলোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষা তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক ছোট।

এক্স-রের প্রকারভেদ (Kinds of X-rays):

এক্স-রে দুই প্রকার, যথা – 

(১) কোমল এক্স-রে (Soft X-rays): এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর সীমা 0.01 থেকে 10 এর মধ্যে। যে সমস্ত এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 10 A° এর কাছাকাছি, ওই ধরনের এক্স-রশ্মিকে কোমল এক্স-রে বলে। এই রশ্মির ফোটনের শক্তি KeV রেঞ্জের। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি কিন্তু ভেদন ক্ষমতা অত্যন্ত কম। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোমল এক্স-রের ব্যবহার প্রচুর।

(২) কঠিন এক্স-রে (Hard X-rays): নলের ভেতর গ্যাসের চাপ কম হলে অধিক বিভব পার্থক্য প্রয়োগে এক্স-রশ্মি উৎপন্ন হয়। এই এক্স-রশ্মিকে কঠিন এক্স-রে বলে। কঠিন এক্স-রের তরঙ্গদৈর্ঘ্য 0.01 মানের কাছাকাছি। এই রশ্মির ফোটনের শক্তি MeV রেঞ্জের। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম কিন্তু ভেদন ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। পদার্থের গঠন প্রকৃতি নির্ণয়ে এবং বিভিন্ন গবেষণা কার্যে এর ব্যবহার সর্বাধিক।

এক্স-রের একক (Unit of X-rays): এক্স-রে বিকিরণ পরিমাপ করার জন্য যে একক ব্যবহার করা হয় তাকে রনজেন বলা হয়। এক রনজেন বলতে আমরা সেই পরিমাণ এক্স-রে বিকিরণ বুঝি যা সাধারণ চাপ এবং তাপমাত্রায় 1 \times 10^{-3} m বায়ুতে 3.33 \times 10^{-10} C চার্জের সমান চার্জ উৎপন্ন করতে পারে।