10 Minute School
Log in

মহাকর্ষ সূত্রের প্রয়োগ (Part-2) : কৃত্রিম উপগ্রহ (Application of Gravitational Law: Artificial Satellite)

কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ (Communication through Satellite)

স্বাভাবিক উপগ্রহ (Natural Satellite): যে সব বস্তু বা জ্যোতিষ্ক গ্রহের চারদিকে ঘোরে, তাদেরকে উপগ্রহ বলে। যে সব উপগ্রহ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট তাদেরকে স্বাভাবিক উপগ্রহ বলে। যেমন চন্দ্র প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এটি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। অতএব চন্দ্র বা চাঁদ পৃথিবীর একটি স্বাভাবিক উপগ্রহ। তেমনি অন্যান্য গ্রহেরও স্বাভাবিক উপগ্রহ রয়েছে।

কৃত্রিম উপগ্রহ (Artificial Satellite): আমরা জানি সৌরজগৎ নামে একটি জগৎ রয়েছে যার কেন্দ্রে থাকে সূর্য। সূর্য হতে ছিটকে আসা কতকগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের নাম গ্রহ (planet)। পৃথিবী সূর্যের একটি গ্রহ। পুনঃ, গ্রহ হতে ছিটকে আসা কতকগুলো জ্যোতিষ্ক গ্রহগুলোকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের নাম উপগ্রহ। চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ যা প্রায় ৩০ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে।

সংজ্ঞা: যে সকল মহাশূন্যযান পৃথিবী থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তাদের নিজ নিজ কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ বলে। তিন স্তরবিশিষ্ট রকেটের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তুলে পরে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে নির্দিষ্ট বেগ দেওয়া হয়। এতে উপগ্রহটি পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের মতো ঘুরতে থাকে। 

1957 সালের 4th অক্টোবর রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম মহাশূন্যে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠান। এর নাম স্পুটনিক-1। সে বছরেই আরো একটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠান হয়। এর নাম স্পুটনিক-2। এ সময় আমেরিকার বিজ্ঞানীরা পেছনে ছিলেন না। তাঁরাও 1958 সালে মহাশূন্যে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেন। এর নাম এক্সপ্লোরার-1। এমনিভাবে মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়ে পৃথিবী তথা সৌরজগতের নানা রকম রহস্য উদঘাটনের কাজ চলছে। রাশিয়ার বিখ্যাত বিজ্ঞানী ইউরি গ্যাগারিন ভস্টক-1 কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে সর্বপ্রথম মহাশূন্যে বিচরণ করেন।

ব্যবহার: 

১। টেলিফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্ত মহাদেশীয় যোগাযোগ স্থাপনে ব্যবহৃত হয়। 

২। আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়। 

৩। পৃথিবীর আকার সম্পর্কিত ভূ-জরিপ কাজে ব্যবহৃত হয়। 

৪। সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। 

৫। ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চল বেতার ও টেলিভিশনের রিলে স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

৬। উর্ধ্বাকাশের বিভিন্ন বিকিরণ ও তার প্রভাব সমপর্কে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে ব্যবহূত হয়। 

৭। প্রতিরক্ষামূলক পাহারা ও বিভিন্ন সামরিক ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়। 

৮। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ধারণ ও প্রেরণে ব্যবহৃত হয়। 

৯। গ্রহ নক্ষত্রের গঠন সম্পর্কে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। 

১০। মহাজাগতিক রশ্মিসহ বিভিন্ন রশ্মির উৎসসহ নানাবিধ গবেষণা করতে ব্যবহৃত হয়। 

ভূ-স্থির উপগ্রহ (Geo-stationary satellite):

সংজ্ঞা: কোনো কৃত্রিম উপগ্রহের আবর্তনকাল নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর আবর্তনকালের সমান হলে পৃথিবীর সাপেক্ষে এটি স্থির থাকবে এ ধরনের উপগ্রহকে ভূ-স্থির উপগ্রহ বলে। 

ভূ-স্থির উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বহুলভাবে ব্যবহূত হয়। একে বলা হয় SYNCOM Satellite (Synchronous Communication Satellite)। টেলিভিশন সংকেত, টেলিফোন কথপোকথন, বেতার সংকেত ইত্যাদি এ উপগ্রহ দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে, ফলে বিভিন্ন দেশ ও দূরত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সহজ হয়।

মূলনীতি: প্রেরক যন্ত্র যেমন মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, টেলিফোন থেকে বৈদ্যুতিক সঙ্কেতকে প্রথমে প্রেরণ করা হয় মডেম নামক যন্ত্রে। পরে মডেম থেকে বৈদ্যুতিক সঙ্কেত ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গ আকারে প্রেরণ করা হয় উপগ্রহের অ্যান্টেনাতে। উপগ্রহের অ্যান্টেনা থেকে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গ প্রেরণ করা হয় মডেমে।

সেই মডেম থেকে পুনরায় গ্রাহক যন্ত্রে অর্থাৎ যার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাই সেই যন্ত্রে (মোবাইল, টেলিফোন, কম্পিউটারে) পৌছে। প্রক্রিয়াটি প্রায় তাৎক্ষণিক ঘটে। তথ্য আদান-প্রদানে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

আর এক ধরনের উপগ্রহ রয়েছে। এদেরকে বলা হয় পোলার উপগ্রহ (Polar Satellite)। এই উপগ্রহগুলো খুব কম উচ্চতায় (সাধারণত 500 km থেকে 800 km এর মধ্যে) উৎক্ষেপণ করা হয়। উত্তর দক্ষিণে এই উপগ্রহ আবর্তিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠের খনিজ সম্পদ অন্বেষণ, বনজ, কৃষিজ এবং সামুদ্রিক সম্পদ অন্বেষণে এই উপগ্রহ ব্যবহৃত হয়। 

কৃত্রিম উপগ্রহের বেগ: মনে করি, ভূ-পৃষ্ঠ হতে একটি ভূ-স্থির উপগ্রহের উচ্চতা h, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R হলে ঐ উপগ্রহের কক্ষপথের ব্যাসার্ধ r=R+h। পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ উপগ্রহটির আবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় অভিকেন্দ্র বল যোগান দেয়। সুতরাং উপগ্রহটির বেগ v হলে, GMmr2=mv2r

এখানে, M, m হলো যথাক্রমে পৃথিবী এবং উপগ্রহের ভর।

r2=GMr…   …   …   (6.38)

বা, r=GMr=GMR+h…   …   …   (6.39)

উপগ্রহের পর্যায়কাল: উপগ্রহটির পর্যায়কাল T হলে অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠ হতে h উচ্চতায় থেকে পৃথিবীকে সম্পূর্ণ একবার প্রদক্ষিণ করতে T সময় লাগলে,

T=বৃত্তের ব্যাসার্ধ রৈখিক বেগ=2πrv=2π(R+h)v     [∴r=R+h]

বা, v=2π(R+h)T

অথবা, v=GM(R+h)    (সমীকরন 6.39 অনুসারে)

2π(R+h)T =GM(R+h)

বা, T=2R+hR+hGM…   …   …   (6.40)

উপগ্রহের উচ্চতা: মনে করি, পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে কৃত্রিম উপগ্রহের উচ্চতা =h , সমীকরণ (6.40) এর উভয় পাশে বৰ্গ করে পাই,

T2=42R+h3GM

বা, R+h3=GMT242

∴h=GMT24213-R…   …   …   (6.41)

যাচাই কর: মনে কর, একই কক্ষ পথে দুটি উপগ্রহকে প্রেরণ করা হলো। একটির ভর অপরটির দ্বিগুণ। তাহলে কি ভরবিশিষ্ট উপগ্রহের আবর্তনকালের কোনোরূপ পরিবর্তন হবে কী? ব্যাখ্যা কর।

ভূ-পৃষ্ঠের খুব নিকটে আবর্তনরত উপগ্রহ: যদি কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ ভূ-পৃষ্ঠের খুব নিকটে থাকে অর্থাৎ এর তুলনায় h খুব ছোট হলে, যেসব উপগ্রহ পৃথিবীকে বৃহত্তর ব্যাসার্ধের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে, তাদের আবর্তনকাল বেশি হয় এবং প্রদক্ষিণ বেগ খুব কম হয়। স্পষ্টত প্রতিটি কক্ষপথে প্রদক্ষিণ বেগের একটি নির্দিষ্ট মান থাকে। এই বেগ অপেক্ষা কম বেগে ঐ কক্ষপথে কোনো কৃত্রিম উপগ্রহকে স্থাপন করলে উপগ্রহটি ঐ কক্ষপথে স্থায়ীভাবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারবে না এবং ভূ-পৃষ্ঠে নেমে আসবে।