এসিড, ক্ষার ও লবণ
এসিড
- যে সকল পদার্থের অণুতে প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু আছে এবং জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত (ভেঙে) হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন (H^{+}) বা প্রোটন প্রদান করে তাদেরকে এসিড বলে। যেমন: হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কার্বনিক এসিড।
- যে সকল এসিড জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণ বিয়োজিত হয় তাদেরকে শক্তিশালী এসিড বলে। যেমন : নাইট্রিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড।
- যে সকল এসিড জলীয় দ্রবণে আংশিক বিয়োজিত হয়, তাদেরকে দুর্বল এসিড বলে। সাধারণত জৈব এসিড সমূহ দুর্বল এসিড হিসেবে কাজ করে যেমন: এসিটিক এসিড, মিথানয়িক এসিড, ইথানয়িক এসিড। তাছাড়া আরো অনেক দুর্বল এসিড রয়েছে। যেমন: সাইট্রিক এসিড, ফরমিক এসিড, কার্বনিক এসিড।
এসিডের বৈশিষ্ট্য:
- জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন দান করে।
- ক্ষারের সাথে বিক্রিয়ায় লবণ ও পানি উৎপন্ন করে।
- নীল লিটমাসকে লাল করে।
- এসিড সাধারণত টক স্বাদযুক্ত হয়।
- এসিড ধাতব কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ, পানি ও কার্বন–ডাই–অক্সাইড তৈরি করে।
এসিডের ব্যবহার
- সিরকা বা ভিনেগারে এসিটিক এসিডের 4% – 10% জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়, যা খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এসিটিক এসিডের প্রোটন ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং এর ফলে খাবার অনেকদিন সতেজ থাকে।
- কোমল পানীয়তে কার্বনিক এসিড থাকে যা কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানির বিক্রিয়ায় তৈরি হয়। খাবার হজম করার জন্য কোমল পানীয় ব্যবহার করা হয়।
- ভিটামিন সি হচ্ছে এসকরবিক এসিড।
- বিভিন্ন ধরনের আচার সংরক্ষণে ভিনেগার বা এসিটিক এসিড (CHCOOH) ব্যবহার করা হয়।
- টয়লেট পরিষ্কারে যে পরিষ্কারক ব্যবহার করা হয় তার মূল উপাদান শক্তিশালী এসিড। যেমন: HCl, HNO_3, H_2SO_4। অ্যামোনিয়া সার উৎপাদনে এসিড ব্যবহৃত হয়।
ক্ষারক
কোনো ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইড যৌগ যা এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি প্রস্তুত করে তাকে ক্ষারক বলে। যেমন: ZnO, Ca(OH)_2
- যে সমস্ত ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH⁻) দেয় তাদের ক্ষার বলে। যেমন: NaOH, KOH, Ca(OH)_2 ইত্যাদি।
- সকল ক্ষারই ক্ষারক, কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয়।
- Fe(OH)_2 ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়।
- টমেটোতে যে এসিড থাকে ➟ ম্যালিক এসিড
- লেবুর রসে যে এসিড থাকে ➟ সাইট্রিক এসিড
- আপেলে যে এসিড থাকে ➟ ম্যালিক এসিড
- তেঁতুলে যে এসিড থাকে ➟ টারটারিক এসিড
- আমলকিতে যে এসিড থাকে➟ অক্সালিক এসিড
- আঙ্গুরে যে এসিড থাকে ➟ টারটারিক এসিড
- কমলালেবুতে যে এসিড থাকে➟ এসকরবিক এসিড
- দুধে যে এসিড থাকে ➟ ল্যাকটিক এসিড
- পাকা কলায় যা থাকে ➟ এমাইল এসিটেট
- পাকা আনারসে যা থাকে ➟ ইথাইল এসিটেট
