বারিমন্ডল ও বায়ুমণ্ডল
বারিমণ্ডল
‘Hydrosphere’ এর বাংলা প্রতিশব্দ বারিমণ্ডল। ‘Hydro’ শব্দের অর্থ পানি এবং ‘sphere’ শব্দের অর্থ মণ্ডল। পৃথিবীর মোট জলরাশির ৯৭ ভাগ পানি রয়েছে সমুদ্রে। বারিমণ্ডল ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ৭১% জায়গা জুড়ে বিস্তৃত (১৪ কোটি বর্গ মাইল)।
বারিমণ্ডলের উন্মুক্ত বিস্তীর্ণ বিশাল লবণাক্ত জলরাশিকে মহাসাগর (Ocean) বলে। সবচেয়ে বড় মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগর।
আয়তন (বর্গ কিঃমিঃ) |
গড় গভীরতা (মিটার) | গভীরতম স্থান | অবস্থান | |
প্রশান্ত মহাসাগর | ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ | ৪,২৭০ | মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (১১০৩৩ মিটার) | আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যবর্তী স্থান |
আটলান্টিক মহাসাগর | ৮ কোটি ২৪ লক্ষ | ৩,৯৩২ | পুয়ের্তো রিকো ট্রেঞ্চ | আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা |
ভারত মহাসাগর | ৭ কোটি ৩৬ লক্ষ | ৩,৯৬২ | সুন্দা বা জাভা ট্রেঞ্চ | আফ্রিকা,ভারত ও অস্ট্রেলিয়া |
দক্ষিণ মহাসাগর | ১ কোটি ৫০ লক্ষ | ৮২৪ | এন্টার্কটিকা ও ৬০০ দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী | |
উত্তর মহাসাগর | ১ কোটি ৪৭ লক্ষ | ১৪৯ | পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ |
- মহাসাগর অপেক্ষা স্বল্প আয়তন বিশিষ্ট জলরাশিকে সাগর বলে।
- তিনদিকে স্থলভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং একদিকে জল – তাকে উপসাগর বলে।
- চারদিকে স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত বিশাল জলভাগকে হ্রদ বলে।
- সবচেয়ে ছোট মহাসাগর হলো আর্কটিক মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর। একে সুমেরু মহাসাগরও বলা হয়।
- শান্ত সাগর চাঁদে অবস্থিত।
- বঙ্গোপসাগরের গভীরতম স্থান সোয়াচ-অফ-নো-গ্রাউন্ড।
- জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ বেশি থাকায় আটলান্টিক মহাসাগরের পানির রঙ সবুজ।
- ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মত সমুদ্র তলদেশও অসমান। শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়। এ শব্দ তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে পানির মধ্য দিয়ে প্রায় ১,৪৭৫ মিটার নিচে যায় এবং ফিরে আসে। ফ্যাদোমিটার (Fathometer) যন্ত্রটি দ্বারা সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়।
উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে সমুদ্র স্রোতকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
ক) উষ্ণ স্রোত—পৃষ্ঠ প্রবাহ
খ) শীতল স্রোত— অন্তঃপ্রবাহ
- নিয়মিত বায়ুপ্রবাহই সমুদ্র স্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ। এর মাধ্যমে সমুদ্র স্রোতের দিক ও গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। সমুদ্রজলের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে সমুদ্র স্রোত হয়।
জোয়ার ভাটা
জোয়ার-ভাটা দুই কারণে হয়-
- চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব। সূর্যের জোয়ার উৎপাদনের ক্ষমতা চন্দ্রের ৪/৯ ভাগ।
- পৃথিবীর আর্বতনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তির জন্য।
- পরপর দুটি জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট ।
- এক মাসে দুইবার তেজ কটাল ও দুইবার মরা কটাল হয়।
টেকটোনিক প্লেট
সর্বপ্রথম ১৯১২ সালে জার্মান আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েগনার ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফট’ নামে একটি তত্ত্ব প্রদান করেন।
ভূত্বকীয় প্লেটগুলোকে মূলত সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন— আফ্রিকান প্লেট, এন্টার্কটিক প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট, উত্তর আমেরিকান প্লেট, প্যাসিফিক প্লেট, দক্ষিণ আমেরিকান প্লেট।
ভারতীয় ও এশীয় টেকটোনিক প্লেট (মাইনর প্লেট) এর সংযোগস্থল আসাম-ত্রিপুরা অঞ্চলে অবস্থিত।
বায়ুমণ্ডল
- বায়ুমণ্ডলের প্রধান দুটি গ্যাসীয় উপাদান হচ্ছে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন, বায়ুতে এদের পরিমাণ যথাক্রমে ৭৮% ও ২০.৭১%।
- ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল বিস্তৃত।
- বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ০.০৩ %।
- ট্রপোমণ্ডলের নিম্ন প্রান্তকে ট্রপোপজ বলা হয়।
- স্ট্র্যাটোমণ্ডলে ওজোন গ্যাস পাওয়া যায় যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে।
- এক্সোমণ্ডলে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।
- সাধারণত প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতায় প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
- পৃথিবীর ৩০ ডিগ্রী উত্তর এবং ৩০ ডিগ্রী দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত।
ঘূর্ণিঝড় ও সুনামি
- প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে গড়ে ৮০টি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।
- উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড়ের বায়ু ঘড়ির কাঁটার বিপরীতমুখী অর্থাৎ উত্তরাভিমুখী এবং দক্ষিণ গোলার্ধে তা ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হয়।
- বাতাসের গতি যখন প্রতি ঘণ্টায় ৭৪ মাইলের বেশি হয়ে যায়, তখনই তাকে হ্যারিকেন বলা হয়। গতি যখন এর চেয়ে কম থাকে কিন্তু প্রতি ঘণ্টায় ৩৯ মাইলের বেশি থাকে তখন সেটা শুধুই মৌসুমি ঝড়।
- বাংলাদেশের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি।
- বাতাসের তীব্রতা ও গতির ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণি বিভাজন করা হয়। যেমন-
- নিম্নচাপ- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।
- গভীর নিম্নচাপ- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ দশমিক ৮৪ থেকে ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার।
- ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ থেকে ৮৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার।
- প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ দশমিক ১ থেকে ১১৮ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।
- হারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৯ দশমিক ৮৮ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে।
- সুনামি সৃষ্টির কারণগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধ্বস অন্যতম।