পুরুষ ও উপসর্গ-অনুসর্গ
পুরুষ একটি পারিভাষিক শব্দ। ব্যাকরণ এ যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, অর্থাৎ যে কাজ করে বা বাক্যে কর্তা হয়, তাকে পুরুষ (Person) বলে।
ব্যাকরণে পুরুষ তিন প্রকার। যথা:
- উত্তম পুরুষ (1st Person)
- মধ্যম পুরুষ (2ndPerson)
- নাম পুরুষ (3rd Person)
উত্তম পুরুষ (1st Person)
স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ। আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের ইত্যাদি সর্বনাম শব্দ উত্তম পুরুষ।
মধ্যম পুরুষ (2nd Person)
প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, আপনি, আপনারা, আপনার, আপনাদের প্রভৃতি সর্বনাম শব্দ মধ্যম পুরুষ।
নাম পুরুষ (3rd Person)
অনুপস্থিত অথবা পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ। সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, অমল, কমল, স্বর্ণা, মিনা প্রভৃতি নাম পুরুষ।
নাম পুরুষের বিশেষ ব্যবহার (Special Use of 3rd Person):
- উত্তম পুরুষের ক্ষেত্রে: এ দাসের বিনীত নিবেদন…। অধমের নিবেদন…। বান্দা বেঁচে থাকতে হুজুরের গায়ে আঁচড়টি লাগতে দেব না।
- মধ্যম পুরুষের ক্ষেত্রে: বান্দা বেঁচে থাকতে হুজুরের গায়ে আঁচড়টি লাগতে দেবে না।
পুরুষের রূপ (Forms of Person):
- উত্তম পুরুষ (1st Person)
- মধ্যম পুরুষ (2nd Person)
- নাম পুরুষ (3rd Person)
সম্ভ্রমাত্মক রূপ:
- মধ্যম পুরুষ
- নাম পুরুষ
তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠতাজ্ঞাপক রূপ:
- নাম পুরুষ (3rd Person)
উপসর্গ (Prefix)
বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না,এগুলো অন্য শব্দের আগে বসে এই শব্দগুলোকে উপসর্গ বলে।
ভাষায় ব্যবহৃত অব্যয়সূচক শব্দাংশের নাম উপসর্গ
উপসর্গের উদ্দেশ্যগুলো হলো:
- নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি হয়।
- শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয়।
- শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে।
- শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটে।
- শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
- উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই।
- উপসর্গ অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা থাকে।
উপসর্গের প্রকারভেদ ( Types of Suffix)
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার উপসর্গ দেখা যায়:
- বিদেশি উপসর্গ
- তৎসম / সংস্কৃত
- বাংলা
বাংলা উপসর্গ মোট ২১টি।
সংস্কৃত উপসর্গ
- সংস্কৃত উপসর্গও তৎসম শব্দের আগে বসে শব্দের নতুন রূপে অর্থের সংকোচন,সম্প্রসারণ করে থাকে।
- তৎসম উপসর্গ ২০টি।
বিদেশি উপসর্গ
- আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি – এসব ভাষার বহু শব্দ দীর্ঘকাল ধরে বাংলা ভাষায় প্রচলিত রয়েছে।
- কতগুলো খাঁটি উচ্চারণে আবার কতগুলো বিকৃত উচ্চারণে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। এ সঙ্গে কতগুলো বিদেশি উপসর্গও বাংলায় চালু রয়েছে।
- ফারসি উপসর্গ: ১০ টি
- আরবি উপসর্গ: ০৪ টি
- ইংরেজি উপসর্গ ০৪টি
- উর্দু-হিন্দি উপসর্গ: ০১ টি
অনুসর্গ (Postposition)
বাংলা ভাষায় যে অব্যয় শব্দগুলো কখনো স্বাধীন পদরূপে, আবার কখনো শব্দবিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাদের অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলা হয়।
অনুসর্গের প্রয়োগ (Uses of Postposition):
- বিনা/বিনে কর্তৃকারকের সঙ্গে- তুমি বিনা/বিনে আমার কে আছে?
- বিনি করণ কারকের সঙ্গে- বিনি সুতায় গাঁথা মালা।
- বিহনে উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
- সহ সহগামিতা অর্থে- তিনি পুত্রসহ উপস্থিত হলেন।
- সহিত সমসূত্রে অর্থে- শত্রুর সহিত সন্ধি চাই না।
- সনে বিরুদ্ধগামিতা অর্থে- দংশনক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।
- সঙ্গে তুলনায়- মায়ের সঙ্গে এ মেয়ের তুলনা হয় না।
- অবধি পর্যন্ত অর্থে- সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করব।
- পরে স্বল্প বিরতি অর্থে- এ ঘটনার পরে আর এখানে থাকা চলে না।
- দীর্ঘ বিরতি অর্থে- শরতের পরে আসে বসন্ত।
- পানে প্রতি, দিকে অর্থে- ঐ তো ঘর পানে ছুটেছেন।
- শুধু তোমার মুখের পানে চাহি বাহির হনু।
- মতো ন্যায় অর্থে- বেকুবের মতো কাজ করো না।
- তরে মতো অর্থে- এ জন্মের তরে বিদায় নিলাম।
- পক্ষে সক্ষমতা অর্থে- রাজার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।
- সহায় অর্থে- আসামির পক্ষে উকিল কে?
- মাঝে মধ্যে অর্থে- সীমার মাঝে অসীম তুমি।
- একদেশিক অর্থে- এ দেশের মাঝে একদিন সব ছিল।
- ক্ষণকাল অর্থে – নিমেষ মাঝেই সব শেষ।
- মাঝারে ব্যাপ্তি অর্থে- আছ তুমি প্রভু, জগৎ মাঝারে।
- কাছে নিকটে অর্থে- আমার কাছে আর কে আসবে?
- কর্মকারকে ‘কে’ বোঝাতে- রাখাল শুধায় আসি ব্রাহ্মণের কাছে।
- প্রতি প্রত্যেক অর্থে- মণপ্রতি পাঁচ টাকা লাভ দেব।
- দিকে বা ওপর অর্থে- নিদারুণ তিনি অতি অতি, নাহি দয়া তব প্রতি।
- হেতু নিমিত্ত অর্থে- কী হেতু এসেছ তুমি, কহ বিস্তারিয়া।
- জন্যে নিমিত্ত অর্থে- এ ধন-সম্পদ তোমার জন্যে।
- সহকারে সঙ্গে অর্থে- আগ্রহ সহকারে কহিলেন।
- বশত কারণে অর্থে- দুর্ভাগ্যবশত সভায় উপস্থিত হতে পারিনি।