10 Minute School
Log in

ফটো তড়িৎ ক্রিয়া (Photo electric effect)

ফটো তড়িৎ ক্রিয়া (Photo electric effect)

যে ধাতব পদার্থের ওপর যথোপযুক্ত কম্পাঙ্কের দৃশ্যমান আলোক কিংবা অন্য কোনো বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ আপতিত হলে ওই পদার্থ হতে ইলেকট্রন নির্গত হয়। এই ঘটনাকে আলোক তড়িৎ কিয়া বা ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট (Photo electric effect) বলে।

আলোক রশ্মি যতক্ষণ পর্যন্ত ধাতব পদার্থে আপতিত হয়, ততক্ষণই ইলেকট্রন নির্গত হয়। ধাতব পদার্থ হতে নির্গত ইলেকট্রনকে বলা হয় ফটো-ইলেকট্রন (Photo-electron) বা আলোক ইলেকট্রন। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, সিজিয়াম, লিথিয়াম, রুবিডিয়াম প্রভৃতি ক্ষারধর্মী পদার্থের ওপর দৃশ্যমান আলোক আপতিত হলে অধিক পরিমাণে ফটো ইলেকট্রন নির্গত হয়। অর্থাৎ ক্ষারধর্মী পদার্থের আলোক তড়িৎ সংবেদনশীলতা বেশি। তবে এক্স-রশ্মি বা গামা-রশ্মির প্রভাবে সব ধাতব পদার্থে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।

আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেয়া যায়।

ধাতব পদার্থের ওপর উপযুক্ত কম্পাঙ্ক বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক আপতিত হলে ওই পদার্থ হতে ইলেকট্রন নির্গত হয়। এই পদ্ধতিকে আলোক-তড়িৎ নির্গমন এবং এই ক্রিয়াকে আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া বা আলোক বিদ্যুৎ ক্রিয়া বা ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট(Photo electric effect) বলে। আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার প্রভাবে নির্গত ইলেকট্রনকে আলোক ইলেকট্রন বা ফটো ইলেকট্রন, ইলেকট্রনের নিঃসরণকে আলোক তড়িৎ নিঃসরণ এবং ইলেকট্রনের নিঃসরণের ফলে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয় তাকে আলোক তড়িৎ প্রবাহ বা ফটো কারেন্ট (Photo-current) বলে।

আলোক তীব্রতা ও ফটো ইলেকট্রন নিঃসরণের লেখচিত্র  দেখানো হলো। লক্ষনীয় যে ফটো ইলেকট্রন নিঃসরণ আলোক তীব্রতার ওপর নির্ভর করে না।

Photo-electric-effect

আলোক তড়িৎ ক্রিয়া আবিষ্কার (Discovery of photo electric effect)

1873 খ্রিষ্টাব্দে ডব্লিউ. স্মিথ (W. Smith) নামক একজন টেলিফোন অপারেটর আলোক তড়িৎ ক্রিয়া আবিষ্কার করেন। ট্রান্স আটলান্টিক ক্যাবল-এর বৈদ্যুতিক রোধ পরিমাপের যন্ত্রে তিনি সেলিনিয়াম রোধক ব্যবহার করেন। পরীক্ষাকালে তিনি লক্ষ্য করেন যে সূর্যের আলোক রোধকের ওপর আপতিত হওয়ায় বর্তনীর বিদ্যুৎ প্রবাহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

1887 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী হার্জ (Hertz) লক্ষ করেন যে, দুটি বিদ্যুৎদ্বারের মধ্যবর্তী ফাকে বা ঋণ বিদ্যুৎদ্বারে অতি বেগুনি রশ্মি আপতিত হলে এদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ (sparking) চলতে থাকে। 1888 খ্রিস্টাব্দে হলওয়াচ (Hallwachs) এবং তার সঙ্গীরা গবেষণার সময় লক্ষ করেন যে অতি বেগুনি রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত পাতের ওপর আপতিত হলে তা দ্রুত অচার্জিত হয়ে পড়ে এবং ঋণাত্মক আধানযুক্ত পাতের ওপর আপতিত হলে এই ক্রিয়া সংঘটিত হয়। 1899 খ্রিস্টাব্দে জে. জে. থমসন এবং 1900 খ্রিস্টাব্দে লিনার্ড প্রমাণ করেন যে, আলোকের প্রভাবে ধাতব পাত হতে নির্গত কণাগুলো ইলেকট্রন ছাড়া আর কিছুই নয়।

