মৌলিক বা প্রাথমিক ও লব্ধ একক | Fundamental and Derived Units
বিজ্ঞানে ব্যবহৃত অসংখ্য ভৌত রাশির প্রতিটির নিজস্ব একক আছে। কিন্তু প্রায় সব ভৌত রাশির একককে মাত্র তিনটি এককের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়। যথা-
(১) মৌলিক বা মূল বা প্রাথমিক একক (Fundamental unit),
(২) লব্ধ বা প্রান্ত বা যৌগিক একক (Derived unit) এবং
(৩) ব্যবহারিক একক (Practical unit)
যে একক অন্য কোনো এককের ওপর নির্ভর করে না এবং একেবারে সম্পর্কশূন্য বা স্বাধীন তাকে মৌলিক বা প্রাথমিক একক বলে। যেমন দৈর্ঘ্য বা ভর বা সময়ের একক অন্য কোনো এককের ওপর নির্ভর করে না। সুতরাং দৈর্ঘ্যের একক, ভরের একক এবং সময়ের একক মৌলিক একক। এই তিনটিকে ভিত্তি করে যে একক গঠন করা হয় বা মৌলিক একক হতে যে একক পাওয়া যায় তাকে লব্ধ বা যৌগিক একক বলে। উদাহরণস্বরূপ ক্ষেত্রফল মাপতে দৈর্ঘ্যকে প্ৰথ দিয়ে গুণ করতে হয়। যেমন এক মিটার (m) দৈর্ঘ্য ও এক মিটার (m) প্রস্থবিশিষ্ট ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = 1
মিটার (m) x1 মিটার (m) = 1 বর্গ মিটার বা, 1m2।
এই বর্গ মিটারই ক্ষেত্রফল মাপার একক। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, দৈর্ঘ্যের একক জানা থাকলে, ক্ষেত্রফলের একক জানা যায়, তার জন্য নতুন কোনো এককের দরকার হয় না। অতএব ক্ষেত্রফলের একক যৌগিক একক। তেমনি আয়তন, বেগ, ত্বরণ, বল ইত্যাদির একক যৌগিক একক।
মৌলিক একক তিনটি; যথা—
(ক) দৈর্ঘ্যের একক (Unit of length),
(খ) ভরের একক (Unit of mass) এবং
(গ) সময়ের একক (Unit of time)।
এই এককগুলি হবে নির্দিষ্ট, সুবিধাজনক ও অপরিবর্তনীয় অর্থাৎ গরমকালে কোনো দূরত্ব যদি 1 মিটার হয়, তবে শীতকালেও তা 1 মিটার হবে। সময় কিংবা চাপ ইত্যাদির প্রভাবে তাদের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
কোনো কোনো সময় মৌলিক বা প্রাথমিক একক খুব বড় বা ছোট হওয়ায় ব্যবহারিক কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সকল ক্ষেত্রে তাদের উপ-গুণিতক (ভগ্নাংশ) (Sub-multiples) বা গুণিতক (Multiples)-কে একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুবিধাজনক নতুন এককও ব্যবহৃত হয়। এর নাম ব্যবহারিক একক (Practical unit); যেমন কিলোমিটার (km), মাইক্রোন (μ), টন ইত্যাদি।
আলোকবর্ষ প্রাথমিক একক না লব্ধ একক? ব্যাখ্যা দাও।
শূন্য মাধ্যমে আলোক এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে। এর মাত্রা দৈর্ঘ্যের মাত্রার সমান। সুতরাং আলোকবর্ষ হলো প্রাথমিক একক।
একক লেখার পদ্ধতি
1960 সালে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত একক এবং সংখ্যা লেখার কয়েকটি নিয়ম নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
(১) একক একবচনে লিখতে হবে, যথা km, কিন্তু (kms নয়)
(২) এককের শেষে ফুলস্টপ দেয়া যাবে না, যেমন km, কিন্তু (km. নয়)
(৩) দশমিক চিহ্ন দেয়ার নিয়ম 1.9, তবে অনেকে 1.9 এভাবেও লেখে।
(৪) দীর্ঘ সংখ্যা পাঠে সুবিধার জন্যে দশমিক স্থান হতে আরম্ভ করে ডানে বা বামে একত্রে তিনটি করে সংখ্যা লিখতে হবে।
অশুদ্ধ শুদ্ধ
24765’321 24.765’321
(৫) একক লেখার সময় প্রয়োজন মতো বিভক্তি চিহ্ন (/) যথা (N/m2) একবার মাত্র ব্যবহার করা যাবে। তবে তা না করাই ভালো। যেমন N/m2 এর স্থলে Nm-2) লেখা উচিত।
(৬) এককের দশমাংশগুলো নিম্নলিখিতভাবে লিখতে হবে; যেমন
ডেসি (= 10-1)d
সেন্টি (= 10-3)c ইতাদি।
(৭) সাধারণ ব্যবহারে মিনিট, ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর ইত্যাদি চললেও বিজ্ঞানের সঠিক পরিমাপে এ ধরনের একক ব্যবহার করা অনুচিত।
এই অধ্যায়ের আরো কিছু বিষয়
পরিমাপে ভুল বা ত্রুটি | পদার্থবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞান ও জ্ঞানের জগৎ |
পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ক্রমবিকাশ এবং গুরুত্ব | বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান |
কয়েকটি প্রাকৃতিক রাশি সম্পর্ক, মাত্রা ও এস.আই. একক | মৌলিক বা প্রাথমিক ও লব্ধ একক |
মৌলিক ও লব্ধ এককের মাত্রা ও মাত্রা সমীকরণ | ভৌতজগৎ ও পরিমাপ |
এককের পদ্ধতি | স্ক্রু গজ |