10 Minute School
Log in

লিঙ্গ নির্ধারণ নীতি (Sex Determination)

যে ক্রোমোজোমের মাধ্যমে জীবের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়, তাকে সেক্স ক্রোমোজোম বলে।

মানুষের প্রতিকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২২ জোড়া উভয় লিঙ্গে একই রকম এবং সেগুলোকে অটোজোম (autosome) বলে। কিন্তু ২৩তম জোড়ার ক্রোমোজোম নারী ও পুরুষ সদস্যে ভিন্নতর এবং এগুলোকে হেটারোজোম (heterosome) বা সেক্স ক্রোমোজোম (sex chromosome) বলা হয়।

পুরুষ হেটারোগ্যামেসিস প্রক্রিয়া নিচে বর্ণিত দুই প্রকার.

১. XX-XY পদ্ধতি (XX-XY method)

(মানুষ, ড্রসোফিলাসহ বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ এবং গাঁজা, তেলাকুচা প্রভৃতি উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণ)

এ পদ্ধতি অনুযায়ী স্ত্রী হোমোগ্যামেটিক বা XX এবং পুরুষ হেটারোগ্যামেটিক বা XY স্ত্রী মাত্র এক ধরনের ডিম্বাণু (X) উৎপন্ন করে। কিন্তু পুরুষ দুরকমের শুক্রাণু (X এবং Y) সৃষ্টি করে। X-বাহী ডিম্বাণুর সাথে X-বাহী শুক্রাণুর মিলন হলে কন্যা (XX) সন্তান এবং X-বাহী ডিম্বাণুর সাথে Y-বাহী শুক্রাণুর মিলন হলে পুরুষ (XY) সন্তান জন্ম হবে।

Sex Determination (XX-XY)

চিত্র : XX-XY পদ্ধতিতে লিঙ্গ নির্ধারণ

লিঙ্গ নির্ধারণ নীতি(Sex Determination, XX-XY, XX-XO)

২. XX-XO পদ্ধতি (XX-XO Method)

(ফড়িং, ছারপোকা প্রভৃতি পতঙ্গ ও Dioscorea শ্রেণির উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণ)

ফড়িং, ছারপোকা প্রভৃতি পতঙ্গে XX-XO পদ্ধতির লিঙ্গ নির্ধারণ হয়। এখানে স্ত্রী হোমোগ্যামেটিক অর্থাৎ XX সেক্স-ক্রোমোজোম  বিশিষ্ট। কিন্তু পুরুষে Y ক্রোমোজোম অনুপস্থিত। স্ত্রীর ক্রোমোজোম 2A + XX এবং পুরুষের ক্রোমোজোম 2A + XO (Y না থাকায় ‘0’ শূন্য লেখা হয়)। স্ত্রী হোমোগ্যামেটিক, কাজেই সমস্ত ডিম্বাণু একই ধরনের (A + X)। কিন্তু পুরুষে দুধরনের গ্যামেট [(A + X) এবং (A + O)] উৎপন্ন হয়।

Sex Determination (XX-XO)

চিত্র ১১.১.১৬: XX-XO পদ্ধতিতে লিঙ্গ নির্ধারণ

সেক্স-লিঙ্কড ডিসঅর্ডার (Sex-linked Disorders) 

লাল সবুজ বর্ণান্ধতা (Red-Green Color Blindness) 

লাল সবুজ বর্ণান্ধতা একটি সেক্স লিঙ্কড রোগ। এক্ষেত্রে মানুষ লাল সবুজ বর্ণের পার্থক্য বুঝতে পারে না।

বর্ণান্ধতার জিনতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা (Genetic explanation of color blindness): পুরুষের X ক্রোমোজোমে বর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী প্রচ্ছন্ন জিন থাকলে পুরুষ বর্ণান্ধ হয় কারণ Y ক্রোমোজোমে এর প্রকট অ্যালিল থাকে না। অপরপক্ষে, স্ত্রীর ক্ষেত্রে দুটি X ক্রোমোজোমে প্রচ্ছন্ন জিন থাকলে স্ত্রী বর্ণান্ধ হয় কিন্তু একটি X ক্রোমোজোমে প্রচ্ছন্ন জিন থাকলে স্ত্রী বর্ণান্ধ হয় না, স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন হয় কিন্তু বর্ণান্ধতা জিনের বাহক হয়।

