প্রকৃতি ও প্রত্যয়
প্রকৃতি(Root Words)
ক্রিয়াবাচক বা নামবাচক শব্দের মুলকে প্রকৃতি (Root Words) বলে।
প্রকৃতির প্রকারভেদ (Types of Root Words)
ক্রিয়া প্রকৃতি | নাম বা সংজ্ঞা প্রকৃতি |
প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দের বিশ্লেষণে মৌলিক ভাবদ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায় তা যদি অবস্থান, গতি বা অন্য কোনো প্রকারের ক্রিয়া বোঝায় তাকে ক্রিয়া প্রকৃতি বলে। যেমন: √চল্ (চলন্ত=চল্+অন্ত-প্রত্যয়), √পড়্। | প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দের বিশ্লেষণে মৌলিক ভাবদ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায় তা যদি কোনো দ্রব্য, জাতি, গুণ বা কোনো পদার্থকে বোঝায় তাকে নাম প্রকৃতি বলে।
যেমন: মা, চাঁদ, গাছ। |
প্রত্যয় (Prefix)
ধাতু, শব্দ বা অব্যয়ের যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় (prefix)বলে।
প্রত্যয়ের প্রকারভেদ (Types of Prefix)
কৃৎ প্রত্যয় | তদ্ধিত প্রত্যয় |
ধাতুর পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।
যেমন: √ধর্+আ=ধরা, √ডুব্+উরি=ডুবুরি, √দৃশ্+য=দৃশ্য। | শব্দের পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।
যেমন: বাঘ+আ=বাঘা, সোনা+আলি=সোনালি, সপ্তাহ+ইক=সাপ্তাহিক ইত্যাদি |
কৃৎ প্রত্যয়যোগে বাংলা শব্দ গঠন
- (০) শূন্য-প্রত্যয় – কোনো প্রকার প্রত্যয়-চিহ্ন ব্যতিরেকেই কিছু ক্রিয়া-প্রকৃতি বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ রূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এরূপ স্থলে (০) শূন্য প্রত্যয় ধরা হয়। যেমন: এ মোকদ্দমায় তোমার জিত্ হবে না, হার্-ই হবে। গ্রামে খুব ধর্ পাকড় চলছে।
- অ- প্রত্যয় –
১। কেবল ভাববাচ্যে অ-প্রত্যয় যুক্ত হয়।যেমন: √ধর্+অ=ধর, √মার্+অ=মার
২। আধুনিক বাংলায় অ-প্রত্যয় সর্বত্র উচ্চারিত হয় না। যেমন:√হার্+অ=হার,√জিত্+অ=জিত
- অন প্রত্যয় – √কাঁদ্+অন=কাঁদন (কান্নার ভাব)।
- অনা প্রত্যয় – √দুল্+অনা=দুলনা>দোলনা, √খেল+অনা= খেলনা ।
- আল-প্রত্যয় – √ম্+আল=মাতাল, √মিশ্+আল =মিশাল।
- না-প্রত্যয় – বিশেষ্য গঠনে না প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন: √কাঁদ্+না=কাঁদনা>কান্না, √রাঁধ্+না=রাঁধনা>রান্না।
কৃৎ প্রত্যয় যোগে সংস্কৃত শব্দ গঠন
- অনট্-প্রত্যয় – (‘ট’ ইৎ (বিলুপ্ত) হয়, অন থাকে)। যেমন: √নী+অনট্=√নী+অন>নে+অন (গুণসূত্রে)=নয়ন, √শ্রু+ অনট্=√শ্রু+অন (গুণ ও সন্ধির ফলে)=শ্রবণ ।
- ক্তি-প্রত্যয় – (‘ক’ ইৎ তি থাকে) √গম্+ক্তি/তি=গতি (এখানে ম লোপ হয়েছে)।
- নিপাতনে সিদ্ধ – √গৈদ+ক্তি=গীতি, √সিধ্+ক্তি=সিদ্ধি।
তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রকারভেদ
বাংলা ভাষায় তদ্ধিত প্রত্যয় তিন প্রকার:
সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় | বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় | বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় |
যে তদ্ধিত প্রত্যয় সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন: মনু+ষ্ণ=মানব, লোক+ষ্ণিক=লৌকিক। | বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত ও বিদেশি প্রত্যয় ছাড়া বাকি সব প্রত্যয়কে বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন: বাঘ+আ=বাঘা; ঘর+আমি=ঘরামি ইত্যাদি। | শব্দের শেষে যেসব বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাদের বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন: ডাক্তার+খানা=ডাক্তারখানা, ধড়ি+বাজ= ধড়িবাজ ইত্যাদি। |
ষ্ণ, ষ্ণি, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ইত, ইমন, ইল, ইষ্ট, ঈন, তর, তম, তা, ত্ব, নীন, নীয়, বতুপ্, বিন, র, ল প্রভৃতি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়। | আ, আই, মি/আম/আমো/মি, ই / ঈ, ইয়া>এ – প্রভৃতি বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়। | ওয়ালা>আলা (হিন্দি),ওয়ান>আন (হিন্দি),গর>কর (ফারসি),দার (ফারসি) – প্রভৃতি বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়।
|