রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল (Rutherford atomic model)
রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা(Alpha Particle Scattering Experiment)
প্রয়োজনীয় উপকরণ :
১। লেড ব্লকে রাখা আলফা কণার উৎস (_{83}^{}\textrm{Ra}, _{92}^{}\textrm{U}) ইত্যাদি
২। 4\times 10^{-4} পুরুত্বের স্বর্ণপাত। [সুত্রঃ হাজারী স্যার]
৩। ZnS , বেরিয়াম প্লাটিণুসায়ানাইড এর আবরণযুক্ত পর্দা। এ ধরনের পর্দায় চার্জযুক্ত কণা আঘাত করলে দৃশ্যমান আলো বা ফোটনকণা নির্গত হয়।
পর্যবেক্ষণ:
১। প্রায় 99.5% α কণা ভেদ করে চলে যায়। [সুত্রঃ বিপ্লব কুমার স্যার]
২। কিছু সংখ্যক আলফা কণা গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়।
৩। 20,000 এর মধ্যে একটি কণা 180° কোণে ফিরে আসে।
সিদ্ধান্ত:
১। আলফা কণার ভর ইলেকট্রনের ভরের চেয়ে প্রায় 7,000 গুণ বেশী। সেজন্য পরমাণুর ভিতর দিয়ে আলফা কণা অতিক্রমের সময় ইলেকট্রনের সাথে ধাক্কা লেগে বড় কোণে বেঁকে যেতে পারে না এবং ইলেকট্রন এদের গতিপথে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।
২। যেহেতু অধিকাংশ আলফা কণা স্বর্ণপাত ভেদ করে ZnS এর আবরণযুক্ত পর্দাকে প্রজ্জ্বলিত করেছে তাই বলা যায়, পরমাণুর অধিকাংশ স্থান ফাঁকা এবং ঐ ফাঁকা স্থানে ইলেকট্রন অবস্থান করে।
৩। সাধারণ সমচার্জ এবং প্রায় সমভরের দুটি কণা সংঘর্ষে লিপ্ত হলে এরা 180° কোণে ফিরে আসে। এক্ষেত্রেও আলফা কণা ফিরে আসার কারণ হিসেবে বলা যায় পরমাণুর কেন্দ্র ধনাত্মক চার্জযুক্ত এবং পরমাণুর সমস্ত ভর এতে কেন্দ্রীভূত। এই কেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস বলে।
৪। প্রায় ২০,০০০ আলফা কণার মধ্যে প্রায় একটি আলফা কণা ফিরে আসার ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, পরমাণুর নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্র পরমাণুর আয়তনের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র।
৫। নিউক্লিয়াসের ব্যাস 10^{-13}cm বা 10^{-15}m এবং পরমাণুর ব্যাস 10^{-8}cm বা 10^{-10}m। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের ব্যাসের চেয়ে পরমাণুর ব্যাস প্রায় দশ হাজার গুণ বড়। [সুত্রঃ বিপ্লব কুমার স্যার]
৬। নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জযুক্ত বিধায় খুব অল্প সংখ্যক \alpha-কণা এর কাছে এসে বিকর্ষিত হয়ে বড় কোণে বেঁকে যায়।)
স্বীকার্য:
ক) পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তুকণা রয়েছে। এটি নিউক্লিয়াস নামে অভিহিত। পরমাণুর সমস্ত ভর এবং ধণাত্মক চার্জ নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত।
খ) পরমাণু সামগ্রিকভাবে তড়িৎ নিরপেক্ষ। নিউক্লিয়াসে ধণাত্মক চার্জের সংখ্যা এবং কক্ষপথে পরিভ্রমণশীল ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেক্ট্রনের সংখ্যা সমান।
গ) রাদারফোর্ড তার মডেলকে সৌরজগতের সাথে তুলনা করেছেন। সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তনীয় গ্রহসমূহের মতো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঋণাত্মক ইলেকট্রনগুলো ঘূর্ণায়মান। পরমাণুর মডেলের ক্ষেত্রে, ধণাত্মক নিউক্লিয়াস ও ঋণাত্মক ইলেকট্রনের মধ্যে স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল বিদ্যমান।
ঘ) ধণাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস ও ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনের মধ্যে স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল এবং ইলেকট্রন ও ধণাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস এর মধ্যকার কেন্দ্রমুখী বল পরস্পর সমান।
সীমাবদ্ধতা:
রাদারফোর্ড সৌরমডেলের ন্যায় পরমাণুর যে মডেল প্রদান করে তার প্রধান সীমাবদ্ধতাসমূহ নিম্নরূপ-
- রাদারফোর্ড তার পরমাণু মডেলকে সৌরজগতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গ্রহসমূহ সামগ্রিকভাবে চার্জবিহীন অথচ ইলেকট্রনসমূহ ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে মহাকর্ষ নিয়মে আকর্ষণ বিদ্যমান। কিন্তু, পরমাণুর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান ইলেক্ট্রসমূহ ঋণাত্মক চার্জযুক্ত এবং এগুলো পরস্পরকে বিকর্ষণ করে।
- ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চুম্বকীয় তত্ত্বানুসারে কোনো চার্জযুক্ত ইলেকট্রন বৃত্তাকার পথে ঘুরলে তা ক্রমাগতভাবে শক্তি বিকিরণ করে তার ব্যাসার্ধ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। সুতরাং, এক্ষেত্রে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনসমূহ ক্রমশ শক্তি হারাতে হারাতে কক্ষপথ সর্পিলাকারে হ্রাস পেয়ে নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। অর্থাৎ রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল কখনোই স্থায়ী হবে না।
- পরমাণুতে শক্তি বিকিরণ অবিচ্ছিন্নভাবে ঘটে বলে পরমাণুর বর্ণালিতে সৃষ্ট রেখাসমূহ অবিচ্ছিন্ন হবে এবং তা প্রশস্ত ব্যান্ডের মতো পরিলক্ষিত হওয়ার কথা। কিন্তু বর্ণালিতে সৃষ্ট রেখাসমূহ বিচ্ছিন্ন এবং বেশ উজ্জ্বল হয়।
- পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষপথে ইলেকট্রনসমূহ কীভাবে সজ্জিত থাকে তা সম্পর্কে কোনো ধারণা এ মডেলে অনুপস্থিত।
- রাদারফোর্ডের মডেলে আবর্তনশীল ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি, ইলেকট্রনের গতিবেগ ও শক্তি ইত্যাদি সম্বন্ধে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
- একাধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুতে ইলেক্ট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কীভাবে পরিক্রমণ করে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এ মডেলে নেই ।
- এ মডেলে হাইড্রোজেন পরমাণুর বিকিরণ বর্ণালির কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।