বর্ণান্ধ পুরুষ স্বাভাবিক মহিলার মধ্যে বিয়ে (Marriage between a blind man and a normal woman): মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টির জিন XC এবং বর্ণান্ধতার জিন Xc। তাহলে বর্ণান্ধ পুরুষের জেনোটাইপ হৰে XcY স্বাভাবিক মহিলার জেনোটাইপ হবে XCXC বর্ণান্ধ পুরুষ স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন মহিলার মধ্যে বিয়ে হলে F1 জনুর পুত্র কন্যা সকলেই স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন হলেও কন্যাদের সবাই হবে বর্ণান্ধ জিনের বাহক। 

Marriage between a blind man and a normal woman genetic explanation

F1 জনুর সন্তানদের অনুরূপ জিনোটাইপধারী (কারণ মানুষে ভাই-বোনের বিয়ে হয় না) স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন পুরুষের সাথে বর্ণান্ধবাহক মহিলার বিয়ে হলে ঐ মহিলার চার সন্তানের মধ্যে দুজন স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন কন্যা (এদের মধ্যে এক কন্যা বর্ণান্ধতার বাহক), একজন স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন পুত্র এবং একজন বর্ণান্ধ পুত্র জন্ম লাভ করবে।

বর্ণান্ধতা রোগের প্রচ্ছন্ন জিনটি বংশপরম্পরায় পিতা থেকে কন্যার মাধ্যমে পৌত্রকে আক্রান্ত করে। একে ক্রিসক্রস ইনহেরিট্যান্স (criss cross inheritance) বলে।

সুতরাং বিয়ের আগে বর্ণান্ধতার বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। কারণ রাস্তায় যান চলাচলে লাল ও সবুজ আলো গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া পছন্দের ফুল উপহার দিতে কিংবা বাজার। কাঁচা-পাকা ফল বা জামা-কাপড় কিনতেও বর্ণান্ধদের বেশ ব্ৰিত হতে হয়।

হিমোফিলিয়া (Haemophilia)

হিমোফিলিয়া হচ্ছে বংশগতভাবে সঞ্চারণশীল বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একপ্রকার রক্ত তঞ্চনঘটিত ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা। আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ত তঞ্চিত হয় না এবং রক্ত ক্ষরণজনিত কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে। বর্ণান্ধতার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনহানির আশঙ্কা থাকে না কিন্তু হিমোফিলিয়ার ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি মারাও যেতে পারে। X-ক্রোমোজোমের একটি প্রচ্ছন্ন মিউট্যান্ট জিন (mutant gene; প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে পরিব্যক্ত কোন জিন)-এর কারণে হিমোফিলিয়া হয়ে থাকে। হিমোফিলিয়া নিচে বর্ণিত দুধরনের হয়ে থাকে।

১. ক্লাসিক হিমোফিলিয়া বা হিমোফিলিয়া A (Classic Haemophilia or Haemophilia A) :

রক্ততঞ্চনের VIII নম্বর ফ্যাক্টর বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টর (Antihaemophilic factor) উৎপন্ন না হলে এ রোগটি হয়।

২. খ্রিস্টমাস ডিজিজ বা হিমোফিলিয়া B (Christmas Disease or Haemophilia B):

রক্ততঞ্চনের IX নম্বর ফ্যাক্টর বা প্লাজমা থ্রম্বোপাস্টিন কমপোনেন্ট (Plasma thromboplastin component) বা খ্রিস্টমাস ফ্যাক্টর (christmas factor) অনুপস্থিত থাকলে এ রোগটি হয়।

