শুদ্ধ বানান ও উচ্চারণ
শুদ্ধ বানানের নিয়ম ( Rules of Correct Spelling & Grammar)
- পদাশ্রিত নির্দেশক ‘টি’ ব্যবহারে ‘ই’ কার হবে। যেমন- লোকটি, কাজটি, ছেলেটি, বইটি ইত্যাদি।
- সমাসবদ্ধ পদ একসঙ্গে লিখতে হবে। যেমন- অদৃষ্টপূর্ব, পূর্বপরিচিত, নেশাগ্রস্ত, জ্ঞানসিন্ধু, সংবাদপত্র, সংযতবাক ইত্যাদি।
- গুণ, সংখ্যা বা দূরত্ব বাচক বিশেষণ পদ সবসময় আলাদা বসবে। যেমন- এক জন, দুই দিন।
- যে প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বা না উত্তর দেয়া যায় সেক্ষেত্রে ‘কি’ হবে। হ্যাঁ বা না উত্তর দেয়া না গেলে ‘কী’ হবে।
- লেখক ও কবি নিজেদের নামের বানান যেভাবে লেখেন বা লিখতেন সেভাবেই লেখা হবে। যেমন- শামসুর রাহমান, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, জসীমউদ্দীন, মুনীর চৌধুরী।
- যে সব তৎসম শব্দে ই বা ঈ এবং উ বা উ উভয়ই শুদ্ধ সেইসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার কার চিহ্ন ব্যবহৃত হবে। যেমন- পদবি, কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, চুল্লি, তরণি, ধমনি, উষা, উর্ণা, পল্লি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, লহরি, সরণি ইত্যাদি।
- রেফের পর কোথাও ব্যঞ্জন বর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন- বার্তা, অর্ধ, অর্থ, সূর্য, সৌন্দর্য, গর্জন, কর্তা, কার্তিক, কার্য, ধর্ম, বার্ধক্য, মূর্ছা,কর্দম, কর্তন ইত্যাদি।
- নিশ্চয় অর্থে ব্যবহৃত ই প্রত্যয় শব্দের সঙ্গে কার না বসে পূর্ণবর্ণ বসে। যেমন- আজই।
- তৎসম শব্দের বানানে ণ ব্যবহৃত হবে। যেমন- রামায়ণ, নারায়ণ, রমণী।
- তৎসম শব্দের বানানে ষ ব্যবহৃত হবে। যেমন- ঋষি, কৃষ্ণ, সুষুপ্ত, কষ্ট।
- পারিভাষিক শব্দ অর্থাৎ ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি S বর্ণ বা ধ্বনির জন্য স এবং sh, sion, ssion, tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে। যেমন- কমিশন (Commission), এডমিশন (Admission)।
- আলি এবং অঞ্জলি প্রত্যয় যুক্ত শব্দে ই কার হবে। যেমন- গীতাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি, অর্ঘ্যাঞ্জলি, পুষ্পাঞ্জলি, খেয়ালি, বর্ণালি, রূপালি, গীতালি, মিতালি, হেঁয়ালি ইত্যাদি।
- ক্রিয়াপদের বানানের পদান্তে ও-কার উচ্চারিত হলেও লেখা আবশ্যিক নয়। যেমন- করব, বলব, খাব, পড়ব, যাব, নামব, হল ইত্যাদি।
- আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ও কার যুক্ত করা হবে। যেমন- করানো, বলানো, পড়ানো ইত্যাদি।\
শুদ্ধ – অশুদ্ধ
অশুদ্ধ | শুদ্ধ |
পুণর্গঠন | পুনর্গঠন |
পুণর্বাসন | পুনর্বাসন |
মহিয়সী | মহীয়সী |
কোস্ট | কোষ্ঠ |
