বিশ্বগ্রাম (Global Village)
বিখ্যাত দার্শনিক মার্শাল ম্যাকলুহান বিশ্বগ্রাম বা Global Village এর উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। ১৯৬২ ও ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত তার “The Gutenberg: The Making of Typographic Man” এবং “Understanding Media” এই দুটি গ্রন্থে সর্বপ্রথম বিশ্বগ্রাম সম্পর্কে ধারণা দেন। Global Village বা বিশ্বগ্রাম বলতে এমন একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে একে অপরকে সেবা প্রদান করে থাকে।
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদানসমূহ হলো-
Hardware : বিভিন্ন ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট, যেমন – কম্পিউটার ও কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, মোবাইল, টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও, স্যাটেলাইট ইত্যাদি।
Software : হার্ডওয়্যারসমূহ পরিচালনার জন্য সফটওয়্যার প্রয়োজন, যেমন – অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফটওয়্যার, কমিউনিকেটিং সফটওয়্যার, বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ইত্যাদি।
নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা বা Connectivity : নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য Network বা Connectivity প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন মানুষ পৃথিবীর যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সংযুক্ত থেকে তার প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারছে। তাই, Connectivity-কে বিশ্বগ্রামের মেরুদণ্ড বলা হয়।
Data : ডেটা হলো তথ্যের মৌলিক উপাদান। ডেটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে Information তৈরি হয়।
মানুষের সক্ষমতা : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিসোর্স শেয়ারের মাধ্যমে একে অপরকে সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তিগত দক্ষতা। সেই সাথে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা।
বিশ্বগ্রামের ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদান (Main component of the concept of Global village)
যোগাযোগ :
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সাথে তার মনের ভাব প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনীয় ডেটা আদান-প্রদান করে থাকে তাকে Communication বা যোগাযোগ বলে। যোগাযোগের তিনটি ধরন হতে পারে-
- Verbal বা মৌখিক : মুখোমুখি যোগাযোগ। যেমন- মোবাইল, টেলিফোন, স্কাইপী, ভয়েস মেইল, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি।
- Non-verbal : মুখ ব্যতীত বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে যোগাযোগ। যেমন- চোখের ইশারা, মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ, হাতের ইশারা ইত্যাদি।
- Written বা লিখিত : হাতে লেখা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লিখিত Document, E-mail, SMS ইত্যাদি।
টেলিকনফারেন্সিং (Teleconferencing):
বিভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থান করে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সভা, সমাবেশ বা সেমিনার করা প্রক্রিয়াকে Teleconferencing বলে। বিভিন্ন ধরনের টেলিকনফারেন্সিং ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন – Public Conference, Closed Conference, Read-only Conference ইত্যাদি।
ভিডিও কনফারেন্সিং (Video Conferencing):
টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থানরত কতিপয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একইসাথে অডিও ও ভিডিও স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে ভিডিও কনফারেন্সিং বলে। অর্থাৎ টেলিকনফারেন্সিং এর ন্যায় কথোপকথন ছাড়াও এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা মনিটরে একে অপরকে দেখতে পায়।
ইমেইল (E-mail) :
চিঠিপত্রের আধুনিক ও ডিজিটাল রূপ হছে E-mail বা Electronic Mail। অর্থাৎ, E-mail হলো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো মেসেজ বা বার্তা আদান-প্রদানের পদ্ধতি। এক্ষেত্রে প্রেরক ও প্রাপকের মাঝে একটি নির্দিষ্ট ই-মেইল Address এ যেকোনো বার্তা, চিঠিপত্র বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ডকুমেন্ট খুব দ্রুত এবং সহজেই আদান-প্রদান করা যায়।
কর্মসংস্থান :
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করা সম্ভব। বিশেষ করে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। আউটসোর্সিং বলতে মূলত নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ নিজেরা না করে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করিয়ে নেওয়াকে বোঝায়।
টেলিমেডিসিন (Telemedicine) :
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহায়তায় কোন ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থানরত রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র, বিশেষায়িত নেটওয়ার্ক প্রভৃতির সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করাকেই Telemedicine বলে।