X-ক্রোমোজোমে অবস্থিত স্বাভাবিক এবং হিমোফিলিয়া অ্যালিল দুটি যথাক্রমে X^H এবং X^h। মহিলারা তিন প্রকার জিনোটাইপ বিশিষ্ট হতে পারে- X^{H}X^{H} (সম্পূর্ণ স্বাভাবিক),X^{H}X^{h} (স্বাভাবিক কিন্তু বাহক) এবং X^{h}X^{h} (হিমোফিলিক)। পুরুষদের ক্ষেত্রে দুধরনের জিনোটাইপ হতে পারে, যেমন- X^{H}Y  (স্বাভাবিক) এবং X^{h}Y (হিমোফিলিক)।

হিমোফিলিয়া আক্রান্ত অর্থাৎ হিমোফিলিক পুরুষের সাথে স্বাভাবিক মহিলার বিয়ে হলে কেবল কন্যারা তা বহন করে এবং কন্যার মাধ্যমে পরবর্তীতে তার পুত্রদের মধ্যে সঞ্চালিত হবে। একজন স্বাভাবিক কিন্তু হিমোফিলিয়া বাহক মহিলার সাথে স্বাভাবিক পুরুষের বিয়ে হলে, সকল কন্যা সন্তান স্বাভাবিক হবে কিন্তু পুত্র সন্তানদের মধ্যে ৫০% হিমোফিলিক হবার সম্ভাবনা থাকে। নিচে উদাহরণসহ দেখানো হলো।

Christmas Disease or hemophilia

পুংগ্যামেট

স্ত্রীগ্যামেট

</span><span style="font-weight: 400;">X^</span><span style="font-weight: 400;">H </span><span style="font-weight: 400;">X^</span><span style="font-weight: 400;">h
</span><span style="font-weight: 400;">X^</span><span style="font-weight: 400;">H </span><span style="font-weight: 400;">X^{H</span><span style="font-weight: 400;">}X^{H}

(স্বাভাবিক কন্যা)

</span><span style="font-weight: 400;">X^{H}X^{h}</span><span style="font-weight: 400;">

(স্বাভাবিক কিন্তু বাহক কন্যা)

</span><span style="font-weight: 400;">X^</span><span style="font-weight: 400;">h </span><span style="font-weight: 400;">X^{</span><span style="font-weight: 400;">H}Y

(স্বাভাবিক পুত্র)

</span><span style="font-weight: 400;">X^{h</span><span style="font-weight: 400;">}Y

(হিমোফিলিক পুত্র)

মাসকুলার ডিসট্রফি (Muscular Dystrophy) 

মাসকুলার ডিসট্রফি একটি দুর্লভ জিনঘটিত অসুখ। তিরিশেরও বেশি ধরনের মাসকলার ডিসট্রফি রয়েছে। এর মধ্যে ডুশেনি মাসকুলার ডিফি (Duchenne Muscular Dvstrophy সংক্ষেপে DMD) হচ্ছে ভয়াবহতম ডিসট্রফি।

রোগের সাধারণ শারীরিক লক্ষণগুলো হচেছ- পেশির দুর্বলতা ও সমন্বয়ের অভাব; স্থলতা দেখা দেয়া; দ্রুত পেশিক্ষয়, দুর্বলতা ও পেশি অকার্যকর হওয়া; অস্থিসন্ধির কুঞ্চন; কপালের উপরে টাক হওয়া (frontal baldness); চোখে পানি পড়া; চোখের পাতা ঝুঁকে পড়া; মানসিক অস্বাভাবিকতা; জননাঙ্গের ক্ষয়িষ্ণুতা প্রভৃতি।

ডিট্রফিন প্রোটিন উৎপন্নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জিনে কিছু বিকৃতি বা পরিবর্তন ঘটার ফলে তীব্র পেশি-ক্ষয়িষ্ণুতার প্রকাশ ঘটে। এ ধরনের অবস্থাকে ডুসেনি মাসকুলার ডিসট্রফি বলে।

Muscular Dystrophy