10 Minute School
Log in

বায়োমেট্রিক্স, বায়োইনফরমেটিক্স ও ন্যানো টেকনোলজি (Biometrics, Bioinformatics & Nanotechnology)

বায়োমেট্রিক্স (Biometrics)

বায়োমেট্রিক্স (Biometrics) হলো যে প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যক্তির দেহের শারীরিক গঠন এবং বিভিন্ন ধরণের আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কোনো ব্যক্তিকে চিহ্নিত বা সনাক্ত করা যায়। বায়োমেট্রিক্সের প্রকারভেদ – 

শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতি :

  1. Finger Print
  2. Iris and Retina Scan
  3. Face Recognition
  4. Hand Geometry 
  5. DNA

আচরণগত পদ্ধতি :

  1. Voice Recognition
  2. Keystroke Verification
  3. Signature Verification 
Biometrics (Finger Print)

Finger Print :

কারো হাতের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসইকে পরীক্ষা করে তাকে অদ্বিতীয়ভাবে সনাক্ত করা হয়।

সুবিধা : 

  1. সনাক্তকরণে খুব কম সময় প্রয়োজন হয়।
  2. ব্যবহৃত ডিভাইসের দাম কম হওয়ায় খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
  3. ফলাফলের সূক্ষ্মতা প্রায় শতভাগ।
  4. সামগ্রিক ব্যবহারযোগ্যতার বিচারে অন্যান্য বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতির তুলনায় অধিক সুবিধাজনক।  

অসুবিধা :

  1. দুর্ঘটনাজনিত বা অন্য কোনো কারণে ফিঙ্গার প্রিন্ট নষ্ট হয়ে গেলে এই পদ্ধতি কার্যকর নয়। 
  2. ত্বকের শুষ্কতা অথবা আঙ্গুলে কোনো প্রকার ময়লা বা আস্তরণ লেগে থাকলে এই পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করে না। 

Iris and Retina Scan :

রেটিনা স্ক্যান পদ্ধতিতে চোখের রেটিনাতে অবস্থিত কৈশিক নালির জটিল গঠন, বিভিন্ন লেয়ারে রক্তের পরিমাণ প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে কোনো ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়। আর আইরিস স্ক্যান প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যক্তির চোখের আইরিস অর্থাৎ চোখের মণির চারপাশের রঙিন অংশ পরীক্ষা করে তাকে সনাক্ত করা হয়। এ দুটির মধ্যে আইরিস সনাক্তকরণ বেশি সুবিধাজনক। 

Iris and Retina Scan

সুবিধা :

  1. এটি একটি উচ্চ নিরাপত্তামূলক সনাক্তকরণ পদ্ধতি।
  2. খুবই কম সময় প্রয়োজন।
  3. ফলাফলের সফলতা অন্য যেকোনো পদ্ধতি থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি।

অসুবিধা :

  1. অত্যন্ত ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
  2. চোখে চশমা বা আলোক স্বল্পতা থাকলে এই পদ্ধতিতে সনাক্তকরণ ব্যহত হয়।
  3. তুলনামূলক বেশি মেমরি প্রয়োজন হয়।

Face Recognition :

এই পদ্ধতিতে ব্যক্তির মুখমণ্ডলের গঠন প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে তাকে সনাক্ত করা হয়। 

Face Recognition

সুবিধা :

  1. সহজে ব্যবহারযোগ্য।

অসুবিধা :

  1. নিরাপত্তা বিবেচনায় কম সুবিধাজনক।
  2. সনাক্তকরণের জন্য ক্যামেরা প্রয়োজন এবং আলোক স্বল্পতা থাকলে সনাক্তকরণ ব্যহত হয়।
  3. মেকআপ ব্যবহার, চুলের স্টাইল পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে সনাক্তকরণ বাধাগ্রস্ত হয়।  

Hand Geometry :

এই পদ্ধতিতে মানুষের হাতের আকার-আকৃতি বিশ্লেষণ করে সনাক্ত করা হয়। 

Hand Geometry

সুবিধা :

  1. সহজে ব্যবহারযোগ্য।
  2. কম মেমরি প্রয়োজন হয়। 

অসুবিধা :

  1. ব্যবহৃত ডিভাইসের দাম ও ইনস্টলেশন খরচ বেশি।
  2. ফলাফলের সূক্ষ্মতা কিছুটা কম। 

Voice Recognition :

এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর কণ্ঠস্বর, উচ্চারিত শব্দের মাত্রা প্রভৃতি বিষয়গুলো সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Voice Recognition

সুবিধা :

  1. খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
  2. খরচ তুলনামূলকভাবে কম। 

অসুবিধা :

  1. ফলাফলের সূক্ষ্মতা তুলনামূলকভাবে কম।
  2. সর্দি-কাশি বা অসুস্থতাজনিত কারণে কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়না।
  3. ভয়েস রেকর্ডার বা অন্য যন্ত্রের সাহায্যে কোনো ব্যক্তির কণ্ঠ নকল করা যেতে পারে। তাই এই পদ্ধতির নিরাপত্তা কম।

Signature Verification :

এই পদ্ধতিতে হাতের স্বাক্ষর বা সই পরীক্ষা করে কোনো ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের কলম এবং রাইটিং প্যাড ব্যবহার করে স্বাক্ষরের ধরণ, কলমের চাপ প্রভৃতি বিষয় সমূহ বিবেচনা করা হয়।

Signature Verification

সুবিধা :

  1. খরচ কম।
  2. সনাক্তকরণে কম সময় লাগে। 

অসুবিধা :

