মহাকর্ষ সূত্রের প্রয়োগ (Application of Gravitational Law) Part-1
মহাকর্ষ সূত্রের প্রয়োগ (Application of Gravitational Law)
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Gravitational Law) ব্যবহার করে আমরা কোনো স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ নির্ণয় করতে পারি। এছাড়া পৃথিবীর ভর, চন্দ্রের ভর ও সূর্যের ভর, পৃথিবীর গড় ঘনত্ব নির্ণয় করতে পারি। গ্রহ নক্ষত্রসহ কৃত্রিম উপগ্রহের বেগ, আবর্তন কাল ও উচ্চতা নির্ণয় করতে পারি। মহাকাশে ভ্রমণকালে মহাশূন্যচারী ওজনহীনতা, মহাকর্ষক্ষেত্র, প্রাবল্য, বিভবসহ নানাবিধ সমস্যার সমধান করতে পারি। বর্তমান বিশ্বে প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান, কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ ও বন্ধু গবেষণা ইত্যাদি বিজ্ঞানের অগ্রগতি মহাকর্ষ সূত্র প্রয়োগ এর-ই ফল। নিম্নে এ সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান (Exploration of Natural Resources)
আমরা জানি, পৃথিবীর গড় ঘনত্ব , ρ=5.5×103 kg m3। পৃথিবীর বিভিন্ন গভীরতায় এর মান কমবেশি হতে পারে। সুতরাং ‘g’ পরিমাপ করে কোথাও ঘনত্ব গড় ঘনত্বের বেশি হলে সেখানে খনিজ পদার্থ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, ‘g’ এর মান নির্ধারণ করে খনিজ পদার্থ অন্বেষণ করা হয়। প্রাথমিক ফলাফল আশাব্যঞ্জক হলে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং বিস্তারিত গবেষণার মাধ্যমে খনিজ পদার্থের গঠন ও প্রকৃতি নির্ণয় করা যায়। সুতরাং, মহাকর্ষ সুত্র ব্যবহার করে আমরা খনিজ সমপদ অন্বেষণ করতে পারি।
বস্তুর গবেষণা (Material Research)
আমরা জানি, পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে কোনো বস্তুর মুক্তিবেগ 112 kms-1 অর্থাৎ পৃথিবী থেকে মুক্তি পেতে হলে বা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় বলের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হতে হলে কোনো বস্তুকে 112 kms-1 বা 7 miles/s বেগে যাত্রা করতে হবে।
পৃথিবীর আবহমণ্ডলে বহু ধরনের গ্যাস আছে। তবে হাইড্রোজেন, হিলিয়ামের মতো হাল্কা গ্যাস বেশ দুষ্প্রাপ্য। এর কারণ মুক্তিবেগের ধারণা থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে হাইড্রোজেন অণুর গতিবেগের গড় বর্গের বর্গমূল মান (rms) প্রায় 16 km s-1। কিন্তু পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা খুব বেশি ছিল এবং তখনকার তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন অণুর গতিবেগের গড় বর্গের বর্গমূল মান প্রায় 4 থেকে 5 km s-1 ছিল। এদের মধ্যে কিছু কিছু অণুর প্রকৃত গতিবেগ গড় বর্গের বর্গমূল মানের 2 বা 3 গুণ অধিক হওয়া স্বাভাবিক ছিল। অতএব, এটা খুবই সম্ভব যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের মতো হাল্কা গ্যাসের অধিকাংশ অণুর গতিবেগ মুক্তিবেগের সমান ছিল। সুতরাং এ ধরনের গ্যাসের বেশির ভাগ অণু ভূপৃষ্ঠ হতে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেছে ।
আমরা জানি, স্বর্গীয় বস্তুসমূহের মুক্তিবেগ(Escape Velocity) এদের ভরের উপর নির্ভর করে। সূর্যের ভর পৃথিবীর তুলনায় বহুগুণ বেশি; ফলে সূর্যের মুক্তিবেগও বেশি। তাই সূর্যের আবহমণ্ডলে হাইড্রোজেনের মতো হাঙ্কা গ্যাস রয়েছে। আবার চন্দ্র, বুধ, গ্রহ এবং পৃথিবীর ভরের তুলনায় অনেক কম, তাই এদের মুক্তিবেগও কম। ফলে গ্যাসীয় অণুসমূহ বিলীন হয়ে গেছে।
সুতরাং, ইহা স্পষ্ট যে মহাকর্ষ সূত্র প্রয়োগ করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ মুক্তিবেগসহ অন্যান্য অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ঐ সমস্ত স্বর্গীয় বস্তুসমূহের বিভিন্ন গ্যাসীয়, তরল, কঠিন পদার্থের উপস্থিতি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণ এবং জ্ঞান লাভ করা সম্ভব।