10 Minute School
Log in

প্রাবল্য ও বিভব পার্থক্যের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between intensity and potential)

মহাকর্ষীয় প্রাবল্য( Gravitational Intensity) এবং মহাকর্ষীয় বিভবের (Gravitational Potential) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে ধরি, AB মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে অবস্থিত কাছাকাছি দুটি বিন্দু। মনে করি, এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব rA বিন্দুর বিভব =\mathrm{V}_{\mathrm{A}}  এবং B বিন্দুর বিভব =\mathrm{V}_{\mathrm{B}} । যেহেতু AB বিন্দু দুটি মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কাছাকাছি অবস্থিত, সেহেতু বিন্দু দুটির মহাকর্ষীয় প্রাবল্য সমান ধরে নেয়া হয়। মনে করি এই প্রাবল্য =F

এখন, একক ভরের কোনো বস্তুকে B বিন্দু হতে A বিন্দুতে আনতে

            কাজের পরিমাণ = প্রাবল্য দূরত্ব =F×AB = r  [ ∵ F=E একক ভরের জন্য]

এটাই হলো A বিন্দু এবং B বিন্দুর বিভব পার্থক্য অর্থাৎ (VAVB)

F×AB=\mathrm{V}_{\mathbf{A}} \mathrm{V}_{\mathbf{B}}

বা, F=\frac{V_{A}-V_{B}}{A B} =\frac{V_{A}-V_{B}}{r}

অর্থাৎ, দূরত্ব সাপেক্ষে বিভবের পরিবর্তনের হারকে প্রাবল্য (Intensity) বলে। ক্ষেত্রের অভিমুখে সরণ AB=dr  হলে এবং A বিন্দুর বিভব \mathrm{V}_{\mathrm{A}}  B বিন্দুর বিভব \mathrm{V}_{\mathrm{B}} হলে, \mathrm{V}_{\mathbf{A}} \mathrm{V}_{\mathbf{B}} =-dV

∴F=-\frac{\mathrm{dV}}{\mathrm{dr}}

এটাই প্রাবল্য(Intensity) এবং বিভবের(Potential) মধ্যে সম্পর্ক।

বিভব ও মহাকর্ষীয় বিভব-এর তফাৎ ( Difference between Potential & Gravitational Potential)

মহাকর্ষ সর্বদা আকর্ষণধর্মী বলে মহাকর্ষীয় বিভব(Gravitational potential) সর্বদা ঋণাত্মক। কিন্তু তড়িৎ এবং চৌম্বক বল আকর্ষণ ও বিকর্ষণ উভধর্মী হওয়ায় বিভব ঋণাত্মক বা ধনাত্মক দুইই হতে পারে। আবার মহাকর্ষীয় বিভৰ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে না। কিন্তু অন্য বিভবগুলি মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।

সম্প্রসারিত কর্মকাণ্ড: পৃথিবীর ব্যাস বরাবর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ পথে একটি বস্তুখও ছেড়ে দিলে তার গতি প্রকৃতি কি হবে ? বস্তু খণ্ডটির অপর প্রান্তে পৌছাতে কত সময় লাগবে?

ধরা যাক, পৃথিবী সুষম ঘনত্ব R-ব্যাসার্ধের একটি গোলক। গোলকটির AB ব্যাস বরাবর একটি ঘর্ষণহীন সুড়ঙ্গ কল্পনা করা হলো। এখন ভরের একটি বস্তুকে AB সুড়ঙ্গের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো এবং কিছুক্ষণ পর বস্তুটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে h দূরত্ব অতিক্রম করে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে r দূরত্বের C অবস্থানে এলো। O বিন্দুকে কেন্দ্র করে OC =r এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি গোলক আঁকা হলো। আমরা জানি, এই অবস্থানে বস্তুটির উপর শুধুমাত্র r ব্যাসার্ধের গোলকটির ভর M’ আকর্ষণ বল প্রয়োগ করে। এই গোলকের বাইরের ভর বস্তুটির উপর কেন্দ্রের দিকে কোনো বল প্রয়োগ করবে না। তাহলে r ব্যাসার্ধটির গোলকের অভ্যন্তরে ভর হলো,

M=\rho V^{\prime} ‘=\rho \frac{4}{3} \pi r^{3}

 

এখানে, V’ হচ্ছে r ব্যাসার্ধের গোলকের আয়তন এবং হচ্ছে পৃথিবীর উপাদানের গড় ঘনত্ব। 

মহাকর্ষীয় বলের সূত্রানুসারে, m ভরের বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বল,

F=-\frac{\mathrm{GmM}^{\prime}}{r^{2}} =\frac{G m \rho 4 \pi r^{3}}{3 r^{2}} =- \left(\frac{4 \pi m G \rho}{3}\right) r (এখানে ঋণাত্মক চিহ্ন আকর্ষণ বল বোঝায়)

  1. \frac{4 \pi m G \rho}{3}= k = ধ্রুবক

∴F=-kr

সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, বল, সরণ r এর সমানুপাতিক কিন্তু বিপরীতমুখী অর্থাৎ বস্তুটির গতি সরল দোলন গতি। অর্থাৎ বস্তুটি পৃথিবীর কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে সরল দোলন গতিতে দুলতে থাকবে।

এখন এই সরল দোলন গতির পর্যায়কাল হচ্ছে, 

T=\sqrt{\frac{m}{k}} =2 \pi\sqrt{\frac{3 m}{4 \pi m G \rho}} =\sqrt{\frac{3 \pi}{G \rho}}

পৃথিবীর গড় ঘনত্ব, ρ=5.5×103 k g m^{-3}  এবং মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G=6.657×10-11 N k g m^{-3}

∴T=\sqrt{\frac{3 \pi}{G \rho}} =\sqrt{\frac{3 \times \pi}{6.657 \times 10^{-11} \mathrm{~N} \mathrm{~m}^{2} \mathrm{~kg}^{-2} \times 5.5 \times 10^{3} \mathrm{~kg} \mathrm{~m}^{-3}}} =5067 s =84.46 min

সুতরাং বস্তুটির এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে এর অর্ধেক সময় অর্থাৎ \frac{84.46}{2} min=42.2 min সময় লাগবে।

বস্তুটির অপর প্রান্তে পৌঁছানোর সময় বস্তুর ভরের উপর নির্ভরশীল নয়।

উল্লেখ্য যে, এ সমস্যাটি একেবারেই কাল্পনিক। পৃথিবীর ব্যাস বরাবর কোনো সুড়ঙ্গ তৈরি বাস্তবে একেবারেই সম্ভব নয়।

ক্রিয়াকর্ম: একক ভরের কোনো বস্তুকে অসীম দুরত্ব থেকে কোনো বিন্দুতে আনতে কত কাজ ঋণাত্মক হয় কেন? রকেট ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরের দিকে উঠতে থাকলে, রকেটের অবস্থান অনুসারে পৃথিবীর জন্য বিভবের মান বাড়তে থাকে না কমতে থাকে? পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোনো বিন্দুতে মহাকর্ষীয় বিভব (Gravitational Potential) ঐ বিন্দুর অবস্থানের উপর নির্ভর কী? ব্যাখ্যা কর।

১ম অংশ: এক্ষেত্রে যে কাজ সম্পাদিত হয় তা বস্তুটির উপর আকর্ষণ বলই করে থাকে ও বাইরের কোনো শক্তি করে না। তাই কৃত কাজ ঋণাত্মক হয়।

২য় অংশ: রকেট যত উপরে উঠবে, বিভবের মান তত বাড়বে। কারণ এই বিভব V=-\frac{G M}{r}  অর্থাৎ r বাড়লে V -এর মান বাড়তে থাকবে। অসীম হলে V -এর মান সর্বোচ্চ বা শূন্য হবে।

৩য় অংশ: পৃথিবীকে একটি নিরেট গোলক ধরে এর অভ্যন্তরে কেন্দ্র হতে r দূরত্বে কোনো বিন্দুতে বিভব  V=-GM× \frac{3 R^{2}-r^{2}}{2 R^{3}} যেখানে M এবং R যথাক্রমে পৃথিবীর ভর ও ব্যাসার্ধ। তাই r-এর মান পরিবর্তনে বিভবের মান পরিবর্তিত হবে।

মহাকর্ষ সূত্রের প্রয়োগ (Use of Gravitation Law)

বিভিন্ন জায়গায় বস্তুর ভর অপরিবর্তিত থাকলে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তিত হয়। ফলে বস্তুর ওজন বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন হয়। অভিকর্ষ বলের প্রভাবে এবং অবস্থানের তারতম্যের কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণসহ  গোলকের ভিতরে ও বাইরে মহাকর্ষ বিভব ও প্রবল্যের মানের তারতম্য ঘটে। 

কোনো সুষম নিরেট গোলক বা সুষম গোল খোলকের সমস্ত ভর এদের নিজ নিজ কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত আছে ধরে নিয়ে ঐ গোলক বা গোলকে অবস্থিত কণার উপর মহাকর্ষ সূত্র ব্যবহার করে আকর্ষণ বল নির্ণয় করা যায়।

সুষম গোলাকার খোলকের ভেতর অবস্থিত কণার উপর কোনো আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে না। কোনো নিরেট গোলকের জন্য অন্য কোনো বিন্দুতে মহাকর্ষ সূত্র প্রয়োগ করতে গেলে অর্থাৎ বিভব ও প্রাবল্যসহ মহাকর্ষ বল নির্ণয় করতে গেলে তিনটি ঘটনা ঘটতে পারে।

(I)  বিন্দু গোলকের অভ্যন্তরে অবস্থিত হতে পারে।

(II) বিন্দু গোলকের উপরে অবস্থিত হতে পারে।

(III) বিন্দু গোলকের বাইরে অবস্থিত হতে পারে।