আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা (The concept of modern physics)
1675 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী নিউটন আলোর কণিকা তত্ত্ব, 1678 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী হাইগেনস আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব, 1886 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল আলোর তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত্ব, প্রদান করেন। 1887 খ্রিস্টাব্দে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী হেনরিখ হার্টজ পরীক্ষামূলকভাবে তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
কৃষ্ণ বস্তুর বিকিরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে 1900 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। প্ল্যাঙ্ক এর কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে বিকিরণ কণাধর্মী। একটি কোয়ান্টাম শক্তি, \mathrm{E}=\mathrm{h} \vartheta। এখানে \vartheta হচ্ছে তার কম্পাঙ্ক এবং h হচ্ছে একটি ধ্রুবক যা প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক নামে পরিচিত।
প্রসঙ্গ কাঠামো (Frame of Reference)
চিরায়ত ও নিউটনীয় বলবিদ্যায় তিনটি মৌলিক রাশির ধারণা করা হয়েছে। এগুলো হলো স্থান, কাল ও ভর। চিরায়ত বলবিদ্যার মতে স্থান, কাল ও ভর ধ্রুব কিন্তু আইনস্টাইনের মতে এগুলো পরম কিছু নয়—সবই আপেক্ষিক। আইনস্টাইনের এই তত্ত্বই আপেক্ষিক তত্ত্ব (Theory of relativity) নামে পরিচিত।
কোনো বস্তুর অবস্থান বা গতি বর্ণনার জন্য আমাদের একটি প্রসঙ্গ কাঠামো প্রয়োজন, যার সাপেক্ষে বস্তুর স্থির বা চলমান অবস্থা নির্দেশ করা যায়। দূরের বা কাছের কোনো বিন্দুর সাপেক্ষে দ্বি- বা ত্রি-মাত্রিক স্থানে একটি বিন্দুকে সুনির্দিষ্ট করা যায়। একে প্রসঙ্গ কাঠামো বলে। অন্য কথায় বলা যায়, কোনো বস্তুর গতি বর্ণনার জন্য ত্রিমাত্রিক স্থানে যে সুনির্দিষ্ট স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয় এবং যার সাপেক্ষে বস্তুটির গতি বর্ণনা করা যায় তাকে প্রসঙ্গ কাঠামো বলে (Frame of Reference)।
প্রসঙ্গ কাঠামো ২ প্রকার। যথাঃ
(১) জড় প্রসঙ্গ কাঠামো (Inertial Frame of Reference)
(২) অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো(Non-Inertial Frame of Reference)।
জড় প্রসঙ্গ কাঠামো (Inertial Frame of Reference) :
পরস্পরের সাপেক্ষে ধ্রুব বেগে গতিশীল যেসব প্রসঙ্গ কাঠামোতে জড়তার সূত্র এবং নিউটনের গতিসুত্র প্রযোজ্য হয় তাকে জড় কাঠামো বা প্রসঙ্গ জড় কাঠামো বলে। একে অভ্যন্তরীণ কাঠামো বা গ্যালিলিও কাঠামো বা নিউটনীয় প্রসঙ্গ কাঠামো বলা হয়। ভূপৃষ্ঠের তুলনায় সমবেগে গতিশীল সকল বস্তুর সাথে যুক্ত কাঠামোতে নিউটনের জড়তার সূত্র প্রযোজ্য হলে এরাও প্রত্যেকে একটি একটি জড়তার কাঠামো। কিন্তু ঘূর্ণায়মান বস্তু জড় কাঠামো নয়। বস্তুর গতি হ্রাস/বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য মন্দন/ত্বরণ সৃষ্টি হয় বলে অর্থাৎ সমবেগে চলে না বলে এটি জড় কাঠামো নয়। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের তুলনায় সমবেগসম্পন্ন হলে কাঠামোটি জড় কাঠামো। জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে নিউটনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় গতিসূত্র সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়।
এই ধরনের কাঠামোতে ত্বরণ,
\mathrm{a}=\frac{d^{2} r}{d t^{2}}=0 , কারণ প্রযুক্ত বল, F=m a=0
বা, \frac{d^{2} x}{d t^{2}}=\mathrm{a}_{\mathrm{x}}=0 ; \frac{d^{2} y}{d t^{2}}=\mathrm{a}_{\mathrm{y}}=0 ; \frac{d^{2} z}{d t^{2}}=\mathrm{a}_{\mathrm{z}}=0
অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো (Non–Inertial Frame of Reference) :
যে সকল প্রসঙ্গ কাঠামো পরস্পরের সাথে ধ্রুব বেগে গতিশীল নয় এবং যে কাঠামোতে জড়তার সূত্র এবং নিউটনের গতিসুত্র প্রযোজ্য হয় না তাকে অজড় কাঠামো বলা হয়। ঘূর্ণায়মান এবং অসমবেগে চলমান প্রসঙ্গ কাঠামো অজড় কাঠামো (Non-Inertial Frame of Reference)। এই ধরনের কাঠামোতে কাল্পনিক বল দ্বারা ত্বরণ ঘটে।
উদাহরণঃ সমবেগে চলমান একটি বাসের ভেতরে একটি ফুটবল রয়েছে। বাসটি ব্রেক কষলে মনে হবে সামনের দিকে ফুটবলটির ত্বরণ হচ্ছে। ফুটবলটির ওপর কোনো বাহ্যিক বল ক্রিয়া করেনি; কিন্তু আমরা ফুটবলটিকে বাসের ভেতরে একটি ত্বরিত প্রসঙ্গ কাঠামো হতে দেখি বলে মনে হয় এখানে একটি বাহ্যিক বল ক্রিয়া করছে।
ধরা যাক, প্রসঙ্গ কাঠামো S’ জড় প্রসঙ্গ কাঠামো S এর সাপেক্ষে \overrightarrow{a_{0}} ত্বরণে গতিশীল। তাহলে কণা A, প্রকৃতপক্ষে যে সকল কণা, প্রসঙ্গ কাঠামো S এর সাপেক্ষে স্থির থাকলে, কাঠামো S’ সাপেক্ষে তা – \overrightarrow{a_{0}} ত্বরণে গতিশীল মনে হবে। সুতরাং একটি কণা S জড় কাঠামোর সাহায্যে \vec{a} ত্বরণে গতিশীল হলে, S’ কাঠামোতে এর ত্বরণ হবে \overrightarrow{a^{\prime}}=\vec{a}-\overrightarrow{a_{0}} । এখন কণাটির ভর m হলে S’ কাঠামোতে কণাটির ওপর ক্রিয়াশীল বল পাওয়া যায়।
\overrightarrow{F^{\prime}}=m \overrightarrow{a^{\prime}}=m\left(\vec{a}-\overrightarrow{a_{0}}\right)=m \vec{a}-m \overrightarrow{a_{0}}এখানে, m \vec{a}=\vec{F}, জড় কাঠামো S এ কণাটির ওপরে ক্রিয়াশীল বল। সুতরাং, \overrightarrow{F^{\prime}}=\vec{F}-m \overrightarrow{a_{0}}
ধরি,
m \overrightarrow{a_{0}}=\overrightarrow{F_{\circ}}অতএব, \overrightarrow{F^{\prime}}=\vec{F}-\overrightarrow{F_{0}}
যদি \vec{F}=0 তবে \overrightarrow{F^{\prime}}=-\vec{F}_{0}
অর্থাৎ, S কাঠামোতে কণাটির ওপর কোনো বল ক্রিয়াশীল না হলেও \overrightarrow{F_{o}}=m \overrightarrow{a_{0}} কাল্পনিক বল S’ কাঠামো সাপেক্ষে কণাটি ক্রিয়াশীল রয়েছে। সুতরাং S’ কাঠামো অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো।