বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা | Ancient Civilizations of the World
মানব বিবর্তনের যুগ
প্রাগৈতিহাসিক যুগকে ধরা হয় প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০। এই সময়কালকে ৩টি প্রধান যুগে ভাগ করা হয়-
- প্রস্তর যুগ
- ব্রোঞ্জ যুগ
- লৌহ যুগ
সিন্ধু সভ্যতা
- হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো অন্তর্গত – সিন্ধু সভ্যতার।
- সিন্ধি ভাষায় ‘মহেঞ্জোদারো’ শব্দের অর্থ মৃতের ঢিবি।
- সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা (৩৩০০ – ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ; পূর্ণবর্ধিত কাল ২৬০০ – ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)।
- হরপ্পা ছিল এই সভ্যতার প্রথম আবিষ্কৃত শহরগুলির অন্যতম।
মেসোপটেমিয় সভ্যতা
- বর্তমান ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল।
- মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলো সুমেরীয় সভ্যতা।
- সুমেরীয়রা কিউনিফর্ম নামে একটি নতুন লিপির উদ্ভাবন করেন। কিউনিফর্মকে বলা হয় অক্ষরভিত্তিক বর্ণমালা।
- জলঘড়ি ও চন্দ্রপঞ্জিকা মেসোপটেমিয় সভ্যতার অবদান।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতা
- মধ্য-দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক,সিরিয়া) অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব ১৮৯৪ সালে আক্কাডিয়ান ভাষাভাষি একটি সাংস্কৃতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
- ব্যাবিলনীয় সভ্যতার স্থপতি ছিলেন বিখ্যাত আমেরাইট নেতা হাম্বুরাবি।
- হাম্বুরাবি লিখিত আইন প্রণয়ন করেন যা ‘হাম্বুরাবি কোড’ হিসেবে পরিচিত।
- আবিষ্কৃত মোট ১২টি পাথরের টুকরোয় খোদাই করে লেখা ২৮২টি আইন।
- বর্তমানে এই আইন সংকলনগুলো ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
অ্যাসেরীয় সভ্যতা
- অ্যাসেরীয় ছিল প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের একটি প্রধান সেমিটিক রাজত্ব বা সাম্রাজ্য।
- বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রিতে প্রথম ভাগ করে অ্যাসেরীয়রা।
- পৃথিবীকে প্রথমে তারাই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে ভাগ করেছিল।
ক্যালেডীয় সভ্যতা
- ব্যাবিলন শহর ঘিরে গড়ে ওঠায় ক্যালডীয় সভ্যতাকে ‘নতুন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা’ও বলা হয়।
- ক্যালেডীয় সভ্যতার স্থপতি সম্রাট নেবুচাদনেজার।
- নেবুচাদনেজার তার সম্রাজ্ঞীর জন্য মনোরম উদ্যান নির্মাণ করেন যা ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান নামে পরিচিত। এটি প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটি।
- ক্যালেডীয়রা সর্বপ্রথম সপ্তাহকে ৭ দিনে বিভক্ত করে।
- প্রতিদিনকে ১২ জোড়া ঘণ্টায় ভাগ করার পদ্ধতিও ক্যালেডীয়রা আবিষ্কার করে।
- ক্যালেডীয়রা ১২টি নক্ষত্রপুঞ্জের সন্ধান পায়। এর থেকেই ১২টি রাশিচক্রের সৃষ্টি হয়।
মিশরীয় সভ্যতা
- বুক অফ ডেথ মিশরীয় সভ্যতার সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন।
- মিশরীয় সভ্যতার লিখনপদ্ধতির নাম হায়রোগ্লিফিক।
- ৪২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দতে তারা প্রথম সৌর পঞ্জিকা আবিষ্কার করে। অর্থাৎ, তারা ১২ মাসে ১ বছর, ৩০ দিনে ১ মাস এই জাতীয় গণনারীতি চালু করে। ৩৬৫ দিনের হিসাবও তারাই প্রথম ব্যবহার করে।
ফিনিশীয় সভ্যতা
- ফিনিশীয়রা পরিচিত শ্রেষ্ঠতম নাবিক ও জাহাজ নির্মাতা হিসেবে।
- বর্ণমালার উদ্ভাবন করেন ফিনিশীয়রা।
- ফিনিশীয়রা ২২টি ব্যঞ্জনবর্ণ উদ্ভাবন করেছিল। এখান থেকে আধুনিক বর্ণমালার সূচনা হয়।
গ্রিক সভ্যতা
- সক্রেটিস > প্লেটো >অ্যারিস্টোটল > আলেকজান্ডার।
- অলিম্পিক খেলার জন্ম প্রাচীন গ্রিসের অলিম্পিয়া নামক স্থানে।
- ইতিহাস রচনার সূত্রপাত করেছিল গ্রিকরা।
- ইতিহাসের জনক গ্রিক দার্শনিক হিরোডোটাস।
- গ্রিকদের ১২জন দেবদেবী ছিল। দেবতাদের রাজা ছিলেন জিউস। অ্যাপোলো ছিলেন সূর্যের দেবতা, পোসিডন ছিলেন সাগরের দেবতা, এথেনা ছিলেন জ্ঞানের দেবী।
রোমান সভ্যতা
- রোম নগরীর উদ্ভব ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বে। টাইবার নদীর তীরে অবস্থিত রোম শহর। রোম সাম্রাজ্যের পতন ঘটে – ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে।
- রোম নগরীকে “Roma Aeterna” (শাশ্বত শহর) এবং “Caput Mundi” (বিশ্বের রাজধানী) হিসেবে গণ্য করা হয়, প্রাচীন রোমান সংস্কৃতি দুইটি কেন্দ্রীয় ধারণা।
- সম্রাট কন্সটান্টাইন এর আমলে রোমান সাম্রাজ্য একটি খ্রিস্টধর্মীয় সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
চৈনিক সভ্যতা
- চৈনিক সভ্যতা তাম্রযুগের অন্তর্গত।
- চৈনিক ইতিহাসে প্রভাবশালী দার্শনিক ছিলেন কনফুসিয়াস।
- সান জু একজন চৈনিক সমরনায়ক। তার রচিত প্রাচীন যুদ্ধবিদ্যার বই “আর্ট অব ওয়ার” বা “রণকৌশল”।
- এরাই সর্বপ্রথম – আগ্নেয়াস্ত্র, গান পাউডার ও কাগজ আবিষ্কার করে।
পারস্য সভ্যতা
- বর্তমান ইরান, ইরাক, সিরিয়া, তুরস্কে প্রভৃতি অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল পারস্য সাম্রাজ্য।
- প্রাচীন পারস্য সভ্যতায় স্থাপত্যকলায় পাথরের অন্যন্য স্থাপত্যশৈলী লক্ষ্য করা যায়। সোনা, রুপার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় এই সভ্যতার মধ্যে। হাতে বোনা কম্বল প্রাচীন পারস্যের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন ছিল।
- পারস্য সাম্রাজ্যের বিখ্যাত শহর – পার্সিপোলিস, টেসিফন, ইস্পাহান।
ইনকা সভ্যতা
- দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও চিলিতে অবস্থিত।
- প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য মাচু পিচু(পেরু) ইনকা সাম্রাজ্যের একটি নিদর্শন।
অ্যাজটেক সভ্যতা
- মধ্য আমেরিকার মেক্সিকো, বেলিজ, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসে গড়ে ওঠে।
মায়া সভ্যতা
- মায়া সভ্যতার অবস্থানও মধ্য আমেরিকায় অবস্থিত। বর্তমানের গুয়েতেমালা, বেলিজ, এল সালভেদর ও হন্ডুরাসের পশ্চিম অঞ্চল এবং মেক্সিকোর কিছু শহর (তাবাসকো ও চিয়াপাস) নিয়ে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
- মায়া সভ্যতা স্থাপত্যশৈলী, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি সাধন করে। তারাও শূন্যের ব্যবহার করেছিল, ৩৬৫ দিনে এক বছরের ক্যালেন্ডারও তারা ব্যবহার করতো। এছাড়াও চকোলেট ও রাবারের আদিরুপের উদ্ভাবনে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান আছে।