10 Minute School
Log in

ক্রায়োসার্জারি, মহাকাশ অভিযান ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Cryosurgery, Space mission & Genetic Engineering)

ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)

Cryosurgery হলো এমন এক ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে অত্যন্ত শীতল তাপমাত্রা প্রয়োগ করে ত্বকের রোগাক্রান্ত এবং অস্বাভাবিক টিস্যু ধ্বংস করা হয়। ক্রায়োসার্জারির কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা করাকে Cryotherapy বলে। এক্ষেত্রে অত্যধিক শীতল তাপমাত্রা অর্জনের জন্য তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য ক্রায়োজেনিক এজেন্ট হিসেবে কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নাইট্রাস অক্সাইড, ইথাইল ক্লোরাইড প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। 

প্রয়োগ :

  • ত্বকের ছোট টিউমার, আঁচিল, গোলাকার ফুসকুড়ি, প্রাক ক্যান্সার ক্ষত অথবা ত্বকের ছোট ছোট ক্যান্সার চিকিৎসায়।
  • বিভিন্ন ক্যান্সার চিকিৎসায়, যেমন- লিভার ক্যান্সার, প্রোটেস্ট ক্যান্সার, বৃক্ক ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার।
Cryosurgery

ক্রায়োসার্জারি

সুবিধা : 

  • এই পদ্ধতিতে চিকিৎসায় তুলনামূলক খরচ ও জটিলতা কম।
  • অন্যান্য চিকিৎসার ন্যায় জটিল কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
  • কাঁটাছেড়া কম হওয়ায় প্রায় রক্তপাতহীন চিকিৎসা পদ্ধতি বলা যায়। 
  • তাৎক্ষণিক অবশ কিংবা ব্যথা উপশমের কাজে ব্যবহার করা যায়। 

অসুবিধা :

  • টিউমার সনাক্ত করার সময় ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে টিউমারের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে যদি সঠিকভাবে অবস্থান সনাক্ত করা হয় এবং ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হয় তাহলে ক্যান্সার কোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • দীর্ঘকালীন কার্যকারিতা অনিশ্চিত।
  • কেবলমাত্র রোগ ছড়িয়ে পড়েনি এমন ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসায় কার্যকর, অন্যথায় নয়। 

মহাকাশ অভিযান (Space mission)

মহাকাশ ভ্রমণ হলো মহাশূন্যের রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে মহাশূন্যে চালিত অভিযান বা অনুসন্ধান। মহাকাশ অভিযানের উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ হলো-

  • ৩ অক্টোবর, ১৯৪২ – পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম জার্মান রকেট ‘ভি-২’ পরীক্ষামূলকভাবে মহাশূন্যে পাঠানো হয়।
  • ৪ অক্টোবর, ১৯৫৭ – সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুটনিক-১’ মহাশূন্যে প্রেরণ করে।
  • ৩ নভেম্বর, ১৯৫৭ – ‘স্পুটনিক-২’ এ করে প্রথম প্রাণী হিসেবে ‘লাইকা’ নামের একটি কুকুর মহাকাশে পাঠানো হয়।
  • ১২ এপ্রিল, ১৯৬১ – বিশ্বের প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন ‘ভস্টক-১’ এ করে মহাশূন্য ভ্রমণ করেন।
  • ১৬ জুন, ১৯৬৩ – ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে Valentina Tereshkova ‘ভস্টক-৬’ এ করে ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন।
  • ২১ জুলাই, ১৯৬৯ – ‘অ্যাপোলো-১১’ এ করে সর্বপ্রথম নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন চাঁদে অবতরণ করেন।
  • ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭০ – প্রথম মহাকাশযান হিসেবে ‘ভেনেরা-৭’ শুক্রগ্রহে অবতরণ করে।
Space mission

মহাকাশ অভিযান

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering) 

জীবদেহে নিউক্লিয়াসের ভিতরে কিছু পেঁচানো বস্তু থাকে যাকে ক্রোমোজোম বলা হয়। এ ক্রোমোজোমের অভ্যন্তরে DNA তে অবস্থিত Gene জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। আর জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো জীবের Genome এ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করাকেই Genetic Engineering বা জীন প্রকৌশল বলে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূল লক্ষ্যই হলো জীবদেহে কোনো কাঙ্ক্ষিত Gene স্থানান্তরের মাধ্যমে উন্নতমানের নতুন জীবপ্রকরণ সৃষ্টি করা। এর জন্য কোনো জীব থেকে কোনো Gene পৃথক করে নিয়ে অন্য কোনো কাঙ্ক্ষিত জীবকোষে প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে দুটি পৃথক DNA এর অংশের সমন্বয়ে একটি নতুন প্রকৃতির DNA তৈরি করা হয়, একে Recombinant DNA বলে। এভাবে গঠিত নতুন Gene ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংখায় বৃদ্ধি করা হয়, যাকে জীন ক্লোনিং বলা হয়। এরপর ক্লোন করা এ জীনটি চাহিদা অনুসারে কাঙ্ক্ষিত জীবকোষে প্রবেশ করানো হয়। এভাবে জীবদেহের বাইরে প্রস্তুতকৃত DNA প্রানিদেহে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে কোনো জীবের জীনে গাঠনিক পরিবর্তন সাধন করে নতুন প্রজাতির জীব উদ্ভাবন করা সম্ভব।

Paul Berg কে Genetic Engineering এর জনক বলা হয়। তিনি ১৯৭২ সালে বিশ্বের প্রথম Recombinant DNA অণু তৈরি করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে Herbert Boyer এবং Stanley Cohen সর্বপ্রথম ট্রান্সজেনিক জীব তৈরি করেন। আমাদের দেশের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম তোষা পাটের Genome Code আবিষ্কার করেন। 

ব্যবহার – 

  • কৃষিক্ষেত্রে – উচ্চফলনশীল জাতের শস্য উৎপাদন, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধক্ষম শস্যের জাত উদ্ভাবন, ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গরোধী ফসলের জাত উদ্ভাবন, লবণাক্ততা ও খরা প্রতিরোধে সক্ষম ফসলের জাত উদ্ভাবন ইত্যাদি।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে – মানবদেহের জন্য ইনসুলিন, হিউম্যান গ্রোথ হরমোন, ভ্যাক্সিন প্রভৃতি বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ঔষধ উৎপাদনসহ ক্যান্সার, হৃদরোগ, ভাইরাসজনিত রোগ, এইডস প্রভৃতি রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ।
  • প্রাণীর ক্ষেত্রে – প্রাণীর আকার ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি, দুধে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি, ভেড়ার পশমের পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদি।
  • পরিবেশ রক্ষায় – পরিবেশ থেকে ক্ষতিকারক তেল ও হাইড্রোকার্বন নষ্ট করতে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া উদ্ভাবন, শিল্প-কারখানার বর্জ্য শোধন, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি।