জলবায়ু পরিবর্তন
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change in Bangladesh)
পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু
- পরিবেশকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
- কোনো স্থানের বাতাসের তাপ, উষ্ণতা, চাপ, আর্দ্রতা, মেঘ, বৃষ্টি, জলীয়বাষ্পের পরিমাণ, বায়ু প্রবাহ প্রভৃতির দৈনন্দিন অবস্থাকে ঐ স্থানের আবহাওয়া বলে।
- কোন একটি অঞ্চলের ৩০/৪০ বছরের গড় আবহাওয়াকে জলবায়ু বলা হয়।
- আবহাওয়া সম্পর্কিত বিজ্ঞান- মেটিওরোলজী।
- বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে।
- বায়ু প্রবাহিত হয়— উচ্চ চাপের স্থান থেকে নিম্নচাপের দিকে।
- বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে বায়ুর চাপ কমে যায়।
- ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে বায়ুচাপ ক্রমশ কমতে থাকে।
- বায়ুচাপ মাপা হয় ব্যারোমিটার দ্বারা।
বাংলাদেশের জলবায়ু
- বাংলাদেশের জলবায়ু- সমভাবাপন্ন।
- বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা- ২৬.০১° সেলসিয়াস।
- বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত – ২০৩ সেন্টিমিটার।
- সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়- সিলেট অঞ্চলে।
- বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস- এপ্রিল ।
- বাংলাদেশের শীতলতম মাস- জানুয়ারি।
- বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর- আগারগাঁও, ঢাকা।
- বাংলাদেশে ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র- ৪টি (চট্টগ্রাম,ঢাকা, রংপুর ও সিলেট)।
- বাংলাদেশে আবহাওয়া স্টেশন— ৪১টি।
- বাংলাদেশের জলবায়ুকে তিনটি ঋতুতে ভাগ করা যায়- গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শীতকাল
বৈশ্বিক উষ্ণতা
- বৈশ্বিক উষ্ণতা বলতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বোঝানো হয়।
- বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পৃথিবীর জলবায়ু ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।
- বৈশ্বিক উষ্ণতার মূল কারণ হচ্ছে- বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। এটি গ্রিন হাউস ইফেক্ট নামেও পরিচিত।
গ্রিন হাউজ গ্যাস
- সুইডিশ রসায়নবিদ আরহেনিয়াস সর্বপ্রথম গ্রিনহাউজ কথাটি ব্যবহার করেন ১৮৯৬ সালে।
- প্রকৃতপক্ষে গ্রিন হাউজ হলো এমন একটি কাঁচের তৈরি এবং শীতপ্রধান দেশে ব্যবহৃত এক ধরনের ঘর যার ভেতরে গাছপালা লাগানো হয়।
- গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি ধরনের প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ হতে বিকিরিত তাপ বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাস দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে আসে এবং ভূপৃষ্ঠকে উষ্ণ রাখে।
এসিড বৃষ্টি
- মূলত সালফার ডাই অক্সাইড এসিড বৃষ্টির প্রধান উপাদান।
ওজোন স্তর
- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ মাইল উপরে বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ওজোন স্তর অবস্থিত।
- ওজোন অক্সিজেনের একটি রূপভেদ, এর সংকেত- O_3
- ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ হিসেবে CFC- কে চিহ্নিত করা হয়।
অতিবেগুনি রশ্মি (UV ray)
- এটি এক ধরনের তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন
মন্ট্রিল প্রটোকল |
- এই চুক্তিতে স্বাক্ষরিত দেশের সংখ্যা ১৯৭টি।
- মন্ট্রিল প্রটোকলের পুরো নাম Montreal Protocol on Substances that Deplete the Ozone Layer
|
কিয়োটো প্রটোকল |
স্বাক্ষরিত হয় জাপানের কিয়োটো শহরে, ১১ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে। ২০১২ সালে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে দ্বিতীয় প্রতিশ্রুত মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। |
ভিয়েনা কনভেনশন |
জাতিসংঘের ওজোন স্তরের সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ বিষয়ক একটি কনভেনশন। |
ধরিত্রী সম্মেলন (The Earth Conference ) |
১৯৯২ সালের ৩-৪ জুন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়- ‘আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত চুক্তি’ (Convention on Climate Change) এবং ‘প্রাণিজগতের বৈচিত্র্য সংক্রান্ত চুক্তি‘ (Convention on Biological Diversity)। |
COP- 21 (Conference of Parties) |
- ২০১৭ সালের ২রা জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন।
- ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনরায় প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
|
পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ
তারিখ |
দিবসের নাম |
তারিখ |
দিবসের নাম |
২ ফেব্রুয়ারি |
