উদ্ভিদ শারীরতত্ব Part-2 : সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis)
সালোকসংশ্লেষণ কী? (Photosynthesis)
যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সজীব উদ্ভিদ কোষস্থ ক্লোরোফিল আলোক শক্তিকে ATP এবং NADPH + \mathbf{H}^{+} নামক রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং ঐ রাসায়নিক শক্তিকে (ATP ও NADPH + \mathbf{H}^{+}) কাজে লাগিয়ে \mathrm{CO}_{2} বিজারণের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত ও উপজাত হিসেবে \mathbf{0}_{2}নির্গত করে, তাকে সালোকসংশ্লেষণ বা ফটোসিনথেসিস(Photosynthesis) বলে।
নিচের রাসায়নিক বিক্রিয়াটির মাধ্যমে উচ্চতর উদ্ভিদে সংঘটিত সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে দেখানো যায়।
6 \mathrm{CO}_{2}+12 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \underset{\text { আলো ক্লোরোফিল }}{\longrightarrow} \mathrm{C}_{6} \mathrm{H}_{12} \mathrm{O}_{6}+6 \mathrm{O}_{2}+6 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ১ অণু হেক্সোজ শর্করা প্রস্তুত করতে ৬ অণু \mathrm{CO}_{2} ও ১২ অণু \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} প্রয়োজন পড়ে এবং ৫০-৬০ ফোটন কণা ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সালোকসংশ্লেষণকে একটি জটিল জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া বলা হয়। কারণ এখানে \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} থেকে একদিকে যেমন \mathbf{0}_{2} মুক্ত হয়, অন্যদিকে তেমনি \mathrm{CO}_{2} এর সাথে হাইড্রোজেন সংযুক্ত হয়।
সালোকসংশ্লেষণ কোথায় ঘটে? (Where photosynthesis occurs)
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্লোরোপ্লাস্ট নামক সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুতেই ঘটে থাকে। ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে সবুজ শৈবাল, ব্রায়োফাইট্স, টেরিডোফাইট্স, জিমনোস্পার্ম এবং অ্যানজিওস্পার্ম উদ্ভিদে। সায়ানোব্যাকটেরিয়াতে ক্লোরোপ্লাস্ট নেই, তবে থাইলাকয়েড়ের গায়ে ফটোসিনথেটিক পিগমেন্ট থাকে। অন্যান্য কিছু শৈবাল (লোহিত শৈবাল, বাদামি শৈবাল ইত্যাদি) পিগমেন্টসমূহ ক্রোম্যাটোফোর (chromatophore) নামক অঙ্গাণুতে থাকে।
চিত্র: পাতার প্রস্থচ্ছেদের সালোকসংশ্লেষণ অঙ্গ
[COMMENT: below this figure the visualization of table]
রঞ্জক পদার্থ | ||
ক্লোরোফিল | ক্লোরোফিল ‘a’ (মূল পিগমেন্ট) | |
ক্লোরোফিল ‘b’ | ||
ক্যারেটিনায়ডস | ক্যারেটিন (কমলা বর্ণ) | |
জ্যান্থফিল (হলুদ বর্ণ) | ||
ফাইকোবিলিনস | ফাইকোসায়ানিন (নীল বর্ণ) | |
ফাইকোইরিথ্রিন (লাল বর্ণ) |
ফটোসিস্টেম (Photosystem)
PS-I (Photosystem-1) এর বিক্রিয়া কেন্দ্রের ক্লোরোফিল-a অণুটি ৭০০ nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক অত্যন্ত প্রবলভাবে শোষণ করে, তাই একে বলা হয় P700।
PS-II (PhotosystemII) এর বিক্রিয়া কেন্দ্রের ক্লোরোফিল-a অণুটি ৬৮০ nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক অত্যন্ত প্রবলভাবে শোষণ করে, তাই একে বলা হয় P680।
ফটোসিস্টেম-I এবং ফটোসিস্টেম-II এর মধ্যে পার্থক্য (Difference between Photosystem- I and Photosystem-II)
পার্থক্যের বিষয় | Photosystem I | Photosystem-II |
১। অবস্থান | ফটোসিস্টেম-I ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েডের পর্দার বাইরের দিকে অবস্থিত। | ফটোসিস্টেম-II ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েডের পর্দার ভেতরের দিকে অবস্থিত। |
২। ক্লোরোফিল | বিক্রিয়াকেন্দ্রে ক্লোরোফিল a-700 থাকে | বিক্রিয়াকেন্দ্রে ক্লোরোফিল a-680 থাকে। |
৩। সম্পর্ক | চক্রীয় এবং অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। | কেবলমাত্র অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। |
৪। পরিমাণ | অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে ক্লোরোফিল থাকে। | অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে ক্লোরোফিল থাকে। |
৫। NADP | NADP বিজারণে প্রোটন প্রদান করে। | NADP বিজারণে প্রোটন প্রদান করে। |
৬। ঘাটতি ইলেকট্রন | PS-II থেকে এসে পূরণ হয়। | পানি থেকে এসে পূরণ হয়। |
৭। ফটোলাইসিস | এটি ফটোলাইসিস-এর সাথে সংযুক্ত নয় | এতে সংযুক্ত থাকে পানি বিশ্লেষণকারী এনজাইম এবং পানি বিশ্লেষিত হয়ে ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও অক্সিজেন তৈরি হয়। |
পানির সালোক বিভাজন (Photolysis of water):
2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \rightarrow 4 \mathrm{H}^{+}+4 \mathrm{e}^{-}+\mathrm{O}_{2}ফটোসিস্টেম-II (PS II) তে পানি অণুর বিভাজন ঘটে যার ফলে ইলেকট্রন \left(\mathrm{e}^{-}\right), প্রোটন \left(\mathrm{H}^{+}\right) এবং অক্সিজেন গ্যাস নির্গত হয়।
অক্সিজেন \left(\mathrm{O}_{2}\right) এবং \mathbf{H}^{+} উপজাত (by product) হিসেবে উৎপন্ন হয়। অক্সিজেন বর্জ্যবস্তু তাই পরিবেশে ত্যাজ্য হয়। \mathbf{H}^{+} প্রোটন গ্র্যাডিয়েন্ট (Proton gradient) তৈরি করে।
চিত্র: PS-II (P 680) এবং ফটোলাইসিস প্রক্রিয়া
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কৌশল (Techniques of photosynthesis process)
(ক) আলোকনির্ভর অধ্যায় এবং
(খ) আলোক নিরপেক্ষ অধ্যায়
(ক) আলোকনির্ভর অধ্যায় (Light dependent phase) :
এই অধ্যায়ে ATP ও NADPH + \mathbf{H}^{+} তৈরি হয়। আলোকনির্ভর অধ্যায়ের বিক্রিয়াসমূহ থাইলাকয়েড মেমব্রেন এ সংঘটিত হয়। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার যে অধ্যায়ে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ATP ও NADPH + \mathbf{H}^{+} তে সঞ্চারিত হয়, তাকে আলোকনির্ভর অধ্যায় বলে। এ অংশের জন্য আলোক অপরিহার্য।
2 A D P+2 P i+2 N A D P+4 H_{2} 0 \frac{\text {সূর্যালো}}{\text { ক্লোরোফিল}} 2 \mathrm{ATP}+2 \mathrm{NADPH}+\mathrm{H}^{+}+2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}+\mathrm{O}_{2}
সূর্যালোকের শক্তিকে ব্যবহার করে ATP তৈরির প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন(Photophosphorylation) বলে।
ফটোফসফোরাইলেশন (Photophosphorylation):
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোক শক্তি ব্যবহার করে ATP তৈরি করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ফটোফসফোরাইলেশন(Photophosphorylation) । ফটোফসফোরাইলেশন অচক্রীয় (non-cyclic) এবং চক্রীয় (cyclic) এ দু’ভাবে হতে পারে।
অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন (Inorganic photophosphorylation)
চিত্র: অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন
চক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন (Cyclic photophosphorylation)
চিত্র: চক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন
অচক্রীয় ও চক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন-এর মধ্যে পার্থক্য (Difference between Inorganic and Cyclic photophosphorylation)
পার্থক্যের বিষয় | অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন | চক্ৰীয় ফটোফসফোরাইলেশন |
১. উৎক্ষিপ্ত ইলেকট্রন | PS-II হতে উৎক্ষিপ্ত ইলেকট্রন পুনরায় PS-II তে ফিরে আসে না। | PS-I হতে উৎক্ষিপ্ত ইলেকট্রন বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে বাহিত হয়ে পুনরায় PS-I এ ফিরে আসে। |
২. ফটোসিস্টেম | PS-I ও PS-II উভয়ই অংশগ্রহণ করে। | কেবলমাত্র PS-I অংশগ্রহণ করে। |
৩. পানির প্রয়োজন | পানির প্রয়োজন হয়। কারণ পানির ইলেকট্রন ও প্রোটন এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। | পানির প্রয়োজন হয় না। |
8. \mathbf{0}_{2} উত্পন্ন | পানির ভাঙনের ফলে \mathbf{0}_{2} উৎপন্ন হয় যা পরে বায়ুতে নির্গত হয়। | কোনো \mathbf{0}_{2} উৎপন্ন হয় না কারণ এ প্রক্রিয়ায় কোনো পানি ব্যবহৃত হয় না। |
৫. NADP এর জারণ | এক অণু NADP বিজারিত হয়ে এক অণু NADPH + \mathbf{H}^{+} সৃষ্টি করে। | কোনো NADP বিজারিত হয় না। |
(খ) আলোক নিরপেক্ষ অধ্যায় (Light independent phase) :
কার্বন বিজারণ প্রক্রিয়ায় কোনো আলোর প্রত্যক্ষ প্রয়োজন পড়ে না, তাই একে আলোক নিরপেক্ষ অধ্যায় বা অন্ধকার অধ্যায়ও বলা হয়। আলোক নিরপেক্ষ অধ্যায় (বা কার্বন বিজারণ) এর বিক্রিয়াসমূহ ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমাতে সংঘটিত হয়। আবহমণ্ডলের \mathrm{CO}_{2} হতে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট সৃষ্টির তিনটি স্বীকৃত পথ আছে; তা হলো- (১) ক্যালভিন চক্র, (২) হ্যাচ ও ব্ল্যাক চক্র এবং (৩) CAM (Crassulacean Acid Metabolism) প্রক্রিয়া।
- ক্যালভিন চক্র (The Calvin cycle)
- হ্যাচ ও ব্ল্যাক চক্র (Hatch and black cycle)
1, 2, … 6 বিক্রিয়া নির্দেশক !
চিত্র: হ্যাচ ও ব্ল্যাক চক্র একটি সাধারণ পথ পরিক্রমা
- \mathrm{C}_{\mathbf{4}} গতিপথ (C4 pathway)
চিত্র ৯.২৫ : \mathbf{C}_{\mathbf{3}} গতিপথ NADP-malic enzyme প্রকার ইক্ষু, ভূট্টা, সরগাম উদ্ভিদে এই চক্র পরিচালিত হয়।
\mathbf{C}_{\mathbf{3}} উদ্ভিদ ও \mathrm{C}_{\mathbf{4}} উদ্ভিদ এর মধ্যে পার্থক্য (Difference between \mathbf{C}_{\mathbf{3}}and \mathrm{C}_{\mathbf{4}} plants)
পার্থক্যের বিষয় | \mathbf{C}_{\mathbf{3}} উদ্ভিদ | \mathrm{C}_{\mathbf{4}} উদ্ভিদ |
১। তাপমাত্রা | উচ্চ তাপমাত্রায় খাপখাইয়ে নিতে সক্ষম নয়। | উচ্চ তাপমাত্রায় খাপখাইয়ে নিতে সক্ষম। |
২। ক্র্যাঞ্জ অ্যানাটমি | পাতার বান্ডলসীথকে ঘিরে মেসোফিল কোষের কোনো পৃথক স্তর থাকে না। | পাতার বান্ডলসীথকে ঘিরে অরীয়ভাবে সজ্জিত মেসোফিল কোষের ঘন স্তর বিদ্যমান (ক্র্যাঞ্জ অ্যানাটমি)। |
৩। ক্লোরোপ্লাস্টের প্রকার | গঠনগতভাবে ক্লোরোপ্লাস্ট একই রকম। | গঠনগতভাবে ক্লোরোপ্লাস্ট দুই রকম (i) গ্রানাযুক্ত মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্ট এবং (ii) গ্রানাবিহীন বান্ডলসীথ ক্লোরোপ্লাস্ট |
৪। \mathrm{CO}_{2} এর ঘনত্ব | সালোকসংশ্লেষণের জন্য বায়ুমণ্ডলে \mathrm{CO}_{2} এর ঘনত্বকমপক্ষে ৫০ ppm (parts per million) প্রয়োজন (৫০-১৫০ ppm)। | সালোকসংশ্লেষণের জন্য বায়ুমণ্ডলে \mathrm{CO}_{2} এর ঘনত্ব কমপক্ষে ০.১০ ppm প্রয়োজন (0.10-10 ppm)। |
৫। বিক্রিয়া | মেসোফিল কোষে আলোক বিক্রিয়া এবং ক্যালভিন চক্র সম্পন্ন হয়। | মেসোফিল কোষে আলোক বিক্রিয়া এবং বান্ডলসীথ কোষে \mathrm{CO}_{2} সৃষ্টি ও ক্যালভিন চক্র সম্পন্ন হয়। |
৬। উৎপত্তি | মনে করা হয় বেশির ভাগ C3 উদ্ভিদ অপেক্ষাকৃত শীতপ্রধান অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করেছে। | মনে করা হয় বেশির ভাগ C4 উদ্ভিদ উষ্ণমণ্ডলে উৎপত্তি লাভ করেছে। |
৭। সালোকসংশ্লেষণ হার | এসব উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ হার কম। | এসব উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ হার বেশি। |
৮। \mathbf{0}_{2} এর উপস্থিতি | স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে 1% বেশি অক্সিজেনের উপস্থিতি সালোকসংশ্লেষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। | অতিরিক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতি সালোকসংশ্লেষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় না। |
৯। উদাহরণ | ধান, গম, বার্লি, আম, জাম, কাঁঠালসহ ৮৫% উদ্ভিদ। | গিনি ঘাস, ইক্ষু, ভুট্টা, মুথা ঘাস ইত্যাদি। |
CAM প্রক্রিয়া (CAM process)
ক্র্যাসুলেসিয়ান অ্যাসিড মেটাবলিজম সংক্ষেপে CAM প্রক্রিয়া বলা হয়। Crassulaceae গোত্রের (পাথরকুচি গোত্র) উদ্ভিদে এ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় বলে একে CAM নামকরণ করা হয়েছে। এসব উদ্ভিদ উষ্ণ আবহাওয়ায় বেঁচে থাকে। এসব উদ্ভিদে রাতে পত্ররন্ধগুলো খোলা থাকে। এর কারণ দিনের বেলায় এদের পাতায় জৈব অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায় যার ফলে pH এর মাত্রাও কমে যায় এবং রাতে জৈব অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে pH এর মাত্রা বেড়ে যায়। এ প্রক্রিয়ার বিক্রিয়ার ধাপগুলো \mathrm{C}_{\mathbf{4}} বিক্রিয়ার মতোই।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নির্গত অক্সিজেন \mathbf{0}_{2}-এর উৎস: সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
6 \mathrm{CO}_{2}+12 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \frac{\text {আলো}}{\text { ক্লোরোফিল }} \mathrm{C}_{6} \mathrm{H}_{12} \mathrm{O}_{6}+60_{2}+6 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}