আলোক তড়িৎ ক্রিয়া প্রদর্শন (Demonstration of photo electric effect)

একটি কোয়ার্জ (Quartz) নল, দস্তার দুটি পাত, ক্যাথোড পাত ও অ্যানোড পাত, অ্যামিটার, চাৰি, একটি ব্যাটারি ও একটি পরিবর্তনশীল রোধ নিয়ে পরীক্ষণটি সম্পন্ন কর।

Photo-electric-effect

এই পরীক্ষায় C একটি বায়ুশূন্য কোয়ার্টজ (Quartz) নল। নলের মধ্যে দস্তার তৈরি দুটি পাত রয়েছে। একটি ক্যাথোড প্লেট A, অপরটি অ্যানোড প্লেট BA পাতের ওপর সোডিয়াম, পটাসিয়াম, লিথিয়াম ইত্যাদি ক্ষারকীয় পদার্থের প্রলেপ থাকে। উক্ত পরীক্ষায় A পাতের ওপর লিথিয়াম ডাই-অক্সাইড Li_2O এর একটি প্রলেপ আছে। A পাতকে ব্যাটারির ঋণপাত এবং B পাতকে একটি অ্যামিটার ও পরিবর্তনশীল রোধ R-এর মাধ্যমে ব্যাটারির ধনপাতের সাথে যুক্ত করা হয় (চিত্র ৮.১৩)। R-এর মান কম-বেশি করে পাত দুটির মধ্যে বিভব পার্থক্য নিয়ন্ত্ৰণ করা হয়।

এখন A পাতের ওপর আলোক আপতিত হলে তা হতে ইলেকট্রন নির্গত হবে। পাত ধনাত্মক হওয়ায় ইলেকট্রন আকৃষ্ট হবে এবং বর্তনীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলবে। ফলে অ্যামিটার বিক্ষেপ দেখাবে। আলোক না পড়লে অ্যামিটারের কোনো ফটো ইলেকট্রন বিক্ষেপ হবে না। তড়িৎ প্রবাহের মাত্রা আপতিত আলোকের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে।

প্রাবল্য বৃদ্ধি পেলে তড়িৎ প্রবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আবার প্রাবল্য স্থির রেখে বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি বৃদ্ধি করলে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা বৃদ্ধি পাবে; তবে একটি নির্দিষ্ট বিভব পার্থক্য প্রয়োগে তড়িৎ প্রবাহ স্থির মানে পৌছাবে। এরপর বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি করলেও প্রবাহ মাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।

এখন A-কে ধন বিভবে ও B-কে ঋণ বিভবে রাখি। A-এর ওপর আলোক আপতিত হলে নির্গত ইলেকট্রন A দ্বারা আকৃষ্ট হবে এবং প্রবাহমাত্রা হ্রাস পাবে। A-এর ধন বিভব বৃদ্ধি করলে প্রবাহমাত্রা কমতে থাকবে এবং একটি নির্দিষ্ট বিভবে প্রবাহমাত্র শূন্য হবে। এই বিভবকে নিবৃত্তি বিভব (Stopping Potential) বলে। নিবৃত্তি বিভব আপতিত আলোকের প্রাবল্যের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু আপতিত আলোকের কম্পাঙ্কের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া নিঃসারক (emitter) পদার্থের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। পরীক্ষার সাহায্যে দেখা গেছে যে আপতিত আলোকের কম্পাক একটি মানের নিচে হলে তা ধাতু হতে ইলেকট্রন নির্গত করতে সক্ষম হয় না। এই কম্পাঙ্ককে ধার কম্পাঙ্ক বা সূচন কম্পাঙ্ক (Threshold frequency) বলে।

