রাইবোসোম, গলগি বস্তু, লাইসোজোম (Ribosome, Golgi Body, Lysosome)
১. রাইবোসোম (Ribosome)
গঠন ও ধরণ (Structure and Type) :
প্রকারভেদ (Types) : আকার ও সেডিমেন্টেশন সহগ (কো-এফিসিয়েন্ট) হিসেবে রাইবোসোম(Ribosome) মূলত 70 S এবং 80 S এই দুই প্রকার। 70 S রাইবোসোম (Ribosome) থাকে আদিকোষী জীবে । আর 80 S রাইবোসোম থাকে প্রকৃতকোষী জীবে। 70 S রাইবোসোম, 50 S এবং 30 S এই দুই সাব-ইউনিটে বিভক্ত থাকে। 80 S রাইবোসোম (Ribosome) , 60 S এবং 40 S এই দুই সাব-ইউনিটে বিভক্ত থাকে। প্রোটিন সংশ্লেষণের সময় আদি কোষে 50 S ও 30 S সাব-ইউনিট একত্রিত হয়ে 70 S একক গঠন করে এবং প্রকৃত কোষে 60 S ও 40 S সাব-ইউনিট একত্রিত হয়ে 80 S একক গঠন করে।
আকৃতি ও ভৌত গঠন (Shape and Physical Structure) : স্বাভাবিক অবস্থায় রাইবোসোম সাব-ইউনিটগুলো পৃথক থাকে। কেবলমাত্র প্রোটিন সংশ্লেষণের সময় এরা একত্রিত হয়। এ সময় রাইবোসোমে ৪টি স্থান লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হলো অ্যামাইনোঅ্যাসাইল বা A স্থান, পেপটাইডিল বা P স্থান, নির্গমন বা E স্থান এবং mRNA সংযুক্তি স্থান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুইয়ের অধিক রাইবোসোম একটি mRNA সূত্র দ্বারা সংযুক্ত হয়ে পলিরাইবোসোম বা পলিজোম গঠন করে।
রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) : রাইবোসোমের প্রধান উপাদান হচ্ছে প্রোটিন ও RNA। এদের অনুপাত প্রায় ১ : ১। 70 S (রাইবোসোমে রয়েছে 23 S, 16 S ও 5 S মানের ৩টি rRNA অণু এবং ৫২ প্রকারের প্রোটিন অণু। অপরদিকে 80 S রাইবোসোমে রয়েছে 28 S, 18 S, 5.8 S ও 5 S মানের ৪টি rRNA অণু এবং ৮০ প্রকারের প্রোটিন অণু। এছাড়া এতে অল্প পরিমাণে ধাতব আয়ন, যেমন-Mg^{++}, Ca^{++}, Mn^{++} ইত্যাদি থাকে।
কাজ : রাইবোসোমের প্রধান কাজ হলো প্রোটিন সংশ্লেষণ (তৈরি) করা। তাই রাইবোসোমকে কোষের প্রোটিন ফ্যাক্টরি বলা হয়। এরা সাইটোক্রোম উৎপন্ন করে যার কোষীয় শ্বসনে ইলেকট্রন পরিবহন করে। গ্লুকোজের ফসফোরাইলেশন এবং স্নেহ পদার্থের বিপাক রাইবোসোমে সংঘটিত হয়। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম গলগি বডি, লাইসোসোম, প্লাজমামেমব্রেন বা কোষের বাইরে ব্যবহার্য প্রোটিন রাইবোসোমে উৎপন্ন হয়। সাইটোপ্লাজম, মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টে ব্যবহার্য প্রোটিন মুক্ত রাইবোসোমে তৈরি হয়।
২. গলগি বস্তু (Golgi Body)
গঠন ও ধরণ (Structure and Type) :
ভৌত গঠন (Physical Structure) : সাধারণত এরা একক পর্দা দ্বারা আবৃত নালিকা গহ্বরের মতো। গলগি বডিতে (Golgi Body) তিন ধরনের গঠনগত উপাদান লক্ষ্য করা যায়। গলগি যন্ত্রের কতগুলো চ্যাপ্টা থলে বা চৌবাচ্চা আকৃতির গঠনসমূহকে সিস্টার্নি (এক বচনে-সিস্টার্না) বলে এবং কিছুটা অনিয়মিত নালিকা ও ভেসিকলসমূহকে ট্রান্স-গলগি নেটওয়ার্ক বলে। সিস্টার্নি একসাথে গাদা করে থাকে। প্রতিটি স্বতন্ত্র গাদাকে বলা হয় গলগি বডি বা ডিকটায়োসোম (dictyosome)। গলগি যন্ত্রের প্লাজমামেমব্রেনের কাছাকাছি অংশকে বলা হয় ট্রান্স-ফেইস (trans-face)। আর কোষের কেন্দ্রের দিকের অংশকে বলা হয় সিজ-ফেইস (cis-face)। ট্রান্সফেইস এর শেষ সিস্টার্নাকে বলা হয় ট্রান্সসিস্টার্না (transcisterna) এবং সিজ-ফেইসের শেষ সিস্টার্নাকে বলা হয় সিজ-সিস্টার্না (cis-cisterna), মধ্যভাগেরগুলোকে বলা হয় মেডিয়্যাল সিস্টার্নি (medial cisternae)। সিস্টার্নির পার্শ্বদেশে অবস্থিত গোলাকার বৃহৎ তলের মতো গঠনগুলোকে ভ্যাকুওল বলে।
রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) : গলগি বডি (Golgi Body) আবরণীতে ৬০ ভাগ প্রোটিন এবং ৪০ ভাগ লিপিড থাকে। এছাড়া এতে ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন-K ও ক্যারোটিনয়েড থাকে। বিভিন্ন ধরনের এনজাইম দ্বারা এদের থলিগুলো পূর্ণ থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমগুলো হলো- ADPase, ATPase, CTPase, TTPase, NADH সাইটোক্রোম ও গ্লুকোজ-৬-ফসফোটেজ।
উৎপত্তি (Origin) : সম্ভবত মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম হতে উৎপত্তি হয়।
কাজ :
- লাইসোসোম ও ভিটামিন তৈরি করা।
- অ-প্রোটিন জাতীয় পদার্থের সংশ্লেষণ করা।
- কিছু এনজাইম ও প্রাণরস নির্গম করা
- কোষ বিভাজনকালে কোষপ্লেট তৈরি করা।
- প্রোটিন, হেমিসেলুলোজ, মাইক্রোফাইব্রিল তৈরি করা।
- কোষস্থ পানি বের করা।
- এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে প্রস্তুতকৃত দ্রব্যাদি ঝিল্লিবদ্ধ করা।
- বিভিন্ন পলিস্যাকারাইড সংশ্লেষণ ও পরিবহনে অংশগ্রহণ করা। তাই উদ্ভিদ কোষে গলগি বডিকে কার্বোহাইড্রেট ফ্যাক্টরি বলা হয়।
- মাইটোকন্ড্রিয়াকে ATP উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা।
- প্রোটিন ও Vit-C সঞ্চয় করা।
- কোষ প্রাচীর গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ ক্ষরণ করা।
- শুক্রাণু গঠনে সহায়তা করা। লিপিড সংশ্লেষণ ও প্রোটিন ক্ষরণের সাথে জড়িত থাকা।
৩. লাইসোসোম (Lysosome)
গঠন ও ধরণ (Structure and Type) :
ভৌত গঠন (Physical Structure) : প্রতিটি লাইসোসোম (Lysosome) একটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট আবরণী দ্বারা আবদ্ধ থাকে। ভ্যাকুওল ঘন তরলে পূর্ণ থাকে।
রাসায়নিক গঠন (Chemical Composition) : লাইসোসোম (Lysosome) এর আবরণী ঝিল্লি লিপো-প্রোটিন নির্মিত। ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ অবস্থায় এতে প্রায় ৪০/৫০ ধরনের এনজাইম থাকে। উল্লেখযোগ্য এনজাইমগুলো হলো DNAase, RNAase, অ্যাসিড লাইপেজ, এস্টারেজ, স্যাকারেজ, লাইসোজাইম ইত্যাদি।
কাজ :
- এরা ফ্যাগোসাইটোসিস (Phagocytosis) পদ্ধতিতে জীবাণু ধ্বংস করে।
- বিগলনকারী এনজাইমসমূহকে আবদ্ধ করে রেখে এটি কোষের অন্যান্য অঙ্গাণুকে রক্ষা করে।
- লাইসোসোম অন্তঃকোষীয় পরিপাক কাজে সাহায্য করে।
- কোষ বিভাজনকালে এরা কোষীয় ও নিউক্লীয় আবরণী ভাঙ্গতে সাহায্য করে।
- এরা জীবদেহের অকেজো কোষসমূহকে অটোলাইসিস পদ্ধতিতে ধ্বংস করে বলে এদের আত্মঘাতী থলিকা বা স্কোয়াড বলা হয়।
- এরা কোষে কেরাটিন প্রস্তুত করে।
- ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
- টিস্যু বিগলনকারী অ্যাসিড ফসফেটেজ এনজাইম থাকে।