এতে দেখা যায়, এ প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ তৈরি হওয়ার মাধ্যমে ৬ অণু \mathbf{0}_{2} নির্গত হয়। বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে \mathrm{CO}_{2} ও \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}। অতএব, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নির্গত অক্সিজেনের দুটি উৎস হতে পারে একটি হলো\mathrm{CO}_{2} এবং অপরটি হলো \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}। নিম্নবর্ণিত পরীক্ষাগুলো হতে এটি নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে যে, সালোকসংশ্লেষণের সময় যে \mathbf{0}_{2}নির্গত হয় তা \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} হতে আসে, \mathrm{CO}_{2} হতে নয়, অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নির্গত অক্সিজেনের উৎস হলো পানি \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}। পরীক্ষাগুলো নিম্নরূপ:
(i) হিল বিক্রিয়া (Hill reaction): ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ প্রাণরসায়নবিদ রবিন হিল (Robin Hill) একটি পরীক্ষা করেন। তিনি \mathrm{CO}_{2} এর অনুপস্থিতিতে পৃথককৃত ক্লোরোপ্লাস্ট, পানি ও কিছু অজৈব জারক তথা হাইড্রোজেন গ্রাহক (hydrogen acceptor) একত্রে আলোতে রাখেন। পরীক্ষা শেষে দেখা যায় \mathrm{CO}_{2}এর অনুপস্থিতিতে কোনো শর্করা তৈরি হয় না, কিন্তু অক্সিজেন নির্গত হয়। আসলে পানির হাইড্রোজেন অজৈব জারক তথা হাইড্রোজেন গ্রাহককে বিজারিত (reduced) করে এবং অক্সিজেন বের হয়ে আসে। হিলের এ পরীক্ষা হতে প্রমাণিত হয় যে, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নির্গত অক্সিজেনের উৎস হলো পানি, সেই বিক্রিয়াটিই হলো হিল বিক্রিয়া। হিল বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ :
2 \mathrm{~A} \text { (অজৈব জারক) }+2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \frac{\text {আলো}}{\text { ক্লোরোফিল }}] 2 \mathrm{AH}_{2}+\mathrm{O}_{2} \uparrow
লিমিটিং ফ্যাক্টর (Limiting factor)
যদি একটি শারীরবিজ্ঞানিক প্রক্রিয়া একাধিক ফ্যাক্টর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তবে সবচেয়ে ধীর গতিসম্পন্ন ফ্যাক্টর (সর্বনিম্ন ফ্যাক্টর) দ্বারাই শারীরবিজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রিত হবে যাকে লিমিটিং ফ্যাক্টর বলে। ১৯০৫ সালে ব্ল্যাকম্যান (Blackman, 1905) 'ল অব মিনিমাম’ (law of minimum) এর উপর ভিত্তি করে 'ল অব লিমিটিং ফ্যাক্টর সূত্র' (Law of limiting factor) বা 'সীমাবদ্ধতা ফ্যাক্টর সূত্র' প্রস্তাব করেন। এ সূত্র অনুযায়ী যখন কোনো শারীরবিজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার দ্রুততা (rapidity) কয়েকটি পৃথক ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত হয় সে ক্ষেত্রে নিম্নতম গতিসম্পন্ন ফ্যাক্টর দ্বারাই এ প্রক্রিয়ার গতি সীমাবদ্ধ হবে।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা, আলোর তীব্রতা এবং \mathrm{CO}_{2} এর ঘনত্ব এই তিনটি লিমিটিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
সালোকসংশ্লেষণের হার (The rate of photosynthesis)
নির্দিষ্ট সময়ে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় \mathbf{0}_{2} এবং \mathrm{CO}_{2} এর পরিমাণের অনুপাতকে সালোকসংশ্লেষণ হার (The rate of photosynthesis) বলে। সংক্ষেপে একে P.Q বলে। সালোকসংশ্লেষণের হার নিম্নলিখিত সমীকরণের মাধ্যমে হিসাব করা হয়।