প্রারম্ভ ৰা সূচন কম্পাঙ্ক(Threshold frequency)

প্রত্যেক ধাতুর ক্ষেত্রে একটি ন্যূনতম কম্পাঙ্ক আছে যার চেয়ে কম কম্পাঙ্কৰিশিষ্ট কোনো আলো ওই ধাতু থেকে ইলেকট্রন নির্গত করতে পারে না। ওই ন্যূনতম কম্পাঙ্ককে ওই ধাতুর প্রারম্ভে বা সূচন কম্পাঙ্ক(Threshold frequency) বলে।

সূচন কম্পাঙ্ক, \vartheta_{0}=\frac{W_{0}}{h} . এখানে W_0 = কার্য অপেক্ষক, h = প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক।

নিবৃত্তি বিভব (Stopping Potential)

ক্যাথোড প্লেটের সাপেক্ষে অ্যানোড প্লেটে যে ন্যূনতম ঋণ বিভব দিলে আলোক তড়িৎ প্রবাহমাত্রা সদ্য বন্ধ হয়ে যায়, সেই বিভবকে নিবৃত্তি বিভব বলা (Stopping Potential) হয়।

কার্য অপেক্ষক

কোনো ধাতব পৃষ্ঠ হতে শূন্য বেগসম্পন্ন ইলেকট্রন নির্গত করতে যতটুকু শক্তির প্রয়োজন তাকে ওই ধাতুর কাৰ্য অপেক্ষক বলে। কাৰ্য অপেক্ষক, W =h \vartheta এখানে   h=প্ল্যাঙ্কের ধুবক, \vartheta = ফোটনের কম্পাঙ্ক।

আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of photo electric effect)

আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে – 

(১) আলোক তড়িৎ ক্রিয়া একটি তাৎক্ষণিক ঘটনা অর্থাৎ আলো আপতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইলেকট্রন নির্গত হয়। আলোক রশ্মির আপতিত ও ইলেকট্রন নিঃসরণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান 10^{-9} \mathrm{~s} বা তারও কম।

(২) প্রত্যেক ধাতু হতে আলোক ইলেকট্রন নির্গমনের জন্য আপতিত রশ্মির একটি ন্যূনতম কম্পাঙ্ক থাকে যার নাম প্রারম্ভ কম্পাঙ্ক।

(৩) বিভিন্ন ধাতুর ক্ষেত্রে প্রারম্ভ কম্পাঙ্ক বিভিন্ন।

(৪) আলোক ইলেকট্রনের বেগ কোনো নির্দিষ্ট শীর্ষ মানের মধ্যে হতে পারে।

(৫) আলোক ইলেকট্রনের সর্বোচ্চ গতিবেগ আপতিত রশ্মির কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক।

(৬) আলোক ইলেকট্রন নির্গমনের হার আপতিত আলোকের প্রাবল্যের সমানুপাতিক।

  • এক্স-রশ্মি বা গামা রশ্মি দ্বারা আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ঘটানো সম্ভব কী?

     দৃশ্যমান আলোর ফোটনের শক্তি অপেক্ষাকৃত কম। এই রশ্মি ধাতব পৃষ্ঠে আপতিত হলে ফোটনটি বিলুপ্ত হয় এবং সম্পূর্ণ শক্তি ইলেকট্রন শোষণ করে ধাতু থেকে নির্গত হয়। কিন্তু এ এক্স-রশ্মি বা গামা রশ্মির ফোটনের শকি খুবই বেশি যা ইলেকট্রন সম্পূর্ণ শোষণ করতে পারে না এবং ফোটনও বিলুপ্ত হয় না। এ ঘটনাটি আলোক তড়িৎ ক্রিয়া নয়, কম্পটন ক্রিয়া।