শারিরীক | শারীরিক |
দুর্বা | দূর্বা |
দূর্গা | দুর্গা |
পূর্বাহ্ন | পূর্বাহ্ণ |
মধ্যাহ্ণ | মধ্যাহ্ন |
অপরাহ্ন | অপরাহ্ণ |
বিভিষিকা | বিভীষিকা |
পিপিলিকা | পিপীলিকা |
ব্যার্থ | ব্যর্থ |
প্রাতঃরাশ | প্রাতরাশ |
লবন | লবণ |
ঝর্ণা | ঝরনা |
নুতন | নূতন |
নুপুর | নূপুর |
সুসম | সুষম |
উচ্চারণের নিয়ম ( Rules of Pronunciation)
অ-এর উচ্চারণ ( Pronunciation of অ)
- শব্দের প্রথম অক্ষরে যদি অ থাকে এবং পরের অক্ষরে যদি ই, উ, বা য-ফলা না থাকে তবে অ এর স্বাভাবিক উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন- কথা, জমাট, পলাশ।
- যখন নেতিবাচক বা না-অর্থে ‘অ’ বা ‘অন্’ এবং সহার্থে বা সহিত অর্থে ‘স’ সংযুক্ত হয় কখন অবিকৃত ‘অ’ উচ্চারিত হয়। যেমন: অবিচার(অবিচার্), অনিয়ম(অনিয়ম্), অতুল (অতুল্), সঠিক(শঠিক্), সব্যয় (শব্ ব্যায়্) ইত্যাদি।
আ এর উচ্চারণ (Pronunciation of আ)
- শব্দের শুরুতে যুক্ত ব্যঞ্জন জ্ঞ-এর সাথে আ-কার থাকলে আ এর উচ্চারণ অ্যা হয়। যেমন- জ্ঞাত (গ্যাঁতো), জ্ঞান (গ্যাঁন্)।
- য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনের সঙ্গে আ-কার বা আ-ধ্বনির উচ্চারণ প্রায় ক্ষেত্রেই অ্যা হয়। যেমন- খ্যাতি, ব্যাকরণ (ব্যাকরোন্), শ্যালক (শ্যালোক্)।
ঋ এর উচ্চারণ (Pronunciation of ঋ )
- শব্দের গোড়ায় ঋ-বর্ণ থাকলে তার উচ্চারণ রি হয়। যেমন- ঋণ (রিন্), ঋতু (রিতু), ঋষি (রিশি)।
- ব্যঞ্জনের সঙ্গে ঋ-কার যুক্ত হলে আশ্রয়ী ব্যঞ্জনকে দ্বিত্ব উচ্চারণ করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়,তবে তা দ্বিত্ব না করে আলতোভাবে উচ্চারণ করতে হবে। যেমন- আবৃত্তি(আবৃত্ তি), আকৃষ্ট (আকৃশ্টো)।
এ-এর উচ্চারণ (Pronunciation of এ)
- শব্দের গোড়ায় এ বা এ-কারের পর অ বা আ থাকলে এ বা এ-কারের উচ্চারণ অনেক জায়গায় অ্যা হয়। যেমন- এখন (অ্যাখোন্), এমন (অ্যামোন্) বেটা (ব্যাটা)।
- শব্দের গোড়ায় এ-কারের পর ‘অঙ’ ধ্বনি (ং, ঙ, ঙ্গ) থাকলে এবং তারপর ই বা উ ধ্বনি থাকলে এ কারের উচ্চারণ অ্যা হয়। যেমন- খেংরা (খ্যাঙরা), লেংড়া (ল্যাঙ্ড়া)। কিন্তু ই বা উ থাকলে এ-এর স্বাভাবিক উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন- খেঙ্ রি, লেঙ্ড়ি।
অন্যান্য উচ্চারণ (Other Pronunciations)
- বাংলায় অসংযুক্ত অবস্থায় ণ-এর উচ্চারণ ন-এ মতোই। যেমন- চরণ (চরোন্), অরুণ (ওরুন), তরুণ (তোরুন্)।
- ঋ-কার ও র-ফলা যুক্ত শ-এর উচ্চারণ স[S] হয়। যেমন- শৃঙ্গ (সৃঙ্ গো), শৃগাল (সৃগাল্), বিশ্রাম (বিস্স্রাম্)।
- চ,ছ,জ,ঝ এর আগে ঞ যুক্ত করলে ন-এর মত উচ্চারণ হয়। যেমন- পঞ্চ (পন্চো), ব্যঞ্জন (ব্যান্ জোন্)।