বিশ্ব জলাভূমি দিবস |
২৯ জুলাই |
বিশ্ব বাঘ দিবস |
৩ মার্চ |
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস |
৫ জুন |
বিশ্ব পরিবেশ দিবস |
১৪ মার্চ |
আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা দিবস |
২২ এপ্রিল |
বিশ্ব ধরিত্রী দিবস |
২১ মার্চ |
বিশ্ব বন দিবস |
২৭ সেপ্টেম্বর |
বিশ্ব পর্যটন দিবস |
২২ মার্চ |
বিশ্ব পানি দিবস |
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে |
বিশ্ব প্রতিবেশ দিবস |
২৩ মার্চ |
বিশ্ব আবহাওয়া দিবস |
৪ অক্টোবর |
বিশ্ব প্রাণী দিবস |
পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক দশক সমূহ
দশক |
উপজীব্য |
২০০৫-২০১৫ |
‘জীবনের জন্য পানি’ কর্মপরিকল্পনা দশক |
২০১০-২০২০ |
‘খরা ও মরুকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন’ দশক |
২০১১-২০২০ |
আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দশক |
২০১৪-২০২৪ |
‘সবার জন্য টেকসই জ্বালানি’ দশক |
২০১৬-২০২৫ |
জাতিসংঘ ও পুষ্টি উন্নয়ন দশক |
২০১৮-২০২৮ |
‘টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি’ দশক |
২০২১-২০৩০ |
‘ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার’ এর দশক |
বাংলাদেশে অবস্থিত পরিবেশ বিষয়ক সংস্থাসমূহ
- বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট ফোর্স
- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন
- বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (BELA)
- বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা
- পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ
ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) |
সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোনও বলা হয়ে থাকে। সাইক্লোন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে—নিম্নচাপ ও উচ্চ তাপমাত্রা। নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রির মধ্যে কোনো ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় । পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সাইক্লোন বিভিন্ন নামে পরিচিত-
- বাংলাদেশ ও ভারতীয় অঞ্চলে – সাইক্লোন।
- জাপান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে – টাইফুন।
- ফিলিপাইনে – বাগুইড বা বোগিও।
- অস্ট্রেলিয়ায় – উইলী উইলী।
- আমেরিকা ও আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে – হ্যারিকেন।
|
সুনামি (Tsunami) |
- ‘সুনামি’ জাপানি শব্দ, এর অর্থ- পোতাশ্রয়ের ঢেউ।
- সমুদ্র তলদেশে ভূ-কম্পনের ফলে উপরের জলভাগে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়, একে সুনামি বলে।
- সাম্প্রতিককালে ভয়াবহ সুনামি হয় ২০০৪ সালে।
- সাধারণত ৭.৫ মাত্রার ভুমিকম্পের সাথে সুনামি সংঘটিত হয়।
|
বন্যা |
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত হয়—শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যা। |
খরা |
- আফ্রিকার দেশসমূহে খরার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
- খরার প্রভাবে অগ্নিকাণ্ডের উপদ্রব বেড়ে যায়।
- খরা প্রধান অঞ্চলের ফসল- পেঁয়াজ এবং গম।
- বাংলাদেশে খরার জন্য দায়ী – পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট এল-নিনো (El-Nino)।
|
ভূমিকম্প |
- ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের নাম- সিসমোগ্রাফ।
- ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণায়ক যন্ত্রের নাম- রিখটার স্কেল।
- বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ফলে বদলে গিয়েছে- ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ। (১৮৯৭ সালে)
|
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ব্যবহৃত সংকেতসমূহ
নদীবন্দর ও সমুদ্র বন্দরের জন্য সতর্কতা সংকেত আলাদা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ব্যবহৃত সংকেত সর্বমোট ১১টি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রসমূহ
- সার্ক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কেন্দ্র অবস্থিত- নয়াদিল্লি।
- সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (SMRC) অবস্থিত— আগারগাঁও, ঢাকা।
- মহাকাশ গবেষণা এবং দূর অনুধাবন কেন্দ্র (Space Research and Remote Sensing Organization)- SPARRSO বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো: ১৯৯৩ সালে গঠিত হওয়া এই ব্যুরো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন।
- বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র: এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন। এটি বন্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস প্রদান এবং সেটি প্রচারের ব্যবস্থা করে।