- পাকা কমলায় যা থাকে ➟ অকটাইল এসিটেট
- কচু খেলে গলা চুলকায় থাকে ➟ কারণ কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট
- সিরকায় যে এসিড থাকে ➟ এসিটিক এসিড
- একোয়া রেজিয়া বা রাজ অম্ল → এক মোল গাঢ় নাইট্রিক এসিড এবং তিন মোল গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মিশ্রণকে রাজ অম্ল বলে।
- ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর পাতলা দ্রবণ চুনের পানি/লাইম ওয়াটার নামে পরিচিত।
- ব্লিচিং পাউডার তৈরি হয় ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ক্লোরিন গ্যাসের বিক্রিয়া ঘটানোর মাধ্যমে। ব্লিচিং পাউডারের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম ক্লোরো হাইপোক্লোরাইট (Ca(OCl)Cl)।
Ca(OH)_2+Cl_2\to Ca(OCl)Cl+2H_2O
- ব্লিচিং পাউডার দ্বারা ঘরের মেঝে, বেসিনের জীবাণু ধ্বংস করা হয়।
- সোডিয়াম বাই কার্বনেট (খাবার সোডা), টারটারিক এসিডের মিশ্রণকে বেকিং পাউডার বলে। বেকিং পাউডার ব্যবহার করে কেক প্রস্তুত করা হয় ।
- যেসকল মৌল পর্যায় সারণীতে এক এবং দুই নম্বর গ্রুপে অবস্থিত এরা ধাতু বলে তাদের অক্সাইড ক্ষারকীয় হয়। লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম এবং ফ্রান্সিয়াম ক্ষার ধাতু
- বেরিলিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, ব্যারিয়াম এবং র্যাডিয়াম মৃৎক্ষার ধাতু কারণ এদের মাটিতে পাওয়া যায়
ক্ষার ও ক্ষারকের ব্যবহার
- সাবান, কাচ, কস্টিক সোডা, কাগজ প্রভৃতি উৎপাদনে, কাপড় ধোয়ার কাজে এবং পানির খরতা অপসারণে এবং পেট্রোলিয়াম বিশোধনে কাপড় কাচার সোডা ব্যবহৃত হয়।
- টয়লেট ক্লিনারে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যা একটি তীব্র ক্ষার। টয়লেট ক্লিনার পানির সাথে বিক্রিয়ায় জায়মান অক্সিজেন উৎপন্ন করে যা জীবাণু ধ্বংস করে।
- গ্লাস ক্লিনারে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড একটি দুর্বল ক্ষার যা অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ।
লবণ
- এসিডের অণুতে প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন ক্ষার বা ক্ষারকের মধ্যে অবস্থিত ধাতু বা যৌগমূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে পদার্থ উৎপন্ন করে তাই লবণ।
- সোডিয়াম ক্লোরাইড হলো খাবার লবণ ।
- তুঁতে বা ফিটকিরি একটি লবণ।
নির্দেশক
নির্দেশক | এসিডে বর্ণ | আসল বর্ণ / প্রশম দ্রবণে বর্ণ | ক্ষারকীয় দ্রবণে বর্ণ |
ফেনলফথ্যালিন | বর্ণহীন | বর্ণহীন | গোলাপী |
মিথাইল রেড | লাল | লাল | হলুদ |
মিথাইল অরেঞ্জ | লাল | কমলা | হলুদ |
লাল লিটমাস | লাল | লাল | নীল |
নীল লিটমাস | লাল | নীল | নীল |
কোন দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়নের ঘনমাত্রার লগারিদমের ঋণাত্বক মানকে ঐ দ্রবণের pH বলা হয়, এর মান অনুযায়ী দ্রবণ অম্লীয় বা ক্ষারীয় হবে তা নির্ধারিত হয়।
- pH এর মান ৭ হলে তাকে নিরপেক্ষ দ্রবণ বা প্রশম দ্রবণ বলা হয়।
- pH স্কেলের বিস্তৃতি: ০ – ১৪
- বিশুদ্ধ পানির pH হলো ৭; এর মান ৭ এর কম হলে দ্রবণ অম্লীয় এবং এর বেশি হলে দ্রবণ ক্ষারীয়।
- মানুষের রক্তের pH এর মান 7.4; মানুষের রক্ত ঈষৎ ক্ষারীয়।