  1. স্বাক্ষর জানে না এমন ব্যক্তির জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর নয়।
  2. প্রতিটি স্বাক্ষর একই রকম না হলে এই পদ্ধতিতে সনাক্তকরণ ব্যাহত হয়। 

বায়োমেট্রিক্স সিস্টেমের কার্যপদ্ধতি :

যেকোনো বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি মূলত দুটি পর্যায়ে কাজ করে – 

  1. প্রথমে ব্যক্তির বিভিন্ন বায়োমেট্রিক ডেটা যেমন- আঙুলের ছাপ, মুখের গঠন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ডিভাইস দ্বারা স্ক্যান করে একটি ডেটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
  2. এরপর সনাক্তকরণের প্রয়োজনে ব্যক্তির স্ক্যানকৃত বায়োমেট্রিক ডেটা ডেটাবেজে সংরক্ষিত ডেটার সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। এক্ষেত্রে যদি ডেটা পুরোপুরি মিলে যায় তাহলে সিস্টেমটি উক্ত ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে সনাক্ত করতে পারে। 

এই পুরো কাজের সিস্টেমটি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করা হয়। 

বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics) 

তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জৈব তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণার কাজ সহজ করাই হলো বায়োইনফরমেটিক্স। অর্থাৎ বায়োইনফরমেটিক্স হলো জীব সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রয়োগ। বায়োইনফরমেটিক্স এর সাহায্যে জীববিদ্যা সম্পর্কিত ডেটার সংগ্রহ, সংরক্ষণ কিংবা বিশ্লেষণের কাজে উপযুক্ত পদ্ধতি এবং  সফটওয়্যার টুলস উন্নয়ন করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত আণবিক জীববিদ্যা, ডেটাবেজ, প্রোগ্রামিং, পরিসংখ্যান প্রভৃতি বিষয়সমূহ একীভূত করার মাধ্যমে বায়োইনফরমেটিক্স একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। জীবদেহের জৈবিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুধাবনের মাধ্যমে জীন বিষয়ক তথ্য অনুসন্ধান করাই হলো বায়োইনফরমেটিক্স এর উদ্দেশ্য।

ব্যবহার :

  • মলিকিউলার মেডিসিন
  • জিনথেরাপি
  • ঔষধের গুনাগুণ উন্নত ও নতুন ঔষধ তৈরি
  • বর্জ্য পরিষ্কারকরণ

এছাড়া বায়োইনফরমেটিক্স এর উল্লেখযোগ্য গবেষণা ক্ষেত্রগুলো হলো- ডিএনএ ম্যাপিং, জীন ফাইন্ডিং, সিকুয়েন্স এলাইনমেন্ট, ডিএনএ এনালাইসিস, প্রোটিনের গাঠনিক এলাইনমেন্ট ইত্যাদি।

সুবিধা :

  1. জীববিদ্যার উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করে।
  2. আণবিক বংশগতিবিদ্যার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
  3. দেহের জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার ফল হিসেবে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে।
  4. নতুন ঔষধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চালায়।
  5. জীববিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যের গবেষণাতে তথ্যের সংরক্ষণ ও পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করে।  

অসুবিধা :

  1. জেনেটিক তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের আশংকা থাকে।
  2. গবেষণা প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  3. যেসব চিকিৎসা বায়োইনফরমেটিক্স নির্ভর, সেগুলো সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করা না হলে রোগীর বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

ন্যানো টেকনোলজি (Nanotechnology) 

Nanotechnology বা ন্যানোপ্রযুক্তি হলো পারমাণবিক না আণবিক স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরির জন্য ধাতব ও বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান। অর্থাৎ আণবিক ও পারমাণবিক স্কেলে একটি বস্তুকে পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের মাধ্যমে কীভাবে আরো নিপুণভাবে কাজে লাগানো যায়, ন্যানোপ্রযুক্তিতে মূলত সে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হয়। ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য আকারে ছোট এবং ওজনে হালকা, কিন্তু মজবুত এবং বেশি টেকসই হয়। ন্যানোপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে দুটি প্রক্রিয়া বিদ্যমান-

  • Top to Bottom : টপ-ডাউন পদ্ধতিতে কোনো জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়।
  • Bottom to Top : বটম-আপ পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র আকারের কোনো ছোট জিনিস থেকে বড় কোনো জিনিস তৈরি করা হয়।

ব্যবহার :

  • খাদ্যশিল্পে খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে।
  • ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশসমূহের আকৃতি কমিয়ে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। এছাড়া ন্যানো ডায়োড, ন্যানো ট্রানজিস্টার, প্লাজমা ডিভাইস তৈরিতে।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্মার্ট ড্রাগ তৈরিতে, মানবদেহের কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরিতে ইত্যাদি।
  • জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন আয়নের জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে এবং উন্নতমানের ও সাশ্রয়ী সোলার সেল তৈরিতে।
  • রাসায়নিক শিল্পে বিভিন্ন বস্তুর উপর প্রলেপ তৈরির কাজে, পানি বিশুদ্ধকরণের কাজে ইত্যাদি।
  • অটোমোবাইল শিল্পে হালকা ও কম ওজনের গাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে।
  • রোবটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরিতে।
  • বিভিন্ন খেলাধুলা ও ক্রিয়া সামগ্রী তৈরিতে যেমন ক্রিকেট বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য।

অসুবিধা :

  • ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রক্রিয়া ও প্রয়োগ অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  • উৎপাদিত পণ্যসমূহ অধিক দামী।
  • বিভিন্ন ধরনের ন্যানোপার্টিকেল মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
  • ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে মারাত্মক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব যা মানবজাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।