প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Reflex Action)
প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Reflex Action) বলতে উদ্দীপনার আকস্মিকতা এবং তার কারণে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়। হঠাৎ করে আঙ্গুলে সুচ ফুটলে অথবা হাতে গরম কিছু পড়লে আমরা দ্রুত হাতটি উদ্দীপনার স্থান থেকে সরিয়ে নিই, এটি প্রতিবর্তী ক্রিয়ার ফল। আমরা চাইলেও প্রতিবর্তী ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। প্রতিবর্তী ক্রিয়া মূলত সুষুম্নকাণ্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, মস্তিষ্ক দিয়ে নয়। অর্থাৎ যেসব উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্ক দিয়ে না হয়ে সুষুম্নকাণ্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলে।
অসতর্কভাবে সেলাই করার সময় আঙ্গলে সুঁচ ফুটলে তাৎক্ষণিকভাবে হাত অন্যত্র সরে যাওয়ার প্রতিবর্তী ক্রিয়াটি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:
আঙ্গুলে সুচ ফুটার সময় আঙ্গুলের ত্বকে অবস্থিত সংবেদী নিউরন ব্যথার উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এখানে ত্বক গ্রাহক অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
আঙ্গুলের ত্বক থেকে এ উদ্দীপনা সংবেদী নিউরনের অ্যাক্সনের মাধ্যমে স্নায়ুকাণ্ডের ধূসর অংশে পৌছায়।
স্নায়ুকাণ্ডের ধুসর অংশে অবস্থিত সংবেদী নিউরনের অ্যাক্সন থেকে তড়িৎ রাসায়নিক পদ্ধতিতে উদ্দীপনা মধ্যবর্তী বা রিলে নিউরনের মাধ্যমে মোটর বা আজ্ঞাবাহী স্নায়ু কোষের ডেনড্রাইটে প্রবেশ করে।
আজ্ঞাবাহী স্নায়ুর অ্যাক্সনের মাধ্যমে এ উদ্দীপনা পেশিতে প্রবেশ করে।
উদ্দীপনা পেশিতে পৌঁছালে পেশির সংকোচন ঘটে। ফলে উদ্দীপনাস্থল থেকে হাত দ্রুত আপনা-আপনি সরে যায়।
প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral Nervous System)
মস্তিষ্ক থেকে 12 জোড়া এবং মেরুমজ্জা বা সুষুম্নাকাণ্ড থেকে 31 জোড়া স্নায়ু বের হয়ে আসে এবং সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর শাখায় বিভক্ত হয়ে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোকে একত্রে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র বলে। মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন করোটিক স্নায়ু চোখ, নাক, কান, জিহ্বা, দাঁত, মুখমণ্ডল, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী প্রভৃতি অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মেরুরজ্জু থেকে উদ্ভূত স্নায়ুগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চালনা করে এবং দেহের বাকি অংশ থেকে যাবতীয় অনুভূতি মস্তিষ্কে বয়ে নিয়ে যায়।
স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র (Autonomic nervous system)
যেসব অঙ্গের উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সেগুলো স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। দেহের ভিতরের অঙ্গগুলো, যেমন: হৃৎপিণ্ড, অন্ত্র, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদির কাজ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে পরিচালিত হয়। এসব তন্ত্রের কার্যকারিতার উপর মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জর প্রত্যক্ষ প্রভাব না থাকায় এরা অনেকটা স্বাধীন এবং স্বতন্ত্রভাবে আপন কর্তব্য সম্পাদন করে।
উদ্দীপনা সঞ্চালন (Transmission of Impulse)
