10 Minute School
Log in

জীবপ্রযুক্তি ও উদ্ভিদ টিস্যু কালচার (Biotechnology & Plant tissue culture)

জীবপ্রযুক্তি কী?

কোলম্যান (১৯৬৮) এর মতে, জীবন্ত উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব বা এদের অংশবিশেষ ব্যবহার করে মানবতার কল্যাণে ব্যবহারোপযোগী উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নতুন উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব বা দ্রব্য উৎপাদনে প্রয়োগকৃত প্রযুক্তি হলো জীবপ্রযুক্তি।

জীবপ্রযুক্তির পরিধি (Scope of Biotechnology)

ইদানিং জীবপ্রযুক্তির পরিধি ব্যাখ্যা করার জন্য নিম্নলিখিত শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়।

(i) ব্লু বায়োটেকনোলজি (Blue Biotechnology): এর দ্বারা বায়োটেকনোলজির জলীয় ও সামুদ্রিক প্রয়োগ বর্ণনা করা হয়।

(ii) গ্রিন বায়োটেকনোলজি (Green Biotechnology): এর দ্বারা বায়োটেকনোলজির কৃষিক্ষেত্রের প্রয়োগ বর্ণনা করা।

(iii) রেড ও হোয়াইট বায়োটেকনোলজি (Red & White Biotechnology): এর দ্বারা চিকিৎসা ক্ষেত্রের বায়োটেকনোলজির প্রয়োগ বর্ণনা করা হয়।

জীবপ্রযুক্তির কতিপয় ব্যবহার

  • টিস্যু কালচার
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি

উদ্ভিদ টিস্যু কালচার (Plant tissue culture)

উদ্ভিদের যেকোনো বিভাজনক্ষম অঙ্গ থেকে (যেমন-শীর্ষমুকুল, কক্ষমুকুল, কচি পাতা বা পাপড়ি ইত্যাদি) বিচ্ছিন্ন করা কোনো টিস্যু সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত (sterile) অবস্থায় উপযুক্ত পুষ্টি মাধ্যমে বৃদ্ধিকরণ (এবং পূর্ণাঙ্গ চারাউদ্ভিদ সৃষ্টি) করাকে টিস্যু কালচার বলে। অর্থাৎ গবেষণাগারে কোনো টিস্যুকে পুষ্টি মাধ্যমে কালচার করাই হলো টিস্যু কালচার।

টিস্যু কালচার প্রযুক্তির ধাপসমূহ (Tissue culture process):

১। মাতৃউদ্ভিদ বা এক্সপ্লান্ট নির্বাচন (Maternal or implant selection): টিস্যু কালচারের জন্য সুস্থ,নীরোগ ও উৎকৃষ্ট বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত উদ্ভিদ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত টিস্যুকে এক্সপ্লান্ট (explant) বলে।

২। কালচার মিডিয়াম বা আবাদ মাধ্যম তৈরি (Creating culture medium): বিভিন্ন ধরনের মুখ্য ও গৌণ উপাদান (macro and micro elements), ভিটামিন, সুকরোজ (২-৪%), ফাইটোহরমোন প্রভৃতি এ মিডিয়ামে থাকা প্রয়োজন।

৩। জীবাণুমুক্তকরণ বা নির্বীজকরণ (Disinfection or sterilization): পাত্রটিকে নির্বীজকরণ যন্ত্র (autoclave) দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। মিডিয়ামকে অটোক্লেভ যন্ত্রে নির্দিষ্ট তাপ (১২১° সে.), চাপ (১৫ পাউন্ড) ও সময় (২০ মিনিট) রাখা হয়।

৪। মিডিয়ামে এক্সপ্লান্ট বা টিস্যু স্থাপন (Place the implant or tissue in the medium): এক্সপ্লান্টকে নির্বীজ করে (সাথে হাত, চিমটা ইত্যাদিকে অ্যালকোহল দিয়ে নির্বীজ করতে হয়) সম্পূর্ণ নির্বীজ অবস্থায় কাচপাত্রে রাখা মিডিয়ামে স্থাপন করা হয়।

৫। ক্যালাস সৃষ্টি ও সংখ্যাবৃদ্ধি (Callus creation and multiplication): পাত্রটিকে একটি বৈদ্যুতিক আলো (৩,০০০-৫,০০০ লাক্স), তাপমাত্রা (১৭°-২০° সে.) ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা (৭০-৭৫%) নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখা হয়। কয়েকদিন পর টিস্যুটি বার বার বিভাজিত হয়ে একটি কোষীয় মণ্ডে পরিণত হয়। যে অবয়বহীন অবিন্যস্ত টিস্যুগুচ্ছ সৃষ্টি হয় তাই ক্যালাস। ক্যালাস থেকে এক সময় অসংখ্য মুকুল সৃষ্টি হয়।

৭। চারা টবে স্থানান্তর (Transfer seedlings to tubs): উপযুক্ত সংখ্যক সুগঠিত মূল সৃষ্টি হলে পূর্ণাঙ্গ চারাগাছ কালচার করা পাত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে ধীর প্রক্রিয়ায় সাবধানতার সাথে টবে স্থানান্তর করা হয়। এভাবে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারাগাছ উৎপাদন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

৬ । মূল উৎপাদক মাধ্যমে স্থানান্তর ও চারা উৎপাদন (Transfer and seedling production through the main producer): মুকুলগুলোকে সাবধানে কেটে নিয়ে মূল উৎপাদনকারী মিডিয়ামে রাখা হয় এবং সেখানে প্রতিটি মুকুল, মূল সৃষ্টি করে পূর্ণাঙ্গ চারাগাছে পরিণত হয়।

৮। প্রাকৃতিক পরিবেশে তথা মাঠ পর্যায়ে স্থানান্তর (Transfer to natural environment as well as field level): টবসহ চারাগাছকে কিছুটা আর্দ্র পরিবেশে রাখা হয়, তবে রোপিত চারাগাছগুলো কক্ষের বাইরে রেখে মাঝে মাঝে বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। পূর্ণাঙ্গ চারাগাছগুলো সজীব ও সবল হয়ে উঠলে সেগুলোকে এক পর্যায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে মাটিতে লাগানো হয়।

tissue culture, টিস্যু কালচার, biotechnology

 

টিস্যু কালচার প্রযুক্তির প্রয়োগ (Application of plant tissue culture technology):

১। হুবহু মাতৃ-গুণাগুণসম্পন্ন চারা উৎপাদন বা মাইক্রোপ্রোপাগেইশন (Micropropagation): ভালোজাতের একটি উদ্ভিদ থেকে টিস্যু নিয়ে কালচার করে অনেক সংখ্যক চারাগাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। অতি ক্ষুদ্র টিস্যু থেকে বহু চারা উৎপাদনের এ পদ্ধতি মাইক্রোপ্রোপাগেইশন নামেও পরিচিত।

২। রোগমুক্ত উদ্ভিদ সৃষ্টি (Creation of disease free plants)

৩। চারা উৎপাদন (Seedling production)

৪। বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণে (In conservation of almost extinct plants)

৫। ভ্রূণ কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন (Artificial insemination of plants through embryo culture technology)

৬। সংকর উদ্ভিদ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রোটোপ্লাস্ট ফিউশন (মিলন) (Protoplast fusion): প্রোটোপ্লাস্টের মিলনে সোমাটিক হাইব্রিড তৈরি হলে সেখানে দুটি প্রজাতির সম্পূর্ণ সাইটোপ্লাজমের মিলন ঘটে। শুধু সাইটোপ্লাজমের মিলনে সৃষ্ট উদ্ভিদকে হাইব্রিড না বলে সাইব্রিড (cybrid) বলা হয়। আলু ও টম্যাটো উদ্ভিদের প্রোটোপ্লাস্ট ফিউশন করে সৃষ্ট নতুন উদ্ভিদের নাম দেয়া হয়েছে পোম্যাটো।

৭। মেরিস্টেম কালচার (Meristem culture): উদ্ভিদের শীর্ষমুকুলের অগ্রভাগের টিস্যুকে মেরিস্টেম বলে। মেরিস্টেম কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারাগাছ সাধারণত রোগমুক্ত হয়ে থাকে।

৮। অল্প সময়ে অধিক চারা উৎপাদন (Produce more seedlings in less time)

৯। হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ উৎপাদন (Haploid plant production): পরাগরেণু এবং পরাগধানী কালচার এর মাধ্যমে অ্যান্ড্রোজেনিক হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ উৎপাদন করা সম্ভব। Poaceae, Solanaceae Brassicaceae গোত্রের হ্যাপ্লয়েড লাইন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।

১০। কোষ আবাদ ও ক্যালাস টিস্যু আবাদ (Cell implantation and callus tissue implantation): যেকোনো আবাদি উদ্ভিদ কোষ বা টিস্যু হতে সৃষ্ট প্রকরণকে বলে সোমাক্লোনাল ভ্যারিয়েশন। এর মাধ্যমে উন্নত কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব উৎপন্ন করা হয়।

১১। দ্রুত ক্লোন সৃষ্টির মাধ্যমে বংশবিস্তার (Propagation through rapid clone creation)

১২। ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ সৃষ্টি (Creation of transgenic plants): টিস্যু কালচার প্রযুক্তিতে কোষ বা ভ্রূণ হতে পূর্ণাঙ্গ ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়।

১৩। ভ্রূণ উদ্ধার (Embryo rescue)

১৪। দেহজ ভ্রূণ সৃষ্টি (Body embryo creation)

১৫। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন (Acquiring foreign currency)