পরস্পর সংযুক্ত অসংখ্য নিউরন তন্তুর ভিতর দিয়ে উদ্দীপনা বা তাড়না শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়। প্রতি সেকেন্ডে এর বেগ প্রায় 100 মিটার তবে স্নায়ুর ধরনভেদে এর তারতম্য হতে পারে। পরিবেশ থেকে যে সংকেত স্নায়ুর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে তাকে স্নায়ু তাড়না বা উদ্দীপনা বলে। নিউরনের কার্যকারিতার ফলে উদ্দীপনা প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলোতে সঞ্চালিত হয়। এটি মাংসপেশিতে সঞ্চালিত হলে পেশি সংকুচিত হয়ে সাড়া দেয়। ফলে প্রয়োজনমতো দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালিত হয়। এই তাড়না গ্রন্থিতে পৌঁছালে সেখানে রস ক্ষরিত হয়। অনুভূতিবাহী স্নায়ু উত্তেজিত হলে সেই উত্তেজনা। মস্তিষ্কের দিকে অগ্রসর হয়ে যন্ত্রণাবোধ, স্পর্শজ্ঞান, দর্শন এ ধরনের অনুভূতি উপলব্ধি করায়।
স্নায়ু তাড়না কীভাবে কাজ করে তা একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যায়। মনে কর, শিক্ষক শ্রুতলিপি দিচ্ছেন এবং তুমি লিখছ। এক্ষেত্রে পুস্তক থেকে প্রতিফলিত আলো শিক্ষকের চোখের রেটিনায় উদ্দীপনা জাগালে স্নায়ু তাড়নার সৃষ্টি হয়। এটা চোখের স্নায়ু দিয়ে মস্তিষ্কের দৃষ্টিকেন্দ্রে পৌঁছে। সেখান থেকে দর কাজ এ তাড়না পর পর চিন্তাকেন্দ্র, স্মৃতিকেন্দ্র প্রভৃতি হয়ে মুখমণ্ডলের ঐচ্ছিক পেশিকে নির্দেশ দেয়। মুখের প্রত্যক্ষ পেশি সংকুচিত প্রসারিত হয়ে হয়ে সাড়া দেয়। এখানে শিক্ষকের কথা বলার পেশিগুলো হলো প্রধান সাড়া অঙ্গ।
মানব হরমোন (Human Hormones)
১) পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland) :
অবস্থান (Location) : মস্তিষ্ক, একে হাইপোফাইসিস গ্রন্থি বলে।
হরমোন (Hormones) :
- গোনাডট্রপিন
- এডরেনোকর্টিকোট্রপিন
iii) থাইরোট্রপিন
- সোমাটোট্রপিন
- প্রোল্যাকটিন
কাজ (Function) :
- জনন গ্রন্থি বৃদ্ধি ঘটায়।
- মাতৃদেহে স্তন গ্রন্থির বৃদ্ধি ঘটায়।
iii) মাতৃদেহে দুগ্ধ ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
২) থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid gland) :
অবস্থান (Location) : শ্বাসনালী/ট্রাকিয়া।
হরমোন (Hormones) : থাইরক্সিন, ক্যালসিটোনিন।
কাজ (Function) :
- দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি।
- যৌন লক্ষন প্রকাশ করে।
iii) বিপাকে সাহায্য করে।
- ক্যালসিয়াস বিপাকে জড়িত।
৩) প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি (Parathyroid gland) :
অবস্থান (Location) : থাইরয়েড গ্রন্থির পিছনে।
হরমোন (Hormone) : প্যারাথাইরক্সিন
কাজ (Function) : ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
৪) এডরেনাল গ্রন্থি (Adrenal gland) :
অবস্থান (Location) : বৃক্ক বা কিডনী।
হরমোন (Hormone) :এডরেনালিন।
কাজ (Function) :
- অত্যাবশ্যকীয় বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
- যৌনাঙ্গ বৃদ্ধি করে।
- যৌন লক্ষন প্রকাশ করে।
৫) আইলেটস অফ ল্যাংগারহ্যানস (Islets of Langerhans) :
অবস্থান (Location) : অগ্নাশয়।
হরমোন (Hormones) : ইনসুলিন ও গ্লুকাগন।
কাজ (Function) :
- শর্করা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
- রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৬) থাইমাস গ্রন্থি (Thymus gland) :
অবস্থান (Location) : গ্রিবা অঞ্চলে।
হরমোন (Hormone) :থাইমোসিন।
কাজ (Function) :
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশ করে।
- শিশু কালে এই গ্রন্থি বিকশিত থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে ছোট হয়ে যায়।
৭) গোনাড বা জনন অঙ্গ গ্রন্থি :
অবস্থান (Location) : গোনাড/জনন গ্রন্থি।
হরমোন (Hormone) : ছেলেদের শুক্রাশয় মেয়েদের ডিম্বাশয়।
কাজ (Function) :
- জনন অঙ্গের বৃদ্ধি।
- যৌন আচরন নিয়ন্ত্রন।
- জনন চক্র নিয়